সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আফরিনে চলমান অভিযানের বিষয়ে তুরস্ককে সতর্ক করে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ বুধবার টেলিফোনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেন৷
বিজ্ঞাপন
শনিবার থেকে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করছে তুরস্কের সেনাবাহিনী৷ ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি' এ অভিযানে তুর্কি বাহিনীকে সহায়তা করছে৷ ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি' তুরস্কপন্থি একটি বিদ্রোহীগোষ্ঠী৷ ব্রিটেন ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, গত পাঁচ দিনে আফরিনে এ পর্যন্ত অন্তত ১২৫ জন মারা গেছে৷
শনিবার মূলত কুর্দি ওয়াইপিজি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে তুরস্কের বিমান ও পদাতিক বাহিনী৷ দেশটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ওই অঞ্চলটিকে কুর্দি সন্ত্রাসীমুক্ত করতেই এ অভিযান৷
তুরস্কে সিরিয়ার শিশু শ্রমিক
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে পালাতে অনেক শিশু তাদের পরিবারসহ তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে৷ সেখানে তৈরি পোশাক খাতে কাজ করছে অনেকে৷
ছবি: DW/J. Hahn
দর্জির দোকানে
ইস্তাম্বুলের বাগসিলার এলাকায় শ্রমিক শ্রেণির মানুষের বাস৷ সেখানকার অনেক বাড়ির বেসমেন্টে রয়েছে কাপড় তৈরির ব্যবস্থা৷ সেখানে কাজ করে ১৩ বছরের সিরীয় শিশু খলিল৷ সপ্তাহে পাঁচদিন কাজ করে সে৷
ছবি: DW/J. Hahn
ভবিষ্যৎ চিন্তা
‘‘আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবিনা,’’ বলেছে খলিল৷ সিরিয়ায় থাকতে সে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো৷ এরপর তুরস্কে পালিয়ে যাওয়ায় আর স্কুলে যাওয়া হয়নি৷
ছবি: DW/J. Hahn
শিশু সহকর্মী
খলিল যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সেখানকার ১৫ জন কর্মীর মধ্যে চারজনই শিশু শ্রমিক এবং তারা সবাই সিরিয়া থেকে এসেছে৷ তাদের কোনো কাগজপত্র দেয়া হয়নি৷ ঘণ্টায় ৫০ ইউরো সেন্ট করে পায় তারা৷ তবে প্রাপ্তবয়স্করা পায় তার দ্বিগুন৷
ছবি: DW/J. Hahn
শোষণ নাকি সাহায্য?
তুরস্কে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ৷ ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের নিয়োগ দেয়া অবৈধ৷ খলিল যেখানে কাজ করে সেি প্রতিষ্ঠানের মালিক জানেন সেটি৷ কিন্তু তারপরও খলিলদের নিয়োগ দেয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে তিনি আসলে ঐ শিশুদের আর্থিকভাবে সহায়তাই করছেন৷ ‘‘এখানে কাজ না করলে তারা বেঁচে থাকার মতো অর্থ পেতো না,’’ বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ প্রতিষ্ঠান মালিক৷
ছবি: DW/J. Hahn
মুসা স্কুলে যেতে চায়
খলিলের সঙ্গে কাজ করে মুসা৷ তারও বয়স ১৩৷ কারখানায় কাজ করার পর যে সময়টুকু থাকে, তখন সে ফুটবল খেলতে পছন্দ করে৷ তার আশা, সিরিয়ায় একদিন শান্তি আসবে, তখন সে আবার স্কুলে যেতে পারবে৷
ছবি: DW/J. Hahn
দিনে ১২ ঘণ্টা
ওর নাম আরা৷ বয়স ১১৷ তার মা গর্ভবতী, বাবাও আরেকটি পোশাক কারখানায় কাজ করে৷ সকাল আটটা থেকে শুরু করে কখনো কখনো রাত আটটা পর্যন্ত কাজ করে সে৷ এর মধ্যে দুবার বিরতি পায়৷ এভাবে মাসে সে ৭০০ লিরা বা ১৫৩ ইউরো (প্রায় ১৫ হাজার টাকা) আয় করে৷
ছবি: DW/J. Hahn
সপ্তাহান্তে স্কুল
সপ্তাহের প্রতিদিন কারখানায় কাজ করতে হওয়ায় সাধারণ স্কুলে যেতে পারে না আরা৷ ফলে সিরীয় একটি ত্রাণ সংস্থার চালু করা স্কুলে সপ্তাহান্তে ক্লাস করে সে৷ গণিত, আরবি আর তুর্কি ভাষা শেখানো হয় সেখানে৷
ছবি: DW/J. Hahn
7 ছবি1 | 7
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, তুরস্কের চলমান এ অভিযান নিয়ে এর্দোয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷এর্দোয়ানকে তিনি নিয়ন্ত্রিত অভিযান পরিচালনা করতে বলেন যাতে বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়-ক্ষতি এড়ানো যায়৷ পাশাপাশি, এর্দোয়ানের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তুরস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘ধ্বংসাত্মক এবং মিথ্যা' মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতেও বলেন তিনি৷
