ছয় সপ্তাহ আগে ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে ‘উধাও' হয়ে যাওয়া বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটির খোঁজে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ উপকূল থেকে দুই হাজার কিলোমিটার দূরে বিমান, জাহাজ ও ডুবোজাহাজের বিপুল এই অভিযান চলছে৷
গত ৫ এবং ৬ এপ্রিল জাহাজ থেকে দুটি সংকেত পাওয়ার পর সেগুলো নিখোঁজ বিমানের ‘ব্ল্যাক বক্স' থেকে এসেছে ধরে নিয়ে ভারত মহাসগরের এই অংশে শুরু হয় তল্লাশি৷ কিন্তু দশ দিনেও কোনো ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন না পেয়ে সাগরতলে অভিযান শুরু করতে বাধ্য হন অনুসন্ধানকারীরা৷
মার্কিন নৌ-বাহিনীর রোবোটিক ডুবোজাহাজ ব্লুফিন-২১ প্রথম অভিযান শুরু করে মঙ্গলবার রাতে৷ কিন্তু পানির নীচে ৪ হাজার ৫০০ মিটার নামার পর অভিযানের মাঝপথেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটি ফিরে আসে, কেননা এর বেশি নামার সামর্থ্য এই ডুবোজাহাজের নেই৷ বুধবার দ্বিতীয় অভিযানও ব্যর্থ হয়ে যায় কারিগরি কারণে৷
অস্ট্রেলীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ব্লুফিন-২১ এ পর্যন্ত যে তথ্য পাঠিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে উল্লেখযোগ্য কিছু পাওয়া যায়নি৷ তবে তারা অনুসন্ধান চালিয়ে যাবেন৷ যে ৬০০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেই পুরো এলাকায় তল্লাশি শেষ করতে ব্লুফিনের দুই মাসও সময় লাগতে পারে বলে মার্কিন নৌ-বাহিনীর কর্মকর্তারা মনে করছেন৷
গত ৮ মার্চ মালয়েশিয়া থেকে চীনের বেইজিংয়ে যাওয়ার পথে ফ্লাইট এমএইচ৩৭০-এর সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছন্ন হয়ে যায়৷ এর পর থেকেই বহুজাতিক এ অভিযান চলছে৷
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-এর এমএইচ৩৭০ বিমানটির সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি৷ এটি নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণগুলো নিয়ে এখন চলছে ব্যাপক আলোচনা৷ চলুন জানা যাক বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণগুলো৷
ছবি: Reuters
কেন নিখোঁজ?
২০১৪ সালের ৮ই মার্চ নিখোঁজ হওয়া এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি নিয়ে এখন যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে, পাইলট কি নিকটবর্তী কোনো স্থানে বিমানটি অবতরণ করাতে চয়েছিলেন? বিমানটি কি অন্য একটি বিমানের রাডার সিগন্যালের আড়ালে চলতে চয়েছিল? বা এটি কি সত্যিই মালদ্বীপ পর্যন্ত উড়ে গিয়েছিল?
