আজারবাইজানের বিজয়োৎসবে যোগ দিয়ে বিতর্কের মুখে এর্দোয়ান। একটি কবিতা নিয়ে সমস্যা শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আজারবাইজানের বিজয়োৎসবে যোগ দিয়ে একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান। তাঁর সেই কবিতা নিয়েই এ বার তুমুল বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে তুরস্ক এবং ইরানের। ইরানের দাবি, আজারবাইজানের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন এর্দোয়ান। অন্য দিকে, তুরস্কের বক্তব্য, দেশের প্রেসিডেন্টকে অন্যায় ভাবে আক্রমণ করছে ইরান।
তুরস্কের রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান কে?
ইসলামপন্থি তরুণ অ্যাক্টিভিস্ট থেকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট– রাজনীতিতে নিজের ক্যারিয়ার ভালোভাবেই গড়েছেন রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান৷ তবে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Morenatti
এর্দোয়ানের উত্থান
তুরস্কে এবং বিদেশে রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান সম্পর্কে নানা ধরনের মতামত রয়েছে৷ তাঁকে নব্য-অটোমান ‘সুলতান’ হিসেবে যেমন বিবেচনা করা হয়, তেমনি কারো কারো চোখে তিনি একজন স্বৈরাচারী নেতা৷ রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই ইসলামপন্থিদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার ব্যাপারে সচেতন ছিলেন তিনি৷ পাশাপাশি ন্যাটোতে তাঁর নেতৃত্বে বড় ধরনের অবদান রাখছে তুরস্ক৷ এর্দোয়ানের উত্থান নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Morenatti
ইস্তানবুলের কারাবন্দি মেয়র
তুরস্কে ইসলামপন্থিদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দল ওয়েলফেয়ার পার্টিতে নিজের অবস্থান দ্রুতই পাকাপোক্ত করেছিলেন এর্দোয়ান৷ ১৯৯৪ সালে তিনি সেই দল থেকে ইস্তানবুলের মেয়রও নির্বাচিত হন৷ কিন্তু এর্দোয়ান মেয়র হওয়ার চার বছরের মাথায় সেই দলটিকে সে দেশের সরকার তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ করে৷ এরপর জনসমক্ষে বিতর্কিত কবিতা আবৃত্তির দায়ে জেলে যান এর্দোয়ান৷ চার মাস জেল খাটেন৷
তুরস্কের একেপি পার্টির সহপ্রতিষ্ঠাতা এর্দোয়ান৷ ২০০২ সালের নির্বাচনে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে৷ আর ২০০৩ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন৷ দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বছরগুলোতে এর্দোয়ান দেশবাসীকে সামাজিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান, অর্থনীতির উন্নয়ন এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংস্কারের দিকে মনোযোগী হন৷ তবে কেউ কেউ এটাও মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাজনীতিতে ধর্মের মিশ্রণ ঘটানোয় ভূমিকা রেখেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Ozbilici
ইসলামপন্থিদের স্বার্থ রক্ষা
যদিও তুরস্কের সংবিধান দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে সমর্থন করে, তারপরও এর্দোয়ান কট্টর ইসলামপন্থিদের মন জয়ের নানা চেষ্টা করেছেন৷ তুরস্কের এই শীর্ষনেতা একসময় বলেছিলেন যে, তাঁর লক্ষ্যগুলোর একটি হচ্ছে এক ‘ধার্মিক প্রজন্ম’ গড়ে তোলা৷ এর্দোয়ানের সমর্থকরা এই লক্ষ্যের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, কেননা, তাঁরা মনে করেন, ধর্মচর্চা করা মুসলমানরা তুরস্কে নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AA/C. Ozdel
ক্যু থেকে রক্ষা
২০১৬ সালের জুলাইয়ে এর্দোয়ানের বিরুদ্ধে সে দেশের সেনাবাহিনীর এক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়৷ তবে সেই ঘটনায় দু’শ’র বেশি বেসামরিক নাগরিক এবং সেনা সদস্য নিহত হন৷ সেই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর এর্দোয়ান আরো ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেন৷
ছবি: picture-alliance/AA/K. Ozer
দেশজুড়ে অভিযান
ব্যর্থ সেই সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে অভিযান পরিচালনা করে তুর্কি কর্তৃপক্ষ৷ এতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা, স্কুল এবং গণমাধ্যম থেকে পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এর্দোয়ান সেই সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা এবং তাঁর প্রাক্তন সঙ্গী ফেতুল্লাহ গুলেনের হাত রয়েছে বলে দাবি করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Gurel
বিভেদ সৃষ্টিকারী রাজনীতিবিদ
যদিও নিজের দেশে এবং বিদেশে বসবাসরত তুর্কিদের একটি বড় অংশের সমর্থন রয়েছে এর্দোয়ানের প্রতি, তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর কঠোর নীতি এবং কুর্দিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোয় কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারিতে আফরিনে মারাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করেন এর্দোয়ান, যার সমালোচনা করে মানবাধিকা সংস্থাগুলো৷
ছবি: picture- alliance/ZUMAPRESS/Brais G. Rouco
ব্যাপক ক্ষমতাধর
২০১৭ সালে এক গণভোটের মাধ্যমে দেশটির সংবিধান সংশোধন করা হয়৷ সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় তুরস্ক৷ ২০১৮ সালের ২৪ জুন নতুন করে ৫ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি৷ দেশটির ইতিহাসে এতো ক্ষমতাবান প্রেসিডেন্ট এর আগে আসেননি৷ শপথ নেয়ার দিন নিজের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি- একেপির সদস্যদের এর্দোয়ান বলেন, ‘তুরস্ক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে’৷
ছবি: picture-alliance/abaca
8 ছবি1 | 8
গত বৃহস্পতিবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকু গিয়েছিলেন এর্দোয়ান। সম্প্রতি আর্মেনিয়ার সঙ্গে নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে যুদ্ধ হয়েছে আজারবাইজানের। যুদ্ধে লাভবান হয়েছে আজারবাইজান। তারই প্রেক্ষিতে বিজয়োৎসবের আয়োজন করেছিল আজারবাইজান। সেই উৎসবে ডাকা হয়েছিল দেশের বন্ধু প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানকে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সেই উৎসবে যোগ দিয়ে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। যেখানে সমস্ত তুর্কির এক হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কবিতায় বলা হয়েছে, আরাস নদীতে পাথর ফেলে তুর্কি জনগণকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। এই আরাস নদীই আজারবাইজান এবং ইরানের মাঝে সীমান্ত তৈরি করেছে। ইরানে বিপুল পরিমাণ তুর্কি থাকেন। ইরানের দাবি, কবিতাটি বলে ইরানের তুর্কিদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদ উসকে দিয়েছেন এর্দোয়ান। আজারবাইজানের সার্বভৌমত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন।
বস্তুত, ২০০ বছর আগে এই সীমান্ত নিয়ে একটি চুক্তি হয়েছিল। এর্দোয়ানের কবিতা সেই চুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলে দেয় বলে ইরানের বক্তব্য। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ টুইট করে এর্দোয়ানের সমালোচনা করেছেন। ইরানে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ডেকেও আপত্তি জানানো হয়েছে।
তুরস্ক অবশ্য ইরানের আপত্তির কড়া জবাব দিয়েছে। বলা হয়েছে, এর্দোয়ান জানতেন না সামান্য একটি কবিতা এই ধরনের বিতর্কের কারণ হবে। শুধু তাই নয়, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য, যে ভাষায় ইরান তাঁকে আক্রমণ করেছেন তা অনভিপ্রেত। ইরান যেন তাদের বক্তব্য পুনর্বিবেচনা করে।