1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এশিয়ার যুক্তরাষ্ট্রকে দরকার, ট্রাম্পকে নয়

২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

এশিয়ার দেশগুলোর দৃষ্টিকোণ থেকে, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টতই ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে কিছুটা সরে গেছে, অন্যদিকে অপ্রতিরোধ্য চীনের ক্রমউত্থান ঘটছে ‘গ্লোবাল সুপারপাওয়ার' হিসেবে, জানাচ্ছেন ডিডাব্লিউ-র আলেকজান্ডার ফ্রয়েন্ড৷

ছবি: picture-alliance/dpa/A. Harnik

দুঃখিত মিস্টার ট্রাম্প, আপনার হয়ত অন্যরকম মনে হতে পারে৷ কিন্তু আপনার নর্থ কোরিয়া উপর আপনা অসংখ্য টুইট ও লম্বা এশিয়ার ট্যুরের পরও এশিয়ার জন্য, আপনি নিশ্চিতভাবেই ২০১৭ সালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন৷

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আপনি এ অঞ্চলের মিডিয়ার মনোযোগ কাড়তে সমর্থ্য হয়েছেন৷ কিন্তু এর অর্থ এটা দাঁড়ায় না যে বিশ্বের এ প্রান্তের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সম্প্রসারণে তা কোনো অর্থপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পেরেছে৷ ক্ষমতায় আপনার প্রথম বছরটা এশিয়ার জন্য কেবল অস্পষ্টতা ও অস্থিরতা বয়ে এনেছে৷ এর শুরু আপনার বহুল সমালোচিত ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা' দিয়ে যা ছিল বিশ্বের সাতটি মুসলিমপ্রধান দেশের মানুষদের যুক্তরাষ্ট্রে না ঢুকতে দেয়ার ঘোষণা৷ তারপর এলো জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আপনার সাম্প্রতিক ঘোষণা৷ আপনার উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপদ করা, কিন্তু কেবলমাত্র যা করতে আপনি সক্ষম হলেন তা হলো, এশিয়াসহ বিশ্বের তাবৎ মুসলিমকে আপনার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিলেন৷

এটা বেশ বিভ্রান্তিকর যে কেন আপনি ইরানের মতো দেশের বিরুদ্ধে ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা' জারি করলেন, কিন্তু সৌদি আরব বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় যেখানে এ দেশগুলো উগ্র সন্ত্রাসবাদকে উসকে দেয় বা অনেকক্ষেত্রে সহ্য করে৷

আলেকজান্ডার ফ্রয়েন্ড, প্রধান, এশিয়া বিভাগ, ডয়চে ভেলে

পাকিস্তান এবং বিশেষ করে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি সামলাতে কোনো বিশ্বাসযোগ্য কৌশল আপনি হাজির করতে পারেননি৷ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্পের অঙ্গিকার ছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার করবে৷ কিন্তু এখন আপনি বরং চান, ওই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে মার্কিন বাহিনী আরো গেড়ে বসুক৷

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানেও আপনার সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷ অসহায় মানুষদের উপর ভয়াবহ অত্যাচার চালানো হয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়েছে, ক্যাথলিক পোপ পর্যন্ত ভিন্নধর্মাবলম্বী মানুষদের উপর অত্যাচার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন অথচ এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউজ একেবারে নীরব৷

মিসাইল নিয়ে টুইট

দক্ষিণ কোরিয়ার কিম জং উনের ক্রমাগত উসকানি মোকাবেলাতেও আপনার কোনো স্ট্র্যাটেজি নেই, কেবল টুইটের বন্যা বইয়ে দেয়া ছাড়া৷ উত্তর এশিয়ার দেশের উপর আপনার কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পিয়ংইয়ংয়ের বিদ্রোহী আচরণ শান্ত করতে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারছে না৷ তার উপর, চীন ও রাশিয়াও আপনার এসব প্রচেষ্টাকে পুরোপুরি মেনে নিতে পারেনি৷

আপনার ক্রমাগত হুমকির পরও, পিয়ংইয়ংয়ের ‘রকেটম্যান' নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে এবং এ পরিস্থিতিতে সম্মুখ বৈঠকের কোনো বিকল্প নেয়৷ এক্ষেত্রে মিত্র দেশকে পাশে পাশে প্রয়োজন যা করতে আপনি ব্যর্থ হয়েছেন৷

কোরিয়ান পেনিনসুলার সাথে এমন অনিশ্চিত অবস্থাকে জাপানের রক্ষণশীল নেতা প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তাঁর দেশের সংবিধানে রদবদল ঘটানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে৷ আপনার ‘গল্ফ ডিপ্লোমেসি'-র প্রভাব পড়েছে দু'দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কেও৷

অদ্ভুত বন্ধুত্ব

 দেখা যাচ্ছে আপনি কিছু অদ্ভুত রাজনৈতিক বন্ধু তৈরি করেছেন যেমন ফিলিপাইন্সের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে যিনি একজন স্বঘোষিত হত্যাকারী, মাদক নির্মুলের নামে যিনি নিজের দেশের হাজারো লোকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছেন৷ সারা বিশ্ব আরো দেখেছে যে কীভাবে আপনি আপনার ‘প্রকৃত বন্ধু' ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আঁকড়ে আছেন৷ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে আপনারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি, তবে আপনি নতুন দিল্লিকে মুসলিম জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে এক বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন৷ অন্যদিকে আপনার বন্ধু মোদী ও তাঁর বন্ধুরা কেমন করে ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদ উসকে দিচ্ছে সে বিষয়টা আপনি এড়িয়ে গেছেন পুরোপুরি৷

ঈগল থেকে হাঁস বনে যাওয়া

তবে সবচেয়ে মজার হলো আপনি নিজেকে যেভাবে চীনের কাছে উপস্থাপন করেছেন৷ নির্বাচনের সময়, আপনি বেইজিংয়ের অন্যায্য বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এর বিরুদ্ধে কাজ করার অঙ্গিকার করেছিলেন এবং চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিশার বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় প্রয়োজনে চীনের পণ্য বর্জন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু আপনার  চীন সফরের সময় যথারীতি আপনারনীরব সমালোচনা কোনো মূল্য পায়নি৷ আপনি কেবল দু'দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে কয়েকটা বাণিজ্যিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এসেছেন৷ অবশ্য এটা তেমন অবাক করার মতো কোনো ঘটনা নয়৷ কারণ মোটের উপর, আপনি পৃথিবীর অন্যতম ক্ষমতাধর মানুষ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর মুখোমুখি হয়েছিলেন তখন৷

পরপর দু'বার ক্ষমতায় থাকা শি জিনপিং তাঁর ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনেশিয়েটিভ'-এর মাধ্যমে চীনসহ অন্যান্য এশিয়ার দেশগুলোর সামনে নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন দাঁড় করিয়েছেন৷ এ থেকে বোঝা যায়, সামনের দশকগুলোতে এশিয়ার অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে চীনের৷ চীন যেখানে দূরের ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনা করছে, আপনি তখন ব্যস্ত আছেন আপনা ‘টুইটার' সামলাতে৷

এশিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে বিচ্যুত হয়েছে যেখানে চীন এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে৷ আপনার বিপর্যস্ত নীতির কারণে, আপনি আপনার গ্রহণযোগ্যতা ও ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলার অসংখ্য সুযোগ হারিয়েছেন৷ কাজেই মি. ট্রাম্প, ২০১৭ সাল না আপনার জন্য, না এশিয়ার জন্য কোনো ভালো বছর ছিল৷

আলেকজান্ডার ফ্রয়েন্ড / আরএন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