কেন্দ্রবিন্দু এশিয়া
৩ জুলাই ২০১৩মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি এশিয়ামুখী হয়ে ওঠে কেরির পূর্বসূরি হিলারি ক্লিন্টনের আমলে৷ তিনিই ‘‘অ্যামেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় শতাব্দী'' শুরু হওয়ার কথা ঘোষণা করেন৷ ২০০৯ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীপদের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ক্লিন্টনের প্রথম বিদেশযাত্রা তাঁকে নিয়ে যায় এশিয়া অভিমুখে৷
কিন্তু বিগত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এশীয় সহযোগীদের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে, ওয়াশিংটনের এশিয়ার প্রতি আগ্রহ – অন্তত মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে এশিয়ার অগ্রাধিকার কমছে কিনা, বিশেষ করে কেরি যখন দৃশ্যত সিরিয়া সংঘাত এবং ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনে সম্পর্কের প্রতিই বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন৷
বারংবার আশ্বাস
আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামে কেরি ঠিক সেই সন্দেহই দূর করার চেষ্টা করেছেন: সোমবার ব্রুনেই-তে তিনি বিশেষ জোর দিয়ে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া থেকে নজর ফেরাচ্ছে না৷ এমনকি আগামীতে এশিয়ায় মার্কিন উদ্যোগ বাড়ানো সম্ভব হবে বলে কেরি আশা প্রকাশ করেন৷ কেরির এ ঘোষণা আসিয়ান-এর দশটি দেশই নয়, সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত, জাপান. নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিদের সামনে৷ ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতিবছর এই আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরাম বা এআরএফ আয়োজিত হচ্ছে, এবং বিশ্বরাজনীতির মঞ্চ হিসেবে তার গুরুত্ব বেড়েছে বৈ কমেনি৷
কেরির ঘোষণার এক মাস আগেই মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হাগেল এই অঞ্চলের নিরাপত্তানীতি জনিত বৃহত্তম সম্মেলন ‘শাংগ্রি-লা সংলাপ'-এ বলেন: ‘‘(মার্কিন) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট অতীতের চেয়ে কমতে চলেছে, সে কথা ঠিক৷ কিন্তু তা থেকে ধরে নেওয়া যে, আমাদের কৌশলগত নীতির কোনো পরিবর্তন ঘটছে, সেটা ভুল৷''
কৌশলগত চ্যালেঞ্জ
এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একাধিক কৌশলগত চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে: তার মধ্যে দক্ষিণ এবং পূর্ব চীন সাগরের দ্বীপগুলোর মালিকানা নিয়ে বিরোধ, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি এবং মিয়ানমারে উপজাতিক এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা বলা যেতে পারে৷ দক্ষিণ চীন সাগরের কয়েকটি দ্বীপকে কেন্দ্র করে চীন ও জাপানের মধ্যে বিরোধ সম্পর্কে কেরি ব্রুনেই-তে বলেন: ‘‘শীঘ্রই একটি কার্যকরি কোড অফ কন্ডাক্ট (ব্যবহারিক আচরণ সংক্রান্ত নীতিমালা) গড়ে তোলার পথে প্রগতি অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করি, যে নীতিমালা এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করবে৷''
কেরি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ার একক সংঘাতগুলিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে না, বরং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সংঘাত সমাধানের জন্য চাপ দেবে৷ স্পষ্টত ওয়াশিংটন এই পন্থায় তার এশীয় সহযোগীদের মনোবল শক্ত করছে এবং চীনের একটি বিপক্ষ শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, যদিও সেটা চীনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘাতে না গিয়ে৷ তবে এই ধরি মাছ না ছুঁই পানি নীতি বাস্তবে কাজ করবে কিনা এবং করলেও কতদিন করবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের দ্বিধা আছে৷
তবে পূর্ব রণাঙ্গনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এক নতুন ঠাণ্ডা লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন না কেউই, কেননা দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও আর্থিক যোগাযোগ বহুমুখী ও দৃঢ়৷ কৌশলগতভাবেও, উত্তর কোরিয়া যে আণবিক অস্ত্রে সজ্জিত হোক, সেটা চীন কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কারোরই কাম্য নয়৷