ইটালির একটি দ্বীপ পর্যটকদের কাছে ধীরে ধীরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ বিশেষ করে দ্বীপের নানা রকম তাজা মাছের রান্নার আকর্ষণই আলাদা৷ একটি রেস্তোরাঁ সেই ঐতিহ্য বিশেষভাবে ধরে রেখেছে৷
এখানে অনেক রেস্তোরাঁয় শুধুমাছ খাওয়া যায়৷ এর মধ্যে লুচানো কাসিনির ‘ইল কিয়াসো' বেশ বিখ্যাত৷ প্রায় ৪০ বছর ধরে সেখানে মাছ ও সামুদ্রিক জীব পরিবেশন করা হচ্ছে৷ কাঠকয়লায় সেঁকা, ভাজা অথবা সিদ্ধ করা পদগুলির সঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাস্তা খেতে দেওয়া হয়৷ লুচানো বলেন, ‘‘সে সময়ে এটা ছিল কাপোলিভেরির চতুর্থ রেস্তোরাঁ৷ তখন আরো উপরে দুটি প্রাচীন রেস্তোরাঁ ছিল৷ ১৯৭২ সালে আমি এটি চালু করি৷ তখন কাজের ধরন আলাদা ছিল৷ পর্যটন সবে শুরু হয়েছে, অনেক কাজ করতে হতো৷ এখন অনেক রেস্তোরাঁ চালু হয়েছে৷''
কাসিনির মতে, এখানকার সেরা মাছের দোকানটি পোর্টো আসুরো বন্দর এলাকায় অবস্থিত৷ রেস্তোরাঁ থেকে গাড়ি করে সেখানে যেতে ২০ মিনিট সময় লাগে৷ জেলেরা সবে যে তাজা মাছ ধরেছে, তিনি সেগুলি কিনতে পছন্দ করেন৷ লুচানো কাসিনি বলেন, ‘‘যেমন আজ রাতে এই মোরে ইল মাছ ধরা হয়েছে৷ পাতলা করে কেটে ভাজলে দারুণ স্বাদ পাওয়া যায়৷ এই ছোট মাছগুলি স্টু বানানোর জন্য আদর্শ৷ গলদা চিংড়িও রয়েছে৷এই কাঁকড়া দিয়ে খুব ভালো পাস্তা তৈরি করা যায়৷ এই অক্টোপাসেরও দারুণ স্বাদ৷''
অক্টোপাসের ওজন প্রায় আড়াই কিলো৷ আজ ‘ইল কিয়াসো' রেস্তোরাঁর খাদ্য তালিকায় এটা স্থান পাবে৷ কাসিনি এলবা দ্বীপের ঐতিহ্য অনুযায়ী স্টু রান্না করবেন৷ তার আগে অক্টোপাস ভালো করে পরিষ্কার করে ধুতে হবে৷ তারপর লবণাক্ত পানিতে সিদ্ধ করা হবে৷ এর মধ্যে পিঁয়াজকলি কেটে অলিভ অয়েলে হালকা করে ভাজতে হবে৷ দুটি বড় আলুও কেটে রাখতে হবে৷ লুচানো বলেন, ‘‘এই অক্টোপাসের ওজন প্রায় আড়াই কিলো৷ সিদ্ধ করতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট লাগে৷ কামড় দেবার সময় সামান্য শক্ত থাকলে ভালো৷ কখন চুলা বন্ধ করতে হবে. তা অনুভব করতে হয়৷ প্রত্যেকটি অক্টোপাস রান্না হতে আলাদা সময় লাগে৷''
মাছ আমাদের আর যা উপকার করে
‘মাছে ভাতে বাঙালি’৷ বাঙালির খাবারে তাই অন্তত মাছের একটা আয়োজন থাকবে না, এ প্রায় অকল্পনীয়৷ কিন্তু রসনাবিলাসের উপাদান হওয়া ছাড়াও মাছ যে আরো নানাভাবে আমাদের উপকার করে থাকে, তা কি জানতেন?
