কয়েকদিন পরপরই হত্যা, নিষ্ঠুরতার খবর৷ এত যারা নিষ্ঠুরতা ছড়ায় তাদের তো সবাই খারাপই বলে৷ যারা মানুষ মেরে আনন্দ পায় তাদের অসুস্থ বলায় এক ধরণের যুক্তিও আছে৷ তবে সবার ভেতরেই কি একটা খারাপ মানুষ বাস করে?
বিজ্ঞাপন
দু'দিনের মধ্যে দু'টি বড় হামলা চালালো তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইএস৷ প্রথমটিতে বৈরুতে হত্যা করা হলো ৪৪ জনকে, দ্বিতীয়টিতে মারা গেছে ১২৯ জন৷ জঙ্গিবাদ বিরোধী, মানবতাবাদী সব মানুষই এসব হামলার নিন্দা করেছেন৷ বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে ঘৃণাও জানিয়েছেন অনেকে৷ এমন হামলার রাজনৈতিক কারণ নিশ্চয়ই আছে৷ কিন্তু মানুষ হত্যা করে ক্ষমতা দেখানো কেমন রাজনীতি? নিরস্ত্র নিরীহদের হত্যায় কিসের বাহাদুরি? তাতে আবার কিসের আনন্দ? মানুষ কখন, কেন এমন কাজেও আনন্দ পায়? সেই আনন্দ কেমন মানসিকতা প্রকাশ করে?
এ সব প্রশ্নের অনেক রকম উত্তর হতে পারে৷ নানা জনের ব্যখ্যা নানা রকমের হবে এটাই স্বাভাবিক৷ ডয়চে ভেলে তাই এর রাজনৈতিক বা সামাজিক ব্যখ্যা জানতে না চেয়ে মনস্তাত্ত্বিক ব্যখ্যা জানার চেষ্টা করেছে৷ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছিল সাইকোথেরাপিস্ট ইওয়াখিম বাউয়ারের কাছে৷ তিনি জানালেন, গাড়ি বোমা, বন্দুকের গুলি, আত্মঘাতী বোমা বা শিরশ্ছেদ করে যারা মানুষ মারে তারা স্বভাবে একেবারে ভিন গ্রহের মানুষ নয়৷ প্রতিটি সমাজেই এ ধরণের মানুষ আছে৷ বলতে গেলে সব মানুষের মধ্যেই থাকে আক্রমণাত্মক এক চেতনা যা সাধারণত সুপ্ত অবস্থায় থাকে, তবে বিশেষ সময়ে বা পরিস্থিতে তা প্রকাশ পায়৷ সিগমুন্ড ফ্রয়েডের দর্শনেও এ বিষয়টির উল্লেখ আছে বলে জানিয়েছেন ইওয়াখিম বাউয়ার৷
প্রাণীরা যখন মনোচিকিৎসক
হতাশা, বিষাদ, মনোযোগের অভাব এগুলো আপনাকে ভাবাচ্ছে? একদম চিন্তা নেই৷ প্রাণীরা আছে আপনার জন্য৷ যদিও অনেক বিজ্ঞানী এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি৷ কিন্তু তারপরও বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে প্রাণী থেরাপি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Landov Mike Cardew
ডলফিনের সাথে সাঁতরানো
প্রাণী থেরাপির একটি দৃষ্টান্ত হলো ডলফিন বা শুশুকের সাথে পানিতে সাঁতার দেয়া৷ শিশুদের কাছে এটা বেশ আনন্দদায়ক৷ তবে প্রাণী অধিকার কর্মীরা এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Alexandra Mudrats
যে থেরাপিস্ট আপনাকে আনন্দ দেবে
অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে মনোচিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু সেখানে সাহায্য করেছে কুকুররা৷ বিশেষ করে প্রবীণদের হাসাতে এবং আস্থা অর্জন করতে এদের তুলনা নেই৷ বৃদ্ধাশ্রমে প্রবীণদের আনন্দে রাখেন তাঁদের পোষা কুকুরটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Landov Mike Cardew
পোষা প্রাণী: আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
গবেষণায় দেখা গেছে বাড়িতে পোষা কুকুর বা বিড়াল থাকলে তা মানসিক চাপ মোকাবিলায় মানুষকে সাহায্য করে৷
