সম্প্রতি জলিঙ্গেন শহরে এক মা তার পাঁচ সন্তানকে খুন করার খবরটা পড়ে আঁৎকে উঠেছিলাম৷ কেন সেই মা তার শিশু সন্তানদের খুন করলো? আর সন্তানদের হত্যা করার পর তিনি নিজেই বা কেন ট্রেনের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন? কী কারণ থাকতে পারে অনেক ভেবেও কোনো কুল কিনারা পাইনি৷ ছয় সন্তানের পাঁচজনকে খুন করে মা নিজে আত্মহত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছে৷
জার্মানিতে জটিল বা ভয়ংকর কোনো কিছু ঘটলে আমি সাধারণত আমার জার্মান প্রতিবেশী বা বন্ধুদের কাছ থেকে সেসব বিষয়ে তাদের মতামত বা অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করি৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷
আমাদের খুব পছন্দের একজন প্রতিবেশী ডাক্তার হর্স্ট লিংকার তাঁর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বললেন, ‘‘মা সন্তানকে খুন করেছে, এরকম ঘটনা এর আগেও বেশ কয়েকবার দেখেছি৷ এরকম মর্মান্তিক ঘটনার জন্য শুধু মা-কে দোষ দেয়া যায় না৷ সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা নেই, এ কথা মোটেই ঠিক নয়৷ মাত্র ২৭ বছর বয়সি এক মা এতগুলো শিশু সন্তান নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি আর পরিবেশের চাপ সামলে উঠতে না পেরে হয়ত এমন ঘটনা ঘটিয়েছে৷’’
একমাসে খবরে আসা নির্মমতার আট ঘটনা
৯ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর৷ এই এক মাসে বাংলাদেশের কিছু মানুষের নির্মম আচরণের উদাহরণ তুলে ধরা হচ্ছে ছবিঘরে৷
ছবি: bdnews24.com
গরু চুরির অপবাদে নির্যাতন
২১ আগস্ট গরু চুরির অপবাদ দিয়ে পারভিন বেগম, তার দুই মেয়ে, এক ছেলে ও ছেলের বন্ধুকে কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে রাস্তায় হাঁটিয়ে মারধর করতে করতে কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে৷ সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিরানুল ইসলাম মিরানও তাদের মারধর করেন৷ বুধবার মিরানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়৷
ছবি: bdnews24.com
নৈশপ্রহরীকে পিটিয়ে হত্যা
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ির বাজারে নৈশপ্রহরীর চাকরি করতেন ৬০ বছরের তসলিম উদ্দিন৷ ৯ আগস্ট ঐ বাজারের এক মুদি দোকানে চুরি হলে দোকান মালিক জামিলুর রহমান (২৮) চুরির সঙ্গে তসলিম জড়িত থাকতে পারেন সন্দেহ করে তাকে বিদ্যুতের খুঁটির সাথে বেঁধে মারধর করে৷ পুলিশ তসলিমকে হাসপাতালে নেয়ার উদ্যোগ নেয়, তবে পথেই তিনি মারা যান৷ জামিলুর রহমান ও তার ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
শিশু কেন্দ্রে তিন কিশোরের মৃত্যু
১৩ আগস্ট যশোরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোরের মৃত্যু হয়, আহত হয় ১৫ জন৷ কর্তৃপক্ষের দাবি, কিশোরদের দুই দলের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে৷ তবে আহত কিশোরদের ভাষ্য, কেন্দ্রের প্রধান নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে কেন্দ্র কর্মকর্তা, আনসার সদস্য ও তাদের ‘অনুগামী’ কয়েকজন কিশোরের মারধরে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে৷ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ও সহকারী তত্ত্বাবধায়কসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
