মালয়েশিয়ার অভিশপ্ত বিমানের ব্ল্যাক বক্স খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আশাবাদী হলেও তাঁর দেশের সমন্বয়কারী দপ্তর সংশয় প্রকাশ করছে৷ তবে অনুসন্ধানের কাজ পুরোদমে চলছে৷
বিজ্ঞাপন
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ উড়ালের অভিশপ্ত বিমানটি উধাও হয়ে যাওয়ার পর থেকে বার বার আশার আলো দেখা গেছে৷ কিন্তু কোনোবারই পাকা খবর পাওয়া যায়নি৷ তাই অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টোনি অ্যাবট শুক্রবার যখন আবার বললেন যে, সমুদ্রের তলায় এমএইচ৩৭০-এর ব্ল্যাক বক্স পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল, তখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া কঠিন৷
চীন সফরে এসে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের আলাদা তাৎপর্য আছে৷ বিমানটির যাত্রীদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই চীনা নাগরিক৷ ভারত মহাসাগরের দক্ষিণে অস্ট্রেলিয়া যেভাবে অনুসন্ধানের নেতৃত্ব দিচ্ছে, সর্বত্র তার প্রশংসা শোনা যাচ্ছে৷ তাদের ‘ওশেন শিল্ড' নামের জাহাজে বিশেষ মার্কিন যন্ত্রপাতি সমুদ্রের তলা থেকে চারটি সংকেত শনাক্ত করতে পেরেছে৷ অ্যাবট বলেন, ধীরে ধীরে আরও সেই সংকেতের উৎস খোঁজার কাজে অগ্রগতি ঘটছে৷ তবে সেটি সত্যি ব্ল্যাক বক্স হলেও তার ব্যাটারির আয়ু যে কোনো সময় শেষ হয়ে যাবে – এমন আশঙ্কাও রয়েছে৷
সংকেতের উৎস নির্ধারণ করতে পারলেও প্রায় সাড়ে চাল কিলোমিটার গভীরে অনুসন্ধান চালানোও সহজ কাজ নয়৷ মালয়েশিয়ার বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও ব্ল্যাক বক্স পাওয়া গেলে তা উদ্ধার করে তুলে আনা বড় প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ৷ উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর সেখানে বিশেষ সাবমেরিন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে কয়েক দিন লেগে যাবে বলে জানানো হয়েছে৷ সমুদ্রের এত গভীরে ‘ব্লুফিন ২১' নামের সেই সাবমেরিন রোবোট কতটা কার্যকর হতে পারবে, তা নিয়েও দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে৷
কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ও তার কারণ
আজকের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও কীভাবে একটি বিমান হারিয়ে যেতে পারে সেটা অনেকেই ভেবে পাচ্ছেন না৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে হয়েছে সেটি৷ ছবিঘরে থাকছে কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার কথা ও তার কারণ৷
ছবি: AP
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
৮ই মার্চ, ২০১৪৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়৷ এখনো সেই বিমানের হদিশ মেলেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ফ্রান্স
বিমান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১ জুনেও৷ সে সময় ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমান৷ প্রায় দু বছর পর সাগরের নীচে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ এতে ২২৮ যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বিমান চালানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কাজ না করায় বিমানটি দ্রুতগতিতে নীচে নেমে অ্যাটলান্টিকের পানিতে তলিয়ে যায় বলে পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে৷
ছবি: dapd
ভোজা এয়ার
২০১২ সালের ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানের বেসরকারি ‘ভোজা এয়ার’-এর একটি বিমান ল্যান্ডিং-এর সময় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে ১২৭ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই দুর্ঘটনার কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে৷ বোয়িং ৭৩৭-২০০ বিমানটি করাচি থেকে ইসলামাবাদ যাচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
ইরান এয়ার
২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি ইরান এয়ারের একটি বোয়িং ৭২৭-২০০ বিমান তেহরান থেকে অরুমিয়ে যাওয়ার পথে নামতে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৭৭ জন নিহত হন৷ বেঁচে যায় ২৮ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস
দুবাই থেকে ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে দূরের পাহাড়ে গিয়ে আঘাত করলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়৷ এতে ১৫৮ জন নিহত হন৷ আর বেঁচে যান আটজন৷ পাইলটের গাফিলতি দুর্ঘটনার কারণ বলে তদন্তে জানা যায়৷ ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ২২শে মে তারিখে৷
ছবি: AP
আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজ
পাইলটের ভুলের কারণে ২০১০ সালের ১২ মে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ল্যান্ডিং-এর আগে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৩ জন যাত্রী নিহত হন৷ তবে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যায় হল্যান্ডের নয় বছরের এক ছেলে!
ছবি: AP
প্রেসিডেন্টের মৃত্যু
২০১০ সালের ১০ই এপ্রিল পোল্যান্ডের বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে দেশটির সে সময়কার প্রেসিডেন্ট সহ ৯৬ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ পোল্যান্ডের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য পাইলটকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, খারাপ আবহাওয়ায় ল্যান্ডিং এর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না পাইলটের৷
ছবি: AP
ইয়েমেনিয়া
ল্যান্ডিং এর আগে ইয়েমেনের এয়ারলাইন্স ‘ইয়েমেনিয়া’-র একটি বিমান সাগরে ভেঙে পড়লে ১৫৩ জন যাত্রীর ১৫২ জনই মারা যান৷ শুধু বেঁচে যায় ১২ বছরের একটি মেয়ে৷ দুর্ঘটনার কারণ পাইলটের ‘ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানুভার’৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী চীনে গিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করলেও পার্থ শহরে অনুসন্ধানের সমন্বয়কারী দপ্তর এখনো সংশয় প্রকাশ করছে৷ তাদের মতে, যে পাঁচটি সংকেত পাওয়া গেছে, তার মধ্যে চারটি কোনো বিমানের ব্ল্যাক বক্সের হতে পারে৷ তবে পঞ্চম সংকেতটি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে৷ সব মিলিয়ে বড় কোনো অগ্রগতির লক্ষণ দেখতে পাচ্ছে না জেএসিসি দপ্তর৷
উল্লেখ্য, গোটা এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠে এখনো পর্যন্ত বিমানের কোনো অংশ পাওয়া যায় নি৷ অর্থাৎ বিমানটি আদৌ ধ্বংস হয়েছে কিনা, হয়ে থাকলে সেই এলাকাতেই এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে কিনা, তা বলা যাচ্ছে না৷ পিং বা সংকেতের উৎসও যদি ভুল প্রমাণিত হয়, তাহলে এত বড় অভিযান সম্পূর্ণ বৃথা প্রমাণিত হবে৷