জার্মানির সবুজ দলের প্রার্থী চেম ও্যজদেমির ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তুরস্কের কঠোর সমালোচনা করেছেন৷ আঙ্কারার প্রতি জার্মানির ‘সরল নীতি' বাতিল করার দাবি তুলেছেন তিনি৷ পাশাপাশি তিনি চান, রাশিয়ার উপরে আরো নিষেধাজ্ঞা৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনে সংকট সৃষ্টির দায়ে রাশিয়ার উপর চাপানো নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর করার পক্ষে চেম ও্যজদেমির৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রাশিয়া ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কথা বারংবার জানিয়েছেন তিনি৷ যেহেতু ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি এখনো অবনতির দিকে, তাই রাশিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার কোনো কারণ তিনি দেখেন না৷
ও্যজদেমিরের সাক্ষাৎকার যাঁরা নিচ্ছিলেন, ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেস পোল এবং জাফর আব্দুল করিম অবশ্য অন্য একটি বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছিলেন৷ তুর্কি বংশোদ্ভূত এই রাজনীতিবিদ খুব ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে জার্মানিতে আসেন৷ রাজনীতিবিদ হিসেবে সেদেশ এবং জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কিদের সম্পর্কে ভালোই ধারণা রাখেন তিনি৷
তুরস্কের একটি ন্যাটো বিমানঘাঁটিতে অবস্থানরত জার্মান সেনাসদস্যদের সঙ্গে জার্মান সাংসদদের দেখা করতে না দেয়া নিয়ে দু'দেশের মধ্যে সৃষ্ট জটিলতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ও্যজদেমির বলেন, ‘‘তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান ন্যাটোর নিয়ম মেনে চলছেন না, বরং বারে থাকা গুণ্ডার মতো ব্যবহার করছেন৷''
তিনি এই ইস্যুতে ব্রাসেলসে থাকা ন্যাটোর সদরদপ্তর থেকে একটি পরিষ্কার বিবৃতিও দাবি করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই বিরোধ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং এর্দোয়ানের মধ্যে নয়, বরং ন্যাটো ও তুরস্কের মধ্যে৷''
Cem Özdemir: "Erdogan wants to establish Turkey in Germany"
00:14
মুসলিমপ্রধান দেশটিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) অন্তর্ভূক্ত করা নিয়ে যে দীর্ঘ বিতর্ক চলছে সেই বিষয়েও নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন চেম ও্যজদেমির৷ তুরস্ক যদি আবারো মৃত্যুদণ্ড চালু করার পথে আগায় তাহলে ইইউতে দেশটিকে যোগ করার আলোচনা শুধু বাতিল নয়, কাউন্সিল অফ ইউরোপ থেকেও দেশটির সরে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন সবুজ দলের এই রাজনীতিবিদ৷
জাফর আব্দুল করিম, যিনি ডয়চে ভেলের আরবি ভাষার টক শো ‘শাবাব টক'-এর মডারেটরও, চেম ও্যজদেমিরের কাছে জানতে চান, অভিবাসন প্রক্রিয়ার উন্নয়নে আরো কী করা যায় এবং জার্মানির ক্ষমতাসীন জোট সরকারে তাঁর দল অন্তর্ভূক্ত হতে পারলে তারা ভিন্ন কী করতে পারবেন৷ জবাবে ও্যজদেমির বলেন, ‘‘জার্মানিতে ‘প্যারালাল সোসাইটি' গড়ার সব উদ্যোগ অবশ্যই দ্রুত বন্ধ করতে হবে৷''
অভিবাসীদের কার্যকর উপায়ে জার্মান সমাজে অন্তর্ভূক্তির পক্ষে থাকা এই রাজনীতিবিদ তুরস্ক ইস্যুতে জার্মান চ্যান্সেলরের ‘নরম' মানসিকতারও সমালোচনা করেন৷ বলেন, ‘‘জার্মানিতে পরিচালিত তুর্কি মসজিদগুলোর পরিচালনা পর্ষদ থেকে ইন্টিগ্রেশনের মানসিকতা থাকা ব্যক্তিদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে৷ সেখানে জায়গা দেয়া হয়েছে তাদের, যারা আঙ্কারা থেকে পাওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন৷ এটা মেনে নেয়া যায় না৷ এর্দোয়ান জার্মানির মধ্যে নিজের ক্ষমতা চর্চা করতে চান৷''
উল্লেখ্য, আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর জার্মান নির্বাচনের পর চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে জোট সরকার গড়তে যোগ দিতে পারে সবুজ দল এবং মুক্তগণতন্ত্রী দল এএফডিপি৷ সেরকম কিছু ঘটলে সবুজ দল জলবায়ু রক্ষায় জার্মানিকে আরো সক্রিয় করবে বলে জানান ও্যজদেমির৷
কাই-আলেক্সান্ডার শলৎস/এআই
জার্মানির জাতীয় নির্বাচন ২০১৭: কবে, কী হচ্ছে
তিনটি রাজ্যে নির্বাচনের পাশাপাশি জার্মানির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০১৭ সালে৷ চলুন জেনে নেই জাতীয় নির্বাচনের টাইমলাইন৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
জার্মানির বড় নির্বাচনের বছর
জার্মানিতে চলতি বছর আয়োজন করা হচ্ছে একের পর এক নির্বাচন৷ একদিকে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর পদে লড়ছেন, অন্যদিকে পপুলিস্ট পার্টি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) অভিবাসীবিরোধী অবস্থানের কারণে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷ বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এটা নিশ্চিত যে, ২০১৭ সালের শেষে জার্মানির রাজনৈতিক অবস্থা এখনকার মতো থাকবে না৷
ছবি: Getty Images
জুন ১৯: দলের মনোনয়ন জমা দেয়ার দিন ছিল
জার্মানির সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আবেদনের শেষ দিন ছিল জুন ১৯৷ সেদিন সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে আগ্রহী দলগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আবেদন জানাতে হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Burgi
জুলাই ৭: কোন কোন দল লড়ছে?
