বার্লিনে দেয়া ভাষণে বারাক ওবামা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন বিশ্বকে আনবিক অস্ত্র মুক্ত করার উদ্দেশ্যে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানোর ওপর৷ দেন আনবিক অস্ত্র হ্রাস প্রক্রিয়া শুরুর প্রস্তাবও৷ কিন্তু তা মানতে চাইছে না মস্কো৷
বিজ্ঞাপন
আনবিক অস্ত্র হ্রাসের রূপরেখা প্রণয়নের উদ্যোগ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ‘শীতল যুদ্ধের' সময়েই শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন আর নেই৷ তবে তার ‘নিউক্লিয়াস' রাশিয়া আছে৷ রাশিয়ার সঙ্গে এ উদ্যোগকে কার্যকর করার চেষ্টা ২০১০ সালেই শুরু করেছিলেন বারাক ওবামা৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বার্লিন সফরে এসে আনবিক অস্ত্র হ্রাসের বিষয়ে তিনি রাশিয়ার প্রতি সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান৷ ২০১৮ সালের মধ্যে দু'পক্ষ ১৫৫০টি আনবিক অস্ত্র কমাবে – এমন একটি প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি৷ কিন্তু মস্কো জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এ প্রস্তাবকে তারা বিবেচনায় নেয়ার উপযুক্ত মনে করে না৷ রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি রোগোজিন প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘কৌশলগত আনবিক অস্ত্র হ্রাসের ধারণাটিকে আমরা ‘সিরিয়াস' মনে করব কীভাবে যখন যুক্তরাষ্ট্রই তার ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে এ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে?''
বার্লিন সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২৪ ঘণ্টার সফরে বার্লিন আসছেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায়৷ প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পশ্চিম বার্লিনে এসেছিলেন জন এফ কেনেডি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বারাক ওবামা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২৪ ঘণ্টার সফরে বার্লিন আসছেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায়৷ প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটাই তাঁর প্রথম বার্লিন সফর৷ এর আগে ২০০৮ সালে তিনি যখন নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছিলেন তখন বার্লিনে এক বিশাল জনসভায় বক্তব্য রেখেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মুক্তির চিহ্ন
বার্লিন শহরের প্রতীক বলা যায় ব্রান্ডেনবুর্গ দরজাকে৷ সেখানে মার্কিন পতাকা ঝুলে থাকতে দেখা যায়নি খুব বেশি৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শুরু হওয়া শীতল যুদ্ধের সময় পশ্চিম বার্লিন পশ্চিমা বিশ্বের কাছে অনেকটা ছিটমহলের মতো ছিল৷ পরে ১৯৬১ সালে বার্লিন প্রাচীর তৈরি হওয়ার পর পশ্চিম বার্লিন আলাদা হয়৷ এর ঠিক দু’বছর পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি পশ্চিম বার্লিন সফর করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘ইখ বিন আইন ব্যার্লিনার’
অর্থাৎ আমি একজন বার্লিনবাসী৷ কথাটা বলেছেন পশ্চিম বার্লিন সফরে আসা প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি৷ হাজার হাজার বার্লিনবাসী কেনেডির বক্তব্য শুনতে উপস্থিত হয়েছিল৷ তাঁদের উদ্দেশ্যে কেনেডি বলেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো মূল্যে পশ্চিম বার্লিনের স্বাধীনতা বজায় রাখবে৷ পশ্চিম বার্লিনের তখনকার মেয়র ও পরবর্তীতে চ্যান্সেলর হওয়া ভিলি ব্রান্ট উপস্থিত ছিলেন সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa Fotografen
এরপর নিক্সন
কেনেডির ছয় বছর পর পশ্চিম বার্লিনে আসেন রিচার্ড নিক্সন৷ তাঁকে স্বাগত জানান চ্যান্সেলর কুর্ট গেওর্গ কিজিঙ্গার৷ তাঁরা দু’জনেই দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর জোর দেন৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
জিমি কার্টার
১৯৭৮ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার পশ্চিম বার্লিন সফর করেন৷ ছবিতে কার্টারকে জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট স্মিটের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে৷ প্রায় দেড় লক্ষ বার্লিনবাসী তাঁকে স্বাগত জানায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রোনাল্ড রিগ্যান
১৯৮২ সালের জুন মাসে বিখ্যাত ‘চেকপয়েন্ট চার্লি’-তে গিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান৷ চেকপয়েন্ট চার্লি হলো বার্লিন প্রাচীরের একটা অংশ যেখান দিয়ে পশ্চিম বার্লিন থেকে পূর্ব বার্লিনে যাওয়া যেতো৷ ঠিক পাঁচ বছর পর রিগ্যান আবারো বার্লিনে গিয়ে তার বিখ্যাত বক্তব্যটি রেখেছিলেন, ‘‘জনাব গর্ভাচেভ, এই দেয়ালটি ভেঙে ফেলুন’’৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
‘আলেস ইস্ট ম্যোগলিশ, ব্যার্লিন ইস্ট ফ্রাই’
মানে হচ্ছে ‘সবকিছুই সম্ভব, বার্লিন এখন মুক্ত’৷ দুই জার্মানির মিলনের পর ১৯৯৪ সালে বার্লিন সফররত প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন এই কথাটা বলেছিলেন৷ ক্লিন্টনের পূর্বসূরি জর্জ বুশ সিনিয়র দুই জার্মানির মিলনের পর জার্মানি এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু সেটা বার্লিনে নয়, চ্যান্সেলর হেলমুট কোল-এর ব্যক্তিগত বাড়িতে৷
ছবি: Paul J. Richards/AFP/Getty Images
জর্জ বুশ জুনিয়র
তিনি দু’বার বার্লিনে এসেছিলেন৷ প্রথমবার ২০০২ সালে যখন বুশ এসেছিলেন তখন তাঁকে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল৷ যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক নীতির কারণে ঐ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল৷ এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার বার্লিনে এসে বুশ জার্মান সংসদে ভাষণ দিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সিরিয়া সংকটের মতো আনবিক অস্ত্র কমানোর প্রশ্নেও যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার সমঝোতায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা খুব একটা নেই৷ জার্মানিতে আসার এক দিন আগেই উত্তর আয়ারল্যান্ডে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ওবামা৷ সিরিয়ার বিষয়ে দুই রাষ্ট্রনায়ক সেখানে প্রকাশ্যেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন৷