সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমানসহ চারজনের ছাত্রত্ব বাতিল করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১০তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তা জানানো হয়৷ ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এ খবর নিশ্চিত করেছে৷
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে সিলেটের মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের শিকার হন এক তরুণী৷ এই ঘটনা তদন্তে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়৷ তদন্তে ওই চার শিক্ষার্থীর ধর্ষণকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় তাদের ছাত্রত্ব সাময়িকভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় সিন্ডিকেট৷
সিন্ডিকেট সভায় সভাপতিত্ব করেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন-অর-রশিদ৷ সভায় এ ধরনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভপ্রকাশ করেন সিন্ডিকেট সদস্যরা৷ এছাড়া অধিভুক্ত কলেজগুলোতে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়৷
মঙ্গলবার এমসি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সালেহ আহমদ জানান, গত সোমবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ সেই সাথে এমসি কলেজ থেকে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে৷
ছাত্রত্ব বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন, বিএসএস ডিগ্রি পাস কোর্সের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের (অনিয়মিত) ছাত্র সাইফুর রহমান (২৮), ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত বর্ষের শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি (২৫), বিএসএস স্নাতক পাস কোর্সের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের রবিউল ইসলাম (২৫), ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত বর্ষের মাহফুজুর রহমান (২৫)৷
ধর্ষণ মামলার আসামি হওয়ায় এমসি কলেজের অধ্যক্ষের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই চারজনের ছাত্রত্ব এবং সনদ বাতিল করা হয় বলে জানিয়েছেন এমসি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সালেহ৷
গত ২৫ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পরদিন সকালে গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমানকে প্রধান আসামি করে নয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন৷ ২৭ সেপ্টেম্বর ভিকটিমের জবানবন্দি রেকর্ড করেন সিলেট মহানগর হাকিম তৃতীয় আদালতের হাকিম শারমিন খানম নিলা৷
এ ঘটনায় আট আসামিকে গ্রেপ্তার করে তাদের পাঁচদিন করে রিমান্ড শেষে প্রত্যেকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন৷ গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা সবাই কারাগারে রয়েছেন৷
দুই কিশোরীকে ধর্ষণ, কেয়ারটেকার ‘নানা' গ্রেপ্তার
নারায়ণগঞ্জে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি কান্দাপাড়ায় দুই কিশোরী বোনকে ধর্ষণের অভিযোগে প্রতিবেশী এক বাড়ির কেয়ারটেকারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুক জানান, দুই বোনকে ধর্ষণের অভিযোগে আবু বক্করকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এ ঘটনায় ওই কিশোরীদের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেন৷
ওই দুই কিশোরীর বাবা জানান, একই এলাকায় বসবাস করায় আবু বক্করকে তার দুই মেয়ে নানা বলে ডাকত৷ গত ৫ অক্টোবর তারা অভিমান করে কিশোরীদের খালার বাসায় যাওয়ার পথে তাদেরকে ডেকে নেয় ওই কেয়ারটেকার৷ এ সময় ওই ভবনের নীচ তলায় তাদেরকে ভয় দেখিয়ে মুখে গামছা বেঁধে ধর্ষণ করেন এবং এ ঘটনা কাউকে না বলার জন্য ভয় দেখান আবু বক্কর৷
পরে এ ঘটনা ওই দুই বোন তাদের পরিবারকে জানায়৷
এপিবি/এসিবি (সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
যৌন লালসার বিকৃত রূপ
পাঁচ-ছয় বছরের শিশু থেকে শত বছরের বৃদ্ধা, কেউ বাদ যাননি ধর্ষণের শিকার হওয়া থেকে৷ ঘর, গণপরিবহন আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- সব জায়গাতেই ঘটেছে এসব ঘটনা৷ ছবিঘরে দেখে নিন যৌন লালসার এমন বিকৃত রূপের চিত্র৷
ছবি: bdnews24.com/A. Mannan
লালসার শিকার ছয় বছরের সায়মা
রাজধানীর ওয়ারীতে প্রতিবেশীর ফ্ল্যাটে খেলতে গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে ছয় বছরের শিশু আফরিন সায়মা৷ সম্প্রতি এই ঘটনা ব্যাপক আলোচনা ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে৷ ধর্ষককে গ্রেপ্তারের পর তার বাবার আবেগধর্মী বক্তব্যে আলোড়িত হয়েছেন সবাই৷
এমন ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে, নিজের প্রতিবেশও কতোটা অনিরাপদ নারী ও শিশুর জন্য৷
ছবি: bdnews24.com
১২ ছাত্রীর ধর্ষক মাদ্রাসা অধ্যক্ষ
নারায়ণগঞ্জে ১২ ছাত্রীকে ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন হয়রানির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আল আমিন৷ গ্রেপ্তার আল আমিন ১২ ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি অভিযোগ স্বীকার করেছেন বলে র্যাব৷
ছবি: bdnews24.com
শত বছরের বৃদ্ধাকে ধর্ষণ!
