প্রাচীন ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ এক ইউরোপীয় প্রকল্পের আওতায় ইটালিতে বিজ্ঞানীরা ন্যানো প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ফ্রেস্কো থেকে শুরু করে অনেক শিল্পকর্ম পুনরুদ্ধার করছেন৷
বিজ্ঞাপন
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সিলিং-এর ফ্রেস্কোর মানের অবনতি ঘটতে থাকে৷ কারণ যে প্লাস্টারের উপর আঁকা হয়েছে, সেটি ভঙ্গুর হয়ে ঝরে পড়ে৷ বিজ্ঞানীরা হাই-টেক উপকরণের মাধ্যমে সেই প্রবণতা রোখার চেষ্টা করছেন৷ রেস্টোরার হিসেবে ফাব্রিচো বান্ডিনি বলেন, ‘‘বয়সের কারণে এই ফ্রেস্কোর মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে৷ তাছাড়া সেটিকে দেওয়াল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে৷ রংয়ের পাতলা স্তর অবশিষ্ট রয়েছে, প্রায় মলিন হয়ে গেছে৷ কিন্তু আমাদের ‘ন্যানো ক্যালশিয়াম'-এর মাধ্যমে পরিস্থিতি সামলে ছবির সবচেয়ে নাজুক অংশকে বাঁচাতে পারছি৷''
এক ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা একযোগে কাজ করছেন৷ ক্যালশিয়াম হাইড্রক্সাইড নামের এক কম্পাউন্ডের ন্যানো কণা শিল্পকর্মের মধ্যে ঢুকে তার রাসায়নিক কাঠামো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে৷ সেই প্রকল্পে এই পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে পরীক্ষা চলছে৷ ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়েরো বালিওনি বলেন, ‘‘শিল্পী যে উপকরণ ব্যবহার করেছেন, আমরা ছবির মধ্যে তা হুবহু পুনরুদ্ধার করি৷''
বিশ্বের দামি কিছু শিল্পকর্ম
বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি ও ভাষ্কর্যের জন্য সংগ্রাহকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকেন – ৪০ কোটি ডলারের বেশি দাম ওঠাও আশ্চর্যের কিছু নয়৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
সালভাদর মুন্ডি
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ২০টি অক্ষত ছবির একটি এটি৷ ধারণা করা হয়, ১৫০০ সালে এ ছবিটি আঁকা হয়৷ ১৯৫৮ সালে ছবিটিকে অনুলিপি ভেবে নিলামে মাত্র ৬০ মার্কিন ডলারে এটি বিক্রি হয়৷ যিশুখ্রিষ্টের এ ছবিটি ২০১৭ সালে ১০ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হবে ধারণা করা হলেও অজ্ঞাত এক ক্রেতা ৪৫ কোটি ডলার দিয়ে কেনেন এটি৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
ইন্টারচেঞ্জ
ডাচ-অ্যামেরিকান শিল্পী উইলেম ডে কুনিং-এর আঁকা ইন্টারচেঞ্জ নামে একটি তৈলচিত্র ২০১৫ সালে ৩০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাস খেলায় মগ্ন
উত্তর অভিব্যাক্তিবাদ ঘরানার ফরাসি শিল্পী পল সেজানের আঁকা এ ছবিটির নাম ‘দ্যা কার্ড প্লেয়ার’৷ ২০১১ সালে ২৫ কোটি ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
‘যখন তুমি বিয়ে করবে’
এ ছবিটি আঁকা হয়েছিল ১৮৯২ সালে৷ শিল্পী ফ্রান্সের পল গগাঁ৷ ‘হোয়েন উইল ইউ মেরি’ শিরোনামের এ ছবিটির দাম ২১ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/E. Lessing
‘নাম্বার ১৭এ’
অ্যামেরিকান শিল্পী জ্যাকসন পোলোকের আঁকা ‘নাম্বার ১৭এ’ নামের একটি চিত্রকর্ম ২০১৫ সালে ২০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷ উপরের ছবিটি পোলোকের আঁকা, যার নাম নাম্বার ৭৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিয়ের ছবি’
নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত মার্টেন ও ওপইয়েন এর ১৬৩৪ সালের অনুষ্ঠিত বিয়ের ছবি এটি৷ চিত্রকর ডাচ শিল্পী রেমব্রান্ট হারমেনসুন ফান রিন৷ ২০১৫ সালে বিক্রি হওয়া এ ছবিটির দাম পড়েছে ১৮ কোটি ডলার৷
ছবি: gemeinfrei/DW Montage
আলজিয়ার্সের মহিলারা
লেডি অব আলজিয়ার্স শিরোনামে ছবিটি স্পেনের জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর পাবলো পিকাসোর ১৯৫৫ সালে আঁকা৷ নিলামে ছবিটির দাম উঠে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে৷
ছবি: Reuters
‘ন্যু কুশে’
ইটালির চিত্রকর আমেদেও মোদিগলিয়ানি এই ছবিটি আঁকেন ১৯১৭ সালে, তার মৃত্যুর তিন বছর আগে৷ ১৭কোটি চার লাখ ডলারে ২০১৫ সালে বিক্রি হয় ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
‘মাস্টারপিস’
অ্যামেরিকান পপ আর্টিস্ট রয় লিচটেনস্টাইনের ১৯৬২ সালে একেছিলেন বিখ্যাত এ ছবিটি৷ ২০১৭ সালে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: Dan Kitwood/Getty Images
লুসিয়ান ফ্রয়েডের তিনটি প্রতিকৃতি
আইরিশ চিত্রকর ফ্রান্সিস বেকন এই তিন খণ্ডের ছবিটি আঁকেন ১৯৬৯ সালে৷ ছবিতে যার আলেখ্য, তিনি হলেন ব্রিটিশ চিত্রকর লুসিয়ান ফ্রয়েড, পক্ষান্তরে মনস্তত্বের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের পৌত্র৷ ২০১৩ সালে ক্রিস্টি’স-এর নিলামে ছবিটির দাম ওঠে ১৪ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার৷ রয়েছে মার্কিন শিল্পকলা সংগ্রাহক এলেইন ওয়াইনের সংগ্রহে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অঙ্গুলিনির্দেশ
সুইস ভাস্কর আলবের্তো জাকোমেত্তির সৃষ্টি এই মানুষ-সমান ব্রোঞ্জ মূর্তিটি নিউ ইয়র্কে ক্রিস্টি’স-এ নিলাম করা হয় ২০১৫ সালে, কেনেন স্টিভ কোহেন নামের এক হেজফান্ড ম্যানেজার৷ মূর্তিটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে দামি ক্রয়যোগ্য ভাস্কর্য বলে গণ্য৷ এটি বিক্রি হয়েছেল ১৪ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Hatfield/Christies
সোনার আডেলে
অস্ট্রিয়ার চিত্রকর গুস্তাফ ক্লিম্ট আডেলে ব্লখ-বাউয়ারের এই প্রতিকৃতিটি আঁকেন ১৯০৭ সালে৷ ম্যানহ্যাটানের ‘নয়ে গ্যালেরি’ নামের সংগ্রহশালার জন্য ২০০৬ সালে ছবিটি কেনেন মার্কিন ব্যবসায়ী রোনাল্ড লডার৷ ছবিটি ১৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারে কেনার ব্যবস্থা করে ক্রিস্টি’স সংস্থা৷
ছবি: AUSSCHNITT: picture-alliance/Heritage Images
চিৎকার
নরওয়েজীয় চিত্রকর এডভার্ড মুঞ্চ ‘চিৎকার’ ছবিটি এঁকেছেন একাধিক বার ৷ দা ভিঞ্চির মোনালিসা ও ফান গখ-এর সূর্যমুখি ফুলের পরেই মুঞ্চের এই ছবিটিকে বিশ্বের খ্যাততম চিত্রকর্ম বলে গণ্য করা হয়৷ ছবিটির প্যাস্টেল রঙে আঁকা এই সংস্করণ নিলাম করা হয় ২০১২ সালে, নিউ ইয়র্কের সথেবি সংস্থায়৷ মার্কিন শিল্পপতি লিয়ন ব্ল্যাক ১১ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলারে কিনেন এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নগ্নমূর্তি, সবুজ পাতা, আবক্ষ
পাবলো পিকাসো এই তেলরঙের ছবিটি এঁকেছিলেন মাত্র একদিনে – দিনটা ছিল ৮ই মার্চ, ১৯৩২৷ প্রায় অজ্ঞাত ছবিটি নিউ ইয়র্কের নিলামে বিক্রি হয় ১০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যে, কেনেন এক অজ্ঞাত ক্রেতা৷ ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকলেও, ছবিটি লন্ডনের টেট মডার্ন গ্যালারিকে ধার দেওয়া হয়েছে ২০১১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রুপোলি গাড়ি দুর্ঘটনা
মার্কিন চিত্রকর অ্যান্ডি ওয়ারহল ১৯৬৩ সালে এই সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্টটি সৃষ্টি করেন – যার বিষয়বস্তু হল একটি গাড়ি দুর্ঘটনা৷ ২০ বছর ধরে ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকার পর ২০১৩ সালে সথেবি-তে ছবিটি নিলাম করা হয়৷ ক্রেতা অজ্ঞাতই থাকেন; তবে ছবিটি পপ আর্ট শিল্পী ওয়ারহলের সবচেয়ে দামী ছবি বলে গণ্য করা হয়৷
ছবি: AUSSCHNITT: picture-alliance/dpa/Sotheby's
15 ছবি1 | 15
ন্যানো কণার মাপে তারতম্য ঘটিয়ে বিজ্ঞানীরা দ্রবণেররাসায়নিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করেন৷ শিল্পকর্ম অনুযায়ী তা স্থির করা হয়৷ ন্যানো প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন বস্তু পরিষ্কারও করা সম্ভব৷ এমনকি ভঙ্গুর জল রংও পরিশোধন করা যায়৷ যেমন একটি জেল ব্যবহার করে ছবির ক্ষতি না করে ধুলা দূর করা যায়৷ পিয়েরো বলেন, ‘‘এই জেলের মধ্যে সামান্য পানি রয়েছে৷ পানি ছবির কতটা ভেতরে ঢুকবে, জেলের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য ও ছিদ্র নিয়ন্ত্রণ করে আমরা তা স্থির করতে পারি৷ ১০০, ২০০ অথবা আরও গভীর মাইক্রন স্থির করা যায়৷''
রেস্টোরেশন বাশিল্পকর্ম পুনরুদ্ধারের ওয়ার্কশপেএই জেল অত্যন্ত নাজুক শিল্পকর্মে প্রয়োগ করা হয়৷ যেমন বাইজেন্টাইন আমলে ত্রয়োদশ শতাব্দীর সোনার কাজ করা এক কাপড়৷ টেক্সটাইল রেস্টোরার সুসানা কন্টি বলেন, ‘‘এমন কাজের এটাই ভবিষ্যৎ বলে আমি মনে করি৷ কোনো শিল্পকর্মের জন্য এটা অনেক কম ক্ষতিকর৷''
বিজ্ঞানীদের আশা, ন্যানো উপকরণ রেস্টোরারদের হাতে কম মূল্যের শক্তিশালী সরঞ্জাম তুলে দেবে৷