1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এসএসসিতে নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি: জিপিএর বদলে বর্ণ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ জুলাই ২০২৪

পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়নে জিপিএ পদ্ধতি উঠিয়ে সাত স্কেলে মূল্যায়ন হবে৷ সেই স্কেলগুলোর বাংলা নামও নির্ধারণ করা হয়েছিল৷ কিন্তু সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নাম নয় ইংরেজি বর্ণ দিয়ে তা নির্ধারণ করা হবে৷

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের একটি দল
কোনো শিক্ষার্থী যদি ৭০ শতাংশ কর্মদিবস ক্লাসে উপস্থিত না থাকে তাহলে সে পাবলিক পরীক্ষা দিতে পারবে না৷ আর আগের মতো টেস্ট পরীক্ষা থাকবে না৷ এসএসসি পরীক্ষা হবে শুধু দশম শ্রেণির সিলেবাসের ভিত্তিতেছবি: Mortuza Rashed/DW

তবে সেই বর্ণগুলো কী হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবির) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান৷ তিনি বলেন, এটা ইংরেজি বর্ণ দিয়ে নির্ধারণ করা হলেও বর্তমানে প্রচলিত নম্বরের ভিত্তিতে যে গ্রেডিং সিস্টেম আছে সেরকম হবে না৷

নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যা থাকছে

মূল্যায়নের জন্য ৬৫ শতাংশ ওয়েটেজ হবে লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে এবং ৩৫ ভাগ ওয়েটেজ হবে কার্যক্রমভিত্তিক, যেটা সরাসরি যার যার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ওপর থাকবে৷

কোনো শিক্ষার্থী যদি ৭০ শতাংশ কর্মদিবস ক্লাসে উপস্থিত না থাকে তাহলে সে পাবলিক পরীক্ষা দিতে পারবে না৷ আর আগের মতো টেস্ট পরীক্ষা থাকবে না৷ এসএসসি পরীক্ষা হবে শুধু দশম শ্রেণির সিলেবাসের ভিত্তিতে৷

কোনো শিক্ষার্থী যদি এসএসসি পরীক্ষায় এক বা দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হয় তাহলে শর্তসাপেক্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পাবে৷ তবে তাকে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ বিষয়ে পাস করতে হবে৷ আর তিন বা তার বেশি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হলে একাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া যাবে না৷

লিখিত ও কার্যক্রমভিত্তিক এই দুই ভাগে মূল্যায়ন হলেও প্রশ্নের ধরন এখনকার মতো থাকছে না৷ কার্যক্রমভিত্তিক, যেমন অ্যাসাইনমেন্ট করা, উপস্থাপন, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, সমস্যার সমাধান করা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে হবে লিখিত অংশের মূল্যায়ন৷ শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনেই এখনকার মতো কেন্দ্রভিত্তিতে হবে পরীক্ষা বা মূল্যায়ন৷

একেকটি বিষয়ে পাঁচ ঘণ্টা পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও এটা আরো একটু নমনীয় করার জন্য সোমবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ প্রতিটি বিষয়ে এক স্কুল দিবসে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে৷

আরেকটু কম্যুনিকেটিভ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে: মশিউজ্জামান

This browser does not support the audio element.

