‘সুপার টিউজডে' পর্বে জয়ের জন্য প্রাণপণে চেষ্টা চালাচ্ছেন অ্যামেরিকার বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থীরা৷ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ করতে দলের মনোনয়ন পেতে চান তাঁরা৷
বিজ্ঞাপন
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী বাছাই পর্ব এবার গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে প্রবেশ করছে৷ সম্ভাবনাময় প্রার্থীদের মধ্যে কেউ এখনো হাল ছাড়েন নি৷ আগামী মঙ্গলবার ‘সুপার টিউজডে'-র দিনে হারজিতের হিসাবের পর একাধিক প্রার্থী দৌড় থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ মোট ১৪টি রাজ্যে প্রাইমারি পর্বের পর সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রার্থীর নাম উঠে আসবে৷
আপাতত ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীরা টেক্সাস রাজ্যে দলীয় ভোটারদের মন জয় করতে ব্যস্ত৷ বার্নি সান্ডার্স সেখানে জনসভা করছেন৷ মাইক ব্লুমবার্গ শুধু হিউস্টন শহরের আশাপাশের এলাকার জন্য বিজ্ঞাপনের পেছনে এক কোটি ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছেন৷ প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও আরেক প্রার্থী এলিজাবেথ ওয়ারেনও প্রাণপণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ পিট বুটিজিজ একের পর এক শহরে জনসভা করছেন৷ বড় ও জনবহুল রাজ্য হিসেবে তাঁদের সবার কাছে টেক্সাসের গুরুত্ব অপরিসীম৷ তবে সেখানে প্রতিযোগিতার জন্য অর্থবল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন৷ একমাত্র ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য প্রার্থীদের কাছে আপাতত আরও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷
প্রার্থী হিসেবে এই মুহূর্তে বিশেষভাবে নজর কাড়ছেন বার্নি সান্ডার্স৷ একাধিক রাজ্যে বিপুল সাফল্য সত্ত্বেও সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার জন্য তিনি বাকি প্রার্থীদের আক্রমণের মুখে পড়ছেন৷ সম্প্রতি কিউবার প্রয়াত নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর প্রশংসা করে আরও বিভাজন সৃষ্টি করেছেন তিনি৷ এমন বিভাজনের ফলে সংসদের নিম্ন কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা কঠিন হবে বলে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছে ডেমোক্র্যাটিক দলের একাংশ৷ তবে বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে দলের পক্ষে তাঁকে উপেক্ষা করাও সম্ভব হচ্ছে না৷ সান্ডার্স নিজে সেই হাতিয়ার তুলে ধরে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে বিপুল সংখ্যক ডেমোক্র্যাটিক ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে৷ বাইডেনের তুলনায় তিনিই নাকি সেই কাজ আরও ভালোভাবে করতে পারবেন৷
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের দৌড়ে টিকে থাকার শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন জো বাইডেন৷ দক্ষিণ ক্যারোলাইনা রাজ্যের প্রভাবশালী কৃষ্ণাঙ্গ সংসদ সদস্য জেমস ক্লাইবার্ন প্রকাশ্যে সমর্থন জানানোয় সেই রাজ্যে জয়ের আশা করছেন বাইডেন৷ তাঁর প্রচার অভিযান ‘সুপার টিউজডে' উপলক্ষ্যে বিজ্ঞাপনের জন্য বিশাল অঙ্ক ব্যয় করছে৷
এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীদের কড়া সমালোচনা করছেন৷ তাঁর মতে, সম্প্রতি পুঁজিবারের যে ধস নেমেছে, তার জন্য প্রার্থীদের বেফাঁস মন্তব্যই দায়ী৷ করোনা ভাইরাসের পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতাদের বক্তব্যও আর্থিক বাজারের উপর প্রভাব ফেলছে বলে তিনি দাবি করেন৷ আগামী নির্বাচনে নিজের জয় সম্পর্কে ট্রাম্প অবশ্য নিশ্চিত৷
কে হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট
চলতি বছরই অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷ ডেমোক্রেটরা এরই মধ্যে নিজ দলের প্রার্থীতা পেতে লড়াই শুরু করেছেন৷
ছবি: Getty Images/S. Olson
মাইকেল বেনেট
৫৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ বর্তমানে কলোরাডোর সিনেটর৷ প্রগতিশীল ডেমোক্রেট হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে৷ ২০১৩ সালের অভিবাসী আইন প্রণয়নের পেছনে যারা ভূমিকা রেখেছেন তিনি তাদের একজন৷ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে গলা চড়ানোটাই নম্রভাষী এই রাজনীতিবিদের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Bennett
জো বাইডেন
জো বাইডেন বা জোসেফ আর বাইডেন জুনিয়র৷ ওবামার শাসনামলের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এ পর্যন্ত দুইবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন৷ শেষবারের মত এই দৌড়ে নামার সুযোগ পাচ্ছেন ৭৭ বছর বয়সী ডেমোক্রেট৷
