সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহর৷ কেমন লাগে সেখানে থাকতে? না , টুরিস্ট হিসেবে নয়, বাসিন্দা হিসেবে? কেমন হয় এখানকার বাড়িঘর, মানুষজন? চলুন, এরিকা বিকসেল-এর ফ্ল্যাটটায় ঘুরে আসা যাক৷
বিজ্ঞাপন
সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরের ভিপকিঙেন এলাকা৷ আগে ছিল খেটে খাওয়া মানুষদের পাড়া, এখন ফ্যাশনেবল এলাকায় পরিণত হয়েছে৷ এলাকার ঠিক মাঝখানে এই সাদামাটা বাড়িটি৷ তার সবচেয়ে ওপরতলায় যেন একটি মরুদ্যান: লিফ্টে করে সোজা সেখানে এসে পৌঁছনো যায়৷
এরিকা বিকসেল ও তাঁর সঙ্গী গত পাঁচ বছর ধরে এই ১৭০ বর্গমিটার পরিধির ফ্ল্যাটটিতে বাস করছেন৷ নিজেদের কেনা৷ এখান থেকে জুরিখের যে দৃশ্য দেখা যায়, তাতেই মুগ্ধ হয়েছিলেন এরিকা৷ দু'জনে মিলে অ্যাটিকের এই ফ্ল্যাটটি সাজিয়েছেন - নানা রংয়ে৷ এরিকার নিজেও ফার্নিচার ডিজাইন করে থাকেন, তাঁর ফার্নিচারের দোকানও আছে৷ এরিকা বলেন, ‘‘আমি বিশ বছরের বেশি সময় ধরে একটি বাড়িতে ছিলাম, যেখানে সব কিছু ছিল সাদা: মাটি, দেওয়াল, ছাদ, এক কথায় সব কিছু৷ কাজেই আমি গোড়াতেই বলেছি, আমার রঙিন দেয়াল চাই৷ তাতে কারুর কোনো আপত্তিও নেই৷ কেউ এখানে দাঁড়িয়ে একবারও বলেনি, এখানে বড় বেশি রং৷ সব কিছু বেশ সুন্দর মিলে গেছে বলে আমার ধারণা৷''
জীবনযাপন সহজ করেছে যেসব পণ্য
জীবনযাপনের শৃঙ্খলা অনেকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ সেটা ঘরে হোক কিংবা বাইরে৷ বিংশ শতাব্দীর শুরুতে তাই ডিজাইনাররা মানুষের জীবনে শৃঙ্খলা আনতে বিভিন্ন ডিজাইন শুরু করেন, যা ‘সিস্টেম ডিজাইন’ নামে পরিচিত৷ চলুন সেগুলো দেখা যাক৷
ছবি: MAKK/Jonas Schneider/Gabriel Richter
ছোট, তবে কাজের
১৯২১ সালে তৈরি এই সুইস নাইফ এখনো কার্যকর এক বস্তু হিসেবে টিকে আছে৷ এটি দিয়ে শুধু রুটি কাটা নয়, ওয়াইনের বোতলও খোলা যায়৷ আরো অনেক কাজে লাগে সুইস নাইফ৷ ‘সিস্টেম ডিজাইন’ হিসেবে কোলনের মিউজিয়াম অফ অ্যাপ্লাইড আর্টসে প্রদর্শিত হচ্ছে পণ্যটি৷ ১৫০টির মতো এ রকম পণ্য জায়গা পেয়েছে প্রদর্শনীতে৷
ছবি: MAKK / Foto: Jonas Schneider, Gabriel Richter
শিল্প প্রক্রিয়া
ডিজাইনার মার্সেল ব্রাওয়ার ১৯২৫ সালে ছোট টেবিল তৈরি করেন৷ পরবর্তীতে বিভিন্ন সাইজে এটি বাজারে ছাড়া হয়েছে৷ তবে এখনো বেশ জনপ্রিয় এগুলো৷
ছবি: Thonet GmbH
স্ট্যাইলিশ ব্যবস্থা
১৯৫৫ সালে সরানো যায় এমন টেবিল ও রেডিওসহ টেলিভিশন বাজারে আসা৷ এটা ঘরের যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময় বসানোর সুযোগ আছে৷ এ ধরনের পণ্য মানুষকে ঘরের সাজগোজ সম্পর্কে নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে৷
