1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এ কেমন লকডাউন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৫ এপ্রিল ২০২১

বাংলাদেশে এই বছরের লকডাউনের প্রথম দিনে মিশ্র পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অফিস খোলা রেখে গণপরিহন বন্ধ রাখায় অফিসযাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। আর লকডাউনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন দোকান কর্মচারী ও পরিবহন শ্রমিকেরা।

Bangladesch Lalbagh Fort
ফাইল ফটোছবি: Mortuza Rashed

প্রায় ৬০ বছর বয়সী মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিনের বাসা এয়ারপোর্ট এলাকায়। চাকরি করেন কারওয়ান বাজার  এলাকার একটি বেসরকারি অফিসে। সকালে তিনি  এয়ারপোর্ট থেকে একটি নাইট কোচে বলে কয়ে উঠে মাহাখালী আসেন। সেখান থেকে হেঁটে আসেন কারওয়ান বাজার। তার যে বেতন তাতে তার পক্ষে  রিকশা বা অটোরিকশায় করে আসা সম্ভব ছিল না। কিন্তু বিকেলে তিনি অফিস শেষে বাসায় ফিরবেন কীভাবে? রিকশা বা অটোরিকশা ছাড়া উপায় নেই। অপেক্ষা করছিলেন শেয়ারে যদি যাওয়া যায়। যদি সেটা সম্ভব না হয় এই বয়সে তিনি হেঁটেই তার এয়ারপোর্ট এলাকার বাসায় যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন," সরকার খোলা রাখা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তার কর্মচারীদের ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করতে বললেও আমাদের  অফিস তা করেনি। চাকরি করতে হলে যেকোনো উপায়ে অফিসে আসতে হবে।”

লকডাউনে গণপরিবহণ বন্ধ থাকলেও রিকশা, অটোরিকশা এবং ব্যক্তিগত যানবাহন চলছে। আর চলছে জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি। যেসব যানবাহন চলছে তার আবার ভাড়া অনেক।  পল্লবীর বাসিন্দা শফিউল্লাহ সকালে কারওয়ান বাজারের অফিসে আসেন। তিনি বলেন," হেঁটে, রিকশায় এবং অটো রিকশায় করে ভেঙে ভেঙে আসতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন কীভাবে বাসায় ফিরব তাই চিন্তা করছি।” কারওয়ান বাজার মোড়ে বিকেল চারটার দিকে তার মত আরো অনেকে দাঁড়িয়েছিলেন। রিকশা বা অটোরিকশা পাচ্ছেন না। পেলেও ভাড়া অনেক।  অফিস খোলা রেখে গণপরিহণ বন্ধ করায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

সিরাজুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

ঢাকায়  লোকজন বাইরে কিছুটা কম বের হলেও লকডাউন যে তা বোঝা যাচ্ছেনা। কাঁচাবাজার, গলির ভিতেরের দোকানপাট খোলা। লোকজন  বাইরে বের হচ্ছেন, কাজে যাচ্ছেন, বাজার করছেন। তবে মার্কেট, সুপার মার্কেট বন্ধ আছে।

রাস্তার পাশে কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান সাজিয়ে বসেছেন অনেকে। তাদেরই একজন সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন," বাস-মিনিবাস ছাড়া আর সব কিছুই চলছে। লোকজন বাইরেও বের হচ্ছেন। একটু কম হলেও সব কিছুই মোটামুটি স্বাভাবিক। লোকজন বাজারঘাটও করছে।”

রাস্তার পাশের আরেকজন দোকানদার মিরাজ হোসেন জামা কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। তার কথা,"বেচা বিক্রি খারাপ না।'

এই পরিস্থিতিতে মার্কেট খুলে দেয়ার দাবিতে নিউমার্কেট এলকার ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীরা লকডাউনের মধ্যেও সোমবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের কথা সবকিছু খোলা থাকলে মার্কেট বন্ধ থাকবে কেন? তারা রোববার লকডাউনের আগের দিনও বিক্ষোভ করেছেন। দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন," আমাদের কথা হলো লকডাউন হলে ঠিকমতো হতে হবে। আমাদের দোকানপাট বন্ধ রেখে আর সব খোলা রাখা হবে তা হবে না। গার্মেন্টসসহ শিল্প কারখানা খোলা। তাহলে আমরা কী দোষ করলাম।  আমরা বিষয়টি সরকারকে জানিয়েছি।” তার মতে, এখন যেটা হচ্ছে সেটাকে কোনোভাবেই লকডাউন বলা যায় না। আর তাদের সরকার কোনো সহায়তাও করছে না। এর আগে লকডাউনে তারা পুঁজি হারিয়েছেন। আবার পুঁজি হারালে তারা কোথায় যাবেন?

পরিবহন শ্রমিকেরা গণপরিবহণ চালুর দাবিতে যাত্রাবাড়ি ও সায়েদাবাদ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তাদেরও কথা," সব কিছু চালু থাকলে গণপরিবহণ বন্ধ থাকবে কেন?”

মো. হেলাল উদ্দিন

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন," পরিবহন শ্রমিকেরা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। ফলে এই সাতদিন যানবাহন বন্ধ মানে তাদের আয় বন্ধ। মালিকেরা তাদের কোনো সহযোগিতা করছে না। সরকারও না। গত বছর লকডাউনেও তারা তেমন কোনো সহযোগিতা পাননি। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে কিছু খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা পেয়েছে শুধু ঢাকার ভোটারেরা। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের বড় একটি অংশ ঢাকার ভোটার না।”

তিনিও মনে করেন, লকডাউন  সুষ্ঠু পরিকল্পনায় হচেছ না। ফলে যাদের বন্ধ করা হচ্ছে তারা বিক্ষুব্ধ হচ্ছেন।

এদিকে লকডাউনে যাতে গরিব রিকশা চালকরা অর্থ কষ্টে না পড়েন যেজন্য রিকশা চালু রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন  প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। আর রিকশা অনেকটাই  স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ বলে জানান তিনি।

রিকশা চালক হারুন এবং দুলাল লকডাউনে আগের মত যাত্রী পাচ্ছেন না। ,হারুনের কথা লোকজন বের হলেও আগে চেয়ে কম। ফলে তার আয় কমে গেছে। তিনি বলেন, সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তিনি ৩০০ টাকা আয় করেছেন। কিন্তু স্বাভাবিক থাকলে এই সময়ে তিনি ৬০০ টাকা আয় করতে পারতেন।

এদিকে লকডাউনে মাস্ক পরানোর জন্য অভিযান আরো জোরদার করা হয়েছে বলে ঢাকা জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। ঢাকা শহর  এবং আশপাশের চারটি উপজেলায় মোট ১৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। এর বাইরে বিভিন্ন স্পটে পুলিশকেও যাত্রী, রিকশা চালক ও পথচারীদের মাস্ক পরাতে বাধ্য করতে দেখা গেছে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন," এখন যেভাবে লকডাউন চলছে তা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করেই হচেছ। সাত দিন এভাবেই চলবে। এর ফলাফল দেখে পরে আবার  আবার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