বাংলাদেশে পর্যটন কি আদৌ ‘শিল্প' হয়ে উঠতে পেরেছে? এই খাতের ঘাটতিগুলো কিভাবে দূর করা সম্ভব?
বিজ্ঞাপন
এসব বিষয়েই ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন এফবিসিসিআই'র ট্যুরস, ট্র্যাভেল এবং হসপিটালিটি সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি, ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)-এর তিন বারের সাবেক সভাপতি ও ট্যুরিজম বোর্ডের গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য মো. রাফিউজ্জামান।
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প আকারে কত বড়?
মো. রাফিউজ্জামান: আমাদেরপর্যটন শিল্পের তিনটি দিক। ডমেস্টিক ট্যুরিজম, ইনবাউন্ড ট্যুরিজম এবং আউটবাউন্ড ট্যুরিজম । আমাদের ডমেস্টিক ট্যুরিজমের অবস্থা বেশ ভালো। আমাদের পর্যটন স্পটও বাড়ছে। আগে ১০টির নিচে ছিল, এখন ৩০টির মতো স্পট আছে। ডমেস্টিক ট্যুরিজমের নতুন নতুন স্পট তৈরি হয়েছে। আর ইনবাউন্ড ট্যুরিজমে বিদেশ থেকে বোনাফাইড ট্যুরিস্ট বাংলাদেশে খুব কমই আসে। ব্যবসার উদ্দেশ্যে অনেকে আসেন। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় আসেন। আর দেশ থেকেও বিপূল সংখ্যক পর্যটক দেশের বাইরে যান। তবে আগের চেয়ে একটু কম, কারণ দেশের ভেতরে, বিশেষ করে কক্সবাজার ও সিলেটে আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট হওয়াতে কেউ কেউ এখন সেখানে যাচ্ছেন।
আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে যদি বলতেন। বছরে এই খাতে কত অর্থ ব্যয় হচ্ছে।বা কত আয় হচ্ছে?
এটা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। কারণ, এর সঙ্গে অনেক মন্ত্রণালয়, অনেক ধরনের খাত যুক্ত। তবে ডমেস্টিক ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে বলতে পারি, বছরে ১০ মিলিয়ন মুভমেন্ট হয়। তারা যদি প্রত্যেক মুভমেন্টে ১০ হাজার টাকাও খরচ করেন, তাহলে অঙ্কটা অনেক বড়।
প্রচলিত কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন বা সিলেটের বাইরে আমাদের পর্যটনের আর কোন কোন দিকে বিস্তৃত হয়েছে?
আমরা শুরু করেছি ৫০ বছর হলো। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো অনেক আগে শুরু করেছে। তারপরও বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে এক হাজার কোটি টাকাও বিনিয়োগ হয়েছে পর্যটন শিল্পে ব্যক্তিখাতে। তবে যদি ব্যবসা না হয় তাহলে তো বিনিয়োগ হবে না। বাংলাদেশে এখন রুম ভাড়া ২৪ ঘন্টার জন্য ২০০ ডলারের নিচে পাবেন না। থাইল্যান্ড , নেপাল ও মালয়েশিয়ার তুলনায় এটা অনেক বেশি। তারপরও সেখানে রুম খালি থাকে না। কক্সবাজার, সিলেট, সুন্দরবনে হলিডেতে প্রচণ্ড ভিড় থাকে। যদি ডেস্টিনেশন বলেন, তাহলে তা খুব বেশি নাই। তারপরও পর্যটন এগোচ্ছে বলেই তো হোটেল খালি থাকছে না।
তারা (আমলারা) পর্যটন বোঝেন না, চাকরি করেন: মো. রাফিউজ্জামান
দেশে কত ট্যুর অপারেটর আছে?
আমাদের টোয়াবের সদস্য আছেন ৮৮৫ জন। কিন্তু দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে। তরুণরা এই ব্যবসায় আসছেন। অনেকে পড়াশুনা শেষ করে পর্যটন ব্যবসাকে পেশা হিসেবে নিচ্ছেন। বাংলাদেশের ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয় এখন ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি পড়াচ্ছে । আরো ১০টা ইনস্টিটিউট আছে শুধু এই বিষয়ের ওপর।
এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পর্যটকদের নিরাপত্তা কেমন?
