ফের দক্ষিণ ইউক্রেনে একাধিক মিসাইল হামলা চালালো রাশিয়া। রাশিয়াকে আরো একবার 'সন্ত্রাসী' বলে অভিহিত করলেন জেলেনস্কি।
বিজ্ঞাপন
দুইদিন আগেই দক্ষিণ ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরের কাছে হামলা চালিয়েছিল রাশিয়ার সেনা। মঙ্গলবার ফের সেখানে লাগাতার মিসাইল হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার ভিডিও প্রকাশ করেছে ইউক্রেনের সেনা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একের পর এক বিস্ফোরণ হচ্ছে। ভেঙে পড়ছে ভবন।
ইউক্রেনের সেনার দাবি, ঘটনায় দুইটি বেসামরিক ভবনের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। আশপাশের অঞ্চলেও বিস্ফোরণের প্রভাব পড়েছে। তবে প্রাণহানির কোনো খবর এখনো পর্যন্ত মেলেনি। ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে তা দেখা হচ্ছে।
পূর্ব ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনে পথের কাঁটা যারা
রুশ বাহিনী যেখানে অবস্থান করছে, সেখান থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে রয়েছেন ইউক্রেনের এই যোদ্ধারা৷ সম্ভাব্য পরিণতি হয়ত মৃত্যু–তা জেনেও শত্রুশিবিরকে রুখতে সবসময় প্রস্তুত তারা৷ বিশেষ এই ব্যাটেলিয়নের কথা জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
স্নায়ুর জোর
কার্পেথিয়ান জিশ নামে এই ব্যাটেলিয়নের ফিল্ড কমান্ডার ডজভিন বলেন, ‘‘যাদের মন শক্ত, এখন তারাই যুদ্ধ করতে পারবেন৷ কঠিন এবং ভীতিকর এই যুদ্ধা’’ যুদ্ধক্ষেত্রে তার নাম ডজভিন অর্থাৎ এটি হলো ‘নম দে গেররে’৷ নিরাপত্তার কারণে নিজের আসল নাম গোপন রেখেছেন তিনি৷ তার মতো সব যোদ্ধাই জানেন কখনো না কখনো বিধ্বংসী সামরিক ট্যাঙ্কের মুখোমুখি হতে পারেন তারা৷ সম্প্রতি প্রায় অক্ষত ট্যাঙ্ক ‘পাকড়াও’ করা হয়েছে৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
যীশুর ছবির সামনে
পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অগ্রগতি রুখতে কার্পেথিয়ান জিশ সবসময় প্রস্তুত৷ রুশ সেনা মোকাবিলায় কিয়েভের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছিল ইউক্রেনীয় এবং বিদেশি নাগরিকদের এই ইউনিট৷ দেখা যাচ্ছে, যীশু খ্রিস্টের একটি ছবির সামনে হ্যান্ড গ্রেনেড রেখে দিয়েছেন তারা৷ তাদের চিন্তা রুশ ড্রোনগুলিকে নিয়ে৷ সেগুলিকে ‘কালো মেঘ’ বলছেন এই ব্যাটেলিয়নের যোদ্ধারা৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
শত্রুদের ঠেকিয়ে রাখা
এই যোদ্ধারা বলছেন, তারা ইউক্রেনের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ এ এক ভয়ঙ্কর প্রতিশ্রুতি৷ এতে তারা সবাই একসঙ্গে যুক্ত৷ এক যোদ্ধা বলেন, ‘‘গতকাল ভোররাতে একটা, দুইটা এবং চারটায় গোলাবর্ষণ করছিল ওরা, যাতে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়৷ তবে আমাদের ইতিবাচক থাকতেই হবে৷’’ মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এই ব্যাটেলিয়নের যোদ্ধারা সামরিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পেরেছেন৷ ফলে সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা পাবেন তারা, পাবেন সেনা ভাতাও৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
অবকাশ কোথায়?
রুশিন নামের এক যোদ্ধা (নিরাপত্তার কারণে আসল নাম প্রকাশ গোপন রাখা হয়েছে) কার্পেথিয়ান জিশ ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিনি সোফায় বসে রয়েছেন৷ কিন্তু অবসর মোটেও নেই তাদের৷এক যোদ্ধা বলেন, ‘‘আমাদের এখানে থাকার সম্ভাব্য পরিণতি আমরা সকলেই জানি এবং আমরা সবাই এর মধ্যেই শান্তি খুঁজে চলেছি৷’’
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
মর্টার দিয়ে আক্রমণ
কার্পেথিয়ান ব্যাটেলিয়নের যোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছেন মর্টার দিয়ে৷ আলোকচিত্রীর ছবিতে ধরা পড়েছে এই দৃশ্য৷ প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সাহায্যের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন অসংখ্য ইউক্রেনীয় এমনকি অনেক বিদেশি সহযোগীও৷ লিও নামের বছর তেত্রিশের এক তরুণবলেন, ‘‘আমি নাৎসি নই, আমি জাতীয়তাবাদী৷ রাশিয়ান ছাড়া সব জাতীয়তার, সব বর্ণের মানুষকে আমি সম্মান করি৷ রাশিয়ানরা শত্রু৷’’
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
টার্গেট পুটিনের ছবি
নিজেদের শারীরিক ক্ষমতায় যাতে কোনোভাবেই মরচে না ধরে, তার জন্য শারীরিক কসরত চালিয়ে যাচ্ছেন নতুন যোগ দেয়া সদস্যরা৷ প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নিতে তারা প্রশিক্ষণ নেন৷ রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিনের ছবি সামনে রেখে সেটিকে টার্গেট করে অনুশীলন করছেন যোদ্ধারা এমন ছবিও দেখা গিয়েছে৷ ডেনিস পোলিশচুক নামে এক যোদ্ধা বলেন, ‘‘ যুদ্ধের সময় তিনি কী করেছিলেন- সন্তানরা জানতে চাইলে তিনি বলতে পারবেন যে দায়িত্ব পালন করেছিলেন৷’’
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা
কার্পেথিয়ান জিশ ব্যাটেলিয়নের চিকিৎসক এবং সদস্য দেখে নিচ্ছেন ঘাঁটিতে পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে কি না৷ ছবিতে ধরা পড়েছে এই দৃশ্য৷ কনর নামে এক ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবক এবং ফ্রন্টলাইনে কর্মরত সাবেক সেনা চিকিৎসক বলেন, ‘‘যত বেশি সময় যুদ্ধ চলবে, এটি ততই ক্লান্তিকর হয়ে উঠবে৷’’ আহত নারী, শিশু এবং যোদ্ধাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সহায়তা পেতে ব্যর্থ হওয়ার ছবি দেখে ব্রিটেন থেকে ইউক্রেনের হয়ে লড়তে এসেছেন তিনি৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
7 ছবি1 | 7
ইউক্রেনের সেনা ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে খবরটি প্রথম প্রকাশ করে। এরপর স্থানীয় প্রশাসন খবরের সত্যতা স্বীকার করে। রাতে দেশের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দৈনিক ভিডিওবার্তায় ফের মিসাইল হামলার ভিডিও প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নিরাপরাধ মানুষদের উপর রাশিয়া যে আক্রমণ চালাচ্ছে তা আরো একবার স্পষ্ট হলো। আরো একবার প্রমাণিত হলো, রাশিয়া একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। এদিন ফের বিশ্বের নেতাদের কাছে জেলেনস্কি আবেদন করেছেন, রাশিয়াকে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
মার্কিন হাসপাতালে ইউক্রেনের সেনা পেন্টাগনের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, বেশ কিছু দিন আগেই অ্যামেরিকা একটি চুক্তিতে সই করেছে। যাতে বলা হয়েছে, মার্কিন হাসপাতালে ইউক্রেনের আহত সেনাদের চিকিৎসা করা যাবে। বস্তুত, অ্যামেরিকার বাইরে জার্মানিতে ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে মার্কিন সেনাঘাঁটি আছে। সেখানে মার্কিন সেনা হাসপাতালও আছে। সেখানেই ইউক্রেনের আহত সেনাদের নিয়ে এসে চিকিৎসা করার কথা বলা হয়েছে।
তবে এখনো পর্যন্ত ইউক্রেনের কোনো সেনা সেখানে যায়নি বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। তবে তাদের জন্য শয্যা তৈরি আছে বলে দাবি করেছে পেন্টাগন।
ইউক্রেনে মৃত্যুর হাতছানির মাঝেই শিশুর জন্ম
রুশ হামলায় বিধ্বস্ত ইউক্রেন৷ গোলাবর্ষণের মাঝেই কখনো সখনো ভেসে আসছে নবজাতকের কান্নার আওয়াজ৷ যুদ্ধের মাঝেই পৃথিবীর আলো দেখছে শিশু৷ ডনবাসের পোকরোভস্কের ক্লিনিকের এমনই কিছু মা ও শিশুদের কথা রইলো ছবিঘরে৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
‘সময়ের আগে’ জন্ম
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধের আগে, ইউক্রেনের প্রায় নয় শতাংশ শিশু সময়ের আগেই জন্ম নিয়েছিল অর্থাৎ তারা ‘প্রি-ম্যাচিওর বেবি’৷ রুশ আগ্রাসনের পর থেকে, পোকরোভস্ক হাসপাতালে সময়ের আগে জন্মের এই হার বেড়ে ১৬.৫ শতাংশ হয়েছে৷ এমনিতে অন্তত ৪০ সপ্তাহ পর শিশুর জন্ম নেয়ার কথা, তবে গর্ভকালের সময়সীমার ৩৭ সপ্তাহের আগেই জন্ম নেয় অপরিণত শিশু৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে
অন্তঃসত্ত্বাদের উপর চাপ মারাত্মক৷ জানলায় বসানো বালির ব্যাগগুলি শেল, স্প্লিন্টার থেকে তাদের রক্ষা করতে পারে৷ কিন্তু মার্চ মাসে মারিউপোলের হাসপাতালে যেমন সরাসরি আক্রমণ করা হয়েছিল, তেমন হলে এই বালির ব্যাগে কোনো কাজ হবে না৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
কঠিন পরিস্থিতিতে শিশুর জন্ম
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে ড. ইভান সিগানক বলেন, ‘‘গোলাগুলি চলার সময়ও কখনো কখনো শিশুদের জন্ম দিতে হয়েছে৷ শিশুর জন্ম এমন একটি প্রক্রিয়া, যা কখনো বন্ধ করা যায় না৷’’ এই অন্তঃসত্ত্বাদের মানসিক চাপের সঙ্গে অকালপ্রসবের সংখ্যা বেড়ে চলার যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা৷ বিশ্বের নানাপ্রান্তের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় এমনটাই হয়ে থাকে৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
স্ট্রেসের মধ্যে গর্ভধারণ
২৬ বছরের মেরিনা তুপাতা বলেন, ‘‘গর্ভাবস্থা অনুভব করার কোনো সুযোগ ছিল না৷ ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করতাম৷ সেই সময়টা বাড়িতে থাকার চেষ্টা করেছি৷’’ ছয়দিন বয়সি মেয়ে সোফিয়ার সঙ্গে মেরিনার ছবিটি দেখে মনে হবে, ‘আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক৷’
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
গোলাবর্ষণ সত্ত্বেও নিশ্চিন্তে শিশুর ঘুম
মায়েরা এই নবজাতকের মতো নিশ্চিন্ত নন, জানিয়েছেন ওলেসিয়া কুশনারেনকো৷ ডক্টরাল থিসিসের জন্য, গাইনোকোলজিস্ট ওলেসিয়া যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি থাকতেন এমন নারীদের পরীক্ষা করেছেন৷ ওই অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রে স্ট্রেস, মানসিক চাপের পরিমাণ উচ্চমাত্রার৷ অর্ধেকেরও বেশি সময় গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন ভ্রুণটি অপর্যাপ্ত অক্সিজেন এবং পুষ্টি পেয়েছে৷ সময়ের আগে শিশু জন্ম নেয়ার অন্যতম কারণ এটি৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
সবকিছু ঠিক থাকবে?
কাটিয়া বুরাভতসোভা তার ছেলে ইলিউশাকে আঁকড়ে রেখেছেন৷ পোকরভস্ক কেন্দ্রে ২৮ সপ্তাহের মাথায় শিশুটিকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন এই মা৷ তার সন্তানও ‘প্রিম্যাচিওর’৷ বছর পঁয়ত্রিশের কাটিয়া সন্তানকে আঁকড়ে বলেন, ‘‘সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে৷’’
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
6 ছবি1 | 6
ইউক্রেনের গ্যাস কোম্পানি ঋণ খেলাপি হতে পারে ইউক্রেনের গ্যাস এবং তেল কোম্পানি নাফতোগ্যাস জানিয়েছে বিশ্ববাজারে তেল এবং গ্যাসের দাম শোধ করার ক্ষেত্রে ঋণখেলাপি হতে পারে তারা। এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটবে বলে তারা জানিয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে বিশ্ববাজার তাদের অতিরিক্ত সময় দিয়েছিল দাম মেটানোর জন্য। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যেও তারা পুরো অর্থ দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে।
বিশ্ব বাজারের কাছে সংস্থাটি জানিয়েছিল, প্রয়োজনে তাদের বন্ড ফ্রিজ করে রাখতে পারে বিশ্বের সংস্থাগুলি। কিন্তু তাতেও কেউ রাজি হয়নি বলে জানানো হয়েছে।
আরো জার্মান অস্ত্র
এদিকে বার্লিন জানিয়েছে, আরো জার্মান অস্ত্র ইউক্রেনে পৌঁছে গেছে। দুইটি মার্স দুই রকেট লঞ্চার এবং তিনটি হাউইৎজার পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। আগেই ইউক্রেনকে এই অস্ত্র দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল জার্মানি। নতুন অস্ত্রের মধ্যে বেশ কিছু অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইলও আছে।