ক্যালেন্ডারের পাতা মেনে বসন্ত আসতে আর দুই দিন মাত্র৷ এই অঞ্চলে তিন মাস বসন্তকাল৷ কিন্তু আমার জানালায় গাছের পাতায় আলোর ঝিকিমিকিতে বোঝা যাচ্ছে পঞ্জিকার পাতা ওল্টানোর অপেক্ষা করেনি কেউ৷
বিজ্ঞাপন
এইখানে রাইনের একেবারে কোল ঘেঁষে সাদাকালো আর রঙিন পাখিরা রাঙিয়ে দেয় সকাল, বিকেল সন্ধ্যা৷ যেন গ্র্যান্ডমাস্টারের তুলির ছোঁয়া৷ শীত যায়নি, বাতাসের দাঁতহীন কামড় এখনো আছে, কিন্তু আরও আছে সব নির্ঝরদের ঘুম ভাঙা আলোর ঝরণাধারা-মিষ্টি যেন কমের চেয়ে একটু বেশি আর বেশির চেয়ে একটুখানি কম৷ পাহাড়, সবুজ আর একটেরে ছুটে চলা নদী দেখে এই সময় কারো মনে হতে পারে সবকিছু একটু বেশিই নিখুঁত, প্রায় অবাস্তব যেন৷
কিন্তু এই শহরে, এই দেশে, বলতে গেলে এই গ্রহে এখন এক কালো ছায়া আড়াল করে দিয়েছে সব হাসি সব গান সবগুলো কবিতা৷ মৃত্যু চেয়ে আছে ক্রুর চোখে, আপনজন হারানোর শঙ্কা এখন পৌরাণিক তরবারির মতো মাথার উপর৷ ইশারা বা অট্টহাসিতে কে যেন নামিয়ে দিতে বলছে অঙ্ক শেষের পর্দা, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে মানুষ কত ক্ষুদ্র!
কী করলে বাঁচা যায়, কোথায় গেলে মিলবে নিশ্চয়তা, কাকে দায়ী করে মিলবে এতটুকু সান্ত্বনা? অনেকেই স্বার্থপরের মতো আচরণ করছেন, খাবার আর এটা সেটা কিনে নিজের ঘর বোঝাই করছেন, খালি করে ফেলছেন দোকানপাট৷ আবার কেউ লুকিয়ে থাকছেন, হাতে ঘষছেন জীবাণুনাশক৷ সামান্য ঘুসঘুসে কাশিতেও সারারাত নির্ঘুম চোখের কালি নিয়ে হাজির হচ্ছেন ডাক্তারদের দরবারে৷ ইটালিতে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে, ফ্রান্স আর স্পেনে ঘরের বাইরে বের হলেই জরিমানা৷ খবর জানাচ্ছে, যুদ্ধ নয় তবু যুদ্ধের চেয়ে গুরুতর অবস্থা এখন৷
এই রাজ্যে করোনা আগেই এসেছে, জার্মানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তও এই রাজ্যেই৷ তাই এখানে মানুষগুলো বসন্তের বাতাস বা রোমান্টিক রাইনের স্রোতের বীঠোফেন দেখছেন না, অশুভ কোনো খেলার স্কোর দেখার মতো করে দেখছেন মৃত মানুষের সংখ্যা৷ এমনিতেই এরা হাসি ঠাট্টার জন্য খ্যাতিমান নন, কিন্তু এখন যেন গুটেনমর্গেন-গুটেনটাগ বলতেও ভুলে গেছে৷ কার থেকে যেন পালাচ্ছে সারাক্ষণ অথবা ঘরে থেকেই নিজের উপর হচ্ছে বিরক্ত৷
অফিসের জনবল এখন অর্ধেক, বাকিরা কাজ করবেন ঘর থেকে৷ আমার জানালায় যতদূর চোখ যায় কেউ নাই, কিছু নাই৷ ‘রোদন-ভরা এ বসন্ত কখনো আসেনি বুঝি আগে’৷
করোনা আতঙ্ক: কীভাবে কোয়ারান্টিন উপভোগ করবেন
করোনা ভাইরাস বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে৷ ছোঁয়াচে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে আক্রান্তদের ‘আইসোলেশনে’, রাখা হচ্ছে৷ সন্দেহভাজনদেরও ১৪ দিন হোম কোয়ারান্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে৷ বুদ্ধি খাটালে কোয়ারান্টিনও হতে পারে উপভোগ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/SvenSimon
বই পড়ে
