তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় ভোট হতে পারে। এর্দোয়ান ও কিরিচদারোলু দুজনেই এই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় ভোট হতে পারে। এর্দোয়ান ও কিরিচদারোলু দুজনেই এই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এখনও পর্যন্ত যে ভোটগণনা হয়েছে, তাতে এর্দোয়ান ৪৯ দশমিক ২৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বলে সংবাদসংস্থা এএনকেএ জানিয়েছে। প্রধান বিরোধী প্রার্থী কেমাল কিরিচদারোলু পেয়েছেন ৪৫ দশমিক ০৪ শতাংশ ভোট। সিনান ওগান পাঁচ দশমিক ২৮ শতাংশ ও মহাররেম ইনসে পেয়েছেন শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। ৯৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ ভোটগণনা হয়ে গেছে। বাকি আর ৩৩ শতাংশ। তাই একেবারে কাছে এসেও জয় হাতছাড়া হতে পারে এর্দোয়ানের।
তুরস্কে প্রেসিডেন্ট হতে গেলে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হয়। এখনো পর্যন্ত এর্দোয়ান বা কিরিচদারোলু কেউই তা পাননি। এর্দোয়ান তার খুব কাছাকাছি আছেন। সেজন্যই আবার ভোটের কথা উঠছে। শেষ পর্যন্ত কেউ ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে আগামী ২৮ মে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ হবে।
এর্দোয়ানের বক্তব্য
প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান জানিয়েছেন, রোববারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোট গরিষ্ঠতা পেয়েছে। তিনি তার ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় অনেকটা এগিয়ে আছেন।
তুরস্কের রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান কে?
ইসলামপন্থি তরুণ অ্যাক্টিভিস্ট থেকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট– রাজনীতিতে নিজের ক্যারিয়ার ভালোভাবেই গড়েছেন রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান৷ তবে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Morenatti
এর্দোয়ানের উত্থান
তুরস্কে এবং বিদেশে রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান সম্পর্কে নানা ধরনের মতামত রয়েছে৷ তাঁকে নব্য-অটোমান ‘সুলতান’ হিসেবে যেমন বিবেচনা করা হয়, তেমনি কারো কারো চোখে তিনি একজন স্বৈরাচারী নেতা৷ রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই ইসলামপন্থিদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার ব্যাপারে সচেতন ছিলেন তিনি৷ পাশাপাশি ন্যাটোতে তাঁর নেতৃত্বে বড় ধরনের অবদান রাখছে তুরস্ক৷ এর্দোয়ানের উত্থান নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Morenatti
ইস্তানবুলের কারাবন্দি মেয়র
তুরস্কে ইসলামপন্থিদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দল ওয়েলফেয়ার পার্টিতে নিজের অবস্থান দ্রুতই পাকাপোক্ত করেছিলেন এর্দোয়ান৷ ১৯৯৪ সালে তিনি সেই দল থেকে ইস্তানবুলের মেয়রও নির্বাচিত হন৷ কিন্তু এর্দোয়ান মেয়র হওয়ার চার বছরের মাথায় সেই দলটিকে সে দেশের সরকার তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ করে৷ এরপর জনসমক্ষে বিতর্কিত কবিতা আবৃত্তির দায়ে জেলে যান এর্দোয়ান৷ চার মাস জেল খাটেন৷
তুরস্কের একেপি পার্টির সহপ্রতিষ্ঠাতা এর্দোয়ান৷ ২০০২ সালের নির্বাচনে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে৷ আর ২০০৩ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন৷ দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বছরগুলোতে এর্দোয়ান দেশবাসীকে সামাজিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান, অর্থনীতির উন্নয়ন এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংস্কারের দিকে মনোযোগী হন৷ তবে কেউ কেউ এটাও মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাজনীতিতে ধর্মের মিশ্রণ ঘটানোয় ভূমিকা রেখেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Ozbilici
