নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে চারজন অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ড হওয়ার কথা আগামী শনিবার। তার আগে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে ফের ফিরে এল সেই ঘটনার ভয়াবহ স্মৃতি। এ বারও আক্রান্ত হলেন এক তরুণী। তাঁকে অচেতন করে চালানো হল ভয়াবহ অত্যাচার। ধর্ষণের পরে যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হল লোহার রড।
নাগপুরে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে গত সপ্তাহে। আক্রান্ত তরুণী হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। তবে পুলিশ বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করেছে সোমবার রাতে।
আক্রান্ত তরুণীর বয়স ১৯ বছর। নাগপুরে একটি বাড়িতে ভাইকে নিয়ে থাকেন তিনি। ওই একই বাড়িতে থাকেন আর এক ভদ্রমহিলা এবং ৫২ বছরের অভিযুক্ত। পুলিশ জানিয়েছে, যে দিন ঘটনাটি ঘটে, সে দিন ওই ভদ্রমহিলা এবং আক্রান্তের ভাই দেশের বাড়ি গিয়েছিলেন। সেই সুযোগে তরুণীর উপর হামলা চালায় অভিযুক্ত। প্রথমে তাঁর উপর শারীরিক অত্যাচার চালানো হয়। তরুণী প্রতিহত করার চেষ্টা করলে তাঁর মুখে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় কাপড়। এরপরেই শুরু হয় ধর্ষণ। বিধ্বস্ত অবস্থায় তরুণী এক সময় সংজ্ঞা হারান। কিন্তু তাতেও থামেনি ধর্ষণ। মেডিক্যাল রিপোর্ট বলছে, ধর্ষণের পরে অচেতন ওই তরুণীর যৌনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে দেয় অভিযুক্ত।
বিশ্বের ৩৫ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হন৷ এর মধ্যে ৪০ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হলেও চুপ থাকেন, ১০ শতাংশ আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেন৷ এক সমীক্ষা জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে কোন দেশে কতগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregorদেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ১৩২ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের জরিপ অনুসারে, প্রতি চারজনের মধ্যে একজন ধর্ষণ করে সেই কথা স্বীকারও করেন৷
ছবি: Reutersদক্ষিণ আফ্রিকার দেশ বোতসোয়ানায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷ দেশটির প্রতি এক লাখ নারীরর মধ্যে ৯৩ জন ধর্ষণের শিকার হন৷
ছবি: picture alliance/AA/K. Mathe দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক দেশ লেসোথোয় ২০১৯ সালে তৃতীয় সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ সেখানকার এক লাখ নারীর মধ্যে ৮৩ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা ২১ লাখ ২৫ হাজার ২৬৮ জন৷
ছবি: Imago/F. Starkসোয়াজিল্যান্ডে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৭৮ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দক্ষিণ আফ্রিকার এই দেশটির জনসংখ্যা ১১ লাখ ৪৮ হাজার ১৩০ জন৷ সেই হিসেবে ২০১৯ সালে এ দেশে ৮৯৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaeneদেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬৭ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ অনেক দেশেই যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতারিবোধী আইন থাকলেও নানান অসঙ্গতিতে তা ঠিকমতো প্রয়োগ হয় না৷
ছবি: pictureäalliance/dpa/A. Simmonsইউরোপের এই দেশটিতে প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬৩ জনেরও বেশি নারী ধর্ষিত হন৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও বিশ্বজুড়ে পুরুষরাও প্রতিদিন যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/A. Tambolyদক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ সরিনামের প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৪৫ জন ধর্ষণের শিকার হয়৷ দেশটিতে পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ২৭২ জন মানুষ বসবাস করে৷ গত বছর দেশটিতে ২৬২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/E.Troonমধ্য অ্যামেরিকার দেশ কোস্টা রিকার প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৩৭ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ গবেষণা বলছে, ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সের নারীদের ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: Reuters/J.C. Ulateমধ্য অ্যামেরিকার এই দেশটির প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ন৩২ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা ৬৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫০২ জন৷ ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ ডটকম বলছে, অনেক নারী যৌন সহিংসতার ঘটনা নিয়ে অভিযোগই করেন না৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Oconক্যারিবীয় এই দেশটির প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৩১ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা এক লাখ ১২ হাজার তিনজন৷ ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সি কলেজ ছাত্রীরাও যৌন নির্যাতনের ঝুঁকিতে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Camara১১৮টি দেশের মধ্যে চালানো এই জরিপে ১৪তম অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র৷ ৪০তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে প্রায় ১০ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ ৪২তম অবস্থানে থাকা জার্মানিতে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৯ জনেরও বেশি ধর্ষিত হন৷ আর ভারতের প্রতি লাখ নারীর মধ্যে এক দশমিক ৮ জন ধর্ষণের শিকার হন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor সোমবারই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানানো হয়েছে, ওই অভিযুক্ত স্থানীয় একটি কাঠচেরাই কলে পরিদর্শকের কাজ করত। অনেক দিন ধরেই ওই তরুণীকে উত্তক্ত করছিল অভিযুক্ত।
আক্রান্ত তরুণী এখনও হাসপাতালে। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওষুধে কাজ হলেও ওই তরুণী মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছেন। সেই ট্রমা থেকে বেরতে এখনও বহু সময় লাগবে।
দিল্লিতে নির্ভয়া কাণ্ডের পরে গোটা দেশ জুড়ে প্রতিবাদ হয়েছিল। ধর্ষণের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন সাধারণ মানুষ। কড়া আইনের দাবি তোলা হয়েছিল। বস্তুত, ওই ঘটনার পরে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন আরও কঠোর হয়েছে। কিন্তু তাতে বাস্তব বদলায়নি। একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিছু দিন আগে হায়দরাবাদে এক মহিলাকে ধর্ষণ করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গের মহিলা কমিশনের প্রধান লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ''সমস্যাটা আসলে সমাজের ভিতরে ঢুকে আছে। সমাজের পরিবর্তন না হলে এই সমস্যাও কমবে না। আগেও এমন ঘটনা ঘটত। মেয়েরা তখন পুলিশ পর্যন্তও পৌঁছতে পারতেন না। এখন অভিযোগ জানানোর প্রবণতা অন্তত সামান্য বেড়েছে।''
এসজি/জিএইচ (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এবিপি)