চরম ব্যস্ত এ পৃথিবীতে সারা বিশ্বেই বই পড়ুয়াদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে৷ কোয়ারান্টিনের সময়ে বই হয়ে উঠতে পারে আপনার প্রিয় সঙ্গী৷ এত দিন ‘পড়ব, পড়ব’ করেও সময়ের কারণে যে বইগুলো পড়ে উঠতে পারছিলেন না, সেগুলো নিয়ে বসে যেতে পারেন৷
কোয়ারান্টিনে থাকার সময় আপনি নতুন নতুন রেসিপিতে রান্নার চেষ্টা করতে পারেন৷ এমন সব খাবার রান্না করতে পারেন যা খেলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে৷
ছবি: Miguel Medina/AFP/Getty Images
শরীরচর্চা
দৈনন্দিন কাজের চাপে অনেকেই শরীরচর্চার সময় পান না৷ কোয়ারান্টিনে থাকার সময় আপনি অনায়াসেই শরীরচর্চা করতে পারেন৷ তবে বাইরের কোনো জিমে যেতে পারবেন না৷ ঘরে ব্যায়ামের যন্ত্র না থাকলেও চিন্তা নেই৷ করতে পারেন ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ বা যোগব্যায়াম৷ এটা একইসঙ্গে আপনার শরীরকে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সক্ষম করে তুলবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-D. Gabbert
ঘরদোর পরিষ্কার করা
কোয়ারান্টিনে থাকার সময় আপনি বাড়িঘর ঝকঝকে তকতকে করে মনের মতো সাজিয়ে নিতে পারেন৷
করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বেই মেলা, কনসার্ট, সম্মেলনসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ হয়ে গেছে৷ খেলা হচ্ছে দর্শকহীন মাঠে৷ এ নিয়ে মন খারাপ না করে আপনি সহজেই অনলাইনে নানা সরাসরি অনুষ্ঠানের দর্শক হতে পারেন৷
ছবি: DW/R. Akbar Putra
দেখতে পারেন টেলিভিশন
এখন কত নাটক, সিনেমা, টিভি সিরিজ বা ওয়েব সিরিজ হচ্ছে৷ টেলিভিশনে সেগুলো দেখে নিতে পারেন৷
১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে থাকলে আপনার হাতে তখন অফুরন্ত সময়৷ এই সময়ে নানা ধরনের বোর্ড গেম খেলে মস্তিষ্ক ঝালিয়ে নিতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stache
আয়করের হিসাব-নিকাশ
হাস্যকর শোনালেও এই সময়ে ঠান্ডা মাথায় বসে আপনি নিজের আয়করের হিসাবনিকাশ করে ফেলতে পারেন৷ তবে খুব বেশি চাপের হয়ে গেলে হাল ছেড়ে দেওয়াই ভালো৷
ছবি: Colourbox
দক্ষতা বাড়াতে নতুন কিছু শেখা
কোয়ারান্টিনে থাকার দিনগুলোতে অনলাইন থেকে আপনি নতুন কিছু শিখতে পারেন৷ শিখতে পারেন নতুন কোনো ভাষা৷ অনলাইনে সহজেই এটা করা যায়, কোথাও কোথাও বিনামূল্যেই পাবেন৷ তাই কোয়ারেন্টাইনে সময় কিভাবে কাটাবেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই৷
ছবি: Colourbox
স্মৃতি রোমন্থন
কোথাও বেড়াতে গিয়েছিলেন, দারুণ সময় কাটিয়েছেন৷ তুলেছেন অসংখ্য ছবি৷ কোয়ারান্টিনের সময় খুলে বসতে পারেন সেসব ছবির অ্যালবাম৷ মনে মনে চলে যেতে পারেন সেই সময়ে৷ কিংবা বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে কাটানো আনন্দের স্মৃতি রোমন্থন করেও কাটিয়ে দিতে পারেন বন্দি থাকার সময়টা৷