এ আপোশ দেশকে ভয়াল অন্ধকারে নিয়ে যাবে
১০ মে ২০১৭বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘‘নববর্ষ ও মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে আক্রমণের পাশাপাশি ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানানো মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গে আপস করছে সরকার৷ এজন্য কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান দেওয়া, পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিজনিত পরিবর্তন এবং পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান সংকুচিত করা হয়েছে৷ এমন আত্মসমর্পণের ঘটনায় দেশের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক নাগরিকরা ব্যথিত, ক্ষুব্ধ ও হতাশ৷''
তাঁরা প্রশ্ন করেন, ‘‘ঢাকাসহ সারাদেশে নির্মিত ভাস্কর্যগুলোর সবক'টি কি মানসম্পন্ন?' যদি ভাস্কর্যগুলো মানসম্পন্ন না হয়ে থাকে এবং শিল্পমানের ঘাটতি থেকে থাকে, তাহলে দেশের প্রতিভাবান শিল্পীদের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে এর মানোন্নয়নের জন্য৷ কিন্তু হেফাজতের দাবির সঙ্গে সুর মেলানো কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়৷''
তাঁদের মতে, ‘‘মৌলবাদের তোষণনীতির কারণেই পাঠ্যপুস্তকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে৷ জামায়াত-হেফাজত ইত্যাদি পৃথক পরিচয়ে হলেও তাদের উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন৷''
বিবৃতিতে বলা হয়,‘‘উগ্র সাম্প্রদায়িক এই চিহ্নিত গোষ্ঠী বাঙালির প্রতিটি ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে৷ ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই এটি পরিলক্ষিত হয়েছে৷ কেবল বিরোধিতা নয়, বিদেশি কায়েমি স্বার্থ, সাম্রাজ্যবাদ ও হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল৷ সেই চিহ্নিত গোষ্ঠী পঁচাত্তর-পরবর্তী সরকারগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আনুকূল্য পেয়ে দানবে পরিণত হয়েছে৷''
তাঁরা সরকারকে ‘আত্মঘাতী খেলা' থেকে বেরিয়ে আসার দাবি জানান৷ আর এমন ‘ অশুভ তৎপরতা'র বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সব দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে৷
সোমবার (৮ মে) সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতি সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো হয়৷ বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন আহমদ রফিক, কামাল লোহানী, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, যতীন সরকার, সৈয়দ হাসান ইমাম, হাসান আজিজুল হক, ডা. সারওয়ার আলী, মফিদুল হক, সনৎ কুমার সাহা, অজয় রায়, অনুপম সেন, কবি নির্মলেন্দু গুণ, আবুল মোমেন, শিল্পী আনোয়ার হোসেন, দ্বিজেন শর্মা, বেগম মুশতারী শফি, লায়লা হাসান, মামুনুর রশীদ, রফিউর রাব্বি, ড. ইনামুল হক, লাকী ইনাম, চলচ্চিত্রকার মসিউদ্দিন শাকের, এ এন রাশেদা, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আবেদ খান, চিত্রশিল্পী আবুল বারক আলভী, অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, সঞ্জীব দ্রং, আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী, নৃত্যশিল্পী তামান্না রহমান, নাট্যজন রোকেয়া রফিক, অধ্যক্ষ আকমল হোসেন, ডা. রশিদ ই মাহবুব, নিখিল সেনসহ ৪০৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক৷
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী কামাল লোহানী ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বিচ্যুত হয়ে আজকের যে ধর্মান্ধ শক্তি, তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে৷ আমাদের যে সংবিধান, যা জাতির পিতা উপহার দিয়েছেন, সেই সংবিধানেই বলা আছে ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করা যাবে না৷ আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আজ বাংলাদেশে ধর্মকে ব্যবহার করে কতগুলো রাজনৈতিক দল বা জোট সক্রিয় আছে, কী করে তাদের প্রশ্রয় দেয়া হচেছ?''
তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ যারা সৃষ্টি করেছে তারা নিজেরা তো দল করছেই আবার বিভিন্ন দলে বা জোটে অনুপ্রবেশ করছে৷ তাহলে আমরা কি করে ভাববো যে বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তার বিশ্বাস অক্ষুন্ন রেখেছে৷''
এর জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যাঁরা বিবৃতি দিয়েছেন, তাঁরা আসলে ভুল করছেন৷ তাঁরা না বুঝে বিবৃতি দিয়েছেন৷ সরকারের সঙ্গে হেফাজতের কোনো সম্পর্ক বা চুক্তি হয়নি৷ সরকার কওমি শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ দেশের একটি জনগোষ্ঠীতে অবহেলা করা যায় না৷ কাউকে বাইরে রেখে উন্নয়ন হয়না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের কারণেই বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে৷ জামায়াত-শিবির পর্যুদস্ত হচ্ছে৷ আওয়ামী লীগ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল এবং নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুক্তিযদ্ধের বিরোধী শক্তির সঙ্গে কখনো আপোস করেনি৷ সাম্প্রদয়িক ও ধর্মান্ধ শক্তির সঙ্গে আপোসের কোনো প্রশ্নই ওঠে না৷''