ফ্রান্সের বামঘেঁষা ম্যাগাজিন ‘ল্য পোঁয়া’ তাদের সম্পাদকীয়তে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ান ‘নতুন হিটলার’ কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছে৷ এর প্রতিবাদে ফ্রান্সে বিক্ষোভ করেছেন এর্দোয়ানের সমর্থকরা৷
বিজ্ঞাপন
সপ্তাহান্তে তাঁরা ফ্রান্সের কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ করেছেন৷ দক্ষিণাঞ্চলীয় আভিনিয়ঁ শহরে সমর্থকরা একটি দোকানে সাঁটানো ঐ ম্যাগাজিনের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করলে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল৷ ঐ দোকানের মালিক পরে ‘ল্য পোঁয়া’কে জানান, পোস্টার না খুললে তাঁর দোকান পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা৷
‘ল্য পোঁয়া’ ম্যাগাজিনের বর্তমান সংস্করণে এর্দোয়ানের নীতি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে৷ সঙ্গে আছে আলোচিত ঐ সম্পাদকীয়৷
বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় ‘ল্য পোঁয়া’ তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, ‘‘এক সপ্তাহ ধরে সামাজিক মাধ্যমে আমাদেরকে হয়রানি, অপমান ও ভয় দেখানোর পর এখন এর্দোয়ানের সমর্থকরা বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের বৈচিত্র্যতার উপর হামলা করছে৷’’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁও বিক্ষোভের সমালোচনা করে এটি ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন৷ এক টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘‘এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য যে, বাকস্বাধীনতার শত্রুদের পছন্দ না হওয়ায় দোকান থেকে ল্য পোঁয়া সরিয়ে ফেলতে হবে৷’’ তিনি বলেন, ‘‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মূল্য দিয়ে মাপা যায় না৷ তবে এটা না থাকলে সেটাই স্বৈরাচারী ব্যবস্থা৷’’
সেন্সরশিপ রপ্তানি!
তুরস্কে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর তুরস্কের সঙ্গে জার্মানিসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ব্যর্থ হওয়া ঐ অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে কয়েক হাজার সেনাসদস্য, পুলিশ কর্মকর্তা, বিচারক ও শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
‘অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ’-এ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক প্রতিনিধি হার্লেম ডেসির বলেন, এর্দোয়ান এখন সেন্সরশিপের বিষয়টি অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন৷ এটি ‘একেবারে অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
গতবছরের ২৭ জুলাই এর ছবিঘরটি দেখুন...
তুরস্কের শিল্পীদের আঁকা ব্যঙ্গচিত্র
যে দেশে সংবাদপত্রের স্বধীনতার মুখ চেপে ধরা হয়েছে, সে দেশে কার্টুনিস্টরা কতদূর যেতে সাহস করেন? জার্মানির কাসেল শহরের কারিকাটুরা গ্যালারিতে তুর্কি ব্যঙ্গচিত্রের কিছু নমুনা প্রদর্শিত হচ্ছে৷
ছবি: Caricatura/Ramize Erer
‘আমি কোথায়?’ ভাবছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল
২০১৫ সালে তুরস্কের ‘লেমান’ ব্যঙ্গপত্রিকার প্রচ্ছদে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে দেখানো হয় ‘সুলতান’ এর্দোয়ানের পাশে বসা অবস্থায়৷ ‘এ আমি কোথায় এসে পড়লাম?’ ভাবছেন ম্যার্কেল; তাঁর পরনেও মধ্যযুগীয় অভিজাত জার্মান মহিলাদের বাস৷ ইস্তানবুলের তিনটি নেতৃস্থানীয় ব্যঙ্গপত্রিকার মধ্যে ‘লেমান’ অন্যতম৷ তুর্কি প্রধানমন্ত্রী দাভুতোগলু একবার পত্রিকাটিকে ‘‘নীতিবিগর্হিত’’ বলে অভিহিত করেছিলেন৷
