১৫০ কিলোমিটার পথ হেঁটে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল ১২ বছরের মেয়ে। একটু খাবারের আশায়। পথেই মৃত্যু হল। তবু আমাদের টনক নড়লো না।
বিজ্ঞাপন
হ্যাঁ, আপনাদের বলছি। দেশের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়া রাজনীতিবিদ। রুপোলি সেলিব্রিটি। সুখী গৃহকোণে লকডাউন-উদযাপনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা মধ্যবিত্ত। করোনা সংকটে লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষতে বসা কর্পোরেট। হ্যাঁ, আপনাদের সকলকে বলছি-- একটু চুপ করুন। তাকিয়ে থাকুন ১২ বছরের আদিবাসী মেয়ে জামলো মাড়কমের নিথর শরীরটার দিকে। চিনে নিন আসল ভারতবর্ষ। হ্যাঁ, এটাই এ দেশের বাস্তব চিত্র। বাস্তবকে স্বীকার করুন।
রাজপথে বিধ্বস্ত শ্রমিকের দল
ভারতের লকডাউন কেড়ে নিয়েছে তাঁদের কাজ। ঘরহীন, খাদ্যহীন শ্রমিকের দল এখনও লড়াই চালাচ্ছেন ঘরে ফেরার।
ছবি: Reuters/R. De Chowdhuri
দিল্লির রাজপথ
না, কোনও মিছিল নয়। রাজনৈতিক দলের সভাও নয়। ওঁরা দাঁড়িয়ে আছেন ঘরে ফেরার জন্য। করোনার লকডাউন তাঁদের কাজ কেড়ে নিয়েছে। খাওয়ার পয়সা নেই। তাই বাড়ি ফিরে যেতে চান ওঁরা।
ছবি: Surender Kumar
ওঁরা পরিযায়ী শ্রমিক
ভারতের বিভিন্ন শহরে কাজের আশায় ঘুরে বেড়ান এই পরিযায়ী শ্রমিকেরা। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে ভিন রাজ্যে পাড়ি জমান এই তাঁরা। দিন ভিত্তিক কাজের আশায়।
ছবি: Surender Kumar
দিল্লির শ্রমিকেরা
লকডাউনে বন্ধ হয়ে গিয়েছে কাজ। দিল্লিতে আটকে পড়েছেন কয়েক লক্ষ শ্রমিক। কেউ পায়ে হেঁটে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন হাজার মাইল দূরের বাড়ি। পথে মৃত্যুও হয়েছে অনেকের।
ছবি: DW/S. Kumar
শেষ আশা
উত্তরপ্রদেশ সরকার বাসে করে তাঁদের ফিরিয়ে আনবে বলেছিল। সে কারণেই দিল্লির আনন্দ বিহার বাসস্ট্যান্ডে রাতের পর রাত অপেক্ষা করছেন কয়েক হাজার শ্রমিক।
ছবি: Surender Kumar
যাওয়া হবে না
শ্রমিকদের জমায়েত দেখে টনক নড়েছে সরকারের। কেন্দ্র জানিয়েছে, শ্রমিকদের বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। দেওয়া হবে খাবার। আপাতত তাঁরা যেখানে আছেন, সেখানেই নিরাপদে থাকতে পারবেন।
ছবি: DW/A. Ansari
এত সময় লাগলো কেন
বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, শ্রমিকদের কথা বুঝতে এত সময় লাগলো কেন? কেন অভুক্ত অবস্থায় পথ হাঁটার সময় পুলিশ লাঠি চালালো তাঁদের উপর? কেন মরতে হল অনেককে?
ছবি: Reuters/A. Dave
অন্য ছবি
গত কয়েক দিনে শ্রমিকদের উপর প্রবল অত্যাচার চালিয়েছে পুলিশ। তবে অন্য ছবিও আছে। কোথাও কোথাও পুলিশই তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
ছবি: Reuters/A. Abidi
শুধু দিল্লি নয়
শুধু দিল্লি নয়। গোটা দেশ জুড়েই এ ভাবে আটকে আছেন শ্রমিকরা। বিভিন্ন শহরে। সকলেই ফিরতে চাইছেন নিজের গ্রামে।
ছবি: Reuters/R. De Chowdhuri
এরপর কী
২১ দিনের লকডাউনে না হয় খাবার পাবেন তাঁরা। আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেবে সরকার। কিন্তু তারপর? অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়ে গিয়েছে। কোথায় কাজ পাবেন তাঁরা? কী ভাবে চলবে তাঁদের?