যাদের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান অনেক বেশি, যারা এই শিল্পে বিশ্বে এক থেকে দশের মধ্যে আছে সেইসব দেশেও পর্যটকরা হামলার শিকার হচ্ছেন।
আমি বাংলাদেশের অবস্থা জানতে চাইছি...
কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। এখানে আলাদা ট্যুরিস্ট পুলিশ আছে। বিচের জন্য আলাদা ম্যানেজমেন্ট আছে।
এখানে পর্যটনের খরচ বেশি কেন?
কারণ, আমাদের এখানে আন্তর্জাতিক মানের পর্যাপ্ত হোটেল রিসোর্ট নাই। সেই কারণে ভাড়া বেশি।
পর্যটক মানেই তো সবাই ধনী না। তাহলে তাদের জন্য কী ব্যবস্থা?
সেটা ঠিক। আসলে পর্যাপ্ত হোটেল রিসোর্ট হলে খরচ কমে আসবে।
পর্যটন কর্পোরেশন, ট্যুরিজম বোর্ড কী করছে?
পর্যটন কর্পোরেশন কিছু স্থাপনা করে, হোটেল মোটেল করে। তারা তাদের ব্যবসা বাড়াতে চায়। আর ট্যুরিজম বোর্ডের কাজ হলো বাংলাদেশের পর্যটনকে ব্র্যান্ডিং করা।
পর্যটন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় তলানিতে বাংলাদেশ
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম সম্প্রতি ‘ভ্রমণ ও পর্যটন উন্নয়ন সূচক ২০২৪’ প্রকাশ করেছে৷ এতে ১১৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯ নম্বরে৷ দক্ষিণ এশিয়ায় সবার পরে আছে বাংলাদেশ৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ভ্রমণ ও পর্যটন উন্নয়ন সূচক ২০২৪
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ডাব্লিউইএফ ২১ মে এই সূচক প্রকাশ করে৷ যুক্তরাজ্যের সারে বিশ্ববিদ্যালয় এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল৷ নিজস্ব তথ্য ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য একত্র করে মোট ১১৯টি দেশের সূচক প্রকাশ করেছে ডাব্লিউইএফ৷
ছবি: Ishara S. Kodikara/AFP/Getty Images
বাংলাদেশের অবস্থান
১১৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম৷ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার শেষে৷
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যদের অবস্থান
এই অঞ্চলের পাঁচটি দেশের সূচক প্রকাশ করেছে ডাব্লিউইএফ৷ বাংলাদেশ ছাড়া বাকিগুলো হলো ভারত (৩৯), শ্রীলঙ্কা (৭৬), পাকিস্তান (১০১) ও নেপাল (১০৫)৷
ছবি: Xinhua/picture alliance
শীর্ষে যারা
এই সূচকে সবার উপরে আছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এরপর ক্রমান্বয়ে আছে স্পেন, জাপান, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, চীন, ইটালি ও সুইজারল্যান্ড৷
ছবি: Getty Images/D. Angerer
তলানিতে যারা
বাংলাদেশের পরের অবস্থানগুলোতে ক্রমান্বয়ে আছে জিম্বাবুয়ে, হন্ডুরাস, নাইজেরিয়া, বেনিন, আইভোরিকোস্ট, মালাউয়ি, অ্যাঙ্গোলা, ক্যামেরুন, সিয়েরা লিওন ও মালি৷
ছবি: DW/S. Sanderson
বিবেচ্য বিষয়
সহায়ক পরিবেশ, ভ্রমণ ও পর্যটনবিষয়ক নীতি, অবকাঠামো ও সেবা, পর্যটন ও ভ্রমণের সম্পদ এবং দীর্ঘস্থায়ীত্ব- এই পাঁচটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সূচকটি তৈরি করেছে ডাব্লিউইএফ৷
ছবি: DW/M. Mamun
6 ছবি1 | 6
তারা কি বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে পারছে? পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারছে?
