এই প্রথম চাঁদে পা পড়বে এক নারীর। চাঁদে আবার মানুষ যাবে প্রায় পাঁচ দশক পর। নাসা জানিয়েছে, ২০২৪ সালে তাঁদের এই চন্দ্রাভিযানের কথা।
বিজ্ঞাপন
চাঁদে আবার মানুষের পা পড়বে। এ বার এক নারীর। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত আসবে ২০২৪ সালে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, এ বার চাঁদের সাউথ পোলে নামবে চন্দ্রযান।
নাসার পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ''আমরা আবার চাঁদে যাচ্ছি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের জন্য। নতুন প্রজন্মের অভিযাত্রীরা এই অভিযানে প্রেরণা পাবেন।''
এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকা। মার্কিন কংগ্রেসকে এই বাজেট অনুমোদন করতে হবে। আবার চাঁদে যাওয়াটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছেও অগ্রাধিকার বলে জানা গিয়েছে।
নাসা জানিয়েছে, এই বড়দিনের মধ্যেই মার্কিন কংগ্রেসকে ৩২০ কোটি ডলারের অনুমোদন দিতে হবে। তারপরেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। ল্যান্ডিং মডিউলের জন্যই লাগবে ১৬০ কোটি ডলার।
এই প্রকল্পের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথমে নাসা মানবহীন একটি যান পাঠাবে ২০২১ সালে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বে যাবেন মহাকাশচারীরা। এই চন্দ্রাভিযানের নাম দেয়া হয়েছে আর্টেমিস।
অ্যাপোলো অভিযানের অনেক অজানা সাফল্য
03:46
এই অভিযানের বৈশিষ্ট্য হলো, এই প্রথম একজন নারী চাঁদে যাবেন। আর এই প্রথম চাঁদের সাউথ পোলে গিয়ে পরীক্ষার কাজ চালানো হবে।
এর আগে ১৯৬৯ ও ১৯৭২ সালে চাঁদে নেমেছিল মহাকাশযান অ্যাপোলো। নাসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ''আগের অভিযান থেকে এই অভিযান সম্পূর্ণ আলাদা। আগে মনে করা হতো, চাঁদ পুরোপুরি শুকনো। কিন্তু এখন আমরা জানি যে, চাঁদে বরফ আছে, সেটাও সাউথ পোলে।''
চাঁদে প্রথম পা রেখেছিলেন নীল আমস্ট্রং। তারপর চাঁদে পা রেখেছিলেন এডউইন অ্যালড্রিন। সেই ১৯৬৯ সালে। চাঁদে পা রাখার পর আমস্ট্রং বলেছিলেন, ''আ জায়েন্ট লিপ ফর ম্যানকাইন্ড।'' এ বার চাঁদে পা রাখবেন একজন নারী। এটাও নিঃসন্দেহে মানবসভ্যতাকে আরো অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
জিএইচ/এসজি(এপি, রয়টার্স)
মহাকাশে নারী
মহাকাশে নারীদের পাড়ি জমানোর ঘটনা এখন মোটেও অবাক করা কিছু নয়৷ তবে যোগ্যতা সত্ত্বেও নাসার অভিযানে যোগ দিতে মার্কিন নারীদের কিছুটা বেগ পেতে হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/Itar-Tass/S. Baranov
প্রথম নারী
রাশিয়ার দক্ষ প্যারাসুটবিদ ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা প্রথম নারী, যিনি মহাকাশে পাড়ি জমান৷ দিনটি ছিল ১৯৬৩ সালের ১৬ জুন৷ মহাকাশযান ‘ভোস্তক-৬’ এ চেপে তিনি ৪৮ বার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন৷ এরপর আবার কোনো নারী পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশে যেতে সময় লেগেছিল ২০ বছর৷ স্ভেতলানা সাভিৎস্কায়াও রুশ নাগরিক৷ ১৯৮২ সালে সোয়ুজ টি-৭ অভিযানে যান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/Itar-Tass/S. Baranov
মহাকাশে যাওয়ার অনুমতি দিল না নাসা
১৯৭৮ সালে নাসা শ্যানন লুসিড, মার্গারেট সেডন, ক্যাথরিন সুলিভান, জুডিথ রেসনিক, আনা ফিশার এবং সালি রাইডকে তাদের প্রথম নারী মহাকাশ অভিযাত্রী হিসেবে নির্বাচন করে৷ ১৯৬০ এর দশকের শুরুতে বেশ কয়েকজন অভিযাত্রী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পাস করেন৷ কিন্তু সামরিক বিমান চালনা পরীক্ষা সম্পন্ন না করায় তাঁদেরকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি৷ অবশ্য ঐ পরীক্ষায় অংশ নেয়ারই সুযোগ ছিলনা নারীদের৷
ছবি: picture-alliance/Cover Images/NASA
প্রথম মার্কিন নারী
১৯৮৩ সালে প্রথম মার্কিন নারী হিসেবে মহাকাশে পাড়ি জমান সালি রাইড৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩২ বছর৷ চ্যালেঞ্জার মিশনে তিনিই প্রথমবারের মতো যান্ত্রিক হাত ব্যবহার করে মহাকাশে স্যাটেলাইট স্থাপন ও নিয়ন্ত্রণ করেন৷ পরের বছর আবারও তিনি এই মিশনে যান৷ ১৯৮৭ সালে নাসা ত্যাগ করেন৷ বাকি জীবন মেয়েদের গণিত, বিজ্ঞান, প্রকৌশন বিদ্যা শেখানোর জন্য ব্যয় করেন৷ ক্যানসারে আক্রান্ত জয়ে এই অভিযাত্রী ২০১২ সালে মারা যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NASA
ডাক্তার থেকে মহাকাশ অভিযাত্রী
ছবিটির কেন্দ্রে যে নারীকে দেখা যাচ্ছে তাঁর নাম চিয়াকি মু্কাই৷ পেশায় ডাক্তার হলেও তিনিই জাপানের প্রথম নারী অভিযাত্রী৷ মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে শরীরের পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা চালান তিনি৷ এজন্য ১৯৯৪ আর ১৯৯৮ সালে দুইটি অভিযানে অংশ নেন, যা জাপানিদের জন্যেও প্রথম৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/B. Zawrzel
ভারতের প্রথম নারী
কল্পনা চাওলা৷ প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী, যিনি মহাকাশে পাড়ি জমানোর সুযোগ পান৷ তাঁর প্রথম অভিযানটি ছিল ১৯৯৭ সালে৷ সূর্যের ভূ-পৃষ্ঠ নিয়ে গবেষণার জন্য একটি স্যাটেলাইট স্থাপনে এটি পরিচালিত হয়েছিল৷ ২০০৩ সালে কলম্বিয়া মহাকাশ অভিযাত্রায় অংশ নেন কল্পনা৷ যেটি পৃথিবীতে ফিরে আসার পথে বিধ্বস্ত হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NASA
মহাকাশে ইরানের নারী
৩২ বছর বয়সেই তিনি শিল্পপতি হিসেবে অনেক টাকার মালিক বনে যান৷ কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি৷ ২০০৬ সালে আনুশেহ আনসারি প্রথম ইরানি বংশোদ্ভূত নারী হিসেবে মহাকাশে যান৷ শুধু তাই নয়, তিনিই প্রথম নারী যিনি ব্যক্তি উদ্যোগে মহাকাশ ভ্রমণ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection
মহাকাশে ৬৬৬ দিন
মহাকাশে পাড়ি জমানোর অনেক রেকর্ডই মার্কিন জৈব-রসায়নবিদ পেগি হুইটসনের দখলে৷ ২০০২ সাল থেকে শুরু করে সব মিলিয়ে ৬৬৬ দিন তিনি পৃথিবীর বাইরে কাটিয়েছেন, যা কোনো নারীর জন্য সর্বোচ্চ৷ ২০০৭ সালে প্রথম নারী কমান্ডার হিসেবে মিশনের দায়িত্ব পান তিনি৷ ২০১৭ সালে একটি অভিযাত্রা থেকে ২৮৯ দিন পর তিনি ফিরে আসেন ভূপৃষ্ঠে৷ ৫৭ বছয় বয়সি হুইটসনের জন্য সেটি ছিল সবচেয়ে বেশি বয়সি নারী হিসেবে মহাকাশ যাত্রা৷