1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ওটিটি আসার কারণে কনটেন্টের পরিসীমা বদলে গেছে'

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ জুন ২০২৩

মানস চৌধুরী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বিবদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। এই সময়ে ওটিটিসহ বিকল্প বিনোদন মাধ্যম নিয়ে কথা বলেছেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে।

Bangladesch Afran Nisho Mehazabien Chowdhury
ছবি: Shamsul Haque Ripon

ডয়চে ভেলে: বিকল্প বিনোদন মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশে ওটিটিসহ আরো অনেক মাধ্যম দেখা যাচ্ছে। এটার ভালো বা খারাপ দিক কী?

মানস চৌধুরী: ‘বিকল্প' শব্দটার ব্যাপারে আমি সতর্ক থাাকতে চাই। এটা যখন বিশেষণ হিসেবে আসে, তখন দুই দিক থেকেই এর অর্থের শিথিলতা থাকে। বিকল্প চলচ্চিত্রের যে কথা বলা হচ্ছিল, ১০-১৫ বছর পর বলা হয় ইন্ডিপেনডেন্ট, তারপর হলো আরো সংক্ষিপ্ত, ইন্ডি। বাংলায়ও শব্দগুলো চালু হয়ে গেছে। তাই কখন কোনটাকে বিকল্প বলা হচ্ছে, আমি সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার লোক। এটা কনটেক্সট আকারে না বললে চলছিল না। ২০ বছর আগে নন-সেলুলয়েড মাধ্যমে যে ফিল্ম হতে পারে, এটা ভাবার লোক যেমন কম ছিল, এখন কিন্তু সেটা কত দ্রুত পরিবর্তন হয়ে গেল। এখন আর আলাদা করে ডিজিটাল ফিল্ম বলতেও হয় না। আমরা কিন্তু কনটেন্ট নিয়ে কথা বলছিই না। মোডালিটির বদলকে কনটেন্টের বদল বলার একটা সস্তা প্রবণতা আছে। নতুন মোডালিটিকে কনটেন্টের, কিংবা ফিলোসফিক্যাল বলার যে একটা স্থুল প্রবণতা আছে সেটা নিয়ে আমি সতর্ক থাকতে চাই।

‘বিকল্প' শব্দটার ব্যাপারে আমি সতর্ক থাাকতে চাই: মানস চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

ওটিটি আসার কারণে কনটেন্টের পরিসীমা বদলে গেছে। আর যারা নির্মাণ করতে গিয়ে চাপের মুখে ছিলেন, তাদের বাইরে নতুন নির্মাতা এসেছেন। এটা একটা নতুন ধরনের পরিস্থিতি। এখানে অনেকগুলো ইতিবাচক দিক আছে। আবার নতুন ধরনের উৎকন্ঠাও তৈরি হচ্ছে।

দেখার মাধ্যম পরিবর্তন হওয়ায় কনটেন্টে  কি কোনো পরিবর্তন আসছে? কেউ কেউ অভিযোগ করছেন ইংরেজি, হিন্দি, তামিল তারই অনুসরণ করা হচ্ছে…

‘আদলে' বললে ইতিবাচক শোনায়। অনুকরণে বললে নেতিবাচক শোনায়। আমার আদলের ব্যাপারে কোনো সংস্কার নেই। হয়তো আমরা রাগ করে বললে অনুকরণ বলবো, আবার প্রশংসা করে বললে অনুসরণ বলবো। এগুলো প্রি-ওটিটি জামানায়ও ছিল। যখন এ. আর রহমান অস্কার পান নাই, সত্য মিথ্যার বিষয় নয়, লোকজন বলার চেষ্টা করেছেন যে, তিনি অমুক জায়গা থেকে তমুকটা কপি করেছেন। সাধারণত প্রোডাক্টটা স্মুথ না হলে এই ধরনের প্রশ্ন আসে। এখন ওটিটি, পোর্টাল বা সাইবার মাধ্যম আসার ফলে নানা জায়গার জিনিসপত্র দেখা সহজ হয়ে গেছে। নির্মাতারাও দেখছেন। ফিলিস্তিনি বা ইন্দোনেশীয় ছবি আপানার আমার দুই-একটি যে চোখে পড়ে গেছে সেটা এই পোর্টালের কারণে। আমরা পোর্টাল বা ওটিটির জমানায় না থাকলে ওগুলো আমাদের চোখে পড়তো না, ওরা যদি বনিয়েও থাকতেন। আমি কিন্তু এগুলোকে খুব ভালোভাবে দেখি।