ছবি: MAKK / Foto: Jonas Schneider, Leon Hofacker
ক্লাসিক খেলনা
প্রত্যেক শিশুই এই খেলনার সঙ্গে পরিচিত৷ লেগো একটির সঙ্গে অন্যটি জুড়ে যে কোনো কিছু গড়া যায়৷ ১৯৫৮ সালে এই খেলনা গোটা বিশ্বের ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়৷ এখনো সেই জনপ্রিয়তা রয়ে গেছে৷
ছবি: MAKK / Foto: Jonas Schneider, Leon Hofacker
ক্যাফেটেরিয়ার জন্য
ক্যাফেটেরিয়ায় একসঙ্গে অনেক মানুষ খাওয়া-দাওয়া করেন৷ তাদের জন্য এই ডিশের সেটটি তৈরি করা হয়েছিল৷ সুবিধা হচ্ছে এগুলোর ডিজাইন প্রায় একইরকম এবং রাখার জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না৷
ছবি: HfG-Archiv Ulm
ফার্নিচারের জন্য সুবিধাজনক জায়গা
গত শতকের ষাটের দশকে তৈরি এই ‘৬০৬’ সেল্ফ ফার্নিচারের জগতে অন্যতম সেরা আবিষ্কার হিসেবে বিবেচিত৷ পরিষ্কার শেপ, সোজা লাইন এবং অনমনীয় তাকগুলো সেল্ফটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে৷
ছবি: MAKK / Foto: Jonas Schneider, Gabriel Richter
অভিভাবক এবং বাচ্চাদের জন্য ডিজাইন
রঙিন এই প্লাস্টিকের চেয়ারগুলো তৈরি করেছেন ইটালির ডিজাইনার মার্কো জানুসো এবং তাঁর জার্মান সহকর্মী রিচার্ড সাপের৷ বাচ্চাদের এই চেয়ারগুলো একটির সঙ্গে অন্যটি জোড়া যায়৷ ফলে রাখা কিংবা পরিবহন দু’টোই বেশ সহজ৷
ছবি: MAKK / Foto: Jonas Schneider, Gabriel Richter
চারজনের জন্য
দেখের বলের মতো মনে হলেও এখানে চারজন মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় থালা-বাসন এভাবে রাখা আছে৷ ভিলেরয় এবং বশ-এর তৈরি এই সেটটি কম জায়গায় বেশি জিনিস রাখার এ উৎকৃষ্ট উদাহরণ৷
ছবি: MAKK / Foto: Jonas Schneider, Gabriel Richter
8 ছবি1 | 8
ঘরও বটে, আবার খোলাও বটে
ফ্ল্যাটের খোলনলচে পালটে দেওয়া হয়েছে৷ ফ্ল্যাটের মাঝখানে এখন একটা খোলা কিচেন, যেটা আবার ডাইনিং রুম আর লিভিং রুম-ও বটে: সব মিলিয়ে প্রায় ৬৫ বর্গমিটার৷ আবহাওয়া ভালো থাকলে ঘরটাকে ছাদের দিকে পুরোপুরি খুলে দেওয়া যায়৷ ছাদের গাছপালাগুলো লাগিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের নাম-করা উদ্যান-স্থপতি এনজো এনেয়া৷ এরিকা জানালেন, ‘‘সেটা স্বভাবতই এই ঘরটার জন্য খুব জরুরি, কেননা গরমকালে এই ঘরটাই একটা বড় ড্রয়িং রুমে পরিণত হয়৷ তখন আমরা দেখেছি যে, এই ঠেলা দরজাগুলো পুরোপুরি খুলে দিলে বস্তুত আমরা এই টেবিলে বসেই যেন বাইরে বসেছি, এমন একটা অনুভূতি পাই৷''