ছবি: LeMan/Caricatura
বুদ্ধিমানেরা সবাই জেলে
২০১৬ সালের জুলাই মাসের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে দেড় লাখ মানুষকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে ও ৪০ হাজার মানুষকে জেলে পোরা হয়েছে – তাদের মধ্যে বহু সাংবাদিক, লেখক ও আন্দোলনকারী৷ ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে আঁকা এই কার্টুনটিতে ৬৬ বছর বয়সি কার্টুনিস্ট ইজেল রোজেনটাল দেখাচ্ছেন, বন্দিরা কীভাবে একটি অশোভন মুদ্রা প্রদর্শন করছে আর প্রহরীরা বলছে, তারা এই ‘বেজন্মা’ বুদ্ধিজীবীদের কি পরিমাণ ঘৃণা করে৷
ছবি: Rozental/Caricatura
গুলেন সর্বত্র
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনরত ফেতুল্লাহ গুলেন ও তাঁর সমর্থকরা জুলাইয়ের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী, বলে এর্দোয়ানের অভিযোগ এবং বহু তুর্কি নাগরিক সত্যিই তা বিশ্বাস করেন৷ কার্টুনিস্ট ইগিট ওয়েজগুর-র ব্যঙ্গচিত্রে এক তুর্কি বলছেন: ‘‘৯০ শতাংশ তরমুজ নাকি গুলেনের শিষ্য৷’’ সঙ্গের তুর্কিটি বলছেন: ‘‘হতেই পারে৷’’
ছবি: Özgür/Caricatura
এর্দোয়ানের বিপক্ষে গেলেই বিপদ
গত এপ্রিল মাসের গণভোটে ৫১ দশমিক তিন শতাংশ ‘হ্যাঁ’ ভোটে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবটি গৃহীত হয় ও প্রেসিডেন্টের প্রভূত ক্ষমতা বাড়ে৷ ভোটের আগে মিডিয়াকে বিরোধীদের হয়ে ‘হায়ির’ বা ‘না’ ভোটের সপক্ষে আন্দোলনের খবর খোলাখুলিভাবে প্রচার করতে দেওয়া হয়নি৷ তাই মার্চ মাসে ইপেক ওয়েজসুসলু এই কার্টুনটি আঁকেন: জলের মিস্ত্রির পশ্চাদ্দেশে ‘হায়ির’ উল্কিটা বেরিয়ে পড়েছে৷
ছবি: Özsüslu/Caricatura
ট্রাম্পও বাদ যাননি
এর্দোয়ানই তুর্কি ব্যঙ্গচিত্রশিল্পীদের একমাত্র লক্ষ্য নন৷ বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্র যাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কার্টুনিস্টদের বিরাগভাজন হয়েছেন৷ ছবির কার্টুনটিতে বন্দুকধারী মার্কিন সৈন্যের পিছনে একটি ছেলে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘ওদের আমরা শেষমেষ কবে তাড়াব, বাবা?’ বাবা বলছেন, ‘আমাদের তেল ফুরোলে৷’
ছবি: Karabulat/Caricatura
সেক্স যেখানে টাবু
তুরস্কে যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্যে আলাপ-আলোচনা চলে না – বিশেষ করে মহিলাদের যৌনতা নিয়ে তো নয়ই৷ মহিলা কার্টুনিস্ট রামিজে এরার-এর মোটাসোটা ‘ব্যাড গার্ল’ রক্ষণশীল সমাজের ধার ধারে না৷ ছবিতে সেই ব্যাড গার্ল পরপুরুষের সঙ্গে রাত কাটানোর পর সেল্ফি তুলছে; প্রেমিক বেচারা ভয়ে জড়োসড়ো: তার গিন্নি যদি ঐ ছবি ফেসবুকে দেখে ফেলেন?
ছবি: Caricatura/Ramize Erer
দুনিয়াদারি
কার্টুনিস্ট মেহমেত চাগচাগ-এর দৃষ্টিতে দুনিয়ার অবস্থা আজ একটি ছবি দিয়েই বোঝানো যায়: বাগদাদ থেকে এথেন্স, বার্লিন থেকে প্যারিস অবধি এক পর্যায় ঘড়ি, আবহাওয়া অফিসে, পত্রিকার নিউজরুমে, হোটেল অথবা এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে যেরকম থাকে – প্রতিটি ঘড়ি আসলে একটি টাইম বোমা, প্রত্যেকটির পিছনে ডায়নামাইট বাঁধা রয়েছে৷ শুধু কোনটা যে কখন ফাটবে, সেটা জানা নেই৷