সমাজ কল্যাণ মন্ত্রীর প্রকাশ্যে ধূমপানের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও ব্লগে নিন্দার ঝড় উঠেছে৷ ক্ষমা চাওয়ার পর এখন তাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
সামহয়্যার ইন ব্লগে রিপন ইমরান লিখেছেন, ‘গতকাল সিলেট বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মঞ্চে বসে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মহসীন আলীর ধূমপানের ছবিটি দেখে আমার ঈশপের গল্প মনে পড়ছে৷ আমি হলপ করে বলতে পারি আমরা যারা রাজনীতি সংশ্লিষ্ট নই তারা জাতীয় পর্যায়ের নেতা হিসেবে এই চেইন স্মোকার মহসীন আলীকে চিনতাম না৷ প্রধানমন্ত্রী তাকে বর দিয়েছেন কিন্তু সেই বরই তার গলার কাঁটা হয়েছে৷’
ফেসবুকে প্রকাশ্যে ধূমপানের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন সৈয়দ আলী৷ তিনি লিখেছেন, অনকনসাস মাইন্ডে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার জন্য তিনি দুঃখিত৷ আল্লাহ রহম করছে উনি যে আনকনসাস মাইন্ডে মঞ্চে আগুন ধরিয়ে দেন নাই৷ তার বিষয়ে সরকারের কয়েকটি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত৷
তার ব্যক্তিগত অস্ত্র থাকলে তা জব্দ করা এবং সর্বোপরি দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্ত কাজ থেকে তাকে দূরে রাখা৷
তবে আদালতের উচিত দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রকাশ্য ধূমপানের জন্য নির্ধারিত জরিমানা করা৷ কারণ আইন সবার জন্যই সমান৷ আর আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগেই সমাজের কল্যাণ অবধারিত৷
‘ধূমপান বর্জন করুন, ক্যানসারকে দূরে রাখুন’
ফুসফুসের ক্যানসার রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই ধূমপায়ী
ছবি: Fotolia/Fotowerk
ধূমপান – বিষপান
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সে কথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা৷ তবে ধূমপান স্বাস্থ্যের ঠিক কতটা ক্ষতি করে, তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই৷ জার্মানির ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ধূমপান করার কারণেই বছরে ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়৷ আর বছরে ৩,৩০০ জন মারা যায় ধূপায়ীদের কাছাকাছি থেকে সিগারেটের ধোঁয়া গ্রহণ করার কারণে৷
ছবি: AP
ফুসফুসের ক্যানসার
ধূমপান শরীরের যে কোনো অঙ্গেরই ক্ষতি করে, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ফুসফুস এবং হার্ট বা হৃদযন্ত্রের৷ ফুসফুসের ক্যানসার রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই ধূমপায়ী৷
একদিনে দুই কোটিরও বেশি সিগারেট
জার্মানিতে মানুষ দিনে প্রায় আড়াই কোটি সিগারেট খায়৷ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শতকরা ২৫ জন নিয়মিত ধূমপান করেন, মাঝে মাঝে করেন শতকরা চারজন৷ তার মধ্যে শতকরা ৩৫ জন পুরুষ এবং ২২ জন নারী৷ জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি ধূমপান করেন কনস্ট্রাকশন বা নির্মাণ ক্ষেত্রের শ্রমিক, বাস বা ট্রাক চালক৷ আর সবচেয়ে কম ধূপায়ীদের মধ্যে রয়েছেন ডাক্তার, ফার্মেসি কর্মী এবং শিক্ষক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মহিলা ধূমপায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে
গত ২০ থেকে ৩০ বছরে জার্মানিতে মহিলাদের মধ্যে ধূমপান করার প্রবণতা অনেক বেড়েছে৷ জার্মানিতে মহিলাদের গড় আয়ু পুরুষদের চেয়ে বেশি৷ তবে এখন মহিলারা যেভাবে ধূমপান করেন, তা অব্যাহত থাকলে শীঘ্রই মহিলাদের গড় আয়ু পুরুষদের সমান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
ছবি: Picture-Alliance/KEYSTONE
সিগারেটের বিজ্ঞাপন অনেকটা দায়ী
