এলজিবিটিকিউদের প্রতি কি ইউরোপে নেতিবাচক মনোভাব বাড়ছে?
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ইউরোপের কিছু দেশে এলজিবিটিকিউদের অধিকার আবারও সীমিত করার চেষ্টা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুনির্দিষ্টভাবে নেতিবাচক প্রচারণার শিকার হচ্ছেন এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা৷ তবে সামগ্রিকভাবে সমাজে তাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব কম৷
গত জুলাইয়ে বার্লিনে প্রাইড মাসের ব়্যালিতে অংশ নেয়ার সময় ডিম হামলার শিকার হয়েছিলেন এক ব্যক্তি৷ কিন্তু সেই হামলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি তিনি৷
‘‘এটা এমন বড় কোনো ঘটনা নয়৷ আর পুলিশ এটা নিয়ে তেমন কিছু করতোও না,'' ডয়চে ভেলের সাংবাদিককে বলেন তিনি৷
পরিসংখ্যান বলছে, জার্মানিতে এলজিবিটিকিউদের উপর মৌখিক এবং শারীরিক আক্রমণ বাড়ছে৷ এবং ৯০ শতাংশ ঘটনা রিপোর্ট করা হয় না বলে জানিয়েছে জার্মানির সমকামিদের সংগঠন এলএসভিডি৷ আর এটাই একমাত্র উদ্বেগের বিষয় নয়৷
‘‘জনমত জরিপ ক্রমশ খারাপ হচ্ছে,'' বলেন এলএসভিডি মুখপাত্র কার্সটিন থস্ট৷
‘‘ট্রান্সফোবিক বিবৃতি উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে, এবং আমরা লক্ষ্য করেছি যে আমাদের ট্রান্সজেন্ডার সাংসদদের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হচ্ছে,'' এক ভিডিও বার্তায় বলেন তিনি৷
জার্মানিতে অবশ্য এলজিবিটিকিউদের অধিকার এখন বিস্তৃতও হচ্ছে৷ বার্লিন সম্প্রতি একজন মানুষের নিজের লিঙ্গ নির্ধারণের অধিকার সম্প্রসারণ করেছে ফলে কেউ চাইলে দাপ্তরিক নথিপত্রে থাকা নিজের লিঙ্গ পরিচয় সংশোধন করতে পারবেন৷ মূলত ট্রান্সজেন্ডার, নন-বাইনারি এবং ইন্টারসেক্সদেরক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে৷
সাংহাইয়ের লাল গালিচায় এলজিবিটিকিউদের নাচ
সম্প্রতি চীনের সাংহাইয়ের এক ক্লাবে প্রায় ২০০ জন মানুষ জড়ো হয়েছিলেন ৷ অনেকেই লাল এবং কালো ল্যাটেক্সের অন্তর্বাস এবং জালের আকারের স্টকিংস পরেছিলেন৷ বিস্তারিত জেনে নিন ছবিঘরে।
ছবি: Aly Song/REUTERS
কীভাবে শুরু
এই ধরনের ইভেন্টগুলি 'বল' নামে পরিচিত। বিশ শতকের মাঝামাঝিতে নিউ ইয়র্কের হারলেমে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায় এ জাতীয় উৎসব উদযাপন করতেন। আশির দশকে এলজিবিটিকিউরাও এই উৎসব উদযাপন শুরু করে।
ছবি: Aly Song/REUTERS
ভোগিং কী
এটি একটি নৃত্যশৈলী। হাতের গতি এবং কৌণিক বাহু এবং শরীরের ভঙ্গি দ্বারা এটি চিহ্নিত করা হয়। ফটোগ্রাফির জন্য মডেলরা যেমনভাবে পোজ দেয়, তার সঙ্গে এর খানিকটা মিল আছে।
ছবি: JADE GAO/AFP via Getty Images
শিল্পীরা কী বলছেন
সুই কাওয়াকুবো নামের এক ব্যক্তি বলেন, "আমি মনে করি ভোগিংয়ের সবচেয়ে জরুরি দিকটি হলো, আপনাকে নিজের মতো নাচতে হবে। যতটা গভীরভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন।" সুই কিকি হাউসের সদস্য। সাংহাই শহরের অন্যতম প্রধান "পরিবার" হিসাবে নিজেদের পরিচয় দেন তারা।
ছবি: Aly Song/REUTERS
গোপনীয়তায় পদবী বদল
গোপনীয়তা রক্ষা করতে জাপানি ফ্যাশন ডিজাইনার রেই কাওয়াকুবোর পদবী মঞ্চে ব্যবহার করেন তারা। সুইয়ের দাবি, তিনি অন্তর্মুখী ব্যক্তি। তার কথায়, "আমি বলব না যে ভোগিং আমাকে বহির্মুখী করেছে, তবে এটি আমাকে নতুন জন্ম দিয়েছে।"
