ন্যাটোজোটের এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্রমশ অবনতি ঘটছে৷ সবশেষ রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের এক মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ফ্রান্স৷ ইসলাম এবং মুসলিমদের প্রতি মাক্রোঁর দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করে শনিবার ফরাসি প্রেসিডেন্টের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এর্দোয়ান৷ স্থানীয় একটি রাজনৈতিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘মাক্রোঁ নামের এই ব্যক্তির ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে সমস্যা কী?’’ আনাতোলিয়ার শহর কায়সেরিতে নিজের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির বৈঠকে তিনি এই উক্তি করেন৷ এর্দোয়ান আরো বলেন, ‘‘একজন রাষ্ট্রনেতাকে আর কী বলা যায় যিনি বিশ্বাসের স্বাধীনতা বোঝেন না এবং তার দেশে বসবাসরত কয়েক মিলিয়ন ভিন্ন বিশ্বাসের অনুসারীদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন?’’
এই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতির দপ্তর৷ এক বিবৃতিতে তারা একে অপমানজনক ও অগ্রহণযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, ‘বাড়াবাড়ি ও অভদ্রতা কোন উপায় হতে পারে না’৷ বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘‘আমরা এর্দোয়ানকে তার নীতি পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছি, যা সবদিক থেকেই বিপদজনক৷’’
এই ঘটনার পর আঙ্কারায় নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে প্যারিসে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে৷ আলোচনার জন্যই এই তলব বলে মাক্রোঁর দপ্তরকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে দেশটির বার্তা সংস্থা এএফপি৷
সিরিয়া, লিবিয়া, নাগর্নো-কারাবাখ ইস্যুতে গত কয়েক মাস ধরেই ন্যাটো জোটের দুই সদস্য ফ্রান্স ও তুরস্কের মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল৷ সেখানে এর্দোয়ানের মন্তব্যে নতুন করে উত্তেজনা বাড়ল৷
মাক্রোঁর প্রতি ইমরান খানের ক্ষোভ
এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইসলামের উপর আক্রমণ করেছেন বলে অভিহিত করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান৷ এ নিয়ে বেশ কয়েকটি টুইট করেছেন তিনি৷ উগ্রতাকে উস্কে দেয়ার জন্য তিনি মাক্রোঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন৷
তার মতে, সন্ত্রাসী মুসলিম, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী বা নাৎসি ভাবধারারও হতে পারে৷ কিন্তু মাক্রোঁ তার বদলে ইসলামকে আক্রমণের মাধ্যমে ইসলামভীতিকে উৎসাহিত করছেন৷
‘সারা বিশ্বে ইসলাম ধর্ম সংকটে রয়েছে’ এই মাসের শুরুতে এমন মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট৷
সম্প্রতি মত প্রকাশের স্বাধীনতার উদাহরণ হিসেবে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে প্রকাশিত একটি কার্টুন প্রদর্শন করেছিলেন এক ফরাসি শিক্ষক৷ এই ঘটনার পরে গত সপ্তাহে তাকে হত্যা করেন এক মুসলিম৷ ঐ শিক্ষককে নায়ক হিসেবে অভিহিত করে মাক্রোঁ বলেছেন, তিনি ফ্রান্সের অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ তুলে ধরেছেন৷ ফ্রান্স এই ধরনের কার্টুন বাতিল করবে না বলেও উল্লেখ করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট৷
এফএস/এআই (এএফপি, এপি, রয়টার্স)
ধর্ম, বর্ণ, স্বাধীনতা নানা নামে উগ্রবাদ ছড়ায় বিশ্বে৷ বিভিন্ন মতাদর্শের উপর ভর করে গড়ে ওঠে জঙ্গি সংগঠন কিংবা সশস্ত্র বাহিনীও, যা অনেক সময় রূপ নেয় সন্ত্রাসে৷
ছবি: Reutersএকসময় পোশাকি নাম ছিল ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দি লিভ্যান্ট’৷ সংক্ষেপে আইএসআইএল কিংবা আইএসআইএস৷ তবে বেশি পরিচিত আইএস বা দায়েশ নামে৷ বিশ্বজুড়ে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে ২০১৪ সালে তারা আত্মপ্রকাশ করে৷ ২০১৫ সালের শেষ পর্যন্ত বিশ্বের ৮৫টি দেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা জঙ্গি গোষ্ঠীটিতে যোগ দেয়৷ সিরিয়া, ইরাকের একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছিল তারা৷ তবে সম্প্রতি শেষ ঘাঁটিটিও হারিয়েছে আইএস৷