ইসলামপন্থিদের স্বার্থ রক্ষা
যদিও তুরস্কের সংবিধান দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে সমর্থন করে, তারপরও এর্দোয়ান কট্টর ইসলামপন্থিদের মন জয়ের নানা চেষ্টা করেছেন৷ তুরস্কের এই শীর্ষনেতা একসময় বলেছিলেন যে, তাঁর লক্ষ্যগুলোর একটি হচ্ছে এক ‘ধার্মিক প্রজন্ম’ গড়ে তোলা৷ এর্দোয়ানের সমর্থকরা এই লক্ষ্যের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, কেননা, তাঁরা মনে করেন, ধর্মচর্চা করা মুসলমানরা তুরস্কে নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AA/C. Ozdel
ক্যু থেকে রক্ষা
২০১৬ সালের জুলাইয়ে এর্দোয়ানের বিরুদ্ধে সে দেশের সেনাবাহিনীর এক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়৷ তবে সেই ঘটনায় দু’শ’র বেশি বেসামরিক নাগরিক এবং সেনা সদস্য নিহত হন৷ সেই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর এর্দোয়ান আরো ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেন৷
ছবি: picture-alliance/AA/K. Ozer
দেশজুড়ে অভিযান
ব্যর্থ সেই সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে অভিযান পরিচালনা করে তুর্কি কর্তৃপক্ষ৷ এতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা, স্কুল এবং গণমাধ্যম থেকে পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এর্দোয়ান সেই সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা এবং তাঁর প্রাক্তন সঙ্গী ফেতুল্লাহ গুলেনের হাত রয়েছে বলে দাবি করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Gurel
বিভেদ সৃষ্টিকারী রাজনীতিবিদ
যদিও নিজের দেশে এবং বিদেশে বসবাসরত তুর্কিদের একটি বড় অংশের সমর্থন রয়েছে এর্দোয়ানের প্রতি, তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর কঠোর নীতি এবং কুর্দিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোয় কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারিতে আফরিনে মারাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করেন এর্দোয়ান, যার সমালোচনা করে মানবাধিকা সংস্থাগুলো৷
ছবি: picture- alliance/ZUMAPRESS/Brais G. Rouco
ব্যাপক ক্ষমতাধর
২০১৭ সালে এক গণভোটের মাধ্যমে দেশটির সংবিধান সংশোধন করা হয়৷ সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় তুরস্ক৷ ২০১৮ সালের ২৪ জুন নতুন করে ৫ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি৷ দেশটির ইতিহাসে এতো ক্ষমতাবান প্রেসিডেন্ট এর আগে আসেননি৷ শপথ নেয়ার দিন নিজের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি- একেপির সদস্যদের এর্দোয়ান বলেন, ‘তুরস্ক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে’৷
ছবি: picture-alliance/abaca
8 ছবি1 | 8
তবে আঙ্কারায় দলের সদরদপ্তরে এর্দোয়ান বলেছেন, ''আমরা এখনো জানি না, এই ভোটপর্ব প্রথম দফাতে শেষ হবে কিনা। যদি মানুষ আমাদের দ্বিতীয় দফার ভোটের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তাহলে আমরা সেই রায়কে সম্মান জানাব।''
কিরিচদারোলু যা বলেছেন
বিরোধী নেতা কিরিচদারোলু বলেছেন, ভোটদাতারা দ্বিতীয় দফায় ভোট চান। তিনি সেই রায় মাথা পেতে নিচ্ছেন। দ্বিতীয় দফায় তিনি এর্দোয়ানকে বিপুল ভোটে হারাবেন বলেও আশা করেছেন। তার যুক্তি, মানুষ পরিবর্তন চাইছে। ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ পরিবর্তন চান। তাই তিনি জিতবেন।
