সোমবার থেকে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে জাতিসংঘের আয়োজনে দুই সপ্তাহব্যাপী জলবায়ু সম্মেলন শুরু হচ্ছে৷ কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিজ বা কপ নামে পরিচিত এ বছরের সম্মেলন নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের আয়োজনে প্রতিবছরই জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে৷ কিন্তু সব কপই সমান গুরুত্ব পায় না৷ তবে কপ২৫ নামে পরিচিত এবারের সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের সব দেশকে ‘ন্যাশনাল ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান' তৈরির কাজ শেষ করতে হবে৷ অর্থাৎ, হাতে আছে আর মাত্র এক বছর৷ ফলে যেসব দেশ এখনো এই কাজ শেষ করতে পারেনি, তাদের উপর চাপ তৈরির শেষ সুযোগ এবারের সম্মেলন৷
প্যারিস চুক্তিতে দেশগুলো বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পযুগের (১৮৫০-১৯০০) চেয়ে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের অনেক নীচে রাখতে সম্মত হয়েছে৷ তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার চেষ্টার কথাও বলা হয়েছে৷
এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমণ ৪৫ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ এছাড়া ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার লক্ষ্যও নির্ধারণ করা হয়েছে৷
তবে এসব উদ্দেশ্য পূরণে রাজনীতিবিদরা যথেষ্ট কাজ করছেন না বলে গতবছর থেকে আন্দোলন শুরু করেছেন সুইডিশ শিক্ষার্থী গ্রেটা টুনব্যার্গ৷ প্রতি শুক্রবার স্কুলে না গিয়ে সুইডিশ সংসদের সামনে বসে আন্দোলন করতেন তিনি৷ তাঁর এই আন্দোলন একসময় সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে৷
গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সম্মেলন চলার সময় প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷
জলবায়ু বিক্ষোভের ১০টি শক্তিশালী স্লোগান
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে বিশ্ববাসী, বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা সচেতন হয়ে উঠছেন৷ ফলে এটি মোকাবিলার পর্যাপ্ত উদ্যোগ না নেয়ার প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন তারা৷
ছবি: AFP/Getty Images/S. Khan
‘জলবায়ুর জন্য স্কুল ধর্মঘট’
২০১৮ সালের নভেম্বরের কোনো এক শুক্রবারে সুইডেনের সংসদের সামনে তোলা এই ছবিটি এখন আইকনিক ছবিতে পরিণত হয়েছে৷ ১৫ বছর বয়সি স্কুল শিক্ষার্থী গ্রেটা টুনব্যার্গের হাতে ধরা কাগজে লেখা ‘জলবায়ুর জন্য স্কুল ধর্মঘট’৷ প্রতি শুক্রবার তিনি স্কুলে না গিয়ে এই কাজ করতেন৷ গ্রেটার আন্দোলন এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/DPR/H. Franzen
‘ধরিত্রী বললো আমিও’
২০১৭ সালে জার্মানির বার্লিনে কয়লাবিরোধী এক বিক্ষোভের স্লোগান ছিল এটি৷ নারীদের যৌন হয়রানির প্রতিবাদের আন্দোলন হচ্ছে ‘মিটু’৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
‘আমরা টাকা খেতে পারি না’
২০১৯ সালের এপ্রিলে লন্ডনের বাণিজ্যিক এলাকায় বিক্ষোভের ছবি এটি৷ আয়োজক ছিল ‘এক্সটিঙ্কশন রেবেলিয়ন’ নামের পরিবেশবাদী এক সংগঠন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/W. Szymanowicz
‘সীমান্ত পোড়াও... কয়লা নয়’
জার্মানির হামবাখে কয়লা খনির কারণে পাশের বনজঙ্গলের ক্ষতি হচ্ছিল৷ তার প্রতিবাদে গতবছর অক্টোবরে বিক্ষোভ হয়৷ এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে কয়লাবিরোধী বার্তার সঙ্গে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অর্থ জুড়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Young
‘আপনারা বড়দের মতো আচরণ না করলে আমরা করবো’
সুইডিশ শিক্ষার্থী গ্রেটা টুনব্যার্গের উদ্যোগে শুরু হওয়া ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ আন্দোলনের অংশ এটি৷ চলতি বছরের ১৫ মার্চ হংকংয়ে অনুষ্ঠিত স্কুল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ছবি এটি৷
ছবি: AFP/Getty Images/A. Wallace
‘অস্বীকার করা কোনো নীতি নয়’
এই ছবিটিও চলতি বছরের ১৫ মার্চের৷ তোলা হয়েছে সাউথ আফ্রিকার কেপ টাউনে৷ এই স্লোগান ছাড়াও ‘অস্বীকার করা বন্ধ করুন! আমাদের পৃথিবী মরে যাচ্ছে’ শীর্ষক স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/N. Manie
‘আপনাদের হাতে আমাদের ভবিষ্যৎ’
বার্লিনে প্রতিবাদের সময় বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড ছাড়াও নিজেদের শরীরে নানান স্লোগান লিখে নিয়ে এসেছিলেন৷
ছবি: AFP/Getty Images/T. Schwarz
‘পরিণতি আছে’
স্লোগানটি ভালো করে খেয়াল করুন৷ ইংরেজি ‘কনসেকোয়েন্স’ শব্দটি লেখার সময় প্রথম দুই বর্ণ ‘সি’ আর ‘ও’ এর পর ‘এন’ লেখার আগে ছোট্ট করে ‘টু’ বসানো হয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড৷ জার্মানির আখেন শহরে গত জুনের প্রতিবাদের ছবি এটি৷
ছবি: DW/G. Rueter
‘প্ল্যানেট বি নেই’
২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে জাতিসংঘের সেই সময়কার মহাসচিব বান কি-মুন বলেছিলেন, ‘‘প্ল্যান বি বলে কিছু নেই, কারণ, আমাদের প্ল্যানেট বি নেই৷’’ এরপর থেকে এই বার্তাটি বিক্ষোভকারীদের কাছে জনপ্রিয় স্লোগান হয়ে ওঠে৷
ছবি: Getty Images/A. Berry