তবে দু'দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের এই টেলিফোন কথোপকথনের পরও আফরিনে অভিযানের তীব্রতা কমেনি৷ বরং ইতিমধ্যে এর্দোয়ান জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই সামরিক অভিযানটি মনবিজ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে৷ আফরিন থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরের মনবিজ এখনো কুর্দি নিয়ন্ত্রিত৷
এসিবি/ডিজি (এএফপি, এপি, ডিপিএ, রয়টার্স)
এর্দোয়ানের পক্ষে, বিপক্ষে যারা
ক্ষমতা বাড়ানোর গণভোটে জয়ের পর এর্দোয়ানকে নিয়ে আলোচনা চলছে গোটা বিশ্বেই৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ তুর্কি তাঁর ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষে রায় দিয়েছেন, তবে বিপক্ষেও আছেন অনেক মানুষ৷ রবিবারের সেই গণভোটের পর বিক্ষোভ হয়েছে ইস্তানবুলে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Gurel
প্রতিবাদ, গ্রেপ্তার
রবিবারের গণভোটের পর থেকে তুরস্কের ইস্তানবুলে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছিলেন রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের ক্ষমতা বাড়ানোর বিপক্ষে থাকা একদল প্রতিবাদকারী৷ শুরুতে পুলিশ তাদের বাধা না দিলেও বুধবারের খবর হচ্ছে, অন্তত ৩৮ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ৷
ছবি: Reuters/K. Aslan
অল্প ব্যবধানে জয়
তুরস্ক সরকারের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, রবিবার ভোট দেওয়া তুর্কিদের মধ্যে ৫১ দশমিক চার শতাংশ ভোটর ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছেন৷ এই ভোট সেদেশের প্রেসিডেন্টের হাতে অভূতপূর্ব ক্ষমতা তুলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট৷ বিক্ষোভকারীরা অবশ্য মনে করছেন, ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা হয়নি৷ ৬০ শতাংশ ভোট পুর্নগণনার দাবি জানিয়েছেন এর্দোয়ানের বিরোধী পক্ষ৷
ছবি: Reuters/K. Aslan
অভিনব প্রতিবাদ
ইস্তানবুলে প্রতিবাদকারীরা হাড়ি পাতিল হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন৷ তারা সেসব দিয়ে শব্দ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ কেউ কেউ আবার এর্দোয়ানকে ‘চোর, খুনি’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন৷ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিক্ষোভের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Gurel
ভিন্নচিত্র
তুরস্কের সামগ্রিক চিত্রটা অবশ্য ভিন্ন৷ এর্দোয়ানের ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষের মানুষরা তুরস্কের বিভিন্ন শহরে আনন্দ মিছিল করেছেন৷ অনেক নারীও তাঁকে ভোট দিয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Gurel
এর্দোয়ানের জনপ্রিয়তায় কমতি নেই
একরোখা আচরণের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর্দোয়ান এক সমালোচিত চরিত্র হলেও নিজের দেশের জনগণের মধ্যে তাঁর সমর্থন তেমন একটা কমেনি বলেই মনে হচ্ছে৷ গতবছর তাঁর বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছিল কার্যত জনগণ প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের পাশে থাকায়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/L. Pitarakis
‘ডিক্টেটর’ এর্দোয়ান?
গণভোটে জয়ের পর এর্দোয়ান কি ‘ডিক্টেটরদের’ মতো ব্যবহার শুরু করবেন? এটা সত্য যে, এর ফলে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে৷ তুরস্কের সংবিধানে পরিবর্তন আনার ইচ্ছা বহু আগেই প্রকাশ করেছিলেন তিনি৷ এখন সে পথ পরিষ্কার৷ তবে সিএনএনকে তিনি জানিয়েছেন, গণভোট তাঁকে ‘ডিক্টেটর’ বানাচ্ছে না৷ বরং নতুন ব্যবস্থা তাংর জন্যনয়, তুরস্কের মঙ্গলের জন্যই, বলেন এর্দোয়ান৷