মে মাসে টাঙ্গাইলে শত বছর বয়সি অন্ধ বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে ১৫ বছর বয়সি এক কিশোরের বিরুদ্ধে৷ ওই কিশোর বৃদ্ধার ঘরে ঢুকে মুখ বেঁধে তাঁকে ধর্ষণ করেছে বলে জানায় পুলিশ৷ গ্রেফতার কিশোর সোহেল ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
আগুনে পুড়ল নুসরাত
ফেনীতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করার জেরে আগুনে পুড়তে হলো নুসরাত জাহান রাফিকে৷ অধ্যক্ষের পক্ষ নিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন ওই কাণ্ড ঘটায়৷ নুসরাতকে হত্যার আগে নিপীড়ক অধ্যক্ষ সিরাজের পক্ষে মানববন্ধনও হতে দেখা গেছে৷ নারায়ণগঞ্জ আর ফেনীর ঘটনা প্রকাশ করছে, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও অনিরাপদ নারীরা৷
ছবি: picture-alliance/M. Rashid
রাজনীতির বিরোধে ধর্ষণ!
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ভোটের রাতে ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়৷ এরপর নোয়াখালীতেই আরেকটি ভোট কেন্দ্র করে ছয় সন্তানের জননীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷ ধর্ষণে রাজনীতির সংযোগ নারীর জন্য সমাজকে ঝুঁকিপূর্ণই করছে৷ এর আগে ২০০১ সালের নির্বাচনের পরও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্ষণের ঘটনায় ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছিল৷
ছবি: bdnews24.com
ছয় মাসে ভিকটিম ৩৯৯ শিশু
মানবাধিকার সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের হিসাব বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সারা দেশে ৩৯৯ শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে৷ এর মধ্যে আটজন ছেলে শিশু রয়েছে৷ ধর্ষণের পর ১৫জন মেয়ে শিশু ও এক ছেলে শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে৷ অন্যদিকে, ছয় মাসে ৬৩০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্য৷
ছবি: Bilderbox
পাঁচ মাসে ৩০০ মামলা
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে সারা দেশে শিশু ধর্ষণের মামলা হয়েছে ৩০০-এর কিছু বেশি৷ আর গত পাঁচ বছরে মোট শিশু ধর্ষণ মামলার সংখ্যা ছিল ৩ হাজারের কিছু বেশি৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor
কিনারা হয়নি তনু হত্যার
কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার তদন্ত তিন বছরেও শেষ হয়নি৷ তনুর পরিবারের অভিযোগ, স্থবির হয়ে আছে তদন্তকাজ৷ ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাস এলাকার থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়৷ ঘটনার সঙ্গে সেনাসদস্যরা জড়িত বলে অভিযোগ তনুর পরিবারের৷
ছবি: Twitter
আলোচিত রূপা হত্যা
২০১৭ সালের আগস্টে টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে কলেজছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রূপাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়৷ ওই মামলায় চারজনকে ফাঁসি ও একজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
ক্রসফায়ার কি সমাধান?
ধর্ষককে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যার ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে৷ ধর্ষককে ক্রসফায়ারে পক্ষে রাস্তায় দাঁড়াতেও দেখা গেছে৷ এমনকি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে একাধিকবার ধর্ষককে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যার কথা বলেছিলেন জাতীয় পার্টির সংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ৷ আইনের শাসনের প্রতি আস্থাহীনতার প্রমাণ হিসাবে দেখা দিয়েছে এসব ঘটনা৷