দেখতে দেখতে এক বছর হয়ে যাচ্ছে৷ এখনও খোঁজা হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ বিমানটি৷ বিমানে থাকা ২৩৯ জনের আত্মীয়রা এখনও আশায় বুক বেঁধে আছেন৷
বিজ্ঞাপন
মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার যৌথ আর্থিক ব্যয়ে চারটি জাহাজ ভারত মহাসাগরের প্রায় ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় খোঁজ চালাচ্ছে৷ এর আগে এত বড় অঞ্চল জুড়ে তল্লাশি চালানোর কোনো ইতিহাস নেই৷ বিশাল এই কর্মযজ্ঞের প্রধান মার্টিন ডোলান বলেন, এর আগে এয়ার ফ্রান্সের একটি হারিয়ে যাওয়া বিমান খোঁজ করা হয়েছিল৷ বিমানটি ২০০৯ সালে রিও ডি জানেইরো থেকে প্যারিস যাওয়ার পথে হারিয়ে গিয়েছিল৷ এরপর প্রায় দুই বছর ধরে তল্লাশি চালানোর পর বিমানটি পাওয়া গিয়েছিল৷ তবে সেসময় সাগরের যতটুকু অংশে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়েছিল সেটা বর্তমান কাজের মাত্র এক চতুর্থাংশ বলে জানান ডোলান৷
এছাড়া সাগরের যে অংশে খোঁজার কাজ চলছে সেটা ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে৷ উদ্ধারকারী জাহাজগুলোর সেখানে পৌঁছাতে ছয়দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়৷ এছাড়া তল্লাশি চালানোর সময় উদ্ধারকর্মীদের প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে পড়তে হচ্ছে৷
মালয়েশিয়ার বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণ
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-এর এমএইচ৩৭০ বিমানটির সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি৷ এটি নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণগুলো নিয়ে এখন চলছে ব্যাপক আলোচনা৷ চলুন জানা যাক বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণগুলো৷
ছবি: Reuters
কেন নিখোঁজ?
২০১৪ সালের ৮ই মার্চ নিখোঁজ হওয়া এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি নিয়ে এখন যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে, পাইলট কি নিকটবর্তী কোনো স্থানে বিমানটি অবতরণ করাতে চয়েছিলেন? বিমানটি কি অন্য একটি বিমানের রাডার সিগন্যালের আড়ালে চলতে চয়েছিল? বা এটি কি সত্যিই মালদ্বীপ পর্যন্ত উড়ে গিয়েছিল?
ছবি: Reuters
দ্রুত অবতরণের চেষ্টা
মালয়েশিয়ার এই বিমানটি নিখোঁজের ১২ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত কারণগুলোর একটি হচ্ছে, বিমানটির ককপিটে কোনো কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে এবং সেকারণে পাইলট এটির যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দ্রুত কাছাকাছি কোনো বিমানক্ষেত্রে অবতরণের চেষ্টা করেছিলেন৷ এ জন্যই হয়ত বিমানটি গতিপথ বদলে ছিল৷
ছবি: Reuters
ছিনতাই চেষ্টা
বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ছিনতাইকে এখনো উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না৷ অনেকে সন্দেহ করছেন, বিমানের পাইলট বা ছিনতাইকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে বিমানের কমিউনিকেশন সিস্টেমে ভিন্ন একটি ঠিকানা প্রবেশ করিয়েছিলেন৷ ফলে উড়ালের এক পর্যায়ের বিমানটি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়৷ অনেকের সঙ্গে মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মারডকও এমন ধারণা করছেন৷
ছবি: Reuters
অন্য বিমানের আড়ালে চলার চেষ্টা