তারা আসলে সেটা সন্তোষজনকভাবে পারছেন না। তাদের আরো তৎপর হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশকে বিদেশি পর্যটকদের কাছে উপস্থাপন করার জন্য, আকৃষ্ট করার জন্য অনেক কিছু করার আছে।
বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার ক্ষেত্রে কোথায় কোথায় ঘাটতি আছে?
আমাদের যে আইকনিক ট্যুরিজমের জায়গাগুলো আছে, আমাদের ঋতু বৈচিত্র্য, সংস্কৃতি, খাবার- এগুলো বিদেশে আমাদের দূতাবাসের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে।
আমাদের সংস্কৃতিকে জানার জন্য কী ব্যবস্থা আছে? পর্যটকরা কি এখানকার জনজীবনে , পরিবারে মিশে যেতে পারেন?
আমরা ‘হোম স্টে'র প্রবর্তন করেছি। উত্তরবঙ্গের দুইটি গ্রামে আমরা পরিবারের সঙ্গে থেকে সেখানকার সংস্কৃতি, জীবন যাতে তারা বুঝতে পারেন তা চালু করেছিলাম। কিন্তু নিরাপত্তার জন্য শেষ পর্যন্ত আমরা তা অব্যাহত রাখতে পারিনি।
আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম তো পর্যটনের বড় জায়গা। সেখানে কি বিদেশিরা আদিবাসীদের পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারে? সব জায়গায় যেতে পারে?
ওই জায়গাটা সেনসিটিভ। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আছে সেখানে। নিরপত্তার প্রশ্ন আছে। তবে বিদেশি পর্যটকদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ধাকলেও দেশি পর্যটকরা সেখানে যেতে পারেন।
বিদেশি পর্যটকদের আমরা কি সব ধরনের সুবিধা দিতে পারছি? তাদের মতো থাকার ব্যবস্থা করতে পারছি?
বিদেশি পর্যটকদের জন্য আলাদা জোন হচ্ছে। ওই সব জোনে বিদেশি পর্যটকদের জন্য নাইট ক্লাব ও লিকারের ব্যবস্থা থাকবে। আবার সুন্দরবন কিন্তু সবার জন্য না। সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে। ইকো ট্যুরিজমের আলাদা চরিত্র আছে। আর সি বিচে এনজয় করার জন্য ব্যবস্থা হচ্ছে।
কক্সবাজারের সি বিচ তো দখল হয়ে গেছে। অপরিকল্পিত স্থাপনা হয়েছে, অপরিকল্পিত পর্যটন হচ্ছে...
আগে যেসব অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি হয়েছে, সেগুলো আছে। কিন্তু এখন আর নতুন করে তৈরি করতে দিচ্ছে না। বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি হয়েছে৷ তারা এগুলো দেখছে। যেগুলো হয়ে গেছে, সেই জঞ্জাল থেকে সি বিচ কীভাবে বাঁচানো যায় তার পরিকল্পনা হচ্ছে।
তরুণরা কতটা এগিয়ে নিচ্ছেন?
তারাই এখন মূল শক্তি। তারা নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আসছে। তারা টাঙ্গুয়া হাওড় এলাকায় হাউজবোট চালু করেছে, তারা পর্যটনের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়ি হাওড় এলাকায় সড়ক হওয়ার পর সেখানে এখন তরুণরা যাচ্ছেন। তারা নতুন নতুন কাজ করছেন।
হাওড়ের ওই সড়ক নিয়ে তো প্রশ্ন আছে। ওটা কি পরিবেশবান্ধব হয়েছে?
না, সেটা নিয়ে তো বিতর্ক আছে। আসলে পর্যটনের নানা বিষয় আছে। কখনো পরিবেশের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয়।
সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে যারা পর্যটনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা কি বোঝেন যে পরিবেশ, প্রতিবেশ রক্ষা করে কিভাবে কাজ করতে হয়? কিভাবে ব্র্যান্ডিং করতে হয়?
