এ৩৩০ বিধ্বস্তের কারণ
৮ জুলাই ২০১২এয়ার ফ্রান্সের রিও-প্যারিস উড়ালটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর শোরগোল উঠেছিল চারদিকে৷ বিমান চলাচল আরো নিরাপদ করতে নতুন বিভিন্ন উদ্যোগ ঘোষণা করে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস৷ কেননা বিধ্বস্ত বিমানটি ছিল সেই প্রতিষ্ঠানের৷ অন্যদিকে, এয়ার ফ্রান্স কর্তৃপক্ষও নড়েচড়ে বসে৷ অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে বিধ্বস্ত বিমানের ২২৮ জন আরোহীর সবাই প্রাণ হারায়৷ কিন্তু সবারই প্রশ্ন ছিল, কীভাবে হয়েছে এই দুর্ঘটনা?
এয়ার ফ্রান্সের রিও-প্যারিস উড়ালের দুর্ঘটনার কারণ অবশেষে জানা গেছে৷ বৈমানিকের ভুল এবং যান্ত্রিক ত্রুটি – দুটোই দুর্ঘটনার কারণ, জানিয়েছে ফ্রান্সের দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটি৷ এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বিমানটির ‘ব্ল্যাক বক্স' বিশেষ ভূমিকা রেখেছে৷ চার কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে সেটি উদ্ধার করা হয়েছিল দুর্ঘটনার দুই বছর পর৷ বিইএ জানিয়েছে, বিমানের স্পিড সেন্সর যেটি ‘পাইটোট্স' নামে পরিচিত, সেটি ঠিকভাবে কাজ না করায় সমস্যা শুরু হয়৷ ফরাসি প্রতিষ্ঠান টালেস এই স্পিড সেন্সর'এর নির্মাতা৷ ২০০৯ সালের দুর্ঘটনার পর এয়ারবাসের বিমানগুলো থেকে এই প্রতিষ্ঠানের স্পিড সেন্সর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷
ফরাসি তদন্ত কমিটির প্রধান আল্যাঁ বুইয়ার দুর্ঘটনার বিষয়ে বলেন, বৈমানিকরা এক পর্যায়ে বিমানের নিয়ন্ত্রণ প্রায় হারিয়ে ফেলেন৷ বিইএ প্রতিবেদনে, এধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে বৈমানিকদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদানের দিকে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে৷
দুর্ঘটনার পূর্বে বিমানটিতে থাকা বৈমানিকরা বিমানের গতি ঠিকভাবে বুঝতে পারেনি৷ ফলে যেখানে বিমানটির সামনের অংশ নীচের দিকে রাখা উচিত ছিল, সেখানে তারা করেছেন উল্টো৷ ফলে খুব দ্রুতই বিমানটির নীচের দিকে নামতে থাকে এবং বিধ্বস্ত হয়৷ আল্যাঁ বুইয়ার বলেন, ‘‘অটো পাইলট অকেজো হওয়ার পর সহ-বৈমানিক বলেছিলেন: আমি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি৷ কিন্তু তিনি বড় বেশি দিক-পরিবর্তন করেন এবং জয়স্টিকে বড় বেশি টান দেন৷ আসলে বৈমানিকদের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এত উচ্চতায় ‘ম্যানুয়ালি' বিমান চালনার মতো প্রশিক্ষণ থাকে না৷''
স্পিড সেন্সর এবং অটো পাইলট কাজ না করার পরও বিমানটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সম্ভব ছিল বলে মত প্রকাশ করেন বুইয়ার৷ সেটি অবশ্য এধরনের পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা আছে এরকম একজন মনোযোগী বৈমানিকের ক্ষেত্রে সম্ভব বলে জানান তিনি৷ বলাবাহুল্য, এয়ার ফ্রান্সের উড়ালে যখন জটিলতা শুরু হয়, তখন মূল ক্যাপ্টেন তাঁর সহ-বৈমানিকদের দায়িত্বে রেখে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন৷
এয়ার ফ্রান্সের বিমান দুর্ঘটনার কারণ জানাতে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যদেরকে আমন্ত্রণ জানায় বিইএ৷ প্যারিসের বাইরে সংস্থাটির কার্যালয়ে পাঁচ জুলাই সমবেত হন অনেক নিহতের পরিবারের সদস্যরা৷ তদন্ত প্রতিবেদন অবশ্য এদের অনেককে সন্তুষ্ট করতে পারেনি৷ কাইকো মুরিনিয়ো তাদের একজন৷ বিমান দুর্ঘটনার নিজের কন্যাকে হারিয়েছেন তিনি৷ দুর্ঘটনায় নিহত ব্রাজিলের নাগরিকদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি সংগঠনও তৈরি করেছেন মুরিনিয়ো৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়েছে, তারা সবসময় বৈমানিকদের ত্রুটির কথা বলছেন, যা আমি একদমই বিশ্বাস করি না৷'' তবে জন ক্লেমেন্স নামক আরেক ব্যক্তির বক্তব্য ভিন্ন৷ তদন্ত প্রতিবেদন পড়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তিনি৷ ক্লেমেন্স বলেন, ‘‘আগের চেয়ে অনেক বেশি তথ্য এখন জানা যাচ্ছে৷ কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে অনেক কাজ করেছে এবং নিরাপত্তার খাতিরে বেশ কিছু সুপারিশও করেছে৷''
বলাবাহুল্য, আগামী মঙ্গলবার এসংক্রান্ত আরেকটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন নিহতদের পরিবারের কাছে উপস্থাপন করা হবে৷ প্রকাশিতব্য প্রতিবেদনেও দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বৈমানিকদের ভুল এবং স্পিড সেন্সর কাজ না করার বিষয়টিই উল্লেখ করা হয়েছে৷ বার্তাসংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে৷
এআই / এসবি (ডিপিএ/এএফপি)