বৈধ কাগজপত্রবিহীন প্রায় ৫০ লক্ষ অভিবাসীকে ‘সাময়িকভাবে’ বৈধ করার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ তবে তাঁর এই কথায় আশ্বস্ত হতে পারছেন না অনেক অভিবাসী৷
বিজ্ঞাপন
যে অভিবাসীরা বৈধ কাগজ ছাড়া পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন এবং যাঁদের সন্তানেরা মার্কিন নাগরিক অথবা স্থায়ী বসবাসের অনমুতিপ্রাপ্ত, তাঁদের বিতাড়িত না করে বৈধ করার কথা বলেছেন ওবামা৷ তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বৈধ হতে পারবেন অভিবাসীরা৷ চিন্তাটা সেখানেই৷
এল সালভেদর থেকে সাত বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে যান নোরমা মার্টিনেজ৷ তাঁর বৈধ কাগজপত্র নেই৷ তাঁর দুই সন্তান জন্ম নিয়েছে নিউজার্সিতে৷ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘ওবামার কথায় হয়ত ক্ষণিকের জন্য নিজেদের নিরাপদ ভাবা যেতে পারে, কিন্তু পরে যদি নতুন প্রেসিডেন্ট আসে তখন কী হবে৷''
মার্টিনেজ বলেন, ‘‘আমরা পালিয়ে বাঁচতে চাই না৷ কিন্তু কোনো কারণে যদি পরবর্তীতে এই কর্মসূচি বাতিল করা হয় তখনতো বিতাড়িত হতে হবে৷'' এ কারণে তিনি ও তাঁর স্বামী (তাঁর কাগজ নেই) চিন্তা করছেন, হয়ত তাঁরা ওবামার কথা অনুযায়ী বৈধ হওয়ার জন্য চেষ্টা করবেন না৷
অভিবাসন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন আইনজীবী চেরিল লিটল৷ ওবামার ঘোষণা সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এটা কেবলমাত্র বিতাড়িত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে সাময়িক মুক্তি৷''
সান ফ্রান্সিসকো’র অন্ধকার দিক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম সান ফ্রান্সিসকো৷ মন্দার কারণে সেখানে বেড়েছে গৃহহীনের সংখ্যা৷ পাশাপাশি সন্ত্রাসী তৎপরতাও বেড়ে গেছে৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
বাড়ছে গৃহহীনের সংখ্যা
যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব অত্যন্ত বাজেভাবে পড়েছে সান ফ্রান্সিসকোর উপর৷ সে দেশে গৃহহীনের সংখ্যা বেড়েছে৷ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত গৃহহীনদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যকের অবস্থান সান ফ্রান্সিসকোতে৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
টেন্ডারলয়েন পাড়া
টেন্ডারলয়েন পাড়া ‘শহরের সবচেয়ে মন্দ এলাকা’ হিসেবে পরিচিত৷ সান ফ্রান্সিসকোর মাদক ব্যবসার স্বর্গ এই জেলা৷ অথচ এই এলাকা থেকে সেখানকার অভিজাত পাড়া খুব বেশি দূরে নয়৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
অসচ্ছল জীবন
বর্তমান অসচ্ছল জীবনের এক প্রতিচ্ছবি এই মানুষটির চোখে ভেসে উঠেছে৷ সান ফ্রান্সিসকোর এই গরিব এলাকায় অসচ্ছলতা কাটানোর সুযোগ এখন অনেক কম৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
অপরাধের রাজধানী
পরিসংখ্যান এক হতাশার গল্প শোনাচ্ছে৷ সান ফ্রান্সিসকোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটে টেন্ডারলয়েন পাড়ায়৷ প্রতি ঘণ্টায় তিনটি বড় ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয় সেখানে৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
মাদক সংস্কৃতি
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাড়ার পেছনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে মাদকের সহজলভ্যতা৷ টেন্ডারলয়েনে যে কোন মাদক দ্রব্য খুব সহজেই পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সাহায্য প্রার্থীদের সহায়তা
এলাকায় বসবাসরত মানসিক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের অবস্থা আরো সঙ্গিন৷ যদিও বিনাখরচার স্বাস্থ্য ক্লিনিক, আশ্রয়কেন্দ্র এবং সামাজিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্থিতি উন্নয়নে কঠোর পরিশ্রম করছে, তারপরও বিপুল সংখ্যক সাহায্যপ্রার্থীকে সহায়তা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
জেগে ওঠার আহ্বান
টেন্ডারলয়েনের এক বাসিন্দা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, ‘‘আমি মনে করি অ্যামেরিকার জেগে ওঠা উচিত, এভাবে চলতে পারেনা৷ আমি এখনকার গরীব মানুষদের জন্য অনেক কষ্ট অনুভব করি৷’’
ছবি: DW/Andreas Stahl
ক্রাইম ওয়াচ
টেন্ডারলয়েনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ চেষ্টা করছে৷ তবে অপরাধের মাত্রা এত বেশি যে নিয়ন্ত্রণ সহজ কথা নয়৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সহায়তার হাত
এ রকম সমাজ কর্মীরা মাদকাসক্তদের সহায়তার চেষ্টা করছেন৷ এরা নিডল এক্সচেঞ্জ নামক একটি সংগঠনের কর্মী৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
দুঃখের প্রতীক
সান ফ্রান্সিসকোর কেন্দ্রীয় শহর টেন্ডারলয়েন এখন দারিদ্র আর অপরাধের প্রতীক৷ শহরটির এখনো সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গৃহহীন মানুষেরা৷ গোল্ডেন গেট ব্রিজ আর জেলেদের ঘাট হিসেবে পরিচিত যে সুন্দর সান ফ্রান্সিসকোর কথা মানুষ জেনেছে, সেই সৌন্দর্যের সঙ্গে এখনকার টেন্ডারলয়েনের অমিল অনেক৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
10 ছবি1 | 10
বৈধ হওয়ার জন্য অভিবাসীদের যেসব কাগজপত্র দিতে হবে তার মধ্যে রয়েছে কতদিন ধরে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, তাঁদের আয়ের উৎস কী এবং তাঁরা কোথায় কাজ করেন ইত্যাদি৷
‘পিউ হিসপ্যানিক সেন্টার'-এর মার্ক হুগো লোপেজ মনে করেন, যাঁরা বহুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন তাঁরা ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বৈধ হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করতে ভয় পেতে পারেন৷ কারণ তাঁদের মনে হতে পারে যে, বৈধতার নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর বিতাড়ন হওয়া থেকে শুরু করে জরিমানা ও হাসপাতালের না-দেয়া বিল দিতে হতে পারে৷
ইতিহাসও একই কথা বলছে৷ এর আগে ২০১২ সালে ওবামা সরকারের দেয়া আরেকটি সুযোগ এখন পর্যন্ত মাত্র ৫৫ শতাংশ জন গ্রহণ করেছে৷ সুযোগটা এরকম – ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সি যেসব তরুণদের তাদের বাবা-মা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে এসেছে তাদেরকে দুই বছরের কাজের অনুমতিপত্র দেয়া হচ্ছে৷