চলচিত্রের সেন্সর বোর্ড আছে। বিটিভি বা অন্য বেসরকারি টেলিভিশন মনিটরিং হয়। কিন্তু ওটিটি বা এই ধরনের প্ল্যাটফর্ম মনিটরিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাহলে কি এটা আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও নৈতিকতার জায়গায় সমস্যা সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন?

এখানে হ্যাঁ-না উত্তর দেয়া কঠিন। চলচিত্র সেন্সর বোর্ড যখন থেকে শুরু হয়েছে, তার একটি কাজ ছিল কতটুকু যৌনাত্মক থাকবে তার একটা সার্টিফিকেশন দেয়া। আরেকটি কাজ হলো রাষ্ট্র বা ক্ষমতাসীনদের কোনোরকম ক্রিটিক হয় কিনা তা দেখা। যেটা হতে পারতো মান নিশ্চয়তার একটা বডি, সেটা হয়ে দাঁড়িয়েছে কতগুলো পছন্দ-অপছন্দের শাসন চালানোর কর্তা। এটা তো একটা বিপর্যয়। পোর্টালে বা ওটিটিতে সেটা একদম নেই যে আমি এটার সাথে বিনয়ের সঙ্গে দ্বিমত করবো।  কোন অর্থে আছে দেখেন। যেগুলোকে লোকে অ্যালগরিদম বলে, বাস্তবতা হলো, আমরা খুঁজতে খুঁজতে পাই সেগুলো, যেগুলো পপুলার। আগে থেকেই যথেষ্ট রকম প্রস্তুতি না থাকলে বা সেইরকমভাবে না খুঁজলে কারো পক্ষে কিন্তু আউট-অব-বক্স কিছু পাওয়া সম্ভব না। প্রথম দিকের পোর্টাল বা ওটিটি সিরিয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগটা ছিল তাতে যৌনতা ছিল; মানে বিটিভির সেট করা স্ট্যান্ডার্ডের তুলনায় যৌনতার মাত্রা বেশি ছিল। সেই অভিযোগ আবার আস্তে আস্তে নিস্তেজও হয়ে গেছে। জাতীয় বা দেশজ সংস্কৃতির যেসব ভ্যানগার্ড আছে সেসব প্রতিষ্ঠানও যেভাবে ম্যানুপুলেশনের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাতে আমি চিন্তিত থাকি। ফলে আলাদা করে ওটিটি নিয়ে চিন্তিত নই।

এগুলো তো ওপেন প্ল্যাটফর্ম। সব বয়সের মানুষ প্রবেশ করতে পারে। তাহলে সবাই কি সব কিছু দেখবে? এর দায় কার? এটা কি ওটিটি বা এইরকম প্ল্যাটফর্মের দায়?

বাংলাদেশে মোটের উপর করোনাকালে এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মের অগ্রগতি, বিশ্বদরবারেও তাই একভাবে। যারা বাসায় বেশি থাকে বা সেই ধরনের পেশায় যারা যুক্ত, তাদের  গ্লোবালি কনজ্যুমার বানিয়েছে। স্ক্রিনের পার্সোনালাইজেশন হয়েছে। টেলিভিশন এক সময় ছিল পাড়া-প্রতিবেশীর বিনোদন। পরে সেটা হয়েছে ফ্যামিলি স্ক্রিন। সেখান থেকে প্রাইভেটাইজড হয়ে যাওয়া । এখানে মধ্যবিত্ত পরিবারে ফ্যামিলিতে একটা এডিটোরিয়াল সিস্টেম আছে- কে কখন কোনটা দেখবে। এইখানে একটা পারিবারিক গভর্নেন্স কাজ করছে বলে মনে হয়।

একটা হলো মোড। আরেকটা হলো প্রোডাকশন। এটা কতটা টেকসই হবে?

