অভিযোগের চেয়ে অনেক বেশি কর ফাঁকি দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন বায়ার্ন মিউনিখের প্রেসিডেন্ট উলি হ্যোনেস৷ সোমবার আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করার পর ক্ষমা প্রার্থনা করে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি এ সমাজের পরজীবী নই৷''
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ফুটবলের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখায় দীর্ঘদিন ধরে তারকার মর্যাদাই পেয়ে এসেছেন বায়ার্ন মিউনিখ ‘বস' এবং সাবেক ফুটবলার হ্যোনেস৷ জার্মানিকে ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন ১৯৭৪ সালে, ম্যানেজার হিসেবে দু-দুবার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়েছেন, বায়ার্ন মিউনিখকে, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পেয়ে খোলনলচে বদলে বায়ার্নকে করেছেন আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ এবং সাফল্যের দিক থেকে সাম্প্রতিক সময়ের সেরা – তাঁকে শ্রদ্ধা না করে পারা যায়?
কিন্তু কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সরব সমালোচক এবং নিন্দাকারীরও অভাব হচ্ছে না তাঁর৷ সোমবার মামলার চারদিনের শুনানির প্রথম দিনে আদালতে হাজির হয়ে সে কথা নিজেই বলেছেন ৬২ বছর বয়সি হ্যোনেস৷ গত বছর কর ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি স্বপ্রণোদিতভাবে জানানোর পরও তাঁকে গ্রেপ্তার করায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করে তিনি জানান, তারপর তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে, তাঁর পরিবারকেও বিপর্যস্ত করেছে এ ঘটনা৷
২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে এক কোটি ইউরোর বকেয়া কর পরিশোধ পরিশোধ করেন হ্যোনেস৷ কর পরিশোধ করার পর দাবি করেছিলেন, সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে অঘোষিত আয়ের যে টাকা জমা করেছেন সে তথ্য জানাতেই তিনি এ ব্যবস্থা নিয়েছেন৷ জার্মানিতে কর ফাঁকি দেয়ার কথা কেউ অভিযুক্ত হওয়ার আগে নিজেই জানালে শুধু কর পরিশোধ করলেই চলে, তাঁর আর কোনো জেল-জরিমানা হয় না৷ কিন্তু হ্যোনেস শাস্তি এড়াতে পারবেন কিনা – তা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল৷ তবে বায়ার্ন সমর্থকরা এখনো তাঁর পক্ষে৷ সোমবার আদালতে মামলার শুনানি চলার সময়ও হ্যোনেসকে সমর্থন এবং তাঁকে ক্ষমা করার দাবি জানাতে আদালত প্রাঙ্গনে হাজির হয়েছিলেন কয়েকশ বায়ার্ন সমর্থক৷
বুন্ডেসলিগার সাবেক তারকারা
বুন্ডেসলিগার গত ৫০ বছরের তারকারা
ছবি: picture-alliance/Pressefoto UL
উভে জেলার
১৯৬৩ সালে জার্মান ফুটবল লিগ বুন্ডেসলিগার খেলা শুরু হওয়ার আগেই হামবুর্গ দলের ফরোয়ার্ড উভে জেলার খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷ তখন তাঁকে সবাই আদর করে ডাকতেন ‘আমাদেরই উভে’ বলে৷ ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি জাতীয় দলে খেলতেন৷ বুন্ডেসলিগার ২৩৯ ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ১৩৭টি গোল করেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্যার্ড ম্যুলার এবং ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার
গ্যার্ড ম্যুলার (বাঁয়ে) বুন্ডেসলিগার ৪২৭ খেলায় ৪৬৫ গোল করেন৷ তাঁর এই অবিশ্বাস্য গোল করার ক্ষমতার জন্য তাঁকে ‘বোম্বার’ বলা হতো৷ ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার (ডানে) ও গোল জেপ মায়াযের সাথে মিলে ১৯৬৫ থেকে সত্তরের দশকের শেষ পর্যন্ত তিনি বায়ার্ন মিউনিখ দলের হয়ে বহু শিরোপা জেতেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্যুন্টার নেৎসার এবং ভল্ফগাং ওবারাথ
জার্মান জাতীয় দলে ভল্ফগাং ওবারাথ (ডানে) গ্যুন্টার নেৎসারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন৷ তবে নেৎসার এফসি কোলন দলের ওবারাথের চেয়ে বোরুসিয়া ম্যোয়েনশেনগ্লাডবাখের হয়ে বুন্ডেসলিগায় একটি শিরোপা বেশি জেতেন৷ ১৯৭৩ সালে নেৎসার স্পেনের রেয়াল মাদ্রিদ এবং পরে সুইজারল্যান্ডের ফুটবল লিগে যোগদান করেন৷ কিন্তু ওবাররাথ বুন্ডেসলিগার কোলন দলেই থেকে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্লাউস ফিশার
শালকে দলের ফরোয়ার্ড ফিশারও গোল করায় পারদর্শী ছিলেন৷ কিন্তু গ্যার্ড ম্যুলারের সময়ে সক্রিয় থাকায় সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় তাঁকে সবসময় দ্বিতীয় স্থানেই থাকতে হয়েছে৷ বুন্ডেসলিগায় তিনি ৫৩৫ খেলায় অংশ নিয়ে ২৬৮টি গোল করেন৷
ছবি: picture-alliance/WEREK
কেভিন কেগেন
ছোটোখাটো মানুষটি ১৯৭৭ সালে হামবুর্গ দলে যোগ দেন এবং খুব তাড়াতাড়িই দর্শকদের নজর কাড়েন৷ ‘মাইটি মাউস’ হিসেবে পরিচিত কেগেন ৯০ খেলায় অংশ নিয়ে ৩২টি গোল করেন৷ সংগীত জগতেও তিনি অবদান রেখেছেন৷ সে সময় তাঁর গাওয়া ‘হেড ওভার হিলস ফর লাভ’ গানটি জার্মানির হিট গানের তালিকায় দশম স্থান অধিকার করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
হারাল্ড ‘টনি’ শুমাখার
১৫ বছর ধরে এফসি কোলন দলের গোলরক্ষক ছিলেন শুমাখার৷ এরপর ‘আনফিফ’ বা ‘হুইসেল’ নামে তাঁর একটি বিতর্কিত বই প্রকাশিত হওয়ার পর ১৯৮৭ সালে তাঁকে খেলোয়াড় হিসেবে সাসপেন্ড করা হয়৷ তবে পরে তিনি শালকে, ইস্তাম্বুল, মিউনিখ এবং ডর্টমুন্ডে খেলেন৷ শুমাখার বুন্ডেসলিগার মোট ৪৬৪ টি খেলায় অংশগ্রহণ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লোথার মাথিউস
জার্মান জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড মাথিউসের৷ বুন্ডেসলিগায়ও তিনি দীর্ঘ ২১ বছর ধরে খেলেছেন৷ ১৯৭৯ সালে বুন্ডেসলিগায় প্রথম খেলা শুরু করার পর তিনি বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দেন৷ বুন্ডেসলিগায় তিনি ৪৬৪ খেলায় অংশ নিয়ে ১২১ গোল করেন৷
ছবি: imago/Uwe Kraft
রুডি ফ্যোলার
১৯৮২ সালে তিনি ভের্ডার ব্রেমেন দলের হয়ে খেলা শুরু করেন৷ অল্পদিনের মধ্যেই তিনি তারকা হয়ে ওঠেন৷ পরে রোম এবং ফ্রান্সের মার্সেই দলেও খেলেছেন তিনি৷ এরপর আবারও বুন্ডেসলিগায় ফিরে বায়ার লিভারকুজেন দলের ক্রীড়া পরিচালক হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইয়োর্গেন ক্লিসমান
ক্লিসমান জার্মানির স্টুর্টগার্ট, বায়ার্ন মিউনিখ, ইটালির মিলান, মোনাকো, ইংল্যান্ডের টটেনহ্যাম, জেনুয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া দলে খেলেছেন৷ বুন্ডেসলিগায় ২২১টি খেলায় ক্লিসমানের গোল সংখ্যা ১১০টি৷ বর্তমানে তিনি মার্কিন জাতীয় দলের কোচ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অলিভার কান
বায়ার্ন মিউনিখ দলের গোলরক্ষক হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন খেলেছেন৷ জার্মান জাতীয় দলেরও একজন খ্যাতিমান গোলরক্ষক হিসেবে কান পরিচিত ছিলেন৷ বেশ কয়েকবার জার্মান লিগ শিরোপা অর্জন করেন তিনি৷একসময় তিনি জার্মান জাতীয় দলের ক্যাপ্টেনও ছিলেন৷
ছবি: AP
মিশায়েল বালাক
নামি ফুটবল খেলোয়াড় বালাকের ফুটবল জীবন কখনও পূর্ণতা পায়নি৷ তাঁকে গণ্য করা হয় দ্বিতীয় স্থান অধিকারী তারকা হিসেবে৷ কারণ তিনি বিশ্বকাপ শিরোপা বা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশীপ – কোনটাই অর্জন করতে পারেননি৷ তবে বুন্ডেসলিগায় ২৬৭টি খেলায় অংশগ্রহণ করে ৭৭টি গোল করেন৷ মিশায়েল বালাক মোট চারবার লিগ শিরোপা জেতেন৷
ছবি: picture-alliance/Pressefoto UL
11 ছবি1 | 11
গত বছর উলি হ্যোনেসকে ৩৫ লক্ষ ইউরো কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়৷ সচরাচর আদালতে অভিযুক্তকে অভিযোগ অস্বীকার করতে দেখা গেলেও ক্ষমা পাওয়ার আশায় হ্যোনেস তা করেননি৷ বরং অভিযোগে উল্লেখিত অঙ্কের চেয়ে পাঁচ গুনেরও বেশি, অর্থাৎ এক কোটি পঁচাশি লক্ষ ইউরো কর ফাঁকি দেয়ার কথা জানিয়ে আদালতে উপস্থিত সবাইকে চমকে দিয়েছেন৷ বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘স্ব উদ্যোগে অপরাধ স্বীকার করে আমি শাস্তি এড়াতে চেয়েছিলাম৷ সব কিছু (আলোচনার ) টেবিলে রাখতে পেরে আমি খুশি৷''
জার্মানির আইন অনুযায়ী, দশ লক্ষ ইউরোর চেয়ে বড় অঙ্কের কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে অপরাধীর পাঁচ থেকে দশ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে৷ হ্যোনেসের কী হবে তা জানতে আরো অপেক্ষা করতে হবে৷ মামলার শুনানি শেষ হবে আগামী বৃহস্পতিবার৷