ছবি: JADE GAO/AFP via Getty Images
কী কী ইভেন্ট
"ফেমে কুইন পারফরম্যান্স", "কাপল রিয়ালনেস", "ফেস" এবং "বডি" এর মতো বিভাগগুলিতে নানা পুরস্কার ছিল। আংশিক নৃত্য প্রতিযোগিতা, ফ্যাশন শো এবং পারফরমিং আর্ট মিলিয়েমিশিয়ে ছিলো ইভেন্টগুলি।
ছবি: Aly Song/REUTERS
অনুপ্রেরণা
নয়ের দশকে হিট হওয়া ম্যাডোনার গান এবং 'প্যারিস ইজ বার্নিং' ডকুমেন্টারিই এই ইভেন্টের অনুপ্রেরণা। পাঁচ বছর আগে সাংহাইয়ে প্রথম এই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ছবি: Aly Song/REUTERS
আরেক শিল্পীর মত
ভিজে কাওয়াকুবো এ শহরের প্রথম দিকের ভোগিং আর্ট পারফর্মারদের একজন। সাত বছর আগে একটি নাচের ক্লাসে ভোগিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি। কালভিন ক্লাইন এবং স্প্রেড ম্যাগাজিনের বিপণনে তাকে দেখা গিয়েছে। তিনি পরিচিত মুখ।
ছবি: Aly Song/REUTERS
চীনে এলজিবিটিকিউদের অবস্থা
২৮শে জুন আন্তর্জাতিক 'প্রাইড' দিবস ছিল। সাংহাই প্রাইড প্রায় ১০ বছর সফলভাবে চালানোর পরে ২০২০ সালে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। মে মাসে, বেইজিংয়ের ১৫ বছরের এলজিবিটি সেন্টারটিও বন্ধ হয়ে যায়।
ছবি: Aly Song/REUTERS
গবেষকের মত
নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এলজিবিটিকিউ ভিজ্যুয়াল এবং পারফরম্যান্স সংস্কৃতির গবেষক হংওয়েই বাও বলেছেন, "সরকার জাতীয় শক্তিকে জাতীয় পুনরুজ্জীবনকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে দেখছে। ফলে অল্পবয়সিরা নিজেদের প্রকাশ করতে পারছেন না। নিজস্ব ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার ইচ্ছাটাও চলে যাচ্ছে।"
ছবি: Aly Song/REUTERS
তবুও আশায় বাঁচা
ভোগিং শিল্পীদের আশা, ''সমাজ আরো সহনশীল হতে পারে।" টিনা কাওয়াকুবো (মঞ্চের নাম টিনোরা কাওয়াকুবো) নামে এক শিল্পী বলেন, "মানুষের এই ইভেন্টে অংশ নেয়ার কারণ শুধু মজা করা নয়। তারা সমাজে নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন না। তাই এখানে আসেন।"
ছবি: Aly Song/REUTERS
10 ছবি1 | 10
তবে সমকামিদের সংগঠন বলছে গতবছর এই আইন অনুমোদনের পর থেকে ট্রান্সফবিক আক্রমণও বেড়েছে৷ তবে এধরনের হামলা সামগ্রিকভাবে সমাজে তাদের প্রতি মনোভাবের প্রতিফলন নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ইউরোপের সর্বত্রও পরিস্থিতি একরকম নয়৷ এই মহাদেশে সমকামিদের অধিকার নিয়ে গবেষণা করছেন নীল দত্ত৷ তার হিসেবে ‘লিঙ্গবিরোধী' প্রচারণায় অর্থায়ন ২০২১ এবং ২০২২ সালের মধ্যে একবছরে একশো মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে৷ এক দশক আগের হিসেবে এই সংখ্যাটি অনেক বেশি৷
ইউরোপীয় ডিজিটাল মিডিয়া অবজারভেটরি জানাচ্ছে, অনলাইনে যেসব সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি গুজব এবং ভুল তথ্য ছড়ানো হয় তার মধ্যে এলজিবিটিকিউরা অন্যতম৷
এলজিবিটিকিউবিরোধীরা নিজের দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে নানারকম নেতিবাচক প্রচারণায় যোগ দিচ্ছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ আর রাশিয়া, হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডের মতো দেশগুলোর নানা রক্ষণশীল নীতি তাতে ইন্ধন যোগাচ্ছে৷