ইস্তাম্বুলের মেয়র এহং কিরিচদারোলুর সমর্থক মনসুর ইয়াভাস জানিয়েছেন, ২৮ তারিখে দ্বিতীয় দফার ভোট হবে বলেই মনে হচ্ছে।
এর্দোয়ানের যেসব নীতি বদলাতে চায় বিরোধীরা
১৪ মের নির্বাচনে জয়ী হলে এর্দোয়ানের অনেক নীতির আমুল পরিবর্তন ঘটাতে চায় বিরোধী জোট ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স৷ সেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে টানতে চাইছে তারা৷
ছবি: Umit Turhan Coskun/NurPhoto/picture alliance
১০০ দিনের পরিকল্পনা
ক্ষমতায় এলে প্রথম ১০০ দিনে কী করবেন গত মাসে তার একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ছয় দলীয় বিরোধী জোটের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কেমাল কিরিচদারোলু৷ তার মধ্যে ‘ডে লাইট সেভিং’, কর ও বিমার হার পরিবর্তন এবং সরকারি সব চাকরিতে মেধাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালুসহ আছে নানা প্রতিশ্রুতি৷
ছবি: Alp Eren Kaya/Depo Photos/ABACA/picture alliance
সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন
২০১৮ সালে তুরস্কে প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থা চালু করেন এর্দোয়ান৷ বিরোধীরা তা পরিবর্তন করে দেশটিকে আবারো সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরিয়ে নিতে চান৷ এর মাধ্যমে এর্দোয়ানের ডিক্রিতে বিলুপ্ত প্রধানমন্ত্রীর পদ পুনর্বহাল করা হবে৷ এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা হবে ‘নিরপেক্ষ’, কেড়ে নেয়া হবে তার আইনে ভেটো দেয়া কিংবা ডিক্রি জারির ক্ষমতা৷
ছবি: Hakan Nural/AA/picture alliance
সরকারি ব্যয়ের সংকোচন
গত কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক ৷ বিরোধীরা দেশটির মূল্যস্ফীতিকে এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা এপ্রিলেও ৪৪ শতাংশ ছিল৷ নতুন আইন পাসের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়ার অঙ্গীকার তাদের৷ প্রেসিডেন্টের অধীনে থাকা বিমানের সংখ্যা কমানো, সরকারি চাকরিজীবীদের গাড়ির সংখ্যা হ্রাস ও সরকারি ভবন বিক্রি করে খরচ কমানোর প্রতিশ্রুতিও আছে৷
ছবি: DesignIt/Zoonar/picture alliance
পররাষ্ট্রনীতির বদল
‘দেশে ও বিশ্বে শান্তি’ এমন স্লোগানে তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতিকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার জন্য কাজ করার পাশাপাশি ২০১৬ সালের শরণার্থী চুক্তি পর্যালোচনার কথাও বলছে তারা৷ একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়া, অন্যদিকে সমতার ভিত্তিতে ও গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রাখার পরিকল্পনা তাদের৷
ছবি: Susan Walsh/AP/picture alliance
স্বাধীন বিচার বিভাগ
বিরোধী মত দমনে বিচার বিভাগকে ব্যবহার নিয়ে এর্দোয়ান সরকারের সমালোচনা রয়েছে৷ বিরোধী জোট বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুরোপুরি ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছে৷ আদালতে রায়ের ক্ষেত্রে সংসদীয় আদালত ও ইউরোপীয় কোর্ট অব হিউম্যান রাইটসকে উৎসাহিত করা হবে৷ যেসব বিচারক ও প্রসিকিউটর অধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন তাদের জরিমানা করা হবে৷ বর্তমান সরকারের সমালোচিত বিচারপূর্ব আটকের ঘটনা বন্ধেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা৷
ছবি: Ozan Kose/Getty Images/AFP
5 ছবি1 | 5
কবে ঘোষণা?
তবে সরকারিভাবে ভোটের ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। এর্দোয়ান বলেছেন, ভোটের ঘোষণায় যেন তাড়াহুড়ো করা না হয়। গণনা চলছে। এই সময় তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়।