পেশাওয়ারের সৈনিক স্কুলে তালিবান আক্রমণে শতাধিক কিশোর নিহত হবার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মুখে এই বিলাপ শোনা গেছে৷ ছয় থেকে আটজন তালেবান আততায়ী এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
অবশ্যই শরিফ অকুস্থলে গিয়ে হতাহতদের পরিবারবর্গের প্রতি তাঁর সমবেদনা জ্ঞাপন করতে চেয়েছেন৷ আর্মি পাবলিক স্কুলে প্রথম থেকে দশম গ্রেডের ছাত্ররা পড়ত৷ মঙ্গলবার সকালে জনা ছ'য়েক বন্দুকধারী স্কুলে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে৷ আর্মি কম্যান্ডোরা শীঘ্রই অকুস্থলে পৌঁছে বন্দুকধারীদের সঙ্গে গুলিবিনিময় শুরু করে৷ স্কুল প্রাঙ্গণের চারপাশে সাঁজোয়া গাড়ি নিয়োগ করা হয়৷ এই রিপোর্ট লেখার সময়ে দৃশ্যত আততায়ী গোষ্ঠী এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলিযুদ্ধ চলছিল – অন্তত স্কুলের কিছু কিছু অংশে৷
প্রদেশের তথ্যমন্ত্রী মুস্তাক ঘানি জানিয়েছেন যে, আক্রমণে ১২৬ জন নিহত হয়েছে: তাদের মধ্যে অধিকাংশ শিশু-কিশোর, অর্থাৎ স্কুলের ছাত্র৷ হাসপাতালের খবর অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে একজন শিক্ষক এবং আধাসামরিক বাহিনীর এক সদস্যও আছেন৷ স্কুলের ভিতরে এখনো কতজন ছাত্র ও শিক্ষক রয়েছেন, তা অজ্ঞাত – তবে এক সময়ে ২০০ ছাত্রকে জিম্মি করার কথা শোনা গিয়েছিল৷
আক্রমণকারীদের সংখ্যা দৃশ্যত কমই ছিল৷ তালেবান মুখপাত্র মোহাম্মেদ খুরাসানি সংবাদমাধ্যমকে টেলিফোনের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে, ছ'জন আত্মঘাতী বোমারু এই আক্রমণ চালিয়েছে৷ অপরদিকে প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ খত্তক আটজন উর্দ্দিধারী আক্রমণকারীর কথা বলেছেন৷ তাদের মধ্যে পাঁচজন দৃশ্যত সেনাবাহিনীর সঙ্গে গুলিযুদ্ধে নিহত হয়েছে এবং ষষ্ঠজন আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে৷
সেনাশিবিরের উপকণ্ঠে অবস্থিত স্কুলটিকে আপাতত ঘিরে রেখেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী; আহতদের অ্যাম্বুলেন্সে করে কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ অপরদিকে এই হত্যাকাণ্ডের আকার ও বীভৎসতা সারা বিশ্বকে চমকিত করেছে৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার একটি বিবৃতিতে এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, ‘‘বছরের পর বছর সন্ত্রাস ও সহিংসতা পীড়িত পাকিস্তান এ যাবৎ যা কিছু দেখেছে, নির্মম কাপুরুষতার দিক থেকে শিশুদের জিম্মি নেওয়া ও হত্যা তাকেও ছাড়িয়ে গেছে৷''
পাকিস্তানে চলছে সরকারবিরোধী আন্দোলন
পাকিস্তানে চলছে সরকারবিরোধী আন্দোলন৷ প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতায় বসার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সে দেশে বিক্ষোভ চলছে৷
ছবি: Reuters
কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভরতদের দমাতে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটে অন্তত তিনজন নিহত ও কয়েকশত আহত হয়েছেন৷ গত দুই সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভকারীরা ইসলামাবাদে সংসদ ভবন ঘিরে রেখেছেন৷ তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচনে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে শরিফ ক্ষমতায় বসেছেন৷
ছবি: DW/Shakoor Raheem
নেতা দুই, উদ্দেশ্য এক
পিটিআই দলের নেতা ও ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া ইমরান খান এবং পাকিস্তানি-ক্যানাডিয়ান সুন্নি নেতা তাহরির-উল-কাদরির (ছবিতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে) নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়৷ এই দুই নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংস্কার আনার দাবি জানিয়েছেন৷ তাঁদের মতে, শরিফ সরকার দুর্নীতিপরায়ন ও অযোগ্য৷
ছবি: Reuters
আলোচনা হবে?
