জার্মান এক কমেডিয়ান কয়েকদিন আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানকে নিয়ে লেখা একটি ব্যঙ্গাত্মক ছড়া আবৃত্তি করেছিলেন৷ তবে ছড়ার বিষয়বস্তু আপত্তিকর মনে করায় ঐ কমেডিয়ানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এর্দোয়ান৷
বিজ্ঞাপন
গত ৩১ মার্চ জার্মানির সরকারি জেডডিএফ টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে ছড়াটি পাঠ করেন কমেডিয়ান ইয়ান ব্যোমারমান৷ ছড়াটির লক্ষ্য ছিল, এর্দোয়ানের আমলে তুরস্কে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যেভাবে চাপের মুখে পড়েছে তার ব্যঙ্গ করা৷ সেটি করতে গিয়ে এক পর্যায়ে ছাগল ও ভেড়ার সঙ্গে এর্দোয়ানের যৌন সম্পর্ক সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করা হয়৷
এর্দোয়ান এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যোমারমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন৷ তবে তুর্কি প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপে খুশি হতে পারেননি অনেকে৷ তাঁদের মধ্যে একজন ইয়র্গ টিমান৷ জার্মানির কোলন শহরে ‘আর্বান বার্গারি' নামে তাঁর একটি রেস্তোরাঁ রয়েছে৷ গত মাসে তিনি খাবারের তালিকায় ‘এর্দোয়ান বার্গার' অন্তর্ভুক্ত করেন৷ বার্গারের ভেতর বিশাল আকারের ছাগলের পনির ঢুকিয়ে এই খাবারটি বানান তিনি৷ বার্গারের এমন নামকরণ অনেককেই টিমানের রেস্তোরাঁয় নিয়ে যায়৷ বার্গারটি এতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, মে মাসের প্রথমদিন বার্গারটি শেষ হয়ে যাওয়ায় আগেভাগেই রেস্তোরাঁটি বন্ধ করে দিতে হয়েছিল৷
কয়েকজন বিশ্বনেতা যাঁদের নিয়ে ব্যঙ্গ করা হয়েছে
ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন হোক আর টেলিভিশন শো৷ সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অনেক সময় বিশ্বনেতাদের নিয়েও স্যাটায়ার করা হয়৷
গ্রিসের ঋণ সংকটের সময় প্রায়ই সে দেশের ম্যাগাজিনগুলোতে নাৎসি আমলের পোশাক পরিহিত অবস্থায় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ছবি প্রকাশিত হতো৷ উপরের ছবিটি ২০১২ সালের৷ একটি স্যাটায়ারিক্যাল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ম্যার্কেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার সেনাবাহিনীর পোশাক পরে আছেন, আর তাঁর ঘাড়ে শকুন৷
ছবি: picture-alliance/Rolf Haid
ডোনাল্ড ট্রাম্প
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পকে নিয়ে প্রায়ই কার্টুন আর ব্যঙ্গ করা হয়৷ যেমন ‘দ্য বোস্টন গ্লোব’ সম্প্রতি তাদের প্রথম পাতায় একটি প্যারোডি প্রকাশ করেছে৷ এতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে বিশ্বের পরিস্থিতি কেমন হতে পারে তার বর্ণনা রয়েছে৷ ট্রাম্প ঐ প্রতিবেদনকে ‘নির্বোধ’ আর ‘অর্থহীন’ বলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/The Boston Globe
ভ্লাদিমির পুটিন
ছুটিতে গিয়ে খালি গায়ের পুটিন ঘোড়া চালাচ্ছেন এমন ছবি প্রকাশিত হয়েছে অতীতে৷ উপরের ছবিটি গত বছর অনুষ্ঠিত জার্মানির একটি কার্নিভাল প্যারেডের৷ সেখানে পুটিনের হৃষ্টপুষ্ট ডান হাতে লেখা আছে ‘মিলিটারি’ আর রুগ্ন বাম হাতে লেখা ‘অর্থনীতি’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
কিম জং-উন