সংসদ নির্বাচনে কোন কোন দল অংশ নিতে পারবে তা ঘোষণা করা হবে এই দিনে৷ যদি কোন দল নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হয় তাহলে পরবর্তী চারদিনের মধ্যে জার্মানির সাংবিধানিক আদালতে নালিশ করতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck
জুলাই ১৭: কারা কারা থাকছেন?
চলতি বছরের ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কোন কোন প্রার্থী কোন কোন এলাকায় লড়বেন, তা চূড়ান্ত করতে হবে৷ জার্মানিতে একসঙ্গে দু’টি ভোট দেয়ার সুযোগ রয়েছে৷ প্রথমটি প্রার্থীকে, দ্বিতীয়টি দলকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
জুলাই ২৭: ব্যালটে নাম উঠানোর লড়াই
যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে সাংবিধানিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে, তাদের বিষয়ে রায় ঘোষণা করা হবে এই দিনে৷ ২০১৩ সালে এই পন্থা চালু করা হয়েছিল৷ সেবছর এগারোটি দল আদালতের স্মরণাপন্ন হলেও কেউই মামলা জেতেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Steinberg
আগস্ট ১৩: আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা
জার্মানিতে নির্বাচন শুরুর ছয় সপ্তাহ আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো আনুষ্ঠানিক প্রচারণার পোস্টার বা টেলিভিশন বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারে না৷ চলতি বছরের জাতীয় নির্বাচনের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর তারিখ ১৩ আগস্ট৷ এই দিন থেকে দলগুলো তাদের প্রচারণায় কোনো ঘাটতি রাখবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
আগস্ট ২০: কে ভোট দিতে পারবেন?
নির্বাচনের মাসখানেক আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তালিকা চূড়ান্ত হবে৷ ভোটার লিস্ট ঘোষণা করবে নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ৷ জার্মানিতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি যে কোনো জার্মান নাগরিক ভোট দিতে পারবেন৷ সে হিসেবে চলতি বছর ভোটারের সংখ্যা সাড়ে ৬১ মিলিয়ন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-D. Gabbert
সেপ্টেম্বর ৩: তিন সপ্তাহ বাকি
এই সময়ের মধ্যে সকল ভোটার পোস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে ভোট দেয়ার সার্টিফিকেট পাবেন৷ যারা তখন অবধি ভোটার লিস্টে নিজেদের নাম পাননি, তারা রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাবেন৷ আর যারা পোস্টের মাধ্যমে ভোট দিতে চান, তারা ব্যালট পেপার চাইতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
সেপ্টেম্বর ২৪: নির্বাচনের দিন
অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষণ৷ জার্মানির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৪ সেপ্টেম্বর৷ সেদিন সকাল আটটায় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হবে, চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত৷ ভোটগণনা সেদিনই শেষ হবে এবং নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ রাতে প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেপ্টেম্বর ২৫: বিজয়ী এবং বিজিত
সকল প্রতিনিধি এবং দলগত ভোট গণনা শেষে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা দেয়া হবে ২৫ সেপ্টেম্বর৷ যদি কোনো প্রার্থী তাঁর নির্বাচনী এলাকায় জিততে ব্যর্থ হন, তা সত্ত্বেও দলগত জয়ের কারণে তিনি সংসদে একটি আসন পেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
অক্টোবর ২৪: নতুন সাংসদরা সংসদে
নির্বাচন শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে নতুন সাংসদদের সংসদে মিলিত হওয়ার নিয়ম রয়েছে৷ এ বছর সেই দিনটি হচ্ছে অক্টোবর ২৪৷ সেদিন গোপন ব্যালটের মাধ্যমে জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর নির্বাচিত হবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নভেম্বর ২৪: সবকিছু কি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছে?
যদি কেউ জাতীয় নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চান, তাহলে তার হাতে সময় থাকে নির্বাচন পরবর্তী দুই মাস৷ ভোটাররাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট যে কেউ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার রাখেন এই সময়ের মধ্যে৷