শোবার ঘরেও নানা রংয়ের ছোঁয়া৷ এক টুকরো দেওয়াল দিয়ে বাথরুমটাকে আলাদা রাখা হয়েছে৷ বেসিন আর বাথটাবের নকশা করেছেন সুইস ডিজাইনার হানেস ভেটস্টাইন৷ হালফ্যাশন: তাই কাচের দরজা লাগানো বাথরুম! এরিকা বলেন: ‘‘আমি তো ওখানে একাই স্নান করি, কাজেই আর একটা দরজা দিয়ে কী হবে? আমার ওটা দেখতে খুব ভালো লাগে, কেমন সুন্দর মোজাইক দেওয়া, বাইরে থেকে দেখা যায়৷''
জনপ্রিয় প্লাস্টিক চেয়ারের গল্প
সস্তা, পোর্টেবল, ওজন কম, পরিষ্কার করা সহজ – এমন প্লাস্টিকের চেয়ার আজ কে না চেনে? হ্যাঁ, বিখ্যাত ‘মোনোব্লক’ চেয়ারের কথাই বলছি৷ কবে এর তৈরি শুরু, এর ডিজাইনার কে, কোন দেশে কেন জনপ্রিয় এসব নানা তথ্য থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
যেভাবে শুরু
বহু কোম্পানিই আজ প্লাস্টিকের চেয়ার তৈরি করছে৷ তবে বিখ্যাত এই চেয়ারের প্রথম ডিজাইনার ছিলেন ইটালিয়ান জো কলম্বো কি৷ ১৯৬৫ সালে মাত্র পাঁচটি চেয়ারের ডিজাইন করার মধ্য দিয়ে যার শুরু৷ সারা বিশ্বে প্লাস্টিক চেয়ারের উৎপাদন শুরু হয় ৭০-এর দশক থেকে৷
ছবি: Fotolia/pholidito
বর্তমান উৎপাদন একশো কোটিরও বেশি
এরই মধ্যে সারা বিশ্বে আনুমানিক একশো কোটিরও বেশি মোনোব্লক বা প্লাস্টিক চেয়ার তৈরি হয়েছে৷ হামবুর্গের হেনিং ভ্যোটসেল-হ্যার্বার নামের এক ব্যক্তি প্লাস্টিক চেয়ার সম্পর্কে নানা তথ্য, অর্থাৎ ছবি, ইতিহাস, ফিল্ম ইত্যাদি সংগ্রহ করে তাঁর ওয়েবসাইটে দিয়ে ছিলেন৷ www.plasticchsir.org
ছবি: DW/K. B. Belgacem
জনপ্রিয়তার কারণ
বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন কারণে প্লাস্টিক চেয়ার জনপ্রিয়তা পেয়েছে৷ খুব তাড়াতাড়ি এবং সস্তায় প্লাস্টিককে খুব সহজে চাপ দিয়ে ছোট, বড় নানা আকারের চেয়ার তৈরি করা যায়৷ চেয়ারগুলো মজবুত, ধোয়া যায়, আবহাওয়ার কারণে নষ্টও হয় না৷ তাছাড়াও এর অপর এক সুবিধা যে, প্রয়োজন শেষে কম জায়গায়, অর্থাৎ একটা চেয়ারের ওপর আরেকটা চেয়ার, এভাবে অনেক চেয়ার একসাথে রেখে দেয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দেশ ভেদে ব্যবহার
এই প্লাস্টিক চেয়ার সাধারণত অ্যামেরিকা বা ইউরোপের দেশগুলোতে বাগানে বসা বা শুয়ে থাকার জন্য ব্যবহার করা হয়৷ আফ্রিকা, টিউনেশিয়া, থাইল্যান্ড, এশিয়া বা অন্যান্য দেশে ক্যাফে বা বাইরের রেস্তোরাঁগুলোতে রাখা হয়৷ ছবিতে দেখুন জার্মানির একটি বাড়ির সামনের বাগানে বসে স্বামী-স্ত্রী গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া উপভোগ করছেন৷ বলা বাহুল্য, গরমকালে চেয়ারগুলো বাইরেই রাখা থাকে৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
দক্ষিণ অ্যাঙ্গোলা