সরকার জানিয়েছে, তারা বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনায় রাজি৷ তবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ইমরান খান৷ রবিবার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘আমি সব পাকিস্তানিকে এই সরকারের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার আহ্বান জানাচ্ছি৷ এরা (সরকার) সাংবিধানিক সরকার নয় – তারা হত্যাকারী৷’’
ছবি: REUTERS
লংমার্চের শুরু
প্রধানমন্ত্রী শরিফ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আগস্টের ১৪ তারিখ সরকার বিরোধীরা লাহোর থেকে ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে৷ সে দেশের গণমাধ্যমের হিসেব অনুযায়ী, প্রায় দুই লক্ষ মানুষ এতে অংশ নেয়৷
ছবি: DW/ S. Raheem
‘সিস্টেম’ নিয়ে হতাশা
বিশেষজ্ঞদের মতে নিরাপত্তাহীনতা, বেকারত্ব, বিদ্যুৎ সংকট, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি কারণে অনেক পাকিস্তানি হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং এজন্য তাঁরা পরিবর্তন আশা করছেন৷ তবে ইমরান খান ও কাদরি তাঁদের নিজেদের সুবিধার জন্য বর্তমান পরিস্থিতিটাকে কাজে লাগাচ্ছেন বলে অনেকের অভিযোগ৷
ছবি: Reuters
সেনাবাহিনীর সমর্থন?
গণতন্ত্রকামীরা মনে করেন চলমান এই আন্দোলনে সে দেশের সেনাবাহিনীর একটা সমর্থন আছে৷ কারণ ভারতের প্রতি শরিফ সরকারের অনুকূল মনোভাবে সন্তুষ্ট নয় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী৷ এছাড়া সরকারের আফগানিস্তান নীতিরও বিরোধী তারা৷ কারাগারে থাকা সাবেক সেনাপ্রধান পারভেজ মুশাররফের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত সে দেশের সামরিক বাহিনী৷
ছবি: picture alliance/Photoshot
গোপনে চুক্তি?
আগস্টের ২৭ তারিখ দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পররাষ্ট্রনীতি ও নিরাপত্তা বিষয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে নিতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে এক চুক্তিতে প্রায় পৌঁছে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শরিফ৷
ছবি: AAMIR QURESHI/AFP/Getty Images
সেনাবাহিনীকে অনুরোধ
এরপর আগস্ট মাসের ২৮ তারিখে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সহায়তা করতে সেনাপ্রধান রাহিল শরিফকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আবার ক্ষমতায়?
পাকিস্তানের নিকট অতীতের একটা বড় সময় ধরে ক্ষমতায় ছিল সে দেশের সামরিক বাহিনী৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির সময়েও সেনাবাহিনীর হাতে এক ধরনের ক্ষমতা ছিল৷ প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিক উপায় নির্বাচিত শরিফ সরকারের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন সেনাবাহিনীকে আবার নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় নিয়ে আসতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পেশাওয়ারের ‘‘কাপুরুষোচিত'' আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছেন এবং এই আক্রমণকে ‘‘অবর্ণনীয় পাশবিকতার এক অর্থহীন কর্ম'' বলে অভিহিত করেছেন৷ তাঁর কাছে স্কুলের শিশুরা হলো সবচেয়ে নিষ্পাপ ও নিরপরাধ – এবং তারাই এই আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে৷
চিরকালের তরুণতম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই বলেছেন, তিনি ‘‘ভগ্নহৃদয়''; ‘‘নিরপরাধ শিশুদের তাদের নিজেদের স্কুলে এ ধরনের বীভৎসতার সম্মুখীন হওয়া উচিত নয়''৷ বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের সঙ্গে মালালাও তাঁর এই সব ‘‘ভাইবোনদের'' মৃত্যুতে শোক করছেন – ‘‘কিন্তু আমরা কখনোই হার মানব না''৷