এ ধারণাটি অবশ্য হলিউড ছবির জন্য চমৎকার প্লট হতে পারে৷ কেউ কেউ মনে করছেন, এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের বেশ কাছাকাছি থেকে কিছুক্ষণ উড়েছিল, যাতে করে সিংগাপুর এয়ারলাইন্সের রাডার সিস্টেমের ছায়াতলে অবস্থান করে নিজেদের পরিচয় কিছু সময়ের জন্য লুকিয়ে রাখা যায়৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
উল্কার আঘাতে বাষ্পীভূত
মালয়েশিয়ার এই বিমানটিতে থাকা ২৩৯ জন আরোহীর দুই তৃতীয়াংশই চীনা নাগরিক৷ চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে যে, উল্কার আঘাতে বিমানটি ধ্বংস এবং বাষ্পীভূত হয়েছে৷
ছবি: Reuters
মালদ্বীপ থেকে দেখা গেছে বিমানটি
দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের একটি ছোট্ট দ্বীপের বাসিন্দারা ৮ই মার্চ সকালে খুব নীচু থেকে উড়ে যাওয়া একটি বিমান দেখেছেন বলে দাবি করেছেন৷ বিমানটি সাদা রংয়ের এবং এতে লাল রংয়ের লাইন আঁকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা, যা মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের সঙ্গে মিলে যায়৷ বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখছেন মালদ্বীপ পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিমান খুঁজছেন কয়েক লাখ মানুষ
এমএইচ৩৭০ উড়ালের এই বিমানটি ইন্টারনেটে খুঁজছেন কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষ৷ স্যাটেলাইট সংস্থা ‘ডিজিটালগ্লোব’ জানিয়েছে, বিমানের ধ্বংসাবশেষের খোঁজে তাদের অনলাইন ম্যাপ দেখা হয়েছে ২৫৭ মিলিয়ন বার৷
ছবি: NASA/dpa
আসলে কি কেউ কিছু জানে?
বিমানটি খোঁজার অগ্রগতি সম্পর্কে এক মালয়েশীয় কর্মকর্তা জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএকে বলেছেন, ‘‘আমাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই৷’’ বুধবার (১৯.০৩.১৪) পর্যন্ত এটাই বাস্তবতা৷ ফলে বিমান নিখোঁজ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ক্রমশই বাড়ছে, যার কোনটি সত্য কেউ জানে না! (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
এমএইচ৩৭০ বিমানটি সাগরের প্রায় চার হাজার মিটার গভীরে ডুবে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ ডোলান বলেন, সূর্যের আলো সাধারণত সাগরের তিন থেকে চারশো মিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে৷ ‘‘কিন্তু আমাদের উদ্ধার তৎপরতা চালাতে হচ্ছে চার হাজার মিটার পর্যন্ত৷ অর্থাৎ একেবারে অন্ধকারে,'' বলেন তিনি৷
আরেকটি সমস্যা দেখা দিচ্ছে সাগরের গভীরের অংশের মানচিত্র নিয়ে৷ বিমান খুঁজতে যে অংশ পর্যন্ত যেতে হচ্ছে সেখানকার কোনো মানচিত্র না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে উদ্ধারকর্মীদের৷ সমুদ্র বিশেষজ্ঞ এরিক ফান সেবিলে বলেন, ‘‘সাগরের তলদেশের চেয়ে চাঁদ সম্পর্কে আমরা বেশি জানি৷ চাঁদের যে মানচিত্র আমাদের কাছে আছে সেটা সাগরতলের মানচিত্রের চেয়ে ২৫ গুন ভাল৷'' তাই বিমান খোঁজার বিষয়টিকে তিনি পুরো অন্ধকারে থাকা লন্ডন শহরে হারিয়ে যাওয়া বাসার চাবি খোঁজার সঙ্গে তুলনা করেছেন৷
তবে বিমান খুঁজতে গিয়ে সাগরের এমন সব অঞ্চলের ছবি ও ভিডিও তোলা হচ্ছে যেগুলো পরবর্তীতে অন্যান্য গবেষণায় কাজে লাগানো যাবে বলে মনে করছেন তল্লাশি কার্যক্রমের প্রধান ডোলান৷
প্রায় ৯৩ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে চলা এই তল্লাশি কার্যক্রম চলবে মে মাস পর্যন্ত৷