ছবি: Getty Images/AFP/A. Gharabli
পোড়া ক্ষত সারাতে তেলাপিয়ার চামড়া
রোগীর শরীরের পুড়ে যাওয়া ক্ষত সারাতে চিকিৎসকরা তেলাপিয়া মাছের ত্বকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখছেন বিজ্ঞানীরা৷ এখন পর্যন্ত সাফল্য পাওয়ার কথাই জানাচ্ছেন তাঁরা৷ তেলাপিয়ার ত্বকে মানুষের ত্বকের প্রায় সমপরিমাণ আর্দ্রতা আর কোলাজেন প্রোটিন আছে৷ এছাড়া তেলাপিয়ার ত্বক মানুষের ত্বকের মতোই রোগপ্রতিরোধী বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা৷
ছবি: Reuters/P.Whitaker
মাছ দিয়ে পেডিকিওর
সৌখিন অনেকেই এখন নিয়মিত পার্লারে গিয়ে পেডিকিওর, মেনিকিওর করান৷ এক ধরনের মাছ যে পেডিকিওরে ব্যবহার হয়, তা কি জানতেন? এই মাছের নাম ‘গারা রুফা’ হলেও একে সাধারণভাবে ‘ডাক্তার মাছ’ বলে ডাকা হয়৷ ছোট ছোট এই মাছে ভর্তি অ্যাকুরিয়ামে পা চুবিয়ে রাখলে, মাছগুলি পায়ের মরা চামড়া খেয়ে নেয়৷
ছবি: Colourbox
মাছের চামড়ায় ফ্যাশন
মাছের চামড়া এখন ব্যবহার হচ্ছে গরু বা ছাগলের চামড়ার বিকলপ হিসেবে৷ ব্যাগ, ব্লট এমনকি জুতাও তৈরি করা হচ্ছে মাছের চামড়া ব্যবহার করে৷ মাছের চামড়ার এ বাজার টেকসই করতে অবশ্য এখনও বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের৷
ছবি: Fotolia/Africa Studio
সৌন্দর্য বর্ধন
বসার ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে এখন অনেকের বাড়িতেই দেখা যায় বৈচিত্র্যময় অ্যাকুরিয়াম৷ আর তাতে শোভা পায় নানা রঙের মাছ৷ এই অ্যাকুরিয়ামে মাছ পোষাকে কেন্দ্র করে সব দেশেই গড়ে উঠেছে বড় বড় সব শিল্প৷ উৎপাদিত হচ্ছে মাছের খাবার, মাছের খেলনা থেকে শুরুর করে আরো নানা জিনিস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina
মাছের তেল
মাছ থেকে তৈরি হয় নানা রকমের তেল৷ এ সব তেল বিভিন্ন রোগে ওষুধের সহায়ক হিসেবে ডাক্তাররা রোগীদের খেতে বলেন৷ রোগ ছাড়াও শরীর সুস্থ রাখার জন্যও এসব তেল অনেকে নিয়মিত খান৷ মাছের তেলে শরীরের জন্য পুষ্টিকর ওমেগা-থ্রি নামের উপাদানের উপস্থিতি থাকে৷ হেরিং, টুনা, স্যামনসহ নানা মাছের শরীর থেকে এ তেল প্রস্তুত হয়৷ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মাছের তেলের নাম কড লিভার তেল৷ এটি তৈরি হয় কড মাছের লিভার থেকে৷
ছবি: Colourbox
5 ছবি1 | 5
অক্টোপাসের শুঁড়গুলি আলাদা করে মিক্সারে ছোট করতে হয়৷ তারপর পিঁয়াজকলির সঙ্গে তা যোগ করা হয়৷ রোসমেরির গোছা ছোট করে কেটে পাত্রে দিতে হয়৷ তারপর এক লিটার স্বচ্ছ পানি অথবা মাছ সিদ্ধ করার পর অবশিষ্ট পানি ঢালতে হয়৷ শেষে আলু দিয়ে ঢিমে আঁচে ঘণ্টাখানেক রান্না করতে হয়৷ কাসিনি বলেন, ‘‘আমার মা-ও এই স্টু রান্না করেছেন৷ কারণ, এলবা দ্বীপে চিরকালই অনেক অক্টোপাস পাওয়া যেতো৷ আগে আমরা সপ্তাহে প্রায় ৩ বার অক্টোপাস খেতাম৷ স্বাদ খুব ভালো হলেও তাই এটা আমাদের জন্য কোনো অভিনব খাদ্য নয়৷''
