আওয়ামী লীগ নেত্রীর হুমকি ও পৌর নির্বাচন
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১তিনি ভোটের আগের দিন শনিবার ঢাকায় ফিরে এসেছেন৷ তবে ঠাকুরগাঁও পৌর নির্বাচনের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নেত্রীর কথামতই কাজ করেছেন তার কর্মীরা৷ ভোটাররা পছন্দ মতো প্রার্থীকে ভোট দিতে না পারার অভিযোগ উঠেছে৷ সহায়তার নামে বুথে ঢুকে কর্মীরা ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতেই বাধ্য করেছেন, এমন কিছু ভিডিও পাওয়া গেছে৷
মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম গত বৃহস্পতিবার এক নির্বাচনী সভায় বলেন, ‘‘যাদের মনে ধানের শীষের সঙ্গে প্রেম আছে, তারা কী করবেন? ১৩ তারিখে ঠাকুরগাঁও ছেড়ে চলে যাবেন৷ ১৩ তারিখ সন্ধ্যার পরে তাদের দেখতে চাই না৷ তাদের ভোটকেন্দ্রে আসার কোনো প্রায়োজন নাই৷ তাহলে ভোটকেন্দ্রে যাবে শুধু কে? নৌকা, নৌকা আর নৌকা৷’’
এর একদিন আগে ওই এলাকারই আরেকটি নির্বাচনী সভায় তিনি বলেন, ‘‘সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যারা নৌকায় ভোট দিতে না চান, ১৩ তারিখ সন্ধ্যার পরে আপনাদের চেহারা এলাকায় দেখতে চাই না৷ কোথায় যাবেন আমি জানি না৷ তবে ঠাকুরগাঁওয়ে থাকতে পারবেন না৷ যারা নৌকায় ভোট না দেবেন, তারা ঠাকুরগাঁও থেকে বিদায় নেবেন৷’’
তার এই দুইটি বক্তব্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে৷ যা ডয়চে ভেলের কাছে অস্বীকার করেননি তিনি৷ এই বক্তব্যের জন্য তিনি অনুতপ্তও নন৷ বলেন, ‘‘আমি যা বলেছি নৌকার জন্যই বলেছি৷’’ তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনে মাঠে কি কেউ কাউকে সমীহ করে কথা বলে? আমি আমার ভোট নেয়ার কৌশলে বলব, সেও আমাকে বলবে৷ প্রতিপক্ষতো নির্বাচনের মাঠে এরকমই করে৷ এটা নিয়ে কেন যে সবাই এমন করছেন! কত জায়গায় কত কিছু ঘটছে৷...শুধু আমারটাই ভাইরাল হয়েছে৷’’
তবে এক পর্যায়ে তিনি নতুন ব্যাখ্যা দেন৷ দাবি করেন, ‘‘আমি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপির সন্ত্রাসীদের চলে যেতে বলেছি৷’’ তার ভিডিওতে সন্ত্রাসী শব্দটি যে নেই তা মনে করিয়ে দিলে বলেন, ‘‘না থাকতে পারে৷ কিন্তু আমার উদ্দেশ্য ছিলো সন্ত্রাসীদের চলে যেতে বলা৷ এটা আসলে একই কথা৷’’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও তার এই ধরনের বক্তব্যে বিব্রত৷ সে কারণেই তাকে শনিবার তলব করে ঢাকায় আনা হয়৷ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার সাথে টেলিফোনে কথাও বলেন বিষয়টি নিয়ে৷ তিনি একদিন আগে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘তার বক্তব্য তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷ তার অডিও-ভিডিও পরীক্ষা করা হচ্ছে৷’’
এর জবাবে মাহমুদা বেগম বলেন, ‘‘হ্যাঁ তার (ওবায়দুল কাদের) সাথে আমার কথা হয়েছে৷ তদন্ত করুক, দেখুক৷ ভিডিওতে কী বলেছি দেখুক৷ আমি তো ভিডিওতে কোনো থানার ওসিকে বলি নাই, এসপিকে বলি নাই যে এটা আপনি কেটে নিয়ে আসেন, এটা করে নিয়ে আসেন৷ আমি যা বলেছি তা বলতেই পারি৷ আমি তো নৌকার জন্যই বলেছি৷’’
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মির্জা ফয়সাল আমীন জানান, তারা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন ও ডিসি-এসপির কাছে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাননি৷ নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন৷ নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এরকম কিছু এখানো আসেনি৷ তারপরও ওই নেত্রীর বক্তব্য তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷ অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’’ তবে তিনি দাবি করেন, ‘‘আজকাল ফেসবুক-ইউটিউবে অনেক কিছু ভাইরাল করে দেয়া যায়৷ আদৌ তিনি ওই কথা বলেছেন কিনা তা নিশ্চিত নয়৷’’ মাহমুদা বেগম তার বক্তব্যের কথা অস্বীকার করছেন না বলে জানালে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সেটা জানি না৷ আমরা তদন্ত করে দেখতে বলেছি৷’’
মির্জা ফয়সাল আমীন অভিযোগ করেন, ‘‘আজ (রবিবার) নির্বাচনের দিনও ওই নেত্রীর বক্তব্যের প্রতিফলনই ঘটেছে৷ এখানে (ঠাকুরগাঁও) ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে৷ ২১ সেন্টারের মধ্যে ১৯টি সেন্টারই তারা দখল করে নেয়৷ ভোটাররা চাইলেও ধানের শীষে ভোট দিতে পারেননি৷ ভোটারদের বলেছে, আপনাদের ভোট নৌকায় দেয়া হয়ে গেছে৷ আমাদের ভোটার ও নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷'' তিনি জানান, তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন চলাকালেও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছে৷ কিন্তু কোনো ফল হয়নি৷’’
আরো অনেক পৌর এলকায় নির্বাচনে একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ নির্বাচন বর্জনও করেছে স্বতন্ত্র এবং বিএনপি'র প্রার্থীরা কয়েকটি পৌরসভায়৷ সহিংসতায় একজন নিহতও হয়েছেন৷ তবে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘টেলিভিশনের খবরে এরকম কিছু তো আমি দেখেনি৷ যদি ঘটে থাকে, অভিযোগ পাওয়া যায় এবং তা যদি সঠিক তথ্য ভিত্তিক হয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব৷’’