চুরির অপবাদ দিয়ে মারধরের অভিযোগ
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল ২০ শতক জমি পেতে আমির হোসেনকে অনেকদিন ধরে চাপ দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ৷ এতে রাজি না হওয়ায় ২৩ আগস্ট রাতে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে আমির হোসেনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান৷ পরে জ্ঞান ফিরলে মামলা না করতে ও চিকিৎসা না নিতে সাদা কাগজে সই নেয়া হয় বলে দাবি তার৷ চেয়ারম্যান ছৈয়াল সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷
ছবি: bdnews24.com
শ্বশুর-শাশুড়ির হাতে গৃহবধূ নির্যাতন
৩ সেপ্টেম্বর পিরোজপুর জেলার আমারগাছিয়া ইউনিয়নের মানিকখালী গ্রামে সৌদি আরব প্রবাসী ছেলের বউ-এর সাথে শাশুড়ি আলেয়া বেগমের পারিবারিক বিষয়ে তর্ক শুরু হয়৷ এক পর্যায়ে শ্বশুর, শাশুড়ি ও চাচা শ্বশুর মিলে গৃহবধূকে নির্যাতন করেন৷ ঐ গৃহবধূর মেয়ের করা ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ৫ সেপ্টেম্বর রাতে মামলা হয়৷ এরপর শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
ছবি: bdnews24.com
চোর সন্দেহে শিশু পেটানো
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার চর ভবানীপুর এলাকায় ৩ সেপ্টেম্বর মোবাইল ফোন চোর সন্দেহে ১২ ও ১৭ বছর বয়সি দুই শিশুকে দড়ি দিয়ে বেঁধে পেটানো হয়৷ ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ৬ সেপ্টেম্বর দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ তাদের একজন গোলাম মোস্তফার (৪৫) নিজের মেয়ের মোবাইল চুরি করেছে সন্দেহে ঐ দুই শিশুকে পিটিয়েছিলেন৷
যৌতুক না পাওয়ায় এই নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ৷ ময়মনসিংহের নান্দাইলে ৬ সেপ্টেম্বর এই ঘটনা ঘটে৷ সেদিন কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে জুয়েল মিয়া (২৮) স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ফাহিমা সুলতানার (২২) মুখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থান ক্ষতবিক্ষত করেন৷ পরে বাঁশ দিয়েও মারধর করেন৷ এতে ফাহিমা অচেতন হয়ে যান৷ হাসপাতালে নেয়ার দুদিন পর মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি৷ স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone USA Falkenberg
পায়ে শিকল বেঁধে শিশু নির্যাতন
দিনাজপুরের বিরামপুরের ত্বালিমউদ্দীন ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্র মো. মারুফ হোসেনকে (১০) ৮ সেপ্টেম্বর পায়ে শিকল বেঁধে লাঠি দিয়ে হাত, মাথা, পিঠসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়েছে৷ এই অপরাধে মাদ্রাসার মোহতামিম লুৎফর রহমানকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে৷ মারধরের এক পর্যায়ে মারুফ নিস্তেজ হয়ে পড়লে লুৎফর ঘর থেকে বের হন৷ এই ফাঁকে মারুফ পালিয়ে পাশের ধানক্ষেতে আশ্রয় নেয়৷ স্থানীয় থানার ওসি তাকে উদ্ধার করেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/Michelle Shephard