‘এখন বিক্ষোভ কর, নইলে পরে সাঁতার কাটতে হবে’
জার্মানির হামবুর্গে ১ মার্চের এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন গ্রেটা টুনব্যার্গ৷ তার কয়েকদিন আগে ডাভোস ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি চাই আপনার আতঙ্কিত হোন৷ আমি চাই আমি প্রতিদিন যে ভয় অনুভব করি, আপনারাও সেটা পান৷ এবং তারপর আমি চাই আপনারা উদ্যোগ নিন৷’’
ছবি: Reuters/M. Mac Matzen
10 ছবি1 | 10
ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইন্সটিটিউট-এর প্রধান অ্যান্ড্রু স্টিয়ার মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে৷ ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে৷
এছাড়া, ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশ ও শহর ‘ক্লাইমেট এমার্জেন্সি' ঘোষণা করেছে৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টও ইউরোপে ‘ক্লাইমেট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল এমার্জেন্সি' ঘোষণা করেছে৷ বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি বিল ৪২৯-২২৫ ভোটে পাস হয়েছে৷
তবে এই বিলে নির্দিষ্ট কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়নি৷ শুধু প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ ও আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় কমিশনকে আহ্বান জানানো হয়েছে৷
কপ২৫-এ যোগ দিতে গ্রেটা টুনব্যার্গ নিউইয়র্ক থেকে পাল তোলা নৌকায় করে ইউরোপে ফিরছেন৷ শুক্রবার তাঁর লিসবন পৌঁছার কথা থাকলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য এখনও আসতে পারেননি৷ তবে আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি তিনি ইউরোপে ঢুকতে পারেন বলে জানিয়েছে তার দল৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)
কপ: বিশ্ব বাঁচানোর আসর
দুই ডিসেম্বর থেকে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে শুরু হচ্ছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৫৷ এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন শহরে ২৬ বার হয়েছে এই আয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/Geisler-Fotopress
প্রতি বছরের আয়োজন
কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিজ, সংক্ষেপে কপ৷ ‘জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (ইউএনএফসিসি) কাঠামোর আওতায় প্রতিবছর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ সেখানে বিশ্বের নেতৃবৃন্দ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন৷
ছবি: Imago/Xinhua
বার্লিন থেকে বন
১৯৯৫ সালে প্রথম জলবায়ু সম্মেলনের আসরটি বসেছিল জার্মানির রাজধানী বার্লিনে৷ এরপর এখন পর্যন্ত পাঁচবার এই আয়োজন করেছে জার্মানি৷ শুরুরটি ছাড়া বাকি চারটিরই আয়োজক শহর বন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
এশিয়া: কিয়োটো থেকে দোহা
এখন পর্যন্ত এশিয়ায় চারবার জলবায়ু সম্মেলন হয়েছে৷ ১৯৯৭ সালে কপ তিন-এর আয়োজন হয় জাপানের কিয়োটোতে৷ ২০০২ সালে ভারতের নয়া দিল্লিতে কপ আট, ২০১২ সালে কাতারের রাজধানী দোহাতে হয় কপ ১৮৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইউরোপ সর্বোচ্চ
এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৩ বার জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজন করেছে ইউরোপের শহরগুলো৷ জার্মানি ছাড়াও সুইজারল্যান্ডের জেনেভা, ইটালির মিলান, পোল্যান্ডের পোজনান, ওয়ারশ , কাটোভিৎসে, ডেনমার্কের কোপেনহাগেন ও ফ্রান্সের প্যারিসে হয়েছে কপ-এর আসর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone/P. Klaunzer
দক্ষিণ অ্যামেরিকায় তিনবার
১৯৯৮ ও ২০০৪ সালে জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজন করেছে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেস৷ ২০১৪ সালের আয়োজনটি হয়েছে পেরুর লিমাতে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Martin Mejia
উত্তর অ্যামেরিকায় দুই আয়োজন
উত্তর অ্যামেরিকার দেশগুলোর মধ্যে এই আয়োজন হয়েছে কেবল দু’টি শহরে৷ ২০০৫ সালে ক্যানাডার মনট্রিলে ১১ তম আর ২০১০ সালে মেক্সিকোর কানকুনে কপ-এর ১৬ তম আসর বসে৷
ছবি: AP Photo/Israel Leal
আফ্রিকায় মারাক্কেশের ‘হ্যাটট্রিক’
আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে মরক্কোর মারাক্কেশে তিনবার এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়৷ সবশেষটি ছিল ২০১৬ সালে৷ এছাড়া ২০০৬ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে কপ ১২ আর ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে কপ ১৭ অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: WWF International
এবার মাদ্রিদ
জলবায়ু সম্মেলনের এবারের আসরটি বসছে এমন এক সময়ে যখন ইউরোপ এক বছরের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের বৈরি আবহাওয়ার সবগুলো রূপই প্রত্যক্ষ করেছে৷ স্পেনের মাদ্রিদে কপ ২৫ তাই বিশেষ গুরুত্বই পাচ্ছে৷ ২০২০ সালের মধ্যে ‘ন্যাশনাল ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে প্যারিস চুক্তির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবারের সম্মেলনের মূল বিষয়৷