এলবা দ্বীপের ঐতিহ্যগত খাবার আসলে অত্যন্ত সহজ-সরল, কিছুটা গ্রাম্যও বটে৷ তবে এত তাজা উপকরণ ও অসাধারণ নিসর্গের কারণে সেই অভিজ্ঞতা বেশ অনবদ্য হয়৷
ইয়ানা ও্যর্টেল/এসবি
জার্মানির বাজারে বাংলাদেশের মাছ
মাছে-ভাতে বাঙালি বলে কথা৷ হ্যাঁ, বাঙালির সেই রসনা মেটাতেই রুই, কাতলা, ইলিশসহ বাংলাদেশের প্রায় সব মাছই আজকাল পাওয়া যায় জার্মানিতে৷ সে গল্পই থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/N. Sattar
বাংলাদেশি মাছের বাজার
বাঙালি যে দেশেই বসবাস করুক না কেন, তাদের মাছ চাই৷ আর দেশীয় মাছ হলে তো কথাই নেই৷ জার্মানির বেশ কিছু শহরে তাই বাংলাদেশি পণ্যের দোকান রয়েছে, যেখানে মাছ ছাড়াও পাওয়া যায় অন্যান্য অনেকরকম খাবার৷
ছবি: DW/N. Sattar
বন শহরে বাংলাদেশি মাছের বাজার
এ দোকানে ইলিশ, রুই, কাতলা, চিংড়ি, পাবদা, কাজলি, পুটি, কেচকি, রূপচাঁদা ছাড়াও নানারকমের ছোট ও বড় মাছ পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/N. Sattar
বিশাল আকারের হিমায়িত রুই
কোলন শহরে রয়েছে বাংলাদেশি খাবারের দোকান৷ বড় বড় আস্ত রুই মাছগুলো এভাবেই বাংলাদেশ থেকে আসে৷ ক্রেতারা যে যেভাবে যতটুকু চান, তাঁকে সেভাবে দোকান থেকেই ইলেকট্রনিক ছুড়ি দিয়ে মাছ কেটে দেওয়া হয়৷
ছবি: DW/N. Sattar
স্বাদ করে সাধের ইলিশ খাওয়া
সারা বছরই অনেক বাঙালি নানাভাবে ইলিশ খান৷ তবে ১লা বৈশাখে ইলিশ চাই-ই চাই৷ যে কারণে অনেকে আগে থেকেই যথেষ্ট পরিমাণে ইলিশ কিনে ফ্রিজে রেখে দেন তাঁরা, পাছে ফুরিয়ে যায়৷ ইলিশ ছাড়া কি বাঙালির ১লা বৈশাখ জমে!
ছবি: Eesha Kheny
সবচেয়ে বড় বাংলাদেশি মাছের দোকান ফ্রাংকফু্র্টে
জার্মানির বাণিজ্য নগরী ফ্রাংকফুর্ট৷ সেখানে সরাসরি বাংলাদেশ বা লন্ডন থেকে মাছা আনা হয়৷ আর কোলন, বন বা অন্যান্য শহরের ব্যবসায়ীরা মাসে এক বা দু’বার মাছসহ অন্যান্য বাংলাদেশি পণ্য আনতে ফ্রাংকফুর্টে যান৷ মাঝে মাঝে অবশ্য তাঁরা লন্ডন থেকেও এ সব পণ্য নিয়ে আসেন৷ জানালেন বনের বাংলা শপের মালিক রিপন সাহেব৷
ছবি: DW/N. Sattar
বাঙালির আবেগ
জার্মানিতে এমন বাঙালিও আছেন, যাঁরা নিজের দেশের ফ্রোজেন মাছ ছাড়া তৃপ্তি করে ভাতই খেতে পারেন না৷ জার্মানির স্বাস্থ্যকর তাজা মাছে তাঁদের পেট ভরলেও মন যে ভরে না!
ছবি: DW/N. Sattar
ছোট মাছ
ছোট মাছের চচ্চরি! আহারে কি দারুণ স্বাদ! তা হোক না ফ্রোজেন, তাতে কি?
ছবি: DW/N. Sattar
শুটকি মাছ
শুধু ফ্রোজেন মাছ নয়, জার্মানির বাজারে ভোজন রসিক বাঙালির প্রিয় শুটকি মাছও রয়েছে৷
ছবি: DW/N. Sattar
মাছের মূল্য
রুই মাছ প্রতি কেজি পাঁচ ইউরো বা বাংলাদেশি টাকায় পাঁচ’শ টাকা৷ আর এক কেজি ইলিশ মাছের দাম এক হাজার তিন’শো টাকা৷ অনেকেরই প্রিয় দেশি চিংড়ি মাছ৷ যার মূল্যও ইলিশের মতোই৷ বাংলাদেশি ৮০০ টাকা প্রতি কেজি পাবদা মাছের দাম৷