ভারতের অস্ত্র আমদানি
৩০ মে ২০১৫স্টকহোল্মের আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপ্রি-র রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের দশটি বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশের মধ্যে পাঁচটিই এশিয়ায়: ভারত, চীন, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুর৷ এই পাঁচটি দেশ মোট অস্ত্র আমদানির ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী৷ তার মধ্যে ভারতের একাই ১৫ শতাংশ, অন্যান্যরা মিলিয়ে বাকি ১৫ শতাংশ৷
ডয়চে ভেলে: ভারত বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশগুলির মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়াল কিভাবে?
অমিত কৌশিশ: ভারতের চীনের সঙ্গে একটি দীর্ঘ এবং বিতর্কিত সীমান্ত আছে৷ চীন ভারতের চেয়ে অর্থনৈতিক এবং সামরিক, উভয় বিচারেই বেশি শক্তিশালী৷ উভয় দেশের মধ্যে ১৯৬২ সালে একটি বড় আকারের সীমান্ত যুদ্ধ সংঘটিত হয়৷ অপরদিকে চীন পাকিস্তানের ‘‘সুখদুঃখের বন্ধু'', এবং পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে অন্তত চারবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে: ১৯৪৭-৪৮, ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালে৷ পাকিস্তান জম্মু-কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন এবং ভারতের অন্যত্র সন্ত্রাসবাদে মদত দিয়ে থাকে৷ কাজেই নতুন দিল্লিকে দুই রণাঙ্গণে সাঁড়াশি আক্রমণের জন্য সামরিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে৷ যে কারণে ভারত বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারকদের মধ্যে একজন হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
মোদী সরকার আসার পর কি বিদেশি অস্ত্রনির্মাতাদের পক্ষে ভারতে বিনিয়োগ অপেক্ষাকৃত সহজ হয়েছে?
বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং কল্যাণরাষ্ট্র, সামরিক বলবৃদ্ধি নয়৷ যে কারণে এই সরকার ২০১৪ সালের মে মাসে ক্ষমতায় আসার পর যে দু'টি বাজেট পেশ করেছেন, তা'তে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়নি, বরং সরকার প্রতিরক্ষা বাজেট নির্ধারণে বাস্তববুদ্ধি দেখিয়েছেন: যেমন একটি পার্বত্য অভিযাত্রী বাহিনী গঠনের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
গতবছর ভারত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট বা এফডিআই-এর সীমা বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেয়; স্টেট-অফ-দি-আর্ট টেকনোলজির ক্ষেত্রে তা আরো বাড়ানো যেতে পারে৷ প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত যে-সব পণ্যের ক্ষেত্রে শিল্প অনুমোদন প্রয়োজন, সরকার তাদের তালিকা প্রকাশ করেছেন৷
ভারতের শিল্পসংস্থাগুলি দেশের প্রতিরক্ষা প্রয়োজন মেটাতে অক্ষম কেন?
২০০১ সালে ডিফেন্স সেক্টরে বেসরকারি মালিকানার কোম্পানিদের ঢুকতে দেওয়া হয়, কিন্তু খুব কম বেসরকারি কোম্পানি এই উদারীকরণের সুযোগ নিতে পেরেছে, অর্ডার আগের মতোই গেছে পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিং'গুলির কাছে৷
এশিয়ায় কি একটি আঞ্চলিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে?
এশিয়ার একাধিক দেশ যে তাদের সামরিক ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে, তা-তে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু তা ঠান্ডা লড়াইয়ের আমলের পৌঁছাতে অনেক দেরি৷ এর প্রধান কারণ: এশিয়ার অধিকাংশ দেশের মূল লক্ষ্য হলো দেশের রাজ্যাঞ্চলীয় সার্বভৌমত্ব, রাজ্যাঞ্চল সংক্রান্ত দাবিদাওয়া এবং অপরাপর অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষা, সারা বিশ্বে নিজের আধিপত্য বিস্তার করা নয় – যা থেকে শীতল যুদ্ধের অস্ত্রপ্রতিযোগিতা সূচিত হয়েছিল৷
অমিত কৌশিশ ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সাবেক উপদেষ্টা এবং বর্তমানে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিস-এর ডিসটিঙ্গুইশড ফেলো৷