ছবি: Reutersজর্ডান-প্যালেস্টেনিয়ান মুসলিম ধর্মীয় গুরু আব্দুল্লাহ আজম৷ একটি জিহাদি জার্নালে আফগানিস্তানে লড়াইয়ের জন্য মুজাহিদিন বা বিদেশি যোদ্ধাদের বাহিনী গড়ার ধারণা দেন তিনি৷ ১৯৮৯ সালে মারা গেলেও তাঁর মতবাদই বৈশ্বিক জিহাদি ধারণার জন্ম দেয়৷ যার উপর ভিত্তি করে ১৯৮৮ সালে আল-কায়েদা প্রতিষ্ঠা করেন ওসামা বিন লাদেন৷ আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহারের পরে আল-কায়দার শাখা ছড়িয়ে পড়ে অনেক মুসলিম দেশে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ausafবিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামেও আল-কায়দার জিহাদি মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে জঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠে৷ তারই একটি আল শাবাব৷ সোমালিয়ায় শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৬ সালে গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ দেশটিতে বহু বিদেশি নাগরিক হত্যার জন্য দায়ী তারা৷ আফ্রিকার এমন আরেকটি জঙ্গি গোষ্ঠী নাইজেরিয়ার বোকো হারাম৷ ২০১৪ সালে ৩০০ স্কুল ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় গোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনায় আসে৷
ছবি: Reuters/J. Penneyবর্ণবাদী মতবাদের উপর ভিত্তি করে বিশ্বে যুগে যুগে নানা গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে৷ বিংশ শতকে ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ বা সাদাদের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণার উপর ভিত্তি করে অ্যামেরিকায় গড়ে ওঠে ‘কু ক্লুক্স ক্ল্যান’ নামের কট্টর বর্ণবাদী গোষ্ঠী৷ বর্ণবাদের উপর ভর করে ইউরোপে উত্থান হয় ফ্যাসিবাদের৷
ছবি: picture alliance / ZUMAPRESS.comসাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে পশ্চিমা দুনিয়ায় উগ্র ডানপন্থার প্রকটতা বাড়ছে৷ অ্যামেরিকা, ইউরোপ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত এই মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়ছে৷ ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সংস্কৃতির মানুষের প্রতি এর অনুসারীরা রক্ষণশীল৷ সবশেষ নিউজিল্যান্ডে হামলা করে ৫০ জনকে হত্যায় অভিযুক্তও তেমনই একজন৷
ছবি: Reuters/M. Mitchellসমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কিংবা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেয় বিশ্বের অনেক উগ্র বামপন্থি সংগঠন৷ রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে, সরকারি কর্মকর্তা, সম্পদশালী মানুষদের তারা শত্রু বিবেচনা করে৷ ফিলিপিন্সের কমিউনিস্ট পার্টি নিও পিপলস আর্মি বা ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি তারই উদাহরণ - যাদেরকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করে আসছে দেশগুলোর সরকার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Quraishiইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে একটি স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছে ফিলিস্তিনিরা৷ এজন্য সশস্ত্র যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছে হামাস, প্যালেস্টাইন লিবারেশন ফ্রন্ট, প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ৷ উগ্রতার কারণে এই দলগুলোকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এমন স্বাধিনতাকামী সংগঠন আছে আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া, পাকিস্তান ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশে৷
ছবি: picture-alliance