ছবি: Sanam Razavi
প্রকৃত বন্ধু
মনোচিকিৎসকরা বলেন, প্রাণীরা তাদের মালিকদের প্রতি ‘ননজাজমেন্টাল’, যা মানব বন্ধুদের ক্ষেত্রে প্রায় বিরল৷ তাই পোষা প্রাণীরা শিশুদের আত্মগ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করে৷
ছবিতে দেখা যাচ্ছে ভারতের একজন প্রতিবন্ধী শিশু ঘোড়ার পিঠে বসে আছে৷ ঘোড়ার শরীরে যে নড়াচড়া হয়, সেটাই এই শিশুটির থেরাপি হিসেবে কাজ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলপাকা
পোল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশুদের থেরাপি দেয়ার জন্য চিলি থেকে ৩৮টি আলপাকা আমদানী করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Darek Demanowicz
জিরাফ
জার্মানির হানোফার শহরের কাছে লুনেবুর্গ হিথ-এর সেরেঙ্গেটি পার্কের ছবি এটি৷ এখানে মনোচিকিৎসকরা তাদের রোগীদের নিয়ে পার্কে গেছেন, যেখানে রোগীরা জিরাফদের থাওয়াচ্ছে৷ এটা নাকি রোগীদের অনেকটা উপকার করে৷
ছবি: Medizinische Hochschule Hannover
অন্য প্রাণীদের খাওয়ানো
জিরাফ ছাড়াও মাদাগাস্কারের লেমুর-দেরও খাবার খাওয়ান মানসিক সমস্যাক্রান্তরা৷ গবেষকরা পাঁচ বছর ধরে চালানো এই গবেষণায় দেখার চেষ্টা করছেন, আদৌ এটা তাদের রোগ উপশমে সাহায্য করে, নাকি এটা সাময়িক একটা প্রশান্তি দেয়৷
ছবি: Medizinische Hochschule Hannover
তিমি
বেলুগা তিমির সাথে সাঁতরানো যে কোনো ব্যক্তির জন্যই একটা বিশেষ অভিজ্ঞতা৷ তবে প্রাণী অধিকার কর্মীদের মতে এটার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত৷ কেননা থেরাপির সময় পানি হতে হয় উষ্ণ৷ আর সুমেরুর এই প্রাণীরা গরম পানিতে অভ্যস্ত নয়৷ তাই সময়ের আগেই তাদের মৃত্যু হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবচেয়ে সহজ পন্থা
যেখানে কুকুর আর বিড়াল সহজলভ্য সেখানে শুশুক আর তিমি থেরাপির কি দরকার!
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
‘পেইন ব্যারিয়ার – অন দ্য অরিজিন অফ ডেইলি অ্যান্ড গ্লোবাল ভায়োলেন্স' নামের একটি গ্রন্থের রচয়িতা ইওয়াখিম বাউয়ার আরো জানালেন, মস্তিষ্কের কোনো অংশ সহিংসতায় প্রণোদনার আশা জাগায় কিনা, বিজ্ঞানীরা তা-ও গবেষণা করে দেখেছেন৷ দেখা গেছে, গড়পড়তা মানুষের ক্ষেত্রে তা হয় না৷ তবে বিশেষ কারণে কারো কারো মস্তিষ্কে এমন হয় বলেও দেখা গেছে৷
কেন সহিংসতাতেও আনন্দ পেতে চায় মানুষ? ব্যখ্যাগুলো খুব সাধারণ৷ কখনো কখনো মানুষ বাহবা পাওয়ার আশায়ও এমন করে৷ বিশেষত এমনটি তারাই বেশি করে যাদের জীবনে বিশেষ কোনো দুঃখ, হতাশা, বঞ্চনার কষ্ট বা ব্যর্থতা আছে৷ এ সব যে নতুন কোনো আবিষ্কার নয়, তা ইওয়াখিম বাউয়ারও জানেন৷ যে কোনো অপরাধীরই অপরাধে জড়নোর কারণ সন্ধান করে এমন কোনো-না-কোনো বিষয় তুলে এনে লেখালেখি হয় প্রচুর৷