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবির) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘‘আমরা তো আগেই মূল্যায়নের জন্য সাত মাত্রার স্কেল নির্ধারণ করেছিলাম৷ এর সর্বনিম্ন ছিলো ‘প্রারম্ভিক’৷ আর সর্বোচ্চ ‘অনন্য’৷ কিন্তু এখন বলা হচ্ছে যে, যদি কেউ বলে আমার বাচ্চা ‘অর্জনমুখী’ পেয়েছে৷ তাহলে অনেকে বুঝবে না৷ তারা বলবে এটা কী? নম্বর কতো? কারণ এখানে তো কোনো নম্বর থাকবে না৷ তাই এটাকে আরেকটু কম্যুনিকেটিভ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ আগে যেমন এ+ ছিলো সর্বোচ্চ নম্বর৷ এখন সেটাকে ‘এ’ দিয়ে বোঝালে মানুষ বুঝতে পারবে যে এটা সর্বোচ্চ নম্বর৷ আগে আমরা স্কেলের সাতটি ঘর পূরণ করে দেয়ার কথা বলেছিলাম৷ যার যত ঘর পূরণ হবে সে অনুযায়ী তার ফল হবে৷ এখন সাত ঘর পূরণ হলে ধরেন ‘এ’ হবে৷ সর্বোচ্চ ফল এটা৷’’

তিনি জানান, ‘‘এগুলো ইংরেজি বর্ণ দিয়েই নির্ধারণ করা হবে৷ তবে বর্ণগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷ আর মূল্যায়ন পদ্ধতি আগের যে সিদ্ধান্ত ছিলো সেরকমই হবে৷’’

আগে গ্রেডিং গুলোর নাম দেয়া হয়েছিলো অনন্য, অর্জনমুখী, অগ্রগামী, সক্রিয়, অনুসন্ধানী, বিকাশমান ও প্রারম্ভিক৷ সর্বোচ্চ স্কেল ‘অনন্য’ বলতে শিক্ষার্থীর সব বিষয়ে পারদর্শিতার চূড়ান্ত স্তর৷ প্রারম্ভিক স্তর পারদর্শিতার সবচেয়ে নিচের স্তর৷ এখন শুধু এই নাম পরিবর্তন হবে৷

‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১’ অনুযায়ী ২০২৩ সালে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷ চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হয়েছে৷ ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এটি চালু হবে৷ তার সঙ্গে নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি৷

শিক্ষার্থী ও অভিভাকরা যা বলছেন

নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি এখন যারা নবম শ্রেণিতে পড়েন তাদের জন্য৷ তারা এখন নতুন পাঠক্রমে পড়ছেন৷ যখন এসএসসি পরীক্ষা দেবেন তাদের মূল্যায়ন হবে নতুন পদ্ধতিতে৷ তারা আবার যখন এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন সেই সময় থেকে এইচএসসিতে নতুন মূল্যায়ন চালু হবে৷ 

ঢাকার আইডিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী সাকিব আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা নতুন পাঠক্রমে পড়া শুরু করেছি৷ মূল্যায়ন নিয়ে আমরা এখনো কিছু বুঝতে পারছি না৷ শুনেছি জিপিএ নাকি থাকবে না৷ স্যাররাও আমাদের ঠিক মতো কিছু বলতে পারছেন না৷’’ 

একই ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় ঢাকার আরো কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে৷

গ্রেডিং স্তর যত বাড়বে তত ভালো: সিদ্দিকুর

This browser does not support the audio element.

ঢাকার একজন অভিভাবক রেজাউল আহমেদের দুই সন্তান অষ্টম এবং নবম শ্রেণিতে পড়ে৷ তার সন্তানেরা নতুন পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘নতুন পাঠক্রমের বইগুলো আমি দেখেছি৷ শিক্ষকরা যদি বইগুলো ঠিক মতো পড়াতে পারেন তাহলে বইগুলো আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে৷ কিন্তু মূল্যায়ন পদ্ধতি আমি নিজেই বুঝতে পারছি না৷ আমার সন্তানরাও এটা নিয়ে অন্ধকারে আছে৷ এটা আসলে আরো স্পষ্ট করা প্রয়োজন৷ আর বারবার মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন করলে বিভ্রান্তি বাড়ে৷’’

