প্রথম ‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন' ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যামেরিকায় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন৷ তবে অভিবাসনসহ অনেক বিভাজনমূলক নীতি থেকে সরে আসতে নারাজ তিনি৷
বিজ্ঞাপন
তর্জনগর্জন কিছুটা কমিয়ে সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কিছু ক্ষেত্রে আপোষের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন৷ সুইজারল্যান্ডের ডাভোসের পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম ‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন' ভাষণেও সেই মনোভাব দেখা গেল৷ দেশে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে অ্যামেরিকার সব মানুষের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা বললেন ট্রাম্প৷
একদিকে তিনি নিজের সমর্থকদের আশ্বাস দিতে কিছুটা তর্জনগর্জন করলেও অন্যদিকে বাকিদের মন জয় করার চেষ্টাও চালিয়েছেন৷ অভিবাসন, বাণিজ্য, পররাষ্ট্র নীতি থেকে শুরু করে জাতীয় সংগীত নিয়ে কড়া কথা শোনালেও সেইসঙ্গে এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ করলেন, যা বাকি ভোটারদের পছন্দ হতে পারে৷ ‘ড্রিমার্স' কর্মসূচির আওতায় থাকা বেআইনি তরুণ অভিবাসীদের সাহায্য করতে চান ট্রাম্প৷ অবকাঠামোর উন্নয়ন, কারাগার ব্যবস্থার ঢালাও সংস্কারের মতো বিষয় উল্লেখ করেন তিনি৷
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সাফল্যের জন্য বাহবা কুড়াতে কার্পণ্য করেন নি ট্রাম্প৷ কর্মসংস্থান ও বেতন-মজুরির হার বেড়ে চলায় তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন৷ ট্রাম্প দাবি করেন, তাঁরই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ফলে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠছে৷ বলা বাহুল্য, পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলেই অর্থনৈতিক উন্নতির উল্লেখ করেননি তিনি৷
ট্রাম্প মুখে যা বললেন, তা কাজে পরিণত করে দেখাতে পারবেন কি? এর আগেও তাঁকে দ্রুত মতবদল করতে দেখা গেছে৷ বিশেষ করে লাগামহীন টুইট বার্তায় তিনি প্রায়ই নিজের সাফল্য খর্ব করে থাকেন৷ আগামী কয়েক সপ্তাহে তাঁকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যার মধ্যে তাঁর প্রকৃত মনোভাবের প্রতিফলন ঘটবে৷ ৯ মাস পর সংসদ নির্বাচনের উপরেও তাঁর সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়তে বাধ্য৷ রিপাবলিকান দল কংগ্রেসের দুই কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে ট্রাম্প-এর পক্ষে কোনো আইন অনুমোদন করানো কঠিন হয়ে পড়বে৷ বর্তমানে সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও তাঁকে বার বার বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷
‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন' ভাষণের একটা বড় অংশ জুড়ে অভিবাসন নিয়েই কথা বললেন ট্রাম্প৷ এই প্রশ্নে এখনো নিজের কড়া অবস্থানে অটল রয়েছেন তিনি৷ মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর গড়তে তিনি বদ্ধপরিকর৷ অভিবাসনের নিয়মকানুন আরও কড়া করতে তিনি ডেমোক্র্যাট দলের সমর্থনের ডাক দিয়েছেন৷ ‘ড্রিমার্স' কর্মসূচির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছুটা নরম মনোভাব দেখালেও তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷
ট্রাম্প জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের দোহাই দিয়ে তিনি গুয়ান্তানামো কারাগার বন্ধ করার প্রক্রিয়া থামিয়ে দিয়েছেন৷ উল্লেখ্য, বারাক ওবামা শেষ পর্যন্ত এই মর্মে তাঁর প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারেননি৷ ট্রাম্প বলেন, গুয়ান্তানামো থেকে ছাড়া পেয়ে সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র সংগ্রামে নেমে পড়ে৷ মার্কিন সৈন্যদের আবার যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের খতম করতে হয়৷
নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পালন করতে অ্যামেরিকার অবকাঠামোর ঢালাও উন্নয়ন করতে চান ট্রাম্প৷ এর জন্য দেড় লক্ষ কোটি ডলার বরাদ্দ করতে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে৷ তিনি বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের উদ্দেশ্যে এক্ষেত্রে সহযোগিতার ডাক দিয়েছেন৷
পত্রিকার প্রচ্ছদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম বছর
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালের ২০শে জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন৷ তার পরের এক বছরে তিনি বহু আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পত্রিকার প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছেন – তবে সম্মান পেয়েছেন কিনা, তা তিনি নিজেই জানেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/Time Magazine
‘পার্সন অফ দ্য ইয়ার’
২০১৬ সালের শেষে মার্কিন ‘টাইম’ পত্রিকার প্রচ্ছদে সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘বছরসেরা ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷ ইতিপূর্বে এই খেতাব পেয়েছেন জন এফ কেনেডি বা মার্টিন লুথার কিং-এর মতো ব্যক্তিত্ব – আবার হিটলার ও স্ট্যালিনের মতো ব্যক্তিবর্গ – ‘টাইম’-এর ভাষায়, এমন সব মানুষ, যারা ‘‘ভালো কিংবা মন্দভাবে....বছরের ঘটনাবলীর উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছেন৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/Time Magazine
হিটলারি মোচ
ট্রাম্পের নির্বাচনের আগেই মেক্সিকোর ‘লেত্রাস লিব্রেস’ পত্রিকা ট্রাম্পকে ‘ফাসিস্তা আমেরিকানো’ (অ্যামেরিকান ফ্যাসিস্ট) গোঁফ পরিয়ে প্রচ্ছদে তাঁর ছবি ছেপেছিল৷ গোঁফটি স্বভাবতই হিটলারি মোচ৷ পত্রিকার রাগের কারণ ট্রাম্পের মেক্সিকো সীমান্তে প্রাকার তৈরির পরিকল্পনা৷
ছবি: Letras libras
‘শার্লি এব্দো’-র হাত থেকে কারো নিস্তার নেই
ট্রাম্পের নির্বাচনের পর পরই ফরাসি ব্যঙ্গ পত্রিকাটি তাঁকে এক হাত নেয়, বিশেষ করে তাঁর ‘গ্র্যাব উওমেন বাই দ্য পাসি’ সংক্রান্ত কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যটির জন্য৷ টিকা নিষ্প্রয়োজন৷
ছবি: Charlie Hebdo
খোকাবাবুর গাড়ি
পশ্চিমে সুপারমার্কেটের সামনে আজও রাখা থাকে ছোট ছোট খেলনার গাড়ি; পয়সা ফেললে সেগুলো হেলে-দোলে, আলো জ্বলে, ভেঁপু বাজানো যায়৷ কচিকাঁচারা ঐ রকম খেলনার গাড়িতে চড়ে ভারি মজা পায়৷ ‘নিউ ইয়র্কার’ পত্রিকার প্রচ্ছদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষটিকে খোকা সাজিয়ে সেরকম একটি গাড়িতে চড়িয়েছেন কার্টুনিস্ট ব্যারি ব্লিট৷
ছবি: The New Yorker
ছিন্নমস্তা
স্ট্যাচু অফ লিবার্টিকে স্বাধীনতা তথা মার্কিন মুলুকের প্রতীক বলা চলে৷ জার্মান সাপ্তাহিক ‘ডেয়ার স্পিগেল’ তার প্রচ্ছদে দেখিয়েছে, ট্রাম্প কিভাবে তাঁর ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে তথা সারা বিশ্বে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের শিরশ্ছেদ করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-U. Wärner
পালে হাওয়া (নেই)
‘নিউ ইয়র্কার পত্রিকার প্রচ্ছদের জন্য ডেভিড প্লাঙ্কার্টের আঁকা কার্টুনটির উপজীব্য হলো, শার্লটভিলের ঘটনাবলীর পর ট্রাম্প যেভাবে তথাকথিত ‘হেট গ্রুপ’-গুলির পালে হাওয়া লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন – পালের আকারটি যে ক্লু-ক্লুক্স-ক্ল্যানের সদস্যদের মুখোশ সদৃশ, সেটা নিশ্চয় কাকতালীয়! বস্তুত ট্রাম্পের উদ্দেশ্য ছিল, তাঁর কট্টর অনুরাগীদের মন রাখা৷
ছবি: The New Yorker
আবার হিটলার
জার্মানির ‘ডেয়ার স্পিগেল’ পত্রিকার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ‘ডেয়ার স্ট্যার্ন’ পত্রিকাই বা কম যাবে কেন – তারা ট্রাম্পকে দিয়ে নাৎসি স্যালুট দিইয়েছে তাদের প্রচ্ছদে এবং সংশ্লিষ্ট রচনাটির শীর্ষক রেখেছে ‘জাইন কাম্ফ’ বা ‘তাঁর লড়াই’ – অবশ্যই হিটলারের ‘মাইন কাম্ফ’ বইটির অনুকরণে৷ হিটলারের সঙ্গে ট্রাম্পের তুলনা জার্মানির কেন্দ্রীয় ইহুদি পরিষদের কাছে হিটলারের অপরাধকে ছোট করা বলে মনে হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Sohn
রুশি কনে
টাইম ম্যাগাজিনের ২০০৯ সালের একটি ভুয়ো প্রচ্ছদ নাকি ফটো হিসেবে ফ্লোরিডা থেকে স্কটল্যান্ড অবধি ট্রাম্পের গোটা পাঁচেক গল্ফ ক্লাবে ঝোলানো ছিল৷ টাইম ম্যাগাজিন সংশ্লিষ্ট ক্লাবগুলিকে ঐ ছবি নামিয়ে নিতে বলে বটে, কিন্তু ততদিনে ‘ফেক’ ছবিটি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে ও তার নানা সংস্করণ টুইটারে প্রকাশিত হয়েছে: যেমন টাইম পত্রিকার প্রচ্ছদ থেকেই ‘পার্সন অফ দ্য ইয়ার’ ছবিটি নিয়ে ট্রাম্পকে রুশি কনের সাজে দেখানো হয়েছে!