ইউরোপ থেকে যারা সিরিয়ায় গিয়ে যু্দ্ধে অংশ নিচ্ছেন তাদের বিষয়েও এমন কোনো না কোনো কারণের কথা বলা হয়ে থাকে৷ বাবা-মায়ের অনাদরে বড় হওয়া, লেখাপড়ায় ভালো না করা, সমাজে সংখ্যালঘু হওয়ায় অধিকার বঞ্চিত হওয়া – এমন বিষয়ও উঠে আসে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে৷ ইওয়াখিম বাউয়ার জানান, যে কোনো কারণে নিজের পরিবেশেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন বা অবমাননার শিকার মনে হলেও মানুষ সহিংসতার পথ ধরতে পারে৷
যে রাত বিশ্বকে বদলে দিল
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ১৩ই নভেম্বরের সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১২৯ জন নিহত ও ৩৫২ জন আহত হয়েছে৷ কেঁপে উঠেছে গোটা বিশ্ব৷ বদলে গেছে অনেক কিছু৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
প্রাথমিক খবর
জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন প্যারিসে হামলার প্রাথমিক খবর আসতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মানুষের মনে ভয়
খবর পেয়ে প্যারিসের মানুষের মনে ভয় ও আতঙ্ক ছেয়ে যায়৷ কর্তৃপক্ষ মানুষকে বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পণবন্দি নাটকের মঞ্চ
বাটাক্লঁ কনসার্ট হলে হেভি মেটাল সংগীত চলাকালীন সন্ত্রাসবাদীরা কিছু মানুষকে পণবন্দি করেছিল৷ রাত একটা নাগাদ পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে৷
ছবি: Reuters/C. Hartmann
বিহ্বল প্রেসিডেন্ট
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন৷ ফুটবল ম্যাচের বিরতির সময়ে তিনি স্টেডিয়াম ছেড়ে গিয়েছিলেন৷ তাঁকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়৷
ছবি: Reuters
স্টেডিয়ামে চাপা আতঙ্ক
ফ্রান্স ও জার্মানির জাতীয় দল এবং দর্শকরা কিন্তু স্টেডিয়াম ছেড়ে যাবার অনুমতি পাননি৷ সে সময়ে তাঁদের মনের অবস্থা কী ছিল, তা অনুমান করা যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Alexandre
হামলাকারীদের দশা
প্রায় সব আততায়ী নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷ একজন সীমান্ত পেরিয়ে বেলজিয়ামে প্রবেশ করেছে৷ পুলিশ সূত্র অনুযায়ী হামলাকারীদের মধ্যে কমপক্ষে দু’জন বেলজিয়ামে বসবাস করতো৷
ছবি: Getty Images/K. Tribouillard
আহতদের অবস্থা সংকটজনক
প্যারিসে একাধিক হামলায় আহত অনেক মানুষের অবস্থা সংকটজনক৷ ফলে নিহতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bureau
কড়া নিরাপত্তার বেড়াজাল
প্যারিসে হামলার পর আন্তর্জাতিক স্তরেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ যেমন নিউ ইয়র্কে ফরাসি কনসুলেটের সামনে আরও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
গোটা বিশ্বে সংহতি
নিউ ইয়র্কে ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’-এর অ্যান্টেনায় ফরাসি জাতীয় রং ফুটিয়ে তোলা হয়৷ নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো বলেন, ‘‘আমরা ফরাসি জাতির সঙ্গে সংহতির বন্ধনে আবদ্ধ৷’’
ছবি: Reuters/C. Allegri
9 ছবি1 | 9
প্রিয় পাঠক, সহিংসতার মধ্যেও কি মানুষ আনন্দ পেতে চায়? নীচের মন্তব্যের ঘরে জানিয়ে দিন আপনার মতামত৷