দক্ষিণ অ্যাঙ্গোলার একটি স্কুলে বাচ্চাদের বসার জন্য যার যার চেয়ার তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে হয়৷ এই চেয়ারগুলো ২০১৩ সালে জার্মানির দুটি সাহায্যকারী ঐ অঞ্চলের কৃষি উন্নতি প্রকল্পকে দিয়েছিল৷ সংস্থা দুটির মধ্যে ‘ব্রোট ফ্যুর দি ভেল্ট’ বা ‘ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’ উল্লেখযোগ্য৷
ছবি: Jörg Böthling/Brot für die Welt
আফগানিস্তানের শিশুরা
আফগানিস্তানের বাল্খ প্রদেশের শিশুরা খোলা আকাশের নীচে ক্লাস করার জন্য নিজেদের চেয়ার নিজেরাই বহন করে নিয়ে যাচ্ছে৷ ছবিটি ২০১২ সালের তোলা৷ তখন ৮.৪ মিলিয়ন স্কুলে যাওয়া বাচ্চাদের মধ্যে ৩৯ শতাংশই ছিল মেয়ে৷
ছবি: Q.Usyan/AFP/GettyImages
প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে সূর্যস্নান
পশ্চিমা বিশ্বের একটি সমুদ্র সৈকতের ছবি এটি৷ দেখুন প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে সুন্দরী এই নারীর সূর্যস্নান আর কম্পিউটারে কাজ – দুটোই একসঙ্গে করছেন৷
ছবি: Sergey Peterman/Fotolia
ইফতার পার্টি
ছবিটি এ বছরের জুলাই মাসে রোজার সময় তোলা৷ টিউনেশিয়ার ‘ঘার এল মেল’ সৈকতে রোজা শেষে সকলে মিলে ইফতার করছেন প্লাস্টিক চেয়ারে বসে৷
ছবি: DW/K. B. Belgacem
ভাঙা চেয়ার
বেলগ্রেডের অদূরে একটি বস্তি এলাকায় এই শিশুটি একটা ভাঙা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আছে৷ এলাকাটিতে বলকান অঞ্চলের দেশগুলি থেকে আসা ‘দরিদ্র অভিবাসী’, মূলত রোমা সম্প্রদায়ের বাস৷
ছবি: picture-alliance/ZB
9 ছবি1 | 9
পুরনো আসবাব থেকে মার্কিন পপ আর্ট
আসবাবপত্র বলতে কিছু পুরনো, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আসবাব – যেমন এই দু'শো বছরের পুরনো কিচেন আলমারি – আর সেই সঙ্গে নানা অত্যাধুনিক ডিজাইনার ফার্নিচার৷
বাড়িতে আর্ট কিংবা ডেকরেশন যা আছে, তাও রঙিন হওয়া চাই৷ এরিকা মার্কিন পপ আর্ট শিল্পী চার্লস ফাজিনো-র আঁকার খুব ভক্ত৷ এককালে চাকুরিসূত্রে অ্যামেরিকায় ছিলেন কিনা৷ তিনি বলেন, ‘‘এক সময়ে নিউ ইয়র্কে ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট হিসেবে কাজ করেছি৷ স্বভাবতই অনেক জায়গায় ঘুরেছি, অনেক কিছু দেখেছি৷ পরে বাচ্চারা যখন বড় হচ্ছে, তখন ঘরসংসার করতে হয়েছে – সেই আমলেই ফাজিনো-র এই ছবিটা কেনা, নিউ ইয়র্ক থেকে৷ কিছুটা স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে: তখন আমি মাসে চারবার করে নিউ ইয়র্ক যেতাম কিনা৷''
আজ তিনি জুরিখেই থাকেন৷ এখানে তাঁর এই ফ্ল্যাট আর সেই ফ্ল্যাট থেকে জুরিখের দৃশ্য এরিকার বড় প্রিয়৷