তার কথা, ‘‘স্কুলের শিক্ষকদের হাতে ৩৫ নাম্বারের মূল্যায়ন কোচিংকে আরো উৎসাহিত করবে৷ সরকার যে কোচিং থেকে বেরিয়ে আমার কথা বলছে সেটা সম্ভব হবে না৷ যদি ধরেও নিই যে শিক্ষকরা ন্যায় আচরণ করবেন তারপরও আতঙ্ক থেকে যাবে বাংলাদেশের প্রচলিত সংস্কৃতির কারণেই৷ আমার সন্তানরাও এটা নিয়ে আতঙ্কিত৷’’

দাউদকান্দির আরেকজন অভিভাবক নুরুন্নাহার খন্দকার বলেন, ‘‘সিস্টেমটা হয়তো ভালো৷ কিন্তু আমরা অভিভাবকরা বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছি না৷ আসলে এটা শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবক সবাইকে ভালেভাবে বুঝাতে হবে৷’’

আর স্কুলের শিক্ষকদের হাতে মূল্যায়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তো কোচিং ব্যবস্থা দূর করার কথা বলেছেন৷ কিন্তু এতে পরিস্থিতি কী হবে তা বুঝতে পারছি না৷’’

বাংলাদেশ শিক্ষার্থী অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে ধীরে ধীরে সবাই বুঝতে পারবে নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি৷ কিন্তু বুঝতে কত দিন লাগে আর সেই সময়ে কী হয় তাই দেখার বিষয়৷ এখন শিক্ষার্থী তো দূরের কথা শিক্ষক, অভিভাবকরাই বুঝতে পারছেন না৷ সবাই একটা ধোঁয়াশার মধ্যে আছেন৷ শিক্ষার্থীরা রীতিমতো আতঙ্কে আছে৷’’

‘স্বর্ণ এবং চাল মাপার পাল্লা এক নয়’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘‘মূল্যায়নের গ্রেডিং স্তর যত বাড়বে তত ভালো৷ এতে মূল্যায়ন অধিকতর সঠিক হয়৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো দক্ষতা ও অবকাঠামোর৷ শিক্ষকরা এই মূল্যায়নের জন্য সবাই দক্ষ কিনা৷ তাদের প্রশিক্ষণ দিলেও তারা কত দ্রুত আয়ত্ত করতে পারবেন বলে মনে হয় না৷ ফলে হিতে বিপরীতও হতে পারে৷’’

তার কথা, ‘‘যে পাল্লা দিয়ে চাল মাপবেন, সেই পাল্লা দিয়ে কি স্বর্ণও মাপবেন? সেটা তো হবে না৷ সঠিক মূল্যায়নে সঠিক পাল্লা দরকার৷ পাল্লা ঠিক না করে মূল্যায়ন শুরু করলে সঠিক মূল্যায়ন হবে না৷’’

তার কথা, ‘‘শিক্ষকদের হাতে যে মূল্যায়নের ভার তা সঠিক করতে হলে ছাত্রসংখ্যা প্রতি ক্লাসে কম থাকতে হয়৷ কিন্তু আমাদের এখানে গড়ে ৭০-৮০ জন করে৷ ফলে সঠিক মূল্যায়ন হবে বলে মনে করি না৷ এখানে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি এমনকি শিক্ষকদেরও প্রভাব থাকতে পারে৷ আমরা কি সেই নৈতিক মান অর্জন করেছি?’’

‘‘আগেও দেখেছি, ধরেন বায়োলজির ১০০ নম্বরের মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় যে ছাত্র ২২ নম্বর পেয়েছে সে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় ২৫ নম্বরের মধ্যে ২৪ পেয়েছে৷ সেটা কীভাবে সম্ভব? এটা আমাদের মনে রাখতে হবে৷ সেই পরিস্থিতি যেন আবার না হয়,’’ বলেন তিনি৷

তার মতে, আরো অনেক বিষয় আছে৷ যেমন পাঁচ ঘণ্টার পরীক্ষা৷ শহর আর গ্রামের স্কুলের মধ্যে শিক্ষক ও অবকাঠামোর পার্থক্য এগুলো বুঝতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