ছবি: Reuters/A. Dave
ব্যবস্থা নিক সরকার
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজ-- অনেকেই সরকারের কাছে আবেদন করেছেন, এই শ্রমিকদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হোক।
ছবি: Surender Kumar
10 ছবি1 | 10
জামলো আমার, আপনার ঘরের মেয়ে নয়। কিন্তু হতে পারতো। এই দেশ তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। মধ্যবিত্ত ঘেরাটোপে আমাদের শিশুরা লকডাউনে স্কুল বন্ধ বলে অনলাইনে ক্লাস করছে। স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে বাড়ির ভিতরেও তাদের বাবা-মায়েরা মাস্ক পরিয়ে রাখছেন। বাড়ি থেকে দুই পা দূরের বাজারেও পাঠানো হচ্ছে না তাদের। ঠিকই করছেন। আর জামলো? মাত্র ১২ বছরের হাড় গিলগিলে মেয়েটি পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল। ছত্তিশগড়ের আদিবাসী পল্লি থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে তেলেঙ্গানায় লঙ্কার খেতে কাজ করতে গিয়েছিল বাবা-মায়ের টানাটানির সংসারে সামান্য আলোর আমদানি করতে। লেখাপড়া তার কাছে নেহাতই বিলাসিতা। কিন্তু লকডাউন সে আশাতেও জল ঢেলে দিয়েছিল। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে বন্ধ ছিলো লঙ্কার খেত। তবু কোনও মতে একবেলা খেয়ে জীবন কাটছিল মেয়েটির। তারই মধ্যে খবর আসে, গ্রামের বাড়িতে সরকার ৫০০ টাকা আর ১২ কেজি চাল পাঠিয়েছে। দু'বেলা খাওয়ার 'লোভে' সহকর্মীদের একটি দলের সঙ্গে ১৫০ কিলোমিটার জঙ্গলের পথ পাড়ি দেয় জামলো। বড় রাস্তা দিয়ে যেতে ভয়। পাছে পুলিশ ধরে। অভুক্ত শরীরে পুলিশের ব্যাটন সইবে না যে!
আধুনিক যুগের দাসত্ব
বিশ্বজুড়ে দাস প্রথা নিষিদ্ধ হয়েছে সেই কবে৷ কিন্তু প্রথা নিষিদ্ধ হলেও এখনো দাসত্ব বিলীন হয়নি৷ বিশ্বের চার কোটির বেশি মানুষ এখনো দাসত্বের জালে বন্দি৷
ছবি: Michael Hylton/Anti-Slavery International
অবৈধ শ্রমিক
উন্নত জীবনের আশায় মানবপাচারকারীদের হাতে নিজেকে তুলে দেওয়া অবৈধ অভিবাসীদের বেশিরভাগকে দাসত্বের জীবন বেছে নিতে হচ্ছে৷ কাগজপত্র নেই, ভাষা জানা নেই, নিজের অধিকারে চেয়ে কোথায় অভিযোগ করবে সেটাও জানা নেই৷ ফলে বছরের পর বছর ধরে দাসত্বের জীবন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের৷ এক ইউরোপেই কৃষিক্ষেত্রে কত অবৈধ শ্রমিক আছে তার হিসাব কারো জানা নেই৷ নামমাত্র মজুরিতে তাঁরা উদয়-অস্ত পরিশ্রম করছেন৷
ছবি: Bharat Patel
অপহরণ, পাচার ও বিক্রি
জাতিসংঘের তথ্যানুসারে এখনও মানবপাচার বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং লাভজনক কারবারের একটি৷ পাচারের শিকার হওয়া পুরুষরা বেশিরভাগ সময় নির্মাণ শ্রমিক বা খনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হয়৷ নারীদের বেশিরভাগের জায়গা হয় পতিতালয়ে, কেউ কেউ হয় গৃহকর্মী৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Vatsyayana
শিশুরাও যখন দাসত্বের জালে
নিদারুণ অভাবে অনেক পরিবার তাদের শিশুদের দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়৷ ঘানার লেক ভল্টায় বিক্রি হয়ে যাওয়া এইসব শিশুদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে যেতে হয়৷ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) হিসাব অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে প্রায় এক কোটি শিশু এভাবে দাসের জীবন কাটাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Ridley
