‘বালঁ দর' বা গোল্ডেন বলের সঙ্গে রোনাল্ডোর প্রেমকাহিনি যেন থামার নয়৷ কারণ লিওনেল মেসিকে হারিয়ে ফুটবল জীবনের চতুর্থ সোনালি ট্রফিটা তুলে নিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো৷ আর সেই সঙ্গে উড়িয়ে দিয়েছেন পল পগবা-সুয়ারেজ-নেইমারদেরও৷
বিজ্ঞাপন
মেসি পাঁচবারের ‘বালঁ দর' চ্যাম্পিয়ন হতে পারেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক ফুটবলমহলে এমনটাই বলাবলি চলছিল যে, এবারের গোল্ডেন বলটি রোনাল্ডোরই প্রাপ্য৷ হবে না? দেশকে এ বছরই যে ইউরো চ্যাম্পিয়ন করেছেন তিনি৷ ফাইনালে না থেকেও ‘সাইডলাইন' থেকে দিয়েছেন দলের নেতৃত্ব৷
তার ওপর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ – সেটাও তো তাঁরই, মানে রেয়াল মাদ্রিদের৷ শেষ পর্যন্ত সেটাই হলো, গতবারের চ্যাম্পিয়ন মেসিকে হারিয়ে দিলেন পর্তুগিজ এই ফরোয়ার্ড৷
প্যারিসে গোল্ডেন বলের প্রাপক হিসেবে যখন রোনাল্ডোর নাম ঘোষণা হচ্ছে, মেসি ততক্ষণে আকাশে৷ প্রীতি ম্যাচ খেলতে কাতারের পথে তিনি৷ অবশ্য পুরস্কার নিতে রোনাল্ডোও সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না৷ তিনি ছিলেন জাপানে৷ তবে বর্ষসেরা ফুটবলার হওয়ার আঁচ তিনি হয়ত করতে পেরেছিলেন৷ তা না হলে মারাত্মক শীতের মধ্যে শুধুমাত্র একটা টি-শার্ট পরে নায়কের মতো ছবি তুলবেন কেন তিনি?
তবে পুরস্কার জেতার পরও সতীর্থদের ভোলেননি ফিফার এই বিশ্বসেরা৷ বরং বলেছেন, ‘‘আমি সতীর্থদের জন্যই পুরস্কারটা পেলাম৷ আবার ‘গোল্ডেন বল' জিতে খুব গর্ব হচ্ছে৷ আজকের দিনটা আমার মনে থাকবে৷''
রোনাল্ডোকে দেখতে এ দিন জাপান এয়ারপোর্টে ভিড় উপচে পড়ে৷ ভক্তদের সেলফির আবদার, ফাঁকফোকর বুঝে এগিয়ে আসা অটোগ্রাফের খাতায় সই – কোনো কিছু বাদ যায়নি৷ রেয়াল প্র্যাকটিসেও ক্যামেরার লেন্স তাঁর ওপরই আটকে ছিল৷ এবার যে ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মেক্সিকোর ক্লাব অ্যামেরিকার মুখোমুখি হবে রেয়াল৷ খেলা আগামী বৃহস্পতিবার৷
ফ্রান্স এবং পর্তুগালের মধ্যকার ইউরো ফাইনাল ছিল উত্তেজনায় ঠাসা৷ দু’দলের মহুর্মুহু আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ উপভোগ করেছেন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ৷ চলুন ক্যামেরার চোখে দেখে নেই খেলার কিছু উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
আক্রান্ত রোনাল্ডো
পর্তুগাল দলের মধ্যমনি ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো৷ বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারকে তাই শুরু থেকেই দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে ফরাসিরা৷ খেলার ছয় মিনিটের মাথায় দিমিত্রি পাইয়ের ধাক্কায় মাঠে পড়ে যান রোনাল্ডো৷ খেলার ১৬ মিনিটে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি৷ ফিরে এসে খেলার ২৫ মিনিটের মাথায় বুঝতে পারেন মাঠে থাকা আর সম্ভব নয় তাঁর৷ চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি৷
ছবি: Reuters/C. Platiau
অল্পের জন্য মিস
জয়টা ফরাসিদের হতে পারতো যদি না খেলার ৬৬ মিনিটে সেদলের অন্যতম স্ট্রাইকার অঁতোয়ান গ্রিসমানের দেয়া হেডটি গোলপোস্টের সামান্য উপর দিয়ে চলে না যেত৷ আগের ম্যাচে জার্মানির বিরুদ্ধে দু’গোল করেন এই ফুটবলার৷
ছবি: Reuters/C. Recine
বাঁচালেন অধিনায়ক
ফরাসি অধিনায়ক উগো লোরিস নানির একটি গোল করার চেষ্টা রুখে দেন৷ সেসময় রিকোর্ডো কোয়ারেসমা আবারো শট নিলেও গোলরক্ষক সেটি ধরে ফেলেন৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
ফরাসিদের দুর্ভাগ্য
খেলার ইনজুরি টাইমে ফরাসি দলের অন্দ্রে-পিয়ের জিনিয়াক একটি হালকা শট পর্তুগিজদের গোলবারের ভেতরের দিকে লেগে ফিরে আসে৷ ফিরত বলটার কাছেই ছিলেন গ্রিসমান৷ কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি বলে পা লাগাতে পারেননি৷
ছবি: Reuters/C. Recine
গোল
খেলার বাড়তি সময়ের ১০৯ মিনিটের মাথায় কাঙ্খিত গোলটি পায় পর্তুগাল৷ কয়েকজন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে হঠাৎ জোরালো শট নেন এডার৷ ডানদিকে ঝাপিয়ে পড়েও সেবল রুখতে পারেননি ফরাসি গোলরক্ষক৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Fife
রোনাল্ডোর উচ্ছ্বাস
ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলেও কিছুক্ষণ পরেই সাইড লাইনে হাজির হন রোনাল্ডো৷ শেষের দিকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই কোচের পাশে দাঁড়িয়ে খেলোয়াড়দের নানা পরামর্শ দিয়েছেন, যা নজর কেড়েছে অনেকের৷ আর্জেন্টিনার মেসি যা পারেননি তা করে দেখিয়েছেন পর্তুগালের রোনাল্ডো৷ নিজের দেশের হয়ে দলে থাকা অবস্থাতেই তাঁর দেশ জিতেছে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় শিরোপা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gambarini
উচ্ছ্বাস সর্বত্র
নিজের দেশের মাটিতে ফাইনালে হারায় স্বভাবতই হতাশ ফরাসিরা৷ তবে প্রথমবার বড় কোনো উৎসব জিতে আনন্দে মাতোয়ারা পর্তুগিজরা৷ মাঠে, মাঠের বাইরে তাদের উৎসব করতে দেয়া গেছে এভাবেই৷