ছবি: picture-alliance/newscom/K. Dietsch
মাইকেল ব্লুমবার্গ
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতায় এরইমধ্যে আলোচিত হয়েছেন নিউ ইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ৷ ট্রাম্পকে হারাতে ১০০ কোটি ডলার খরচে প্রস্তুত আছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন এই বিলিওনেয়ার৷ গত অক্টোবরে রিপাবলিকান দলত্যাগ করে দুই যুগ পর আবারও ডেমোক্রেট শিবিরে ভিড়েছেন তিনি৷ তার বয়স ৭৭ বছর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Locher
করি বুকার
ডেমোক্রেটদের মনোনয়নের দৌড়ে আছেন নিউ জার্সির সিনেটর ও নুয়ার্কের সাবেক মেয়র করি বুকারও৷ বৈষম্য দূরীকরণের ইস্যুকে তিনি সামনে নিয়ে এসেছেন৷ ভালবাসা, ঐক্য আর সাম্যের প্রচারও চালাচ্ছেন পঞ্চাশ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ৷
ছবি: Reuters/L. Millis
পিট বুডিজেজ
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে সর্বকনিষ্ঠ পিট বুডিজেজ৷ ইন্ডিয়ানার সাউথ বেন্ডের এই মেয়র সাবেক সামরিক কর্মকর্তা৷ বয়স মাত্র ৩৭ বছর৷ কিন্তু নির্বাচনের জন্য অর্থ সংগ্রহে এগিয়ে আছেন সবার চেয়ে৷ অর্থনীতি আর জলবায়ু তার প্রচারের মূল বিষয়৷
ছবি: Reuters/R. Mummey
জন ডেলানি
সাবেক কংগ্রেসম্যান ও ব্যবসায়ী জন ডেলানি৷ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য মরিয়া তিনি৷ ২০১৭ সাল থেকেই এজন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন৷ আইওয়ার প্রতিটি কাউন্টি এরইমধ্যে ভ্রমণ করেছেন তিনি৷ কিন্ত শেষ পর্যন্ত টিকিট পান কীনা সেটি দেখার বিষয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Bennett
তোলসি গ্যাবার্ড
২০১৬ সালের নির্বাচনে বার্নি স্যান্ডার্সকে সমর্থন দিয়েছিলেন তোলসি গ্যাবার্ড৷ ৩৮ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ এবার নিজেই প্রার্থী হতে চাইছেন৷ পূর্বের সমকামী বিরোধী অবস্থানের জন্য এরই মধ্যে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন৷ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের সঙ্গে বৈঠক করেও সমালোচিত হয়েছে৷ বিদেশে মার্কিন সামরিক আগ্রাসণের বিরুদ্ধে অবস্থান রয়েছে তার৷
ছবি: AFP
এমি ক্লোবুসার
৫৯ বছর বয়সী এমি ক্লোবুসার মিনেসোটার সিনেটর৷ মাদক, ঔষধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অবস্থান নিয়ে আলোচিত হয়েছেন তিনি৷ জো বাইডেনের পর উদারপন্থী ডেমোক্রেটদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তাই সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Souffle
ডেভাল পেট্রিক
মেসাচুসেটস এর সাবেক গভর্নরও লড়ছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হতে৷ অ্যামেরিকার ইতিহাসের দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ গভর্নর নির্বাচিত হন তিনি ২০০৬ সালে৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বন্ধু হিসেবে ডেভাল পেট্রিকের পরিচিতি রয়েছে৷
ছবি: AFP/Getty Images/S. Maturen
বার্নি স্যান্ডার্স
৭৮ বয়সী স্যান্ডার্স ২০১৬ সালেও লড়েছেন নির্বাচনের টিকেট পেতে৷ সেবার পিছিয়ে পড়েন হিলারির কাছে৷ তিনি নিজেকে ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেন৷ সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা, বিনা পয়সায় পড়াশোনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচনে লড়তে চান এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ৷
ছবি: AFP/F. J. Brown
টম স্টেয়ার
৬২ বছর বয়সী এই বিলিওনেয়ার জলবায়ু কর্মী হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন৷ ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের পক্ষে তিনি কয়েক কোটি ডলার ব্যয় করে টিভি বিজ্ঞাপন প্রচার করেছেন৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
এলিজাবেথ ওয়ারেন
ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন৷ হার্বার্ডের সাবেক অধ্যাপক তিনি৷ ৭০ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদও আছেন ডেমোক্রেটদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর দৌড়ে৷
ছবি: AFP/F. J. Brown
ডনাল্ড ট্রাম্প
রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যে আবারও নির্বাচনে লড়ছেন সেটি নিশ্চিত৷ তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে কে আসছেন ডেমোক্রেট শিবির থেকে সেটিই এখন দেখার বিষয়৷