বালিকা বধূ
ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী বিশ্বে প্রতি পাঁচজনে একজন মেয়েশিশুর বয়স ১৮ হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়৷ এ বয়সে বিয়ে করতে সবসময় বাধ্য করা হয়, বিষয়টা এমনও নয়৷ তবে অনেক ক্ষেত্রে লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে এসব মেয়েশিশুদের জোর করে বিয়ে দেয়া হয়৷ তারা অনেকে শ্বশুরবাড়িতে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন৷ সঙ্গে ঘরের কাজ তো করতেই হয়৷
ছবি: picture alliance/Tone Koene
বন্দি জীবন
বিশ্বজুড়ে মেয়েশিশুদের এখনো স্কুল ছেড়ে বাড়ির কাজ করতে হয়৷ কখনো পরিবারে বা কখনো অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে তাদের দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হয়৷ অনেকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়৷
ছবি: David Rose/Panos Pictures
ঋণের বোঝা
অতীতের মত দাস কেনা-বেচা এখন আর খুব একটা দেখা না গেলেও এশিয়া, গল্ফ আরব দেশ, আফ্রিকা ও লাতিন অ্যামেরিকার দেশগুলোতে ঋণের বোঝার নিচে চাপা পড়া মানুষরা দাস হতে বাধ্য হন৷ এমকি পরিবারের শিশুটিকেও দাস হিসেবে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়৷ বিশ্বে এমন দাসের সংখ্যা চার কোটির বেশি৷
ছবি: Anti-Slavery International
জন্মসূত্রে দাস
উত্তরপশ্চিম আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়া ‘হারাতিন‘ সম্প্রদায়ে জন্মই যেন আজন্ম পাপ৷ পুরুষের পর পুরুষ ধরে এই সম্প্রদায়ের মানুষ দাস৷ যদিও সরকারিভাবে দেশটিতে দাস ব্যবসা নিষিদ্ধ৷ তারপরও সেখানে দাস কেনা-বেচা চলে৷ মৌরিতানিয়ায় ছয় লাখের বেশি পুরুষ, নারী ও শিশু দাস রয়েছে৷ যারা গৃহকর্ম এবং কৃষিকাজ করেন৷ যা দেশটির মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/A. Dragaj
7 ছবি1 | 7
গত ১৮ এপ্রিল বাড়ি থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে নিথর হয়ে যায় জামলোর শরীর। দু'বার বমি। ব্যস, তারপর আর সাড়া দেয়নি মেয়ে। প্রশাসন তাঁর দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পরে প্রথমে করোনার পরীক্ষা করেছিল। রিপোর্ট নেগেটিভ। প্রশাসন বুঝতেই পারেনি হার গিলগিলে ওই শরীরে করোনা নয়, অপুষ্টি বাসা বেঁধেছে। সেটাই তার মৃত্যু কারণ। খিদে হেরে গিয়েছে রোদ-জল-জঙ্গলের ধকলের কাছে।
জামলোরা আসলে 'মরিয়া' প্রমাণ করছে, এ দেশে তাদেরও অস্তিত্ব আছে। তারাই এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। তাদের ভারত ডিজিটাল নয়। নেতামন্ত্রীদের ভার্চুয়াল ভাষণ তাদের কানে পৌঁছয় না। তাদের ভারতে স্বাভাবিক সময়েই দু'বেলা রান্না হয় না। লকডাউন একবেলার ভাতও বন্ধ করে দিয়েছে। এটাই সেই ভারত, যেখানে অসুস্থ স্ত্রীকে কাঁধে তুলে মাইলের পর মাইল হেঁটে হাসপাতালে নিয়ে যান খাটো ধুতি খালি গায়ের স্বামী। অ্যাম্বুলেন্স তো অনেক পরের কথা, পথ চলতি গাড়িতে ওঠারও তাঁদের অধিকার নেই। অন্য ভারত যখন বিদেশে আটকে পরা নাগরিকদের দেশে ফেরানোর ভাবনায় বিমান পাঠানোর পরিকল্পনা করছে, রাজস্থানে আটকে থাকা ছেলেকে বিহারে ফিরিয়ে আনছেন রাজনীতিক বাবা, জামলোদের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তখন সামান্যতম ব্যবস্থাটুকুও করতে পারেন না এ দেশের সরকার বাহাদুর। প্রশাসনের কর্তারা। জামলো মরেছে, তাই অন্তত তার জীবনের দাম নির্ণয় হয়েছে। এক লাখ টাকা দেওয়া হবে পরিবারকে।
