এলমাউ ক্যাসল হলো জি-সেভেনের শেষ সুযোগ
৫ জুন ২০১৫জেনোয়া, ২০শে জুলাই, ২০০১ সাল৷ ইটালির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুস্কোনি গ্রুপ অফ এইট-কে বন্দরনগরীটিতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন – কিন্তু হাজার হাজার আন্দোলনকারীও শীর্ষবৈঠকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য জেনোয়ায় এসে হাজির হন৷ তাদের চোখে জি-এইট ছিল সব পাপের মূল, নিওলিবারালিজম বিশ্বের যাবতীয় অন্যায়ের জন্য দায়ী৷
সেদিন ২০ বছর বয়সি কারাবিনিয়েরি পুলিশ মারিও প্লাকানিকা-র গুলিতে প্রাণ হারান ২৩ বছর বয়সি বিক্ষোভকারী কার্লো জিউলিয়ানি৷ সেজন্য শীর্ষবৈঠক বন্ধ করা হয়নি বটে, তবে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের শীর্ষবৈঠক নির্জন, নিরিবিলি স্থানে করা হবে৷ সেটাই ছিল জি-এইটের কফিনে প্রথম পেরেক৷
এর কয়েক বছর পরে সারা বিশ্ব যখন আর্থিক সংকটের মুখে, তখন জি-এইট উপলব্ধি করে যে, এ সমস্যা তাদের পক্ষে একা সমাধান করা সম্ভব নয়৷ নতুন করে ডাক পড়ে জি-টোয়েন্টির, যা তখনো অবধি শুধু অর্থমন্ত্রীদের ফোরাম ছিল৷ এবার সেই জি-টোয়েন্টিকে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট ফোর্স নাম দিয়ে মাঠে নামানো হয় – ২০০৮ সালে ওয়াশিংটনে জি-টোয়েন্টির সেই বৈঠকে কিন্তু রাষ্ট্র – তথা সরকারপ্রধানেরা আসন গ্রহণ করেন৷ ফলে জি-এইট তার গুরুত্ব হারায়৷
২০১০ সালের গ্রীষ্মে এক ধরনের ডাবল সামিট-এর প্রচেষ্টা করা হয় ক্যানাডায়, প্রথমে জি-এইট, পরে জি-টোয়েন্টির বৈঠক ডেকে৷ তা-তেও জি-এইট-কে বাঁচানো যায়নি৷ ঠিক করা হয়, এখন থেকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা হবে জি-টোয়েন্টি-তে; জি-এইট-এ হবে বিদেশনীতি সংক্রান্ত শলা-পরামর্শ৷ কিন্তু সারা বিশ্ব যখন অর্থসংকট নিয়ে ব্যস্ত, তখন জি-এইট-এর বলার কিংবা করার বিশেষ কিছু বাকি থাকেনি৷
অসাম্য দূর করো
জি-এইট এবার ‘‘কমিউনিটি অফ শেয়ার্ড ভ্যালুজ'' বা ‘‘যৌথ মূল্যবোধের সংঘ'' হয়ে ওঠার চেষ্টা করে৷ সারা বিশ্বে ধনি-দরিদ্রের তফাৎ ছিল সে ধরনের একটি সার্বজনীন সমস্যা৷ কাজেই জি-সেভেন এবং জি-এইট-এর একাধিক শীর্ষবৈঠকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, পুঁজির উপর কর বৃদ্ধি, সংরক্ষণনীতির কুফল, বহুজাতিক সংস্থাগুলির কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা ইত্যাদি নিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে৷
তা-তে ফললাভ হলেও তা নামমাত্র, ধনবণ্টনের ক্ষেত্রে যা বিশেষভাবে নজরে পড়ে৷ চার বছর আগের আর্থিক সংকট যাবৎ বিশ্বের ৮০ জন সবচেয়ে ধনি ব্যক্তির সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক দশমিক তিন ট্রিলিয়ন ডলার থেকে এক দশমিক নয় ট্রিলিয়ন ডলারে! অর্থাৎ এই আশিজনের সম্পত্তি আর বিশ্বের জনসংখ্যার দরিদ্র অংশ – মানবজাতির অর্ধেক – সাড়ে তিন'শ কোটি মানুষ – অর্থাৎ গরীবদের সম্পত্তির পরিমাণ এক৷ এ ধরনের আরো নানান পরিসংখ্যান দেওয়া যেতে পারে, উত্তর গোলার্ধ বা দক্ষিণ গোলার্ধ, ধনি-দরিদ্র সব দেশ থেকে৷
রাশিয়া বাদে কেঁচে গণ্ডূষ করে জি-সেভেন-এর নেতারা সে'কথা জানেন৷ কিন্তু লাগামছাড়া পুঁজিবাদকে লাগাম পরানোর কোনো বাস্তব পরিকল্পনা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ কাজেই এই নামি-দামি সংঘটির চূড়ান্ত সুযোগ সম্ভবত এ বছরের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের বিশেষ শীর্ষবৈঠকে, যেখানে ২০১৫ সালের পরে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ নির্ধারণ করা হবে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে চরম দারিদ্র্য দূর করতে হলে, এলমাউ শীর্ষবৈঠকে জি-সেভেন সদস্যদের তাদের নিজেদের লক্ষ্য এবং মাত্রা নির্দ্দিষ্ট করতে হবে৷