যরা হর্তাকর্তা আছেন, তারা সরকারি কর্মকর্তা। তারা আমলা। তাদের এখানে পাঠানো হয়। তারা প্রশাসনের কর্মকর্তা। কিন্তু তাদের এই খাতের জন্য আলাদা দক্ষতা বা বিশেষ জ্ঞান নাই। তারা পর্যটন বোঝেন না, তারা চাকরি করেন। দরকার হলো যারা এটা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, যাদের এই খাত নিয়ে বিশেষ জ্ঞান আছে, তাদের দায়িত্ব দেয়া, তাদের কাজে লাগানো।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১৫টি পর্যটন কেন্দ্র
পৃথিবীর মানচিত্রে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট দেশ বাংলাদেশ৷ সমুদ্র-পাহাড়-নদী – সব পর্যটন আকর্ষণই আছে এই দেশটিতে৷ বাংলাদেশের ১৫টি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রের কথা তুলে ধরা হলো এখানে৷
ছবি: DW/M. Mamun
দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার৷ প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য৷ কক্সবাজারকে তাই বলা হয় বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী৷ কক্সবাজার শহরে গত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন মানের হোটেল-রিসোর্ট৷
ছবি: DW/M. Mamun
একমাত্র প্রবাল দ্বীপ
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন৷ টেকনাফ থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্র গর্ভে জেগে ওঠা এ দ্বীপটির আয়তন প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার৷ এ দ্বীপের মূল আকর্ষণ সৈকত জুড়ে প্রবাল পাথরের মেলা, সারি সারি নারিকেল বৃক্ষ, দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া সমুদ্রের নীল জলরাশি আর স্থানীয়দের বিচিত্র জীবনযাপন৷ প্রায় দশ হাজার লোকের বসবাস এই দ্বীপে৷ এ দ্বীপের আরেক নাম ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’৷
ছবি: DW/M. Mamun
নির্জন সমুদ্র সৈকত
বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরিবিলি ও পরিচ্ছন্ন সমুদ্র সৈকত টেকনাফ৷ নির্জনে যারা অবকাশ যাপন পছন্দ করেন, তাদের জন্য আদর্শ ভ্রমণ গন্তব্য এটি৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাহাড় চূড়ায় নীলগিরি
বান্দরবান জেলাসদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের এ পর্যটন কেন্দ্রটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত৷ এখান থেকে মেঘ ছুঁতে পারেন পর্যটকরা৷ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত এ পর্যটন কেন্দ্রটিতে কয়েকটি রিসোর্টও আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
মেঘে ঢাকা নীলাচল
বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ার পাহাড়চূড়ায় জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র নীলাচল৷ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬০০ ফুট উচ্চতায় এ পর্যটন কেন্দ্রটিতে মেঘের লুকোচুরি দেখা যায়৷ নীলাচল থেকে পাখির চোখে দেখা যায় বান্দরবান শহরকেও৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাহাড়ের বাঁকে কাপ্তাই লেক
পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে প্রায় ১৭৬০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই লেক রাঙ্গামাটির অন্যতম ভ্রমণ গন্তব্য৷ কাপ্তাই লেকের ঝুলন্ত সেতু পর্যটকদের কাছে বেশি জনপ্রিয়৷ এছাড়া কাপ্তাই লেকের অন্যতম আকর্ষণ নৌকা ভ্রমণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাথর বিছানো বিছনাকান্দি
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষা বিছনাকান্দি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়৷ পাথর বিছানো বিস্তীর্ণ প্রান্তরের উপরে বয়ে চলা মেঘালয়ের পাহাড়ী ঝরনাধারা বিছনাকান্দির মূল আকর্ষণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনা ষাট গম্বুজ