শিশুশ্রমের উপর ভিত্তি করে টিকে আছে যেসব শিল্প
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও বলছে, বিশ্বে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি ২১ কোটি ৮০ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে৷ ডয়চে ভেলে এমন কয়েকটি শিল্পের কথা তুলে ধরছে, যেগুলোর সাথে শিশুশ্রম সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ouoba
কফি
আইএলও-এর তথ্য অনুযায়ী, কয়েকটি দেশে কৃষি ক্ষেত্রে শিশুদের কাজ করাটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বেশিরভাগক্ষেত্রেই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয় তাদের৷ এই যেমন কলোম্বিয়া, তানজানিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, ডোমিনিকান রিপাবলিক, হন্ডুরাস, পানামা, এল সালভাদর, গিনি এবং আইভরি কোস্টে কফির বীজ সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করা হয় শিশুদের৷
ছবি: dpa
তুলা
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই তুলা সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করা হয় শিশুদের৷ তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে সেসব দেশ, যেখানে অর্থনীতি তুলা শিল্পের উপর নির্ভরশীল৷ যেমন আইভরি কোস্ট, যেখানে ৩০ লাখ মানুষ এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল৷ ‘কটন ক্যাম্পেইন’ নামের একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানেও তুলা শিল্পে শিশুদের জোর করে কাজে লাগানো হয়৷
ছবি: Issouf Sanogo/AFP/Getty Images
ইটভাটা
মার্কিন শ্রম অধিদপ্তর এমন ১৫টি দেশের তালিকা তৈরি করেছে, যেখানে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ইটের ভাটায় শিশুদের কাজে লাগানো হয়৷ আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চীন, ইকুয়েডর, উত্তর কোরিয়া এবং পেরু রয়েছে এই তালিকায়৷
এই শিল্পে শিশুশ্রমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পরিচিত দু’টি দেশ হলো কলোম্বিয়া এবং বাংলাদেশ৷ কিন্তু বিশ্বের প্রায় সবদেশেই এ খাতে শিশুদের ব্যবহার করা হয়৷ এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে তুরস্কের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে জুতা কারখানায় সিরিয়ার শিশু শরণার্থীরা কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
চিনি শিল্প
গুয়াতেমালা, ফিলিপাইন্স, কম্বোডিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে আখ শিল্পে শিশুদের কাজে লাগানো হয়৷ আইএলও দেখেছে ফিলিপাইন্সে চিনি তৈরির কারখানায় সাত বছর শিশুদের কাজে লাগানো হচ্ছে৷
ছবি: dpa
তামাক
আইএলও বলছে, তামাক শিল্প শিশুদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর কর্মক্ষেত্র৷ সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে প্রচণ্ড গরমে, বিষাক্ত পদার্থ নিয়ে কাজ করতে হয় শিশুদের৷ বেশিরভাগ তামাক কারখানায় শিশুরা কমপক্ষে দিনে ১০ ঘণ্টা করে কাজ করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Khanna
সোনার খনি
