মূলত নীতিগত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েই করোনা সংকটের অর্থনৈতিক পরিণাম মোকাবিলার অঙ্গীকার করলেন ইইউ নেতারা৷ ঋণের ভাগীদার হবার প্রশ্নে উত্তর ও দক্ষিণের দেশগুলির মধ্যে মতপার্থক্য দূর হচ্ছে না৷
বিজ্ঞাপন
ইটালি ও স্পেনের মতো করোনা সংকটে বিপর্যস্ত দেশের জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে তেমন মতপার্থক্য নেই৷ প্রায় সব দেশেই লকডাউন বা কড়াকড়ির ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থমকে গেছে বলে সরকারি সহায়তা নিয়েও আপত্তি নেই৷ ইইউ নেতাদের মধ্যে প্রবল মতপার্থক্যের মূল কারণ পুরানো এক ক্ষত৷ এক দেশের ঋণের বোঝা বাকি সব দেশ মিলে ভাগ করে নেবে কিনা, সেই প্রশ্নে ইউরোপের উত্তর ও দক্ষিণের দেশগুলির মধ্যে অনেক কাল ধরে বিভাজন রয়েছে৷ জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও নেদারল্যান্ডসের মতো দেশ নাগরিকদের করের অর্থ দিয়ে অন্য দেশের ঋণের ভাগীদার হবার প্রবল বিরোধী৷ করোনা সংকটের মাঝেও সেই মৌলিক অবস্থানে কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না৷ ফলে বাজারে ‘করোনা বন্ড' ছাড়ার প্রস্তাবের বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না৷
বৃহস্পতিবার ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে বিষয়টিকে ধামাচাপা দিয়ে শুধু কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেন সদস্য দেশের নেতারা৷ সেই সব সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিস্তারিত কর্মসূচি স্থির করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইউরোপীয় কমিশনকে৷ প্রবল অর্থনৈতিক মন্দার মোকাবিলা করতে একাধিক পদক্ষেপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ অর্থনৈতিক প্রণোদনা হিসেবে কমপক্ষে এক লাখ কোটি ইউরো ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে৷ ইইউ-র দীর্ঘমেয়াদী বাজেটের মধ্যেই সেই তহবিল ‘নোঙর' করা থাকবে৷ তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার ফলে কমিশনকে পদে পদে সদস্য দেশগুলির সম্মতি নিতে হবে৷
এমন কঠিন দায়িত্বের সামনে নতি স্বীকার করতে প্রস্তুত নন ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ পুনরুদ্ধার কর্মসূচির জন্য তিনি সদস্য দেশগুলির গ্যারান্টির ভিত্তিতে বাজার থেকে প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করতে চান৷ সেই অর্থ দিয়েই সদস্য দেশগুলির অর্থনীতি চাঙ্গা করা হবে৷
একটি ক্ষেত্রে ইইউ নেতারা অবশ্য স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ কর্মহীন কর্মী, বিপর্যস্ত কোম্পানি ও ভারাক্রান্ত রাষ্ট্রগুলির সহায়তা করতে ৫৪,০০০ কোটি ইউরোর সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে৷ আগামী জুন মাসের মধ্যেই সেই সহায়তা ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌঁছে দেবার অঙ্গীকার করা হয়েছে৷ জার্মান চ্যান্সেলরআঙ্গেলা ম্যার্কেল এই কর্মসূচির রূপরেখা তুলে ধরেন৷
বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আগে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দ ইইউ নেতাদের সাবধান করে দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, ইউরো এলাকার অর্থনীতি ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সঙ্কুচিত হতে পারে৷ ইসিবি সব মিলিয়ে তিন রকম সম্ভাব্য পরিস্থিতি তুলে ধরেছে৷ ইইউ নেতারা ঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে মারাত্মক পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেন লাগার্দ৷
এমন প্রেক্ষাপটে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ইউরোপের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর মতে, ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলির সহায়তা করতে ‘বাজেটারি ট্রান্সফার'-এর বিষয়ে ঐকমত্য অর্জন করতে না পারলে ইউরোপের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে৷ মাক্রোঁ বলেন, ইউরোপের কোনো অংশের পতন মেনে নিলে গোটা ইউরোপের পতন ঘটবে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
জার্মানিতে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে জীবন