ছবি: Reuters
দ্রুত অবতরণের চেষ্টা
মালয়েশিয়ার এই বিমানটি নিখোঁজের ১২ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত কারণগুলোর একটি হচ্ছে, বিমানটির ককপিটে কোনো কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে এবং সেকারণে পাইলট এটির যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দ্রুত কাছাকাছি কোনো বিমানক্ষেত্রে অবতরণের চেষ্টা করেছিলেন৷ এ জন্যই হয়ত বিমানটি গতিপথ বদলে ছিল৷
ছবি: Reuters
ছিনতাই চেষ্টা
বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ছিনতাইকে এখনো উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না৷ অনেকে সন্দেহ করছেন, বিমানের পাইলট বা ছিনতাইকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে বিমানের কমিউনিকেশন সিস্টেমে ভিন্ন একটি ঠিকানা প্রবেশ করিয়েছিলেন৷ ফলে উড়ালের এক পর্যায়ের বিমানটি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়৷ অনেকের সঙ্গে মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মারডকও এমন ধারণা করছেন৷
ছবি: Reuters
অন্য বিমানের আড়ালে চলার চেষ্টা
এ ধারণাটি অবশ্য হলিউড ছবির জন্য চমৎকার প্লট হতে পারে৷ কেউ কেউ মনে করছেন, এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের বেশ কাছাকাছি থেকে কিছুক্ষণ উড়েছিল, যাতে করে সিংগাপুর এয়ারলাইন্সের রাডার সিস্টেমের ছায়াতলে অবস্থান করে নিজেদের পরিচয় কিছু সময়ের জন্য লুকিয়ে রাখা যায়৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
উল্কার আঘাতে বাষ্পীভূত
মালয়েশিয়ার এই বিমানটিতে থাকা ২৩৯ জন আরোহীর দুই তৃতীয়াংশই চীনা নাগরিক৷ চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে যে, উল্কার আঘাতে বিমানটি ধ্বংস এবং বাষ্পীভূত হয়েছে৷
ছবি: Reuters
মালদ্বীপ থেকে দেখা গেছে বিমানটি
দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের একটি ছোট্ট দ্বীপের বাসিন্দারা ৮ই মার্চ সকালে খুব নীচু থেকে উড়ে যাওয়া একটি বিমান দেখেছেন বলে দাবি করেছেন৷ বিমানটি সাদা রংয়ের এবং এতে লাল রংয়ের লাইন আঁকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা, যা মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের সঙ্গে মিলে যায়৷ বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখছেন মালদ্বীপ পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিমান খুঁজছেন কয়েক লাখ মানুষ
এমএইচ৩৭০ উড়ালের এই বিমানটি ইন্টারনেটে খুঁজছেন কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষ৷ স্যাটেলাইট সংস্থা ‘ডিজিটালগ্লোব’ জানিয়েছে, বিমানের ধ্বংসাবশেষের খোঁজে তাদের অনলাইন ম্যাপ দেখা হয়েছে ২৫৭ মিলিয়ন বার৷
ছবি: NASA/dpa
আসলে কি কেউ কিছু জানে?
বিমানটি খোঁজার অগ্রগতি সম্পর্কে এক মালয়েশীয় কর্মকর্তা জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএকে বলেছেন, ‘‘আমাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই৷’’ বুধবার (১৯.০৩.১৪) পর্যন্ত এটাই বাস্তবতা৷ ফলে বিমান নিখোঁজ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ক্রমশই বাড়ছে, যার কোনটি সত্য কেউ জানে না! (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
কারিগরি ত্রুটির কারণে বিমানটির বিধ্বস্ত হওয়ার সম্ভাবনা মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ একেবারে নাকচ করে দেয়নি৷ তবে তাদের ধারণা, বিমানটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই নির্ধারিত যাত্রাপথের উল্টোদিকে চালানো হয়েছিল৷
ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ এবং এর আরোহীদের ভাগ্যে আসলে কি ঘটেছে, তা জানা সম্ভব হবে যদি বিমানটির ‘ব্ল্যাক বক্স' খুঁজে পাওয়া যায়৷ তবে এই ‘ব্ল্যাক বক্স' সাধারণত ৩০ দিন পর্যন্ত সচল থাকে৷ ফলে বিমানটি সাগরের ওই অংশে বিধ্বস্ত হয়ে থাকলেও ‘ব্ল্যাক বক্স'-এর ব্যাটারি ইতিমধ্যে ফুরিয়ে গেছে৷ আর এতদিন পর ভাসমান কোনো ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ারও আশা দেখছেন না অনুসন্ধানকারীরা৷
১৬.২ মিটার দীর্ঘ ব্লুফিন-২১ তার ‘সাইড স্ক্যানিং সোনার' দিয়ে সাগরের তলদেশের একটি ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করছে৷ ফলে সেখানে বড় আকারের কোনো ধাতব কাঠামো থাকলে, তা অবশ্যই নজরে আসবে বলে মনে করছেন অনুসন্ধানকারীরা৷