কথাটা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন নিরপেক্ষ এভিয়েশন অ্যানালিস্ট জেরি সুইয়াটমান৷ তাঁর মতে, ফ্লাইট কিউজেড ৮৫০১ কেন ভূপাতিত হয়েছে, তা বোঝার জন্য বিমানের ব্ল্যাক বক্স খুঁজে পাওয়া অপরিহার্য৷
বিজ্ঞাপন
এয়ারএশিয়া-র এয়ারবাস এ৩২০-২০০ বিমানটি গত ২৮শে ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সুরাবাইয়া থেকে সিঙ্গাপুর যাওয়ার পথে ১৬২ জন আরোহী সহ অন্তর্হিত হয়৷ সে'যাবৎ দুর্ঘটনার সম্ভাব্য স্থল, বিমানের ধ্বংসাবশেষের কিছু কিছু অংশ, এবং নিহতদের প্রায় এক-চতুর্থাংশের মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে৷
দুর্ঘটনা কেন ঘটল, তার কারণ নিয়ে আপাতত শুধু জল্পনা-কল্পনা চলেছে – যেমন বিমানের কাঠামোর কোনো দুর্বলতা৷ নয়ত ২০০৯ সালে অতলান্তিক মহাসাগরে একটি এয়ার ফ্রান্স বিমানের দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করা হচ্ছে৷ এয়ার ফ্রান্সের বিমানটি রিও ডি জানিরো থেকে প্যারিস যাবার পথে ‘স্টল' করে, অর্থাৎ গোঁত্তা খেয়ে সাগরে পতিত হয়৷ জেরি সুইয়াটমান ডয়চে ভেলেকে বলেছেন যে, এয়ার এশিয়ার বিমানটি কেন দুর্ঘটনায় পতিত হল, তা নির্ধারণ করার জন্য বিমানটির ব্ল্যাক বক্স এবং তার ফিউজেলাজ-এর বিশেষ বিশেষ অংশ উদ্ধার করা প্রয়োজন৷
ডিডাব্লিউ: (ফ্লাইট কিউজেড ৮৫০১) বিমানটির যে ধ্বংসাবশেষ (এ যাবৎ) উদ্ধার করা হয়েছে, তা থেকে দুর্ঘটনা সম্পর্কে কী বলা যায়?
জেরি সুইয়াটমান: খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যায়নি....এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭-এর মতো নয়, যার অনেকগুলো অংশ ভাসতে দেখা গিয়েছিল এবং সেই অংশগুলো থেকে বলা গিয়েছিল, কী ঘটে থাকতে পারে (বিমানটা কম গতিতে যাচ্ছিল কিন্তু জোরগতিতে জলের উপর ধাক্কা খায়)৷ পরে ব্ল্যাক বক্স থেকেও তা-ই প্রমাণিত হয়৷
ফিরে দেখা: ২০১৪ সালের কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা
রবিবার সকালে এয়ারএশিয়ার কিউজেড৮৫০১ বিমানটি সিঙ্গাপুরের পথে জাভা সাগরের উপরে রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ ২০১৪ সালে এ রকম আরো কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ সেগুলো নিয়েই এ ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Pleul
রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
এয়ারএশিয়ার এয়ারবাসটি ইন্দোনিশেয়ার সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল৷ উড্ডয়নের ৪০ মিনিট পর রবিবার ভোরে বিমানটির সঙ্গে এয়ার ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রকদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ আর সেই সময়ের পর থেকে বিমানটির আর কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি৷ উদ্ধার অভিযান চলছে৷ বিমানটিতে ১৬২ জন আরোহী রয়েছেন৷
ছবি: Reuters/E. Nuraheni
জাভা সাগরের উপর থেকে হাওয়া
বিমানটি হারিয়ে যাওয়ার আগে বৈমানিক বিরূপ আবহাওয়া এড়াতে বিমানটির গতিপথ পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন বলে শোনা যাচ্ছে৷ বিমানটির দুর্ঘটনা সবাইকে মার্চের এক স্মৃতি ফিরিয়ে দিচ্ছে৷ সেসময় মালয়েশিয়ার এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ বিমানটি হারিয়ে যায়৷
ছবি: Aditya/AFP/Getty Images
বিপদের ওপর বিপদ
২০১৪ সালে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স তাদের দু’টি বোয়িং ৭৭৭ বিমান হারিয়েছে৷ এর মধ্যে একটি এখনো ‘মিসিং’৷ ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায় সেই বিমানটি৷ রুটিন মাফিক একটি রেডিও ম্যাসেজ দেয়ার পরই বিমানটি রাডার থেকে গায়েব হয়ে যায়৷ এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, রাডার থেকে হারিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বিমানটি ভারত মহাসাগরে বিধ্বস্ত হয়৷
এমএইচ৩৭০ হারিয়ে যাওয়ার পর, স্যাটেলাইটে ওঠা বিভিন্ন বস্তুর ছবি বিশ্লেষণ করে বিমানটি খোঁজার চেষ্টা হয়েছে৷ কিন্তু জানা গেছে, ছবিগুলো আসলে সমুদ্র ভেসে থাকা আবর্জনার, বিমানের ধ্বংসাবশেষ নয়৷ জাহাজ এবং ডুবোজাহাজ ব্যবহার করে বিমানটির ফ্লাইট রেকর্ডারের সিগন্যালও খোঁজা হয়েছে৷ কিন্তু সাফল্য আসেনি৷ তাই বিমানের ২৩৯ জন আরোহীর ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা আজও অজানা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিরপরাধ ভুক্তভোগীরা
২০১৪ সালের ১৭ জুলাই মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের অপর একটি বিমান এমএইচ১৭ বিধ্বস্ত হয়৷ ইউক্রেনের উত্তরাংশে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয় বলে অভিযোগ৷ আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুর যাচ্ছিল বিমানটি৷
ছবি: Reuters
উদ্ধার তৎপরতায় বাধা
বিমানটি দুর্ঘটনার পর মরদেহ উদ্ধার এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কাজ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে৷ প্রথমদিকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে অবস্থানরত বিদ্রোহীরা আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দল এবং দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞদের দুর্ঘটনাস্থলে যেতে বাধা দেয়৷
ছবি: Reuters
দায়ী কে?
