এর্দোয়ানের পরামর্শে বিভক্ত জার্মানির তুর্কি সম্প্রদায়
২৩ আগস্ট ২০১৭
জার্মান নির্বাচনে ‘তুরস্কের শত্রুদের’ ভোট না দিতে জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কি সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান৷ তাঁর এই আহ্বানে বিভ্রান্ত তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান ভোটাররা৷
বিজ্ঞাপন
কোলনের কয়েপস্ট্রাসেকে বিবেচনা করা হয় ম্যুলহাইম জেলায় বসবাসরত তুর্কি সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে৷ সোমবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেলো দৈনন্দিন ব্যবসাবাণিজ্যের নানা চিত্র৷ দোকানে দোকানে পণ্য সরবরাহ করছে ট্রাক, দোকানগুলো তাদের দরজা খুলছে, খদ্দের এবং কর্মীরা চুলের দোকানের সামনে বসে কফি খাচ্ছেন৷ একে অপরের সঙ্গে অল্প মশগুল মানুষগুলোর কাছে এর্দোয়ান সম্পর্কে জানতে চাইলে সাড়া পাওয়া গেলে বেশ কম৷
শুরুর দিকে কিছুটা অনীহা থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দা মুস্তফা বিহান এক পর্যায়ে জার্মান নির্বাচন নিয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্টের মন্তব্য নিয়ে নিজের মতামত জানালেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা তাঁর জন্য সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক৷ আমি যদি সিডিইউ, এসপিডি বা সবুজ দলকে ভোট না দেই, তাহলে কাকে ভোট দেবো? মুক্ত গণতন্ত্রীদের? নাকি এএফডিকে?''
নতুন তুরস্ক গড়ার অঙ্গীকার দিলেন এর্দোয়ান
ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর টানা তিন সপ্তাহ ধরে এর্দোয়ানের পক্ষে ব়্যালির পর, তুরস্কের ৮০টি শহরে গত রবিবার চূড়ান্ত বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ আঙ্কারা থেকে জানাচ্ছেন ডিয়াগো কুপোলো৷
ছবি: DW/D. Cupolo
রাজপথে নামার আহ্বান
গতমাসে সেনা অভ্যুত্থানের সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর সমর্থকদের রাজপথে নেমে ক্ষমতাসীনদের রক্ষায় সেনাবাহিনীকে হটাতে সহায়তার আহ্বান জানান৷ সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সত্যিই রাস্তায় নামেন অসংখ্য মানুষ এবং সেনাবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়৷ এরপর এর্দোয়ান প্রতিরাতে তাঁর সমর্থকদের রাস্তায় থাকতে আহ্বান জানিয়েছিলেন৷
ছবি: DW/D. Cupolo
লাখো মানুষের উপস্থিতি
রবিবার চূড়ান্ত ব়্যালিতে ইস্তানবুলে হাজির ছিলেন ২০ লাখের মতো মানুষ৷ আঙ্কারায় ছিলেন দশ হাজার৷ তুরস্কের মোট ৮০টি শহরে এ সময় বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ এর্দোয়ানের একেপি হচ্ছে প্রথম দল, যেটি ইসলামিক মনোভাব প্রদর্শন সত্ত্বেও একটি সেনা অভ্যুত্থান ঠেকাতে পেরেছে৷ এর্দোয়ানের সমর্থকরা একে দেশটির ইতিহাসরচনাকারী সেনাবাহিনী এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের বিপরীতে বড় জয় মনে করছে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
এক নতুন তুরস্ক নিয়ে আশাবাদ
ইস্তানবুল থেকে দেয়া বক্তব্যে এর্দোয়ান নতুন এক তুরস্ক গড়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন এবং তাঁর সমর্থকরাও এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন৷ আঙ্কারার রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী লালে আলিচি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে আয়োজিত প্রতিটি ব়্যালিতে অংশ নিয়েছেন৷ তিনি জানান, অভ্যুত্থানে জড়িতদের শাস্তি দেয়ার পর তুরস্ক দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে, কেননা তখন সরকারকে বাধা দেয়ার আর কেউ থাকবে না৷