হবে না। আমি মনে করি আসলে হবে না। প্রযুক্তি আমাদের কাছে বিজ্ঞানীদের হাত থেকে আসে না, আসে বিপণনকারীদের হাত থেকে। লোকজন তো সহজ সমীকরণ খোঁজেন। লোকজন ভাবতে থাকে বিজ্ঞান, আমি দেখি বাণিজ্য। ১০ বছর পর আপনি কী প্রযুক্তি দেখতে যাচ্ছেন সেটা এই পর্যায়ে কল্পনা করাও কঠিন। ফলে মনে করি না টেকসই কিছু হতে যাচ্ছে, যেটা হতে যাচ্ছে আরো কাস্টমাইজড ধরনের বিষয়। আরো কাস্টমাইজড দৃশ্যপ্রণালী। এখন ভিজ্যুয়াল প্রোডাকশনের বাম্পার ফলনের কারণে একট গোল্ডেন সাইলেন্স হয়তো আসতে যাচ্ছে, ঠিক যেমনটা প্রিন্টমাধ্যমের নিউজে এসেছে।

এই মাধ্যমে শিল্পীসহ যারা কাজ করেন তারা প্রফেশনাল হতে পারছেন কিনা? তারা কি এখানে কাজ করে আর্থিকভাবে টিকে থাকতে পারছেন? পেশাদারিত্ব, পারিশ্রমিক ঠিকমত হয়?

বাংলাদেশে হয় না এটা বলা জরুরি। আমরা টেলিভিশন প্রোডাকশনের খরচটা আমাদের সময়ে পরিচিতদের কাছ থেকে জানতে পারতাম। ঈদের আগে বড় স্পন্সর হলে চার লাখ টাকা ৩০ মিনিটের জন্য। কিন্তু যারা বড় স্পন্সর পাননি, স্ট্রাগলার, তারা ৩০ মিনিটের জন্য ৯০ হাজার টাকা। এর কমেও শুনেছি। ওই সময়েই অঙ্কটা মেলানো যেতো না। লাইটম্যানকেই বা কী দেয়, আর টপ স্টারকেই বা কী দেয়। এখন যারা চলচিত্র বানান, তারা এটাকে প্রোডাক্ট হিসেবে দেখেন কম, দেখেন কালচারাল প্রোডাক্ট হিসেবে। ফলে এখানে পেশাদারিত্ব বা কিছু লোক এটার ওপর  খেয়ে-পরে বাঁচবেন সুনিশ্চিভাবে, এরকম কোনো বন্দোবস্ত হয়েছে বলে আমি মনে করি না।

এখন কি তাহলে পপুলার কনটেন্টই তৈরি হবে ব্যবসার জন্য? এর বাইরে কি কোনো সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকবে না?

খুব বিষাদের প্রশ্ন। যেসব রাষ্ট্র কিছু কনটেন্টে বাধা দেয় আবার উদ্যোগ নিয়ে কিছু কনটেন্ট তৈরি করে – এটার মধ্যে যে বুর্জোয়া অর্থে গণতন্ত্রহীনতা আছে সেই ব্যাপারে আমি সজাগ। আমি খুব বুঝতে পারি তারা কেন এটা করে। রাষ্ট্রের যদি কোনো পলিসি থাকে, তাহলে সেটা তো শুধু চলচ্চিত্রের জন্য নয়। আপনি যদি কম দামে ভালো ওষুধ দিতে চান, তাহলে কিছুতেই বহুজাতিককে পাশে রেখে পারবেন না। এটা দীর্ঘ সাধনার ব্যাপার। আমরা যদি সিরিয়াস কিছু কনটেন্ট দেখতে চাই তাহলে কিছু কনটেন্ট সরাতে হবে। কিছু দিনের জন্য চাইলেও রাষ্ট্রের বা জনপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপকের ভূমিকা নেয়া ছাড়া সম্ভব নয়।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