অ্যামেরিকার ঘটনার পুনরাবৃত্তি জার্মানিতে। ডুসেলডর্ফে হাঁটু দিয়ে এক ব্যক্তির ঘাড় চেপে ধরল পুলিশ। শুরু হয়েছে প্রতিবাদ।
ছবি: picture-alliance/HMB Media/H. Becker
বিজ্ঞাপন
জর্জ ফ্লয়েডের ছায়া এ বার জার্মানিতে। ডুসেলডর্ফের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, এক পুলিশ অফিসার এক ব্যক্তির ঘাড় হাঁটু দিয়ে চেপে রেখেছেন। অ্যামেরিকার মিনেসোটায় ঠিক এ ভাবেই জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড় চেপে রেখেছিল পুলিশ। মৃত্যু হয়েছিল ফ্লয়েডের। যার জেরে গোটা দেশ জুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হয়েছিল।
ডুসেলডর্ফের ঘটনায় প্রতিবাদ শুরু হয়েছে জার্মানিতেও। পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিষয়টিকে মোটেই হালকা ভাবে নেওয়া হচ্ছে না। কেন ওই অফিসার এমন কাজ করলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য অন্য থানাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই অফিসার দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
ফ্লয়েডের মৃত্যু ও বিক্ষোভে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নির্যাতনে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদ চলছে৷ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দও৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা বর্ণবাদ কিংবা অন্য কোনো কারণে কাউকে বাদ দেয়ার বিষয়ে চোখ বন্ধ করে থাকতে পারি না৷ আমাদের মনে রাখতে হবে, সহিংসতা দিয়ে কিছু অর্জন করা যায় না৷’’
ছবি: Reuters/R. Casilli
বরিস জনসন
ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনার সমালোচনা করে চলমান বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷ তবে বিক্ষোভ দমনে ট্রাম্পের শক্তি প্রয়োগের ইচ্ছার সমালোচনা থেকে বিরত থেকেছেন তিনি৷
ছবি: AFP/UK Parliament/J. Taylor
চীন
যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদকে ‘মার্কিন সমাজের একটি দুরারোগ্য ব্যাধি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র৷ যুক্তরাষ্ট্রে সহিংস বিক্ষোভের খবর বেশ ভালোভাবে কাভার করছে চীনের সরকারি প্রচারমাধ্যম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Wong
ইইউ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান হোসেপ বোরেল বলেন, পুলিশি নির্যাতনে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে ইউরোপ ‘হতভম্ব’ হয়ে গেছে৷ বিক্ষোভ দমাতে ‘অত্যধিক শক্তি প্রয়োগ’ না করতেও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস যুক্তরাষ্ট্রে চলা বিক্ষোভ সমর্থনযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন৷ এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবর্তন আসবে বলেও আশা করছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kappeler
ইরান
নিজের নাগরিকদের উপর ‘সহিংস’ না হতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এক সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র আব্বাস মুসাভি মার্কিন জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘‘রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে আপনাদের প্রতিবাদ বিশ্ব দেখছে৷ বিশ্ববাসী আপনাদের পাশে আছে৷’’ এছাড়া মার্কিন কর্মকর্তা ও পুলিশদের প্রতি জনগণকে নিঃশ্বাস নিতে দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি৷
ছবি: mfa.ir
ঘানা
প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আদ্দু ফ্লয়েড হত্যার ঘটনায় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষসহ সারা বিশ্বের মানুষ ‘অবাক ও হতবিহ্বল’ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/PhotoshotS. Haijun
ফিলিপাইন্স
প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বিক্ষোভ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ এই ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে দুতার্তে বলেন, অ্যামেরিকার বিক্ষোভের মতো কিছু ফিলিপাইন্সে ঘটছে না বলে নিজেকে তিনি সৌভাগ্যবান মনে করেন৷ তাহলে করোনা ভাইরাস মোকাবিলার কাজটি কঠিন হয়ে যেতো বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/Malacanang Presidential Photographers Division/K. N. Alonzo
বারাক ওবামা
ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর দেয়া প্রথম ভিডিও বার্তায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জানান, তিনি তাঁর জীবনে এমন বিক্ষোভ দেখেননি৷ সমাজের সমস্যাগুলো সমাধানের এমন সুযোগ কাজে লাগাতে তিনি মার্কিনিদের প্রতি আহ্বান জানান৷
ছবি: Getty Images
মার্ক রুটে
নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ দমনে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহারের দৃশ্য তাঁকে ‘মর্মাহত’ করেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ফ্লয়েডকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য৷ তবে যুক্তরাষ্ট্র শুধু একমাত্র দেশ নয় যেখানে অনেক মানুষকে সমাজে পুরোপুরি গণনা করা হয় না৷’’ নেদারল্যান্ডসেও বর্ণবাদ ও বৈষম্য আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: imago/Hollandse Hoogte/P. Hilz
10 ছবি1 | 10
ঘটনার সূত্রপাত রোববার বিকেলে। পুলিশ জানিয়েছে, ওল্ড টাউনের একটি রেস্তোরাঁ থেকে ফোন যায় তাদের কাছে। সেখানে কিছু ব্যক্তি দোকানের বাইরে ঝামেলা করছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিশ সেখানে পৌঁছনোর পরে ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। অভিযোগ, ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক ব্যক্তি আচমকাই পুলিশের কাজে বাধা দিতে শুরু করেন। যদিও তাঁর সঙ্গে পুলিশের কোনও কথা কাটাকাটি হয়নি। পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ায়, ওই ব্যক্তিকে প্রথমে সতর্ক করে পুলিশ। কিন্তু তারপরেও একই কাজ করায় ওই ব্যক্তিকে আটক করে থানায় পাঠানো হয়। আটক করার সময়েই তাঁকে মাটিতে ফেলে ঘাড়ে হাঁটু তুলে দেন এক পুলিশ অফিসার।
এই ঘটনার সাক্ষী বহু মানুষ। অনেকেই ভিডিও তুলেছেন। ১৫ মিনিটের একটি ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে জর্জ ফ্লয়েডের ঘটনার মতোই এক পুলিশ অফিসার ওই ব্যক্তির ঘাড় হাঁটু দিয়ে চেপে রেখেছেন। আশপাশ থেকে অনেকেই চেঁচিয়ে তাঁকে হাঁটু সরানোর আবেদন জানাচ্ছেন। কিন্তু পুলিশ অফিসার কারও কথা শুনছেন না।
জর্জ ফ্লয়েড ঠিক এ ভাবেই মারা গিয়েছিলেন। তাঁকে আট মিনিট এ ভাবে চেপে রাখা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পরে শুধু অ্যামেরিকা নয়, ইউরোপের প্রবল বিক্ষোভ হয়। ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটার্স আন্দোলন ঘিরে কিছু দিন আগেও উত্তাল হয়েছে জার্মানি। অনেকেরই দাবি, জার্মান পুলিশও বিভিন্ন সময়ে বর্ণবাদী আচরণ করে। অনেকেরই ধারণা, রোববারের ঘটনার পরে নতুন করে আন্দোলন শুরু হবে। তবে রোববারের ঘটনা নিয়ে প্রশাসন অত্যন্ত সজাগ। বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।