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধূমপান উপভোগ করার চেয়ে স্মার্টনেস দেখানোই যেন বড় কথা৷ তবে সিগারেটের বিভিন্ন বিজ্ঞাপনই এদের ধূমপান করতে প্রভাবিত করে থাকে৷ সুখের কথা, জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সম্মিলিত প্রচেষ্টা
ধূমপান ছেড়ে দেওয়া সহজ নয়, তবে চেষ্টা করলে পারা যায়৷এর জন্য রয়েছে নানা ওষুধপত্র,গ্রুপ থেরাপি৷মনোবিজ্ঞানী, গবেষক এবং কেমনিৎস শহরের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ধূমপান বিরোধী কেন্দ্রের প্রধান প্রোফেসার স্টেফান ম্যুলিশ বলেন, ধূমপান ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা পর থেকেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমতে শুরু করে৷তিনি একটি গ্রুপ থোরাপিও পরিচালনা করেন৷তাঁর মতে, ‘একা চেষ্টার চেয়ে গ্রুপের মাধ্যমে ধূমপান ছাড়ার চেষ্টায় সফলতা বেশি’৷
ছবি: Privat
ঘরের বাইরে ধূমপান
বেশ কয়েক বছর থেকে জার্মানিতে বিভিন্ন জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷বিভিন্ন রেস্তোরাঁ বা অফিস-আদালতের মতো ডয়চে ভেলেতেও অফিস ঘরে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ৷ তবে ঘরের বাইরে, অর্থাৎ বারান্দায় প্রায়ই কর্মীদের ধূমপান করতে দেখা যায়, এমনকি বাইরের তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রি হলেও৷
ছবি: picture-alliance/Coleman/Photoshot.
প্রোফেসর ড. এলিজাবেথ পট
‘ধূমপায়ীরা মাত্র কয়েক সপ্তাহ ধূমপান থেকে বিরত থাকুন৷ নিজেরাই বুঝতে পারবেন যে আপনাদের ফুসফুস আরো ভালোভাবে কাজ করছে’৷ একথা বলেছেন প্রোফেসর ড. এলিজাবেথ পট, যিনি ১৯৮৬ সাল থেকে জার্মানির স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় দফতরের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: dapd
শেষ কথা
মানুষ তার আয়ু নিজেই নির্ধারণ করতে পারেনা তা ঠিক, তবে ধূমপান করে ইচ্ছে করে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবারও কোনো যুক্তি নেই৷ শুধু তাই নয়, যারা ধূপায়ীদের আশেপাশে থাকে তারা আক্রান্ত হয় স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যায়৷ আর সন্তানসম্ভবা মায়েরা ধূমপানের সময় ভাবুন তাদের অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের কথা৷ এমনটাই বলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Fotolia/Fotowerk
9 ছবি1 | 9
সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্লগার মিজানুর রহমান জুয়েল৷ লিখেছেন, প্রচলিত আইনে প্রকাশ্যে ধূমপান করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ কিন্তু যিনি এই অপরাধটি করলেন তিনি একজন প্রভাবশালী আইন প্রণেতা৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সর্বজন স্বীকৃত ক্লিন ইমেজের মন্ত্রিপরিষদ৷ এ কেমন ধরনের ক্লিন ইমেজ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শুরুতেই এই ধরনের কাজ এক দিক থেকে ভালোই হলো৷ এদের উপযুক্ত সাজার ব্যবস্থা করলে ভবিষ্যতে আর কেউ এহেন কাজ করবে না৷ কিন্তু মন্ত্রীমহোদয়! তার কৃত কর্মের সাজা পাবেন কি?
‘ধূমপান করা ভালো না মন্দ? উত্তর যদি মন্দ হয় তবে সেটা গোপনে বা প্রকাশ্যে যেভাবেই করা হোক দুটোই অপরাধ৷ তিনি লিখেছেন, অনেক ধূমপায়ী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টকে দেখছি মন্ত্রীর ছবি দেখিয়ে সমালোচনা করছেন৷ অথচ তারা নিজের সমালোচনা করছেন না কেনো?
অপরাধ, সেটা গোপনে বা প্রকাশ্যে হোক, সেটা অপরাধই৷ মন্ত্রীর সমালোচনা করার আগে নিজের সমালোচনা করুন৷ আগে ঘোষণা দিন যে আপনি ধূমপান করেন না, আর কখনো করবেন না৷ তারপর কোমরে গামছা বেধে সমালোচনায় নামুন৷'