২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া কমেডি মুভি ‘দ্য ইন্টারভিউ’ মুভিতে দেখা যায়, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ দু’জন সাংবাদিককে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য পাঠিয়ে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করে৷ এর প্রেক্ষিতে সনি পিকচার্স সাইবার হামলার শিকার হয়৷ এফবিআই এর ধারণা, এর হামলার পেছনে ছিল উত্তর কোরিয়ার সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Columbia Pictures/Sony
জর্জ ডাব্লিউ বুশ
তাঁর বুদ্ধিমত্তার অভাব নিয়ে মার্কিন টিভি চ্যানেলের লেট নাইট কমেডি শোগুলোতে অনেকবার ব্যঙ্গ করা হয়েছে৷ ক’দিন আগে তিনি যখন পেইন্টিং এর দিকে ঝোঁকার কথা জানান, তখন উপরের ছবিটির আবির্ভাব হয়৷
ছবি: Getty Images/M. Tama
ইয়ারোস্লাভ কাচিনস্কি
এটিও জার্মানির একটি কার্নিভাল প্যারেডের ছবি৷ এতে দেখা যাচ্ছে, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী কাচিনস্কির বুটের নীচে এক নারী৷ তার গায়ে লেখা পোল্যান্ড৷ কাচিনস্কির শাসনামলে দেশটির নারীদের অবস্থা এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷ পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এর মাধ্যমে পোলিশ জনগণকে অসম্মান করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gambarini
আয়াতুল্লাহ খোমেনি
ছবিতে হল্যান্ডে জন্ম নেয়া, জার্মানিতে বসবাসকারী এন্টারটেনার রুডি ক্যারেলকে দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৮৭ সালে তিনি একটি আলোকচিত্র বিন্যাস (ফটো মন্তাজ) তৈরি করেছিলেন যেখানে দেখানো হয়েছিল, ইরানের বিপ্লবের নেতা খোমেনির সরকারি সফরের সময় তার দিকে অন্তর্বাস ছুড়ে মারা হচ্ছে৷ এর প্রতিবাদে তেহরান দু’জন জার্মান কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান
সম্প্রতি জার্মানির এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে একটি ছড়া পাঠ করেন কমেডিয়ান ইয়ান ব্যোমারমান (ছবিতে বামে)৷ লক্ষ্য ছিল, এর্দোয়ানের আমলে তুরস্কে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যেভাবে চাপের মুখে পড়েছে, তাকে ব্যঙ্গ করা৷ কিন্তু যে কারণেই হোক, ছড়ায় এর্দোয়ানের যৌন পছন্দ-অপছন্দকে পাশবিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা সে ছাগলদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কেই হোক আর ভেড়াদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কেই হোক৷ এর তীব্র প্রতিবাদ জানান এর্দোয়ান৷
তবে এর্দোয়ান বার্গার নিয়ে খুশি নন জার্মানিতে বসবাসকারী তুর্কিদের একাংশ৷ এর মধ্যে অনেকে এর্দোয়ানের সমর্থকও রয়েছেন৷ ফলে সামাজিক মাধ্যমে ‘এর্দোয়ান বার্গার'-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন অনেকে৷ এছাড়া রেস্তোরাঁর বাইরেও অনেকের সন্দেহজনক ঘোরাঘুরি লক্ষ্য করেন টিমান৷ এর্দোয়ান সমর্থকদের কেউ কেউ আবার টিমানের রেস্তোরাঁয় যাওয়ার হুমকি দিয়েছে৷ এই অবস্থায় ক্রেতাদের নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয় বলে রেস্তোরাঁটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন টিমান৷ তবে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর পর রেস্তোরাঁটি আবার খোলার আশা প্রকাশ করেছেন তিনি৷
রেস্তোরাঁ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখলেও তুরস্কে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আদায়ে তাঁর প্রতিবাদ তিনি চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন৷