1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এরশাদের মৃত্যুর ফেসবুকীয় পাঠ ও গণতন্ত্র

১৫ জুলাই ২০১৯

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রোববার সকালে মারা গেছেন৷ ফেসবুকে-টুইটারে তার প্রতিক্রিয়া পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম কর্মে এমনকি মৃত্যুতেও কবিযশোপ্রার্থী এই সৈনিক রাষ্ট্র ও সমাজকে কতোভাবে বিভক্ত করতে পেরেছেন৷

Bangladesch Dhaka Hussain Muhammad Ershad
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad

আর হা অবশ্যই গণতন্ত্র,এরশাদ প্রসঙ্গ এলে  অতি অবশ্যই গণতন্ত্রের কথা আসে৷ কথা আসে কীভাবে সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে তিনি গণতন্ত্রকে তালা দিয়ে রেখেছিলেন, কীভাবে গণতন্ত্রকে নিয়ে খেলেছেন গলফ৷ তাকে স্বৈরাচার বলা সহজ, প্রশ্ন উঠেছে যাদের বলা সহজ নয় তারা আরও কত বড় স্বৈরাচার?

ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করেছিলেন এরশাদ, এর জন্য তাকে সমালোচনা করেছেন বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ৷ কিন্তু এরপর যে আরো তিন দশক পার হলো, সেইসব বুদ্ধিমানেরা যাদের গলা ডুবিয়ে সমর্থন করছেন তারাও কিন্তু রাষ্ট্রের ধর্মপ্রাপ্তি বাদ দেন নাই৷ বলা হচ্ছে এখন আর মানুষ মেনে নেবে না৷ যদি তাই হয় তবে এরশাদ ধর্মের রাষ্ট্রীয়করণ করে খুব গণতান্ত্রিক কাজ করেছেন৷

এরশাদের দল নিয়ে বলতে হয়৷ পুরোপুরি তার বুকপকেটে থাকা একটি স্তাবক সংগঠন৷ সাবেক রাষ্ট্রপতি যা বলবেন, যা করবেন, তা মেনে না নিতে পারলে বা তার নির্দেশ মানতে ব্যর্থ হলে আপনি কখনো মঞ্জু, কখনো মঞ্জুর, কখনো কাজী জাফর, আপনার আলাদা জাতীয় পার্টি৷ এরশাদের গুডবুকে থাকলে আপনার জীবন রওশন, না থাকলে আপনি বেদিশা৷

কিন্তু এরকম একটি দলের প্রধানের সঙ্গে রাজনীতি করতে সবাই পছন্দ করেছেন৷ মঞ্জু বা মঞ্জুরেরা রাজনীতিবিদ হিসেবে এই দেশে গুরুত্বপূর্ণ৷ লোকে তাদের ভোট দেন, শেখ হাসিনা দেন পতাকা৷ তাদের সন্তানেরা মাঠ কাঁপিয়ে নৈতিকতা শেখান৷

অবশ্য যোদ্ধা বা রাজনীতিবিদ হিসেবে এইচ এম খুব শক্ত মনের ছিলেন বলে মনে হয় না৷ মোটা দাগে দুটো উদাহরণ দেওয়া যায়, বিএনপির জন্য তরুণী স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ করেছিলেন এরশাদ আর আওয়ামী লীগ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে নির্বাচনে নিয়ে এসেছিল৷ এরশাদের প্রতিটি রাজনৈতিক অন্যায়ের দায় আমাদের সব রাজনীতিবিদদের৷

ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রধান, খালেদ মুহিউদ্দীনছবি: DW/P. Böll

সাবেক রাষ্ট্রপতির নারীপ্রীতির কথা এসেছে অনেক আলোচনায়৷ কিন্তু একনিষ্ঠ না থেকে যার প্রতি সবচেয়ে অন্যায় করেছেন সেই রওশনকে আমৃত্যু তার পাশে থাকতে আর অনুসরণ করতে দেখা যায়, আরেক সাবেক স্ত্রী বিদিশা পরিণত বয়সে তার মৃত্যু ঘিরে আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন৷ যত সমস্যা তা যেন আমাদেরই৷ একই অপরাধ তিনি করে বিশ্ববেহায়া অন্য কেউ করলে আমাদের চোখ বন্ধ৷ আমার কিন্তু মনে হয় তার এই প্লেবয় আচরণ আমরা পছন্দই করেছি৷ এমনকি আমার মনে হয় তিনি হয়ে উঠেছিলেন আমাদের কারো কারো গোপন ইচ্ছাপূরণের প্রতীক৷

এরশাদকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি মজা করেছেন সাংবাদিকেরা, আবার তার কাছ থেকে ন্যায়-অন্যায় বহু সুবিধা তারাই নিয়েছেন৷ রাজধানীতে জমি বা প্লট পাওয়া থেকে শুরু করে তার কাছ থেকে ছোট বড় আর্থিক সুবিধা নেওয়া সাংবাদিকের তালিকাও বেশ বড়৷ সারাজীবন সরকারি চাকরি করা এরশাদ কী করে এত বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন সেই প্রশ্ন করার নৈতিক জায়গা আমাদের অনেকেরই ছিল না৷ তাই ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া কিংবা দিনে রাতে বিচিত্র আর বিপরীত সব কথা বলার পরও আমরাই তাকে আলোচনায় রেখেছি, রেখেছি গুরুত্বপূর্ণ৷

খালেদ মুহিউদ্দীন ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত।
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