ছবি: DW/D. Cupolo
‘‘আমরা বড় শক্তি হবো’’
ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আতালে জানান, তিনি এর্দোয়ানকে সমর্থন দিয়েছেন কেননা তিনি তুরস্ককে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে গেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এর্দোয়ান বিশ্বকে জানিয়েছেন, আমরাও আছি এবং শীঘ্রই বড় শক্তিতে পরিণত হবো৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
এইচডিপিকে নেয়া হয়নি
যদিও রবিবারের ব়্যালিতে অংশ নেয়া অনেকে দাবি করেছেন, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে রাস্তায় নেমেছেন তারা, তাসত্ত্বেও বিরোধীরা জানিয়েছেন, সেদেশের তৃতীয়-বৃহত্তম রাজনৈতিক দল কুর্দিপন্থি ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি)-কে ব়্যালিতে যোগ দিতে দেয়া হয়নি৷ এক কুর্দ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘কুর্দ হিসেবে আমি সেখানে যেতে পারি না, কেননা আমি নিরাপদ বোধ করছি না৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের উত্থান
জাতীয় জরুরি অবস্থায় সাধারণত ব্লক করা থাকলেও ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ এর্দোয়ানের ‘ফেসটাইম’ বক্তব্য থেকে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা দেখানো ‘পেরিসকোপ’ ভিডিও অবধি সবকিছুই অনেক গুরুত্ব পেয়েছে৷ বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, সরকার নিজেদের জন্য লাভজনক মনে করায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাধা সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷
ছবি: DW/D. Cupolo
6 ছবি1 | 6
কোলনের ম্যুলহাইমে বসবাসরত অধিবাসীদের চল্লিশ শতাংশই জার্মান বংশোদ্ভূত নন, এবং তাঁদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ তুর্কি বংশোদ্ভূত৷ জার্মানি এবং তুরস্কের মধ্যে সম্পর্কে সাম্প্রতিক সময়ে মন্দা দেখা দেয়ায়, তাদের অনেকের মধ্যে আনুগত্যের বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে৷ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো অবনতির দিকে যায় যখন প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান তুর্কি সম্প্রদায়কে সিডিইউ, সিএসইউ বা সবুজ দলকে ‘তুরস্কের শত্রু' আখ্যা দিয়ে তাদের ভোট দিতে নিষেধ করেন৷ বরং এমন দলকে ভোট দিতে বলেন যেটির কোন ‘তুরস্ক বিরোধী' নীতি নেই৷
এই বক্তব্যে অবশ্য সন্তুষ্ট হননি বিহান৷ তিনি বলেন, ‘‘এর্দোয়ান হয়ত সত্য বলছেন, কিন্তু এটা তিনি আরো কূটনৈতিক উপায়ে বলতে পারতেন৷'' তুরস্ক এবং জার্মানির মধ্যকার বর্তমান সম্পর্কের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মতবিভেদ দূরে ঠেলে সামনে আগানোর পথ বেছে নিতে হবে৷''
ম্যুলহাইমের আরেক বাসিন্দা, সেদাত ইলডিরিম, সোজাসাপ্টাই তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনে তাঁর অনধিকার চর্চা করা উচিত নয়৷ তিনি স্বাভাবিক নন৷''
তবে ম্যুলহাইমের সবাই যে তুর্কি প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে একই ধরনের মতামত প্রকাশ করেছেন তা নয়৷ নিজে কুর্দি হলেও হাকান বি. জানিয়েছেন, তিনি তাঁর প্রসিডেন্টের কথাই শুনবেন৷ তিনি বলেন, ‘‘একজন তুর্কি বংশোদ্ভূত কুর্দি হিসেবে আমি আমার প্রেসিডেন্টের কথাই শুনবো৷ আমি খুঁজে দেখবো কোন দল তুরস্ককে বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করে এবং ন্যাটোকে জোটসঙ্গী মনে করে৷ আমি সেই দলকেই ভোট দেবো৷''