দক্ষিণাঞ্চলের জেলা শহর বাগেরহাটে অবস্থিত ষাট গম্বুজ মসজিদ৷ ১৯৮৩ সালে এটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের একটি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে৷ নাম ষাট গম্বুজ হলেও মসজিদটিতে মূলত একাশিটি গম্বুজ আছে৷ খান জাহানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য কীর্তি এটি৷ ধারণা করা হয়, ষাট গম্বুজ মসজিদটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন ১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দের কিুছুকাল আগে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন
বাংলাদেশ ও ভারতজুড়ে প্রায় দশ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবন৷ এর বাংলাদেশ অংশের আয়তন প্রায় ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটার৷ ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়৷ বিপন্ন বেঙ্গল টাইগারের নিরাপদ আবাসস্থল এটি৷ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে যায়গাটি বেশ পছন্দের৷
ছবি: DW/M. Mamun
রাঙ্গামাটির ছাদ সাজেক ভ্যালি
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচ্চতায় সাজেক ভ্যালিকে বলা হয় ‘রাঙ্গামাটির ছাদ’৷ ভৌগোলিক অবস্থান রাঙামাটিতে হলেও যাতায়াতের সহজ পথ খাগড়াছড়ি হয়ে৷ সাজেকের আশপাশের গ্রামগুলোতে লুসাই,পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা আদিবাসীদের বসবাস৷ কমলা চাষের জন্য বিখ্যাত সাজেকে কফিও চাষ করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
দক্ষিণের ভাসমান বাজার
দক্ষিণের জেলা শহর ঝালকাঠী থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলি গ্রামের কৃত্তিপাশা খালের শতবর্ষের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ভাসমান বাজার৷ প্রায় সারা বছরই এ হাট বসলেও পেয়ারা ও আমড়ার মৌসুমে প্রায় তিন মাস এ হাট জমজমাট থাকে৷ সপ্তাহের প্রতিদিনই বসে ভাসমান এ হাট৷ ঝালকাঠী থেকে ছোট ছোট খালে ঘুরে এ সব এলাকার মানুষের বিচিত্র জীবনযাত্রাও দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
সাগরকন্যা কুয়াকাটা
সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পটুয়াখালীর শেষপ্রান্তে অবস্থিত৷ এটি বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়৷ এছাড়া কুয়াকাটার পাশেই আছে ফাতরার বন, যেটি সুন্দরবনেরই একটি অংশ বিশেষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির
পুরনো ঢাকার প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঢাকেশ্বরী মন্দির৷ কিংবদন্তী আছে রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের জঙ্গলে দেবী দুর্গার একটি মূর্তি পেয়ে একটি মন্দির নির্মাণ করে সেটিকে সেখানে স্থাপন করেন৷ আর নাম দেন ঢাকেশ্বরী মন্দির৷ অনেক ঐতিহাসিকের মতে এই ঢাকেশ্বরী নাম থেকেই ‘ঢাকা’ নামের উৎপত্তি৷
ছবি: DW/M. Mamun
লালবাগ দুর্গ
পুরনো ঢাকার লালবাগে অবস্থিত এ দুর্গটি মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের ছেলে শাহজাদা আজাদ ১৬৭৮ সালে নির্মাণ শুরু করেছিলেন৷ পরে শায়েস্তা খান এসে ১৬৮৪ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ করেন৷ এ দুর্গের ভেতরে পরীবিবির সমাধি, দরবার হল ও তিন গম্বুজ বিশিষ্ট তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রাচীন স্থাপনা সমৃদ্ধ সোনারগাঁও
প্রাচীন সুবর্ণগ্রাম থেকেই সোনারগাঁও নামের উদ্ভব৷ বঙ্গ অঞ্চলে মুসলমানদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবার পর থেকে ১৬১০ সালে ঢাকা নগরের অভ্যুদয়ের আগ পর্যন্ত সোনারগাঁও ছিল দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গের প্রশাসনিক কেন্দ্র৷ সোনারগাঁও এলাকার প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো খাসনগর দীঘি, দুলালপুরের নীলকুঠি, গোয়ালদি শাহী মসজিদ, আমিনপুর মঠ, দামোদরদি মঠ, পানাম নগরের আবাসিক ভবন, বড় সরদার বাড়ি প্রভৃতি৷