করোনা-সংকট সত্ত্বেও জার্মানি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পথে ফেরার উদ্যোগ শুরু করছে৷ প্রথম পর্যায়ে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে৷ তবে প্রতিটি রাজ্য এ ক্ষেত্রে নিজস্ব পথ বেছে নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/A. Rentz
নতুন করে দৈনন্দিন জীবনের স্বাদ
প্রায় এক মাস কড়কড়ির পর জার্মানির মানুষ আবার কিছু স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছেন৷ কিন্তু দেশের সব প্রান্তে বিধিনিয়ম এক নয়৷ ১৬টি রাজ্য এ বিষয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৷ কিছু রাজ্যে ২০শে এপ্রিল থেকে ৮০০ বর্গ মিটারের কম আয়তনের দোকানপাট খোলা হয়েছে৷ তবে এমন অভিজ্ঞতার জন্য বার্লিনের মতো কিছু রাজ্যের মানুষকে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে৷
ছবি: Reuters/A. Gebert
যত মত, তত পথ
জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া অবিলম্বে দোকানবাজার খোলার পথ বেছে নিয়েছে৷ বন শহরের অনেক মানুষ চুটিয়ে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন৷ আরো এক ধাপ এগিয়ে এ রাজ্যে এমনকি হবু মায়েদের প্রয়োজনীয় পণ্যের বড় দোকান খোলার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/A. Rentz
সাইকেল কেনার উৎসাহ
ডিন্সলাকেন শহরে সোমবার সাইকেলের দোকান খোলার পর নতুন সাইকেল কেনার আশায় অনেক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন৷ জার্মানির সব রাজ্যেই সাইকেল, বই ও গাড়ির দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ অন্যান্য দোকানের মতো এ ক্ষেত্রে আয়তন সংক্রান্ত কোনো বিধিনিষেধ থাকছে না৷
ছবি: Getty Images/L. Baron
ব্যবসা-বাণিজ্য আবার চালু
দোকানের মালিকরা আবার ক্রেতাদের স্বাগত জানাতে পেরে খুবই সন্তুষ্ট৷ বসন্ত উপলক্ষ্যে কিছু ছাড় দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন অনেকে৷ স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের লুডভিগসবুর্গ শহরে এক দোকানের সামনে লেখা আছে ‘‘আমরা ফিরে এসেছি৷ আপনাদের আবার দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে৷’’
ছবি: Getty Images/AFPT. Keinzle
আবার স্কুলে ফেরার আনন্দ
কিছু রাজ্যে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে আবার স্কুলে ফিরতে পারছে৷ বার্লিন, ব্রান্ডেনবুর্গ ও স্যাক্সনি রাজ্য বেশি বয়সের শিক্ষার্থীরা ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি ও মূল পরীক্ষার জন্য সোমবার থেকে স্কুল ভবনে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে৷ জার্মানির বেশিরভাগ রাজ্যে ৪ঠা মে থেকে শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগ পাবে৷ শুধু বাভেরিয়া রাজ্যে ১১ই মে পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Michael
চিড়িয়াখানা ও মিউজিয়ামও দরজা খুলছে
কড়াকড়ির কারণে জার্মানির চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কগুলিও বন্ধ রাখা হয়েছিল৷ কয়েকটি রাজ্যে সেই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে৷ মেকলেনবুর্গ-ওয়েস্টার্ন পমেরানিয়া, ব্রান্ডেনবুর্গ ও রাইনল্যান্ড প্যালেটিনেট রাজ্য চিড়িয়াখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এই তিনটি এবং আরো কিছু রাজ্যে মিউজিয়ামও খোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/L. Kuegeler
মাস্ক পরার চল বাড়ছে
কিছু মানুষ স্বেচ্ছায় প্রকাশ্যে মাস্ক পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ জার্মানির কিছু অঞ্চলে অবশ্য আরো বেশি মাস্ক-পরা মানুষ চোখে পড়ছে৷ দেশজুড়ে বাধ্যতামূলক না হলেও কয়েকটি রাজ্য ও পৌর কর্তৃপক্ষ এই নিয়ম চালু করছে৷ যেমন স্যাক্সনি রাজ্যে এপ্রিল মাস থেকে ট্রাম-বাস বা ট্রেনে এবং দোকানবাজারে মাস্ক পরা অথবা অন্য কোনো উপায়ে মুখ ও নাক ঢাকা বাধ্যতামূলক৷ বাভেরিয়াসহ আরো কিছু রাজ্যেও এমন নিয়ম চালু হয়েছে৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
ব্যবধান বজায় রাখুন!
গোটা দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না৷ বাসার মানুষ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে৷ যে সব দোকান খোলা হচ্ছে, সেখানেও নানাভাবে ক্রেতাদের মধ্যে এই দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা রয়েছে৷