দুর্ঘটনার পর প্রথম পাঁচদিন বিমানটির ফ্লাইট রেকর্ডার নিজেদের কাছে রেখে দেয় বিদ্রোহীরা৷ এরপর সেটি মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ প্রাথমিক ফলাফলে বিমানটি ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য মিসাইলের আঘাতে ধ্বংস হয়েছে বলে অনেক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷ তবে বিমানটি – বিদ্রোহী, রাশিয়া, না ইউক্রেন – কাদের সোনাদের গোলাতে ভূপাতিত হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি৷
ছবি: Reuters
গতিপথ বদলানোর অনুরোধ
২৪ জুলাই স্প্যানিশ কোম্পানি সুইফটএয়ারের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া এয়ার আলজেরিয়ার একটি বিমান মালিতে ১১৬ যাত্রীসহ বিধ্বস্ত হয়৷ বিমানটি বুর্কিনা ফাসো থেকে আলজিয়ার্স যাচ্ছিল৷ এয়ারএশিয়ার মতো সেই বিমানের পাইলটও গতিপথ বদলাতে চেয়েছিলেন৷
ছবি: cc-by-sa/Dura-Ace/curimedia
ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে যায়
বিমানটি দৃশ্যত প্রচণ্ড গতিতে ভুমিতে আছড়ে পড়ে৷ বুর্কিনা ফাসোর সীমান্তের কাছে সেটি ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়৷ সম্ভবত ঝড়ের কারণে সেটি বিধ্বস্ত হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/Sia Kambou
মারাত্মক রণকৌশল
২০১৪ সালের ২৩ জুন জার্মানির সাওয়ারল্যান্ড অঞ্চলে সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ চলাকালে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়৷ জার্মান এয়ার ফোর্সের একটি ইউরোফাইটারের সঙ্গে লেয়ারজেটের একটি বিমানের ধাক্কা লাগে বলে জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bernd Wüstneck
খুব কাছে
ধারণা করা হচ্ছে লেয়ারজেটটি এয়ারফোর্স প্লেনের খুব কাছ থেকে যাচ্ছিল৷ ফলে ধাক্কা লাগে৷ প্রশিক্ষণের জন্য ভাড়া নেয়া বেসামরিক বিমানটি কোলনের একটি গ্রামে ভূপাতিত হয়৷ সেটির পাইলট এবং কো-পাইলট প্রাণ হারান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/BS f. Flugunfalluntersuchung
ক্ষতি সত্ত্বে নিরাপদে অবতরণ
মধ্য আকাশে সংঘর্ষে ইউরোফাইটার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেটি নিরাপদে অবতরণে সক্ষম হয়৷ বিমানটি চালাচ্ছিলেন ৩৩ বছর বয়সি একজন বৈমানিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/BS f. Flugunfalluntersuchung
13 ছবি1 | 13
বিমানের ধ্বংসাবশেষ যেখানে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, তা থেকে কী বোঝা যায়?
কিছু ধ্বংসাবশেষ এবং আরোহীদের লাশ যেখানে পাওয়া গিয়েছে, সে জায়গাটা বিমানটিকে যেখানে শেষবার রাডারে দেখা গিয়েছিল, তার থেকে খুব বেশি দূরে নয়৷ এর অর্থ যে, বিমানটি খুব বেশি দূরে যেতে পারেনি – যা থেকে অপেক্ষাকৃত কম গতিতে ওড়া এবং দ্রুতগতিতে নীচে পড়ার কথা আন্দাজ করা যেতে পারে৷
অনেক বিশ্লেষক বলছেন, দুর্ঘটনা ঘটেছে সম্ভবত খারাপ আবহাওয়ার কারণে৷ আপনার কী মত?
বিমান দুর্ঘটনা ঘটার পিছনে সবসময়েই একটির বেশি কারণ থাকে৷ এই দুর্ঘটনার কারণগুলির মধ্যে খারাপ আবহাওয়া থাকবে বৈকি, কিন্তু সেটা মুখ্য কারণ হবে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না৷