ইউক্রেন সংকট নিরসনের জন্য ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে কথা বলেন বারাক ওবামা৷ সমঝোতার পথ ধরার অনুরোধ জানান তিনি৷ কিন্তু অবরোধের ওবামার এই আহ্বানে সাড়া মেলেনি৷ ইউক্রেন ছেড়ে রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দেয়ার পথেই এগোচ্ছে ক্রাইমিয়া৷
বিজ্ঞাপন
ক্রাইমিয়ায় রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপকে ‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন' অভিধায় আখ্যায়িত করে বৃহস্পতিবারই যুক্তরাষ্ট্র কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছিলেন বারাক ওবামা৷ ইউক্রেনে সামরিক হস্তক্ষেপে জড়িতদের প্রতি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সংশ্লিষ্টদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে নিষেধাজ্ঞাসহ বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নেও ক্রাইমিয়ায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া৷ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি ইইউ নেতৃবৃন্দের মুখেও শোনা যাচ্ছে৷
তবে হুমকিতে ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি বদলায়নি৷ বৃহস্পতিবার সেখানকার মস্কোপন্থি প্রশাসন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের উদ্দেশ্যে ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ান ফেডারেশনে গ্রহণ করার অনুরোধ জানায়৷ আগামী ১৬ মার্চ গণভোট হবে ক্রাইমিয়ায়, সেদিন ভোট দিয়ে ক্রাইমিয়াবাসী ঠিক করবেন তাঁরা ইউক্রেনে থাকতে চান, নাকি যোগ দিতে চান রাশিয়ান ফেডারেশনে৷ ইতিমধ্যে রাশিয়ার সংসদের স্পিকার জানিয়েছেন, ক্রাইমিয়ার মানুষ যে সিদ্ধান্ত নেবে রাশিয়া তাকে সম্মান জানাবে৷
অর্থাৎ ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়া পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করতে চলেছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক ঘণ্টা ধরে টেলিফোনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে কথা বলেও ক্রাইমিয়া সম্পর্কে রাশিয়ার অবস্থানে পরিবর্তন আনতে পারেননি৷ টেলিফোন কথোপকথনের পর এক বিবৃতিতে পুটিন জানিয়েছেন, ক্রাইমিয়ার কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ আইনানুগ পদক্ষেপ নিয়েছে বলেই তিনি মনে করেন৷ এ অবস্থায় ক্রাইমিয়ার রুশ ভাষাভাষী জনতার পাশে যে কোনো মূল্যে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করতে গিয়ে পুটিন বলেন, ‘‘সাহায্যের আহ্বানকে রাশিয়া অগ্রাহ্য করতে পারেনা৷ আন্তর্জাতিক আইন মেনেই (ক্রাইমিয়াকে) কাজ করবে রাশিয়া৷''
ক্রাইমিয়ায় সব শান্ত?
সবার মনোযোগ এখন ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দিকে৷ ক্রাইমিয়ায় যা ঘটেছে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসন বলা হলেও রুশ সেনাদের কিন্তু সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে স্থানীয়রা৷ ছবিঘরে দেখুন ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি৷
ছবি: DW/F. Warwick
কোসাকদের আগমন
রাশিয়ার ক্রাসনোডার থেকে এসেছে ২৫০ জনের মতো কুবান কোসাক৷ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরেননি তাঁরা৷ সেভাস্টোপোলের রুশপন্থি কর্তৃপক্ষ কোসাকদের শপথ পাঠ করিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী কোসাকরা জানিয়েছে, ক্রাইমিয়াবাসীদের রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে৷
কুবান কোসাকরা সেভাস্টোপোলের পুলিশের সঙ্গে টহলে অংশ নিচ্ছে৷ মাথায় উলের টুপি পরে রবি বার থেকে রাস্তায় টহল দিচ্ছে কোসাকরা৷ ২০০৫ সালে এথনিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে কোসাকদের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: DW/F. Warwick
কঠিন সময়ে নিরাপত্তা
রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কোসাকদের নেতা কর্নেল সের্গেই সাভোনিন ইউরিয়েভিচ৷ তিনি বলেন, কোসাকরা সেভাস্টোপোলের মানুষদের রক্ষা করার জন্য এসেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
‘স্বায়ত্তশাসন, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়’
ক্রাইমিয়ায় অনেকের হাতেই দেখা যায় ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা৷ এর অর্থ এই নয় যে, ক্রাইমিয়া ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে৷ সেভাস্টোপোলের এই তরুণ-তরুণীরা জানালেন, তাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চাননা, কেননা ইউক্রেনকে তাঁরা ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র মনে করেন৷ তাঁদের দাবি একটাই – স্বায়ত্তশাসন এবং এথনিক রুশ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এই প্রবীণ এসেছেন কোসাকদের সমর্থন জানাতে৷ রাশিয়ার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ পরনে রুশ সেনাবাহিনীর মতো কমলা আর কালো রংয়ের পোশাক৷ তিনি নিজেও সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মির সাবেক কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/F. Warwick
রাস্তায় তল্লাশি
সিমফারোপোল এবং সেভাস্টোপোলের মাঝের হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রুশপন্থি বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যবসার জন্য খারাপ সময়?
লিলিয়া ভজনুক একজন স্যুভেনির বিক্রেতা৷ রাবারের তৈরি মুখোশগুলোর মধ্যে পুটিনের চেহারার মুখোশটার এখন দারুণ কাটতি৷ তবু খুব চিন্তায় আছেন লিলিয়া৷ চলমান সংকট ব্যবসার বড় রকমের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাঁর৷
ছবি: DW/F. Warwick
হৃদয়-মন জয় করেছে তাঁরা
সেভাস্টোপোলে গেলেই ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল-এর কনসার্ট দেখতে পাবেন৷ নাচ-গানের এই স্থানীয় সংগঠনটি তাদের পরিবেশনা দিয়ে সবার মন জয় করেছে৷ রুশ লোকসংগীতে সাগরের প্রশংসা করে যেসব গান রচনা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই পরিবেশন করে ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল৷ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইয়াব্লোচকো বা ‘ছোট্ট আপেল’ নাচটা সত্যই মনোমুগ্ধকর৷
ছবি: DW/F. Warwick
চাই শুধু স্বায়ত্তশাসন
সেভাস্টোপোলের অধিকাংশ মানুষই রুশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক৷ ইউক্রেনীয়দের তারা অবিশ্বাস করে, মনে করে ইউক্রেনীয়রা চরম ডানপন্থি৷ সেভাস্টোপোলের মানুষ মনে করে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন এবং নিরাপত্তার রক্ষাকবচ৷
ছবি: DW/F. Warwick
10 ছবি1 | 10
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রবল বিরোধিতার মুখেও চীনকে পাশে পাচ্ছে রাশিয়া৷ ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের হুমকি প্রসঙ্গে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘চীন সবসময়ই অবরোধের সহজ প্রয়োগ কিংবা অবরোধের হুমকির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এসেছে৷ আমরা আশা করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে উত্তেজনা প্রশমন করে সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের উপায় বের করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ কঠোর পরিশ্রম করবে৷''