8 ছবি1 | 8
ডাক্তার লিংকার আরো বললেন, ‘‘সামাজিক বা পারিবারিকভাবে যারা অবজ্ঞা আর অবহেলার শিকার হয় তারা অনেক সময় মৃত্যুকেই সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করে থাকে৷’’ তার সাথে দীর্ঘ আলাপে আমার মনে হলো, এসব ঘটনার জন্য অনেক সময় আশেপাশের পরিবেশের অনেকটাই ভূমিকা থাকে৷
‘‘খবরটি শুনে আমি একেবারে স্তম্ভিত!’’ এভাবেই শুরু করেন সাবেক স্কুল শিক্ষক মারিয়ানে৷ অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও বিষন্নতা থেকে এমনটা ঘটতে পারে বলে তিনি মনে করেন৷ কোনো বিষয়ে কেউ অতিরিক্ত বিষণ্ণ বা অবসাদগ্রস্ত হলে তাদের কেউ সাহায্য করতে পারবে না ভেবে তারা এতটাই আগ্রাসী হয়ে ওঠে যে, মৃত্যুচিন্তাও থামাতে পারে না৷ এ মায়ের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে বলে মারিয়ানের ধারণা৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন একটি ঘটনায় করোনার কিছুটা ভূমিকা থাকতেও পারে বলে তিনি মনে করেন৷
প্রায় একই কথা বলেন মার্গারিটা জুন্ডাকেম্পারও৷ মারিয়ানের কথার সাথে আরো একটু যোগ করে তিনি বলেন, পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যাওয়ায় অনেক সময় শুধু মা নয়, বাবাদের কেউ কেউও তাদের স্ত্রীর প্রতি প্রতিশোধ নিতে সন্তানকে হত্যা করেছে, এমন ঘটনা তিনি আগেও শুনেছেন৷ তবে মার্গারিটা এসবের জন্য জার্মানদের পারিবারিক শিক্ষাকে কিছুটা হলেও দায়ী করতে চান৷ তিনি এই প্রজন্মের জার্মানদের মধ্যে ধৈর্য ও ভদ্রতাজ্ঞানের ঘাটতির জন্য আক্ষেপ করেন৷
আমার আরেক প্রতিবেশী আন্দ্রেয়াস লাউটারবাখ এ বিষয়ে বলেন, ছয় সন্তানের মা ক্রিস্টিয়ানের সংসার ভাঙা একক মা জীবন এতটাই অগোছালো ছিল যে, অবুঝ বাচ্চাদের নিয়ে সবকিছু সামাল দিতে পারেনি, অন্যদিকে কারো সাহায্যও সে নিতে চায়নি৷ শেষ পর্যন্ত সবকিছুর চাপ সহ্য করতে না পেরে নিজের সন্তানদের জীবন কেড়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে সমাধান খুঁজেছে বলে মনে করেন আন্দ্রেয়াস৷ প্রতিবেশী বা কাছের মানুষদের সাথে সুসম্পর্ক থাকলে পরিস্থিতি হয়ত এতদূর গড়াতো না৷ আন্দ্রেয়াসের বিশ্বাস, দুঃখ ভাগাভাগি করলে কষ্ট অনেকটাই কমানো সম্ভব৷ এমন ঘটনা এটাই প্রথম নয়, এর আগেও তিনি দেখেছেন৷
আসলে এরকম ঘটনায় আমরা সাধারণ মানুষ প্রথমেই মায়ের দোষ খুঁজি, ঘটনার পেছনের কারণ জানার তেমন আগ্রহ থাকে না৷ ডয়চে ভেলেতে চাকরির সুবাদে আমার এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অনেক মায়ের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে, তাদের সাথে সন্তানদের গভীর সম্পর্কের নানা গল্প শুনেছি৷ তাই আমার মনে হয়, স্থান-কাল ভেদে সন্তান লালন-পালনে মায়েদের মধ্যে ভিন্নতা থাকতেই পারে, তবে নিজের সন্তানকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে মায়ের ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, কিংবা দেশ- এসবের তেমন কোনো ভূমিকা নেই৷ সন্তানের ভালো-মন্দে বিদেশি মায়েদেরকেও আমার মতো করেই ভাবতে দেখেছি৷ নিজেদের মতো করে সব মা-ই তাদের সন্তানকে ভালোবাসেন৷ তবে কখনো পরিস্থিতি আর পরিবেশের চাপে পড়ে তারা কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে এরকম মর্মান্তিক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেন৷ ডাক্তার লিংকারের সাথে সুর মিলিয়ে আমারো বলতে ইচ্ছে করছে, আশেপাশের মানুষ, প্রতিবেশী বা পরিচিতদের প্রতি আমরা কিছুটা সহনশীল হলে এরকম বড় দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও ছোট করে আনা সম্ভব৷ এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক আমি তা কখনোই চাই না৷
জার্মানিতে সন্তান লালনপালনে যত বিভ্রান্তি
সন্তান লালনপালন নিয়ে গোটা বিশ্বেই নানাজনের নানামত রয়েছে৷ তবে জার্মানিতে এই বিতর্কে অংশ নেয়ার আগে যে বিষয়গুলো আপনার জেনে নেয়া ভালো, তা পাবেন এখানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Ramirez
ঐতিহ্যবাহী বা অপ্রচলিত নাম
আপনি আপনার শিশুকে সবার চেয়ে আলাদা রাখতে চান, নাকি সকলের মাঝে রাখতে চান? সন্তানের নাম নির্ধারণ অনেকটা ট্যাটুর ডিজাইন পরিকল্পনা করার মতো ব্যাপার৷ তবে কেউই বোধহয় চাইবে না, নাম নিয়ে তার সন্তান ভবিষ্যতে বিপাকে পড়ুক৷ বেন এবং মিয়া জার্মানিতে বেশ পরিচিত নাম, আর গতবছর তাদের পছন্দের শীর্ষে ছিল মারি এবং এলিয়াস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
জনসমক্ষে স্তন্যপান
যদিও সব মা সন্তানকে স্তন্যপান করান না, তবে জার্মানিতে এই চর্চা বেশ প্রচলিত৷ জার্মানিতে নগ্নতা এক স্বাভাবিক ব্যাপার, ফলে জনসমক্ষে শিশুকে স্তন্যপান করানো কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়৷ তবে নারীর এই অধিকার আইন দ্বারা সংরক্ষিত নয়৷ তাই কোনো দোকানদার চাইলে তাতে বাধা দিতে পারেন৷
ছবি: picture alliance/empics/N. Ansell
বড় শিশুদের স্তন্যপান করানো
এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব আপনার৷ তবে জার্মানিতে কোনো কোনো মা প্লে গ্রাউন্ডে বসে তিন বছর বয়সি শিশুকেও স্তন্যপান করান৷ এখানে বলে রাখা ভালো, এই চর্চা খুব একটা দেখা যায় না, কেননা, অভিভাবকদের সাধারণত সন্তানের বারো মাস বা ক্ষেত্রবিশেষে ১৪ মাস বয়স অবধি সরকারি ভাতা দেয়া হয়ে থাকে৷ অনেক মা তাই চান, কাজে ফেরার আগেই সন্তানকে স্তন্যপান বন্ধ করানোর৷
ছবি: Colourbox/yarruta
চাইল্ডকেয়ার
কাজে ফেরার আগে সন্তানকে চাইল্ডকেয়ারে ভর্তি করানো এক জরুরি ব্যাপার৷ আর অনেক নতুন বাবা-মা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েন৷ কোনো কোনো অভিভাবক মনে করেন যে, চাইল্ডকেয়ার নির্ধারণের বিষয়টি শিশুর ভবিষ্যত শিক্ষা জীবনের উপর প্রভাব ফেলবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/P. Pleul
টিকাদান
অবিশ্বাস্য শোনালেও কোনো কোনো অভিভাবক সন্তানকে টিকাদানের বিরোধী৷ জার্মানিতে এজন্য কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই৷ আর ওইসিডি ড্যাটা বলছে, ৯৬ শতাংশ শিশুকে ছোটবেলায় টিকা দেয়া হয়৷ তবে অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে, এই হার আরো কম৷ টিকাদানের বিরোধীরা বিশ্বাস করেন, এটা শুধুমাত্র তখনই কাজ করে যখন পর্যাপ্ত মানুষ তা অনুসরণ করেন৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
কান্না থামানোর উপায়
গোটা বিশ্বেই এটা এক বড় ইস্যু৷ রাতেরবেলা সন্তানের কান্নায় ঘুমাতে পারেন না অনেক বাবা-মা৷ তাই সমাধান খোঁজেন তাঁরা৷ এক্ষেত্রে একটি উপায় হচ্ছে ফের্বার মেথড৷ এই মেথড বলছে, শিশুকে না থামা পর্যন্ত কাঁদতে দিন৷ একসময় সে থেমে যাবে৷ কেউ কেউ এই মেথড পছন্দ করলেও অনেকে বলেন এটা আসলে শিশুর উপর এক ধরনের নির্যাতন৷
ছবি: CC/Roxeteer
ঘুম পাড়ানোর ভিন্ন পন্থা
যাঁরা শিশুকে ঘুম পাড়ানোর প্রশিক্ষণের বিপক্ষে, তাঁরা সম্ভবত ‘অ্যাটাচমেন্ট প্যারেন্টিংয়ে’ বিশ্বাসী৷ কোনো কোনো অভিভাবক সন্তানের পাশে ঘুমাতে বা সন্তানের সঙ্গে একসাথে ঘুমাতে যান৷ তবে এই বিষয়টিও বিতর্কিত, কেননা, এতে করে শিশুর একা ঘুমানোর প্রবণতা কমে যায়৷
ছবি: imago/imagebroker
ডিসপোজেবল বা কাপড়ের ডায়পার অথবা ডায়পারমুক্ত
ডায়াপার আরেকটি বৈশ্বিক আলোচনার বিষয়৷ সহজভাবে ব্যবহারোপযোগী অনেক ডায়াপার বাজারে আছে৷ এবং এখনো অনেক অভিভাবক পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড়ের ডায়াপার ব্যবহার করেন৷ কিন্তু এগুলো পরিষ্কার করা সহজ কাজ নয়৷ আর যাঁরা ঝামেলা ফ্রি থাকতে চান, তাঁরা ব্যবহার করেন ডিসপোজেবল ডায়াপার৷ কোনো কোনো অভিভাবক আবার কোনোরকম ডায়াপার ছাড়াই সন্তান পালন করেন৷ তবে এটা এখনো বিরল৷
ছবি: picture alliance/dpa Themendienst
ঘরে তৈরি খাবার বা বোতলে ভরা খাবার
অবশ্যই কিছু অভিভাবক আছেন, যাঁরা নিজহাতে তৈরি খাবার শিশুকে খাওয়াতে ভালোবাসেন৷ তবে সবাই এমন নয়৷ আর জার্মানিতে অরগ্যানিক শিশু-খাবার বেশ সহজলভ্য৷ এর মধ্যে কোনটা ভালো, সেটা বিবেচনার দায়িত্ব আপনার৷
ছবি: Fotolia/victoria p
টিভি এবং ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস
শিশুদের জন্য অসাধারণ কিছু অ্যাপস এবং টেলিভিশন প্রোগ্রাম রয়েছে৷ আর অনেক এক বছর বয়সি শিশুই তাদের নানা-নানির চেয়ে ভালো মোবাইল ব্যবহার করতে পারে৷ যদিও শিশুদের ডিজিটাল ডিভাইস দেয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে, তবে বাস্তবতা হচ্ছে অনেক অভিভাবক সন্তানদের মোবাইল বা টিভির সামনে রাখতে পছন্দ করেন না৷ আবার সন্তানরা যখন সেসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তখন সেই সময়টুকু এক ধরনের ছুটি হিসেবে উপভোগ করেন তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনি
জার্মান অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে৷ সেটা হচ্ছে, কার সন্তান কতদিন অবধি মিষ্টি কিছু না খেয়ে বড় হয়েছে৷ জার্মানিতে গ্রীষ্মে শিশুদের আইসক্রিম খাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার৷ তাই যেসব অভিভাবক শিশুদের তা থেকে বিরত রাখতে পারেন, তাদের বাহবা দেয়া যেতেই পারে৷ তবে দেখা যায় যে, দ্বিতীয় সন্তানের মিষ্টি অল্পবয়সেই জোটে, কেননা ততদিনে অভিভাবকরা সন্তান লালনপালনের নিয়মনীতির ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে যান৷