গাইবান্ধার সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গত শনিবার বাড়িতে ঢুকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা৷ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়৷ এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম৷
তবে ঘটনার পর থেকেই জেলা আওয়ামী লীগ এ ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করছে৷ পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে ১৮ জনকে আটক করেছে৷ তারাও জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় নেতা-কর্মী বা সমর্থক বলে জানা গেছে৷
সুন্দরগঞ্জের শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার মামলার আসামি ছিলেন সাংসদ মনজুরুল৷ তিনি জামিনে ছিলেন৷ দৈনিক প্রথম আলো লিখেছে, শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার মামলাকে কেন্দ্র করে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগে সাংসদবিরোধী একটি পক্ষ সক্রিয় হয়েছিল৷ হত্যাকাণ্ডের পেছেন তাদের হাত থাকতে পারে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো৷ তবে জেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘‘রাজনীতিতে বিরোধ থাকবেই৷ তবে মনজুরুলের সঙ্গে দলের কারও এমন বিরোধ ছিল না যে তাঁকে খুন করাতে হবে৷''
ইয়াসির আরাফাত ভূঁইয়া ফেসবুক পাতায় এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ তিনি খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন৷
ফাহিম আল মামুনের মতে সাংসদ লিটন ষড়যন্ত্রের বলি হয়েছেন৷ তিনি ফেসবুক পাতায় লিখেছেন,
‘‘সৌরভকে গুলির ঘটনায় লিটনকে দায়ী করেছিল মিডিয়া৷ সেদিন ফুঁসে ওঠার কারণ ছিল৷ মূলত ঐটা ছিল ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ৷'' তিনি বলছেন, ‘‘সেদিন লিটনকে উদ্দেশ্য করে ছোঁড়া গুলি ভুল করে শিশুটির শরীরে লাগে আর দায়ী হন লিটন৷ লিটনের অপরাধ ৯৮ তে গোলাম আজমকে ঐ এলাকায় নিষিদ্ধ করা৷ ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে বিএনপি জামায়াতের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন৷ দুর্ভাগ্য, লিটনের জামাত-বিএনপি এবং মিডিয়ার ষড়যন্ত্রের সাথে তার পক্ষের লোকজনও গা ভাসিয়ে দিলো৷''
‘‘মোশতাকরা এখনো এদেশে অবস্থান করে মিশে আছে সকলেরই সাথে, শুধু নামটা পরিবর্তন করেছে, চরিত্রের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি আর মানসিকতার বিকাশ তো নয়ই৷ আর তাদের দ্বারাই আজ নিজ বাসায় খুন হতে হয় একজন এমপিকে৷ এই দেশ থেকে কি মোশতাকদের বংশ চিরদিনের জন্য শেষ করা যাবে না?''
আব্দুল হালিমও এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘এই হত্যা বলে দেয় আমরা সুন্দর মানবিক সমাজ তৈরিতে ব্যর্থ৷ সকলের নিরাপদ জীবন কামনা করছি৷''
নাজমুল হাসান এই হত্যার ঘটনাকে ভয়াবহ উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘‘এতবড় একটা ঘটনার কার্যকর কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখা যাচ্ছে না৷ আমি ঠিক জানি না, কেন এমন নীরবতা!''
প্রিনন ফারুক লিখেছেন, ‘‘এমপি লিটনের মৃত্যু উত্তরবঙ্গের আওয়ামী রাজনীতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি৷ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জামাতি তাণ্ডবের এক পর্যায়ে গাইবান্ধার অনেক আওয়ামী সমর্থককে তওবা পড়ে আওয়ামী লীগ ছাড়তে হয়েছিল৷ থানা কমিটির একজন সম্পাদক পর্যায়ের নেতাও ওতে বাধ্য হয়েছিলেন৷ কিন্তু এমপি লিটন ছিলেন জামাতিদের ত্রাস!''
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
নিরাপত্তা নিয়ে যা ভাবছে দেশের মানুষ
বাংলাদেশে একের পর এক মুক্তমনা, ধর্মনিরপেক্ষ লেখক, প্রকাশক, ব্লগার ও ভিন্ন ধর্মের মানুষ খুন হচ্ছে৷ পুলিশ এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বললেও, দেশের মানুষ খুব উদ্বিগ্ন৷ ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে রিকশা চালক – আজ কতটা নিরাপদ আমরা?
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
আব্দুল্লাহ রিফাত, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ রিফাত৷ তার মতে, বাড়ি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় – কোথাও তেমন নিরাপদ না কেউই৷ তবে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে তিনি ভাবছেন না এই মুহূর্তে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
নাফিউল হাসান, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিউল হাসান মনে করেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউই নিরাপদ নয়৷ আমরা একরকম ভয়ের মধ্যেই বসবাস করছি৷ যতক্ষণ বাইরে থাকি, বাসায় অভিভাবকরা চিন্তায় থাকেন৷ অনেক সময় তো স্বাভাবিক ঘোরাফেরাও বন্ধ করতে হচ্ছে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
প্যারিস তালুকদার, তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের ছাত্র
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্যারিস তালুকদার মনে করেন, গত দুই বছরের আগ পর্যন্ত নিজের নিরাপত্তা নিয়ে কখনো ভাবিনি, গভীর রাত পর্যন্তও ঘুরে বেড়াতাম বিভিন্ন জায়গায়৷ তবে গত দিনগুলোর নানান ঘটনায় আমার নিজেরই খুব ভয় হয়৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
ফারিয়া রিফাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী
বেশ নির্ভিক টাইপের মানুষ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ফারিয়া রিফাত৷ কিন্তু দেশের বর্তামান পরিস্থিতিটা তার কাছে খুবই ঘোলাটে মনে হচ্ছে৷ প্রত্যেক দিনই বড় কোনো অঘটন ঘটছে৷ পত্রিকা খুললেই খুন-খারাবির খবর, মনে হচ্ছে ‘মার্ডার’ করাটা এখন সহজ ক্রাইম৷ আমরা প্রত্যেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি৷ ঘর থেকে বেড়িয়ে আবার যে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারব, এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আরিফ জেবতিক, ব্লগার
ব্লগার আরিফ জেবতিক বললেন, ‘‘নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই আছি৷ ব্যক্তিগতভাবে যে যেভাবে পারছি সাবধানে থাকার চেষ্টা করছি৷ জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে৷ এই যেমন, ‘পাবলিক প্লেসে’ যাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছি৷ সিনেমা দেখতাম, নাটক দেখতাম, জগিং করতাম৷ এখন এগুলো আর করতে পারি না৷ যেহেতু পরিস্থিতির কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই, তাই এভাবেই সাবধানে থাকতে হচ্ছে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
হযরত আলী, ব্যবসায়ী
পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ী হযরত আলী৷ তাঁর মতে, দেশের কোনো শ্রেণির মানুষেরই নিরাপত্তা নেই৷ দিনে-দুপুরে খুন-খারাবি চলছে৷ তাই দিন কিংবা রাত – কখনোই নিরাপদ নই আমরা৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
হারিছ মিয়া, ফল ব্যবসায়ী
মাদারীপুরের হারিছ মিয়া গত প্রায় ১৭ বছর ধরে ঢাকায় ফলের ব্যবসা করেন৷ গত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমানে খুন-খারাবি বেড়ে যাওয়ায় খুবই চিন্তিত তিনি৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আক্কাস আলী, দিনমজুর
পুরনো ঢাকায় ঠেলাগাড়ি চালান আক্কাস মিয়া৷ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার সময় নেই তাঁর৷ আপাতত সন্তানদের মুখে তিনবেলা খাবার তুলে দিতে পালেই সন্তুষ্ট তিনি৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আব্দুর রহমান, রিকশা চালক
লালমনির হাটের আব্দুর রহমান ঢাকায় রিকশা চালান গত প্রায় ছ’বছর ধরে৷ জীবনের নিরাপত্তার চেয়েও তাঁর কাছে বেশি চিন্তার বিষয় ছিনতাই৷ রাস্তায় থাকা হয় বলে প্রতিনিয়ত অনেক ছিনতাইয়ের সাক্ষী তিনি্৷ কিন্তু জীবনের ভয়ে সেগুলোর প্রতিবাদ না করে নিরব দর্শকের ভূমিকাই পালন করতে হয় তাঁকে৷ কিন্তু এতে খুবই মনোকষ্টে ভোগেন বিদ্যালয়ের প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে না পারা এই রিকশা চালক৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আবুল কালাম, অটোরিকশা চালক
শেরপুরের আবুল কালাম অটোরিকশা চালান ঢাকা শহরে৷ তাঁর কথায়, দেশে কোনো নিরাপত্তা নেই৷ যে যেভাবে পারছে খুন-খারাবি করে যাচ্ছে৷ অপরাধীরা থাকছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে৷ অনেকে ধরা পড়ার খবর শুনলেও তাদের বিচারের আর কোনো খবর পান না বলে জানালেন এই অটোরিকশা চালক৷