আফ্রিকা, এশিয়া এবং দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশগুলোতে খনিতে, বিশেষ করে স্বর্ণ খনিতে শিশুদের কাজ করাটা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার৷ খনিতে বিস্ফোরণে শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে৷ এছাড়া খনির আশেপাশে বিশুদ্ধ পানি না থাকায় পাতলা পায়খানা, ম্যালেরিয়া, মেনিনজাইটিস এবং যক্ষা রোগের ঝুঁকি রয়েছে এসব শিশুদের৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ouoba
7 ছবি1 | 7
শুক্রবার সকালে পঞ্চায়েত দিবস উদযাপন করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের বিভিন্ন গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধানদের সঙ্গে ডিজিটাল বৈঠক করেছেন। জানিয়েছেন, ভারত যে ভাবে করোনার সঙ্গে লড়াই করছে, গোটা পৃথিবী তা নিয়ে বাহবা দিচ্ছে। পৃথিবীর বহু দেশকে ওষুধ দিয়ে, চিকিৎসার সরঞ্জাম পাঠিয়ে সাহায্য করছে ভারত। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের সঙ্গে নিরন্তর বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন। চিঠির লড়াইয়ে একে অপরকে সংবিধানের পাঠ শেখাচ্ছেন। কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এই বাজারেও নিজের ক্ষমতা জাহির করে লোক ডেকে ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। রুপোলি পর্দার সেলিব্রিটিরা বাড়িতে বসে বানিয়ে ফেলছেন আস্ত ছায়াছবি। ডিজিটাল ভারতকে তাঁরা শেখাচ্ছেন, করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে কী ভাবে সেল্ফ আইসোলেশন উপভোগ করতে হয়। নিজের জন্মদিনে ভারতীয় ক্রিকেটের রাজপুত্র সচিন তেন্ডুলকর সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, এটা আনন্দ করার সময় নয়, সকলে ঘরে বসে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হন।
না, সকলে ঘরে বসে থাকছেন না। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও ভোটের রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন রাজনীতিবিদরা। গরিবের কাছে যত না ত্রাণ পৌঁছচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ছবি পোস্ট হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া এবং গণমাধ্যমে। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে রাজনীতিবিদরা বলছেন, কী ভাবে তাঁর দল এই ভয়াবহ সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। কী ভাবে এত কিছুর পরেও দেশকে সচল রেখেছে। আর আমরা? এ দেশের মুষ্টিমেয় উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণী সোশ্যাল মিডিয়ায় লকডাউনের নতুন নতুন রেসিপি নিয়ে আলোচনায় মগ্ন। রাজনীতিতে কার পয়েন্ট বাড়ছে, কার কমছে, সেই হিসেব নিয়ে ভার্চুয়াল বিতর্ক জমজমাট। চলছে নানাবিধ ভার্চুয়াল চ্যালেঞ্জ। টেলিভিশন চ্যানেলের সান্ধ্য আসরে বিশ্ব অর্থনীতির আলোচনা। করোনা থেকে বাঁচার উপায় জানাচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। শেখাচ্ছেন স্যানিটাইজারের ব্যবহার।
চালিয়ে যান। এই সব কিছুই চালিয়ে যান। আপত্তি নেই। এ সব ছাড়া ভারতীয় সভ্যতা এগোবে কী করে? গণমাধ্যমে আপনারাই হেডলাইন ছিলেন, আছেন, থাকবেন। শুধু একটি বার, একটু সময়ের জন্য চুপ করুন। স্তব্ধ হয়ে যান। ১২ বছরের জামলোর ওই নিথর শরীরটার দিকে তাকান। মুহূর্তের জন্য হলেও চিনে নিন নিজের দেশটাকে। কষ্ট হলেও ওই নিথর মুখটার দিকে তাকিয়ে নিজের শিশুর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরুন। অহংকার, গর্ব, ক্ষমতা-- এই সব কিছু বিসর্জন দিয়ে লজ্জা পান।