দুই সমান্তরাল প্রশাসনের জায়গায় এক জাতীয় ঐক্য সরকার লিবিয়ার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার কাজ শুরু করছে৷ আইএস ও শরণার্থী সংকটের মোকাবিলা করতে তারা অস্ত্র বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার আবেদন জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
মুয়াম্মর গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর লিবিয়ায় যে অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছিল, তার সুযোগ নিয়ে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট সে দেশে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে৷ তাছাড়া ইউরোপগামী শরণার্থীরাও অবাধে লিবিয়ার ভূখণ্ড ব্যবহার করে চলেছে৷ এই অচলাবস্থা দূর করতে ত্রিপোলি ও বেনগাজিতে দুই বিবদমান সমান্তরাল প্রশাসনের মধ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতিসংঘ৷ তারই আওতায় এক জাতীয় ঐক্য সরকার গড়া সম্ভব হয়েছে৷ ধাপে ধাপে ক্ষমতার রাশ নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে এই সরকার৷ ভিয়েনায় এক সম্মেলনে সেই সরকারের প্রতি সমর্থন দেখিয়েছে আন্তর্জাতিক সমাজ৷
সবার আগে অস্ত্র বিক্রির উপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার আবেদন জানিয়েছে লিবিয়ার নতুন সরকার৷ তাদের মতে, আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং দেশের সর্বত্র সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে অস্ত্রের প্রয়োজন রয়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশগুলি এই আবেদন নীতিগতভাবে মেনে নিতে প্রস্তুত৷
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেন, নতুন সরকারকে অনুগত নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তুলতে হবে, তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে৷ উপকূলরক্ষী বাহিনী গড়ে তোলার কাজেও অনেক দেশ সাহায্য করতে প্রস্তুত৷
পোপ ফ্রান্সিস অবশ্য ইরাক ও লিবিয়ার মতো দেশে পশ্চিমা গণতন্ত্রের মডেল চাপিয়ে দেবার অভিযোগ করেছে৷ এক রোমান ক্যাথলিক সংবাদপত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইসলামপন্থি সন্ত্রাসের প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্রের মডেল নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত৷ ইরাক ও লিবিয়ার মতো দেশে অতীতে শক্তিশালী প্রশাসন এবং উপজাতিদের এক কাঠামো ছিল৷ সেই সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য না বুঝে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়, বলেন পোপ৷
আরব বসন্তের পাঁচ বছর পর কোন দেশের কী অবস্থা
টিউনিশিয়ায় শুরু৷ এরপর সেটা ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য দেশে৷ কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল সেই লক্ষ্য কি পূরণ হয়েছে?
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Khalil Hamra
নিজ গায়ে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ
২০১০ সালের ১৭ই জানুয়ারি টিউনিশিয়ার সিদি বুজিদ শহরে মোহামেদ বুয়াজিজি নামের এক ফেরিওয়ালা নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন৷ ঐ ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হলে ২০১১ সালের ১৪ই জানুয়ারি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বেন আলিকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল৷ আরব বসন্তের শুরু তখন থেকেই৷
ছবি: AP
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে টিউনিশিয়ার অনেক সমস্যার মধ্যে একটি হচ্ছে নিরাপত্তা সমস্যা৷ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে সেখানকার একটি পর্যটন এলাকায় সন্ত্রাসী হামলা হলে ৩৮ জন নিহত হন৷ এর বেশিরভাগই ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Bounhar
মিশর
টিউনিশিয়ার ঢেউয়ের প্রথম আঁচড় লাগে মিশরে৷ সেখানে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় ২০১১ সালের ২৫শে জানুয়ারি৷ এর কদিন পর ১১ই ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন ৩০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা হোসনি মুবারক৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Abed
বর্তমান পরিস্থিতি
মিশরে হোসনি মুবারককে বিদায় করে বিশেষ লাভ হয়নি৷ আরেক সামরিক প্রধান আবদেল ফাতাহ আল-সিসি দেশের প্রথম বেসামরিক এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুর্সিকে কারাবন্দি করে মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কড়া হাতে দমন অভিযান চালাচ্ছেন৷
ছবি: Reuters
লিবিয়া
১৯৬৯ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত লিবিয়া শাসন করেন মুয়ম্মর গাদ্দাফি৷ এরপর আরব বসন্তের ছোঁয়া লিবিয়া স্পর্শ করলে এক পর্যায়ে লিবিয়া জুড়ে আন্দোলন শুরু হয়৷ যোগ দেয় আন্তর্জাতিক বাহিনী৷ ২০১১ সালের জুন মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধে গাদ্দাফিকে অভিযুক্ত করা হয়৷ এর কয়েক মাস পর অক্টোবরের ২০ তারিখ তাঁকে হত্যা করা হয়৷
ছবি: Christophe Simon/AFP/Getty Images
বর্তমান পরিস্থিতি
লিবিয়ার উপর এখন সে দেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই৷ ২০১২ সালে গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি সরকার ক্ষমতায় গেলেও শান্তি ফিরে আসেনি৷ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মরক্কো
দেশটিকে রাজতন্ত্র বিদ্যমান৷ ১৯৯৯ সাল থেকে দেশ পরিচালনায় আছেন রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ (ছবি)৷ তবে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুকে একটি ইভেন্ট খুলে সংস্কার ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়৷ বিক্ষোভে হতাহতের ঘটনাও ঘটে৷ এরপর মার্চের ১০ তারিখে সংস্কারের ঘোষণা দেয় রাজতন্ত্র৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Jocard
বর্তমান অবস্থা
গণভোটের মাধ্যমে রাজার কিছু ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও সংসদকে দেয়া হয়৷ রাজা আর এখন আগের মতো যাঁকে খুশি তাঁকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে পারেন না৷ এ জন্য তাঁকে সংসদে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া দল